গাজীপুরের শ্রীপুরে এক রাতে আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতি এবং এক কৃষি উদ্যোক্তার ভাড়া বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতেরা নগদ ৮০ হাজার টাকা, ২৭ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটে নেয়। কৃষি উদ্যোক্তার ভাড়া বাসা থেকে নগদ ১৪ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়। উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের বাঁশবাড়ী গ্রামে ডাকাতি এবং তেলিহাটি ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ (ইলিমের মোড়) এলাকার ভাড়া বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভোর রাত সোয়া ৩টায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম ও তার বড় ভাই আওয়ামীলীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে ডাকাতি এবং সোমবার (২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৮ টার দিকে পল্লী বিদ্যুৎ (ইলিমের মোড়) এলাকার আবুল মেম্বারের মেয়ের ভাড়া বাসায় কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমানের ফ্ল্যাটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে।
বাঁশবাড়ী গ্রামের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম জানান, রাত সোয়া ৩টার দিকে ৩০ থেকে ৩৫ জনের মুখোশ পরা একদল ডাকাত তার নির্মাণাধীন ভবনের পেছন দিক দিয়ে দোতলা ওঠে। পরে ডাকাতেরা নিচে নেমে দরজায় লাথি দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেই ৫ ডাকাত তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র হাতে ডাকাত দলের ১৫ সদস্যরা তার স্ত্রী ও বাড়ির লোকদের জিম্মি করে পেলে। ডাকাতেরা প্রায় ৪০ মিনিট ঘরে অবস্থান করে আসবাবপত্র তছনছ করে নগদ ৫৫ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি, মাইক্রো-ওভেন, চারটি মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটে নেয়।
একই সময়ে শিক্ষকের বড় ভাই গাজীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে ১৫ জন ডাকাত একই কায়দায় ঘরে প্রবেশ করে। ডাকাতেরা প্রবেশের শব্দ পেয়ে তার ভাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মনে করে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘরে প্রবেশ করে ডাকাতেরা বাড়ির সদস্যদের দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে নগদ ২৫ হাজার টাকা, ৯ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮ ভরি রুপার অলংকার, এলইডি টিভি, মাইক্রোওভেন, মোবাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটে নেয়।
তিনি আরও বলেন, ডাকাতেরা যাওয়ার সময় বলে যায় আপনাদের শত্রু কে? আমাদের ওপর যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আমরা সেভাবে কাজ করেছি।
অপরদিকে কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান জানান, সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে তেলিহাটি ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ (ইলিমের মোড়) এলাকার ভাড়া বাসায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণ (মেইন্টেনেন্স) শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) হিসেবে চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিমপাড়া গ্রামে জমি ভাড়া নিয়ে তিনি মালটা বাগান করেছেন। চলতি মৌসুমে বাগানে মালটার ফলন ভালো হওয়ায় তার স্ত্রী-ও ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে বাগানে সময় দেন। অফিস থেকে বাসায় গিয়ে ঘরের দরজার তালা ভাঙা দেখেতে পান। পরে ঘরে প্রবেশ করে দেখেন চোরের দল আলমিরা, ওয়ারড্রব, ও ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ার ভেঙ্গে প্রতিদিন মালটা বিক্রির নগদ ১৪ লাখ টাকা, দুই জোড়া কানের দুল, হাতের বালা, নাক ফুল, তিনটি স্বর্ণের আংটি এবং একটি মূল্যবান হাত ঘড়ি নিয়ে যায়। খবর পেয়ে তার স্ত্রী বাসায় এসে দেখে তার সব সম্বল চুরি করে নিয়ে গেছে।
এই চোরেরা পাশের ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। ওই ফ্ল্যাটের দম্পতি গত নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে এই ফ্ল্যাটে উঠেছে। তবে তাদের ঘরে তেমন মূল্যবান জিনিস পত্র না থাকায় কিছু নিয়ে যেতে পারেনি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ডাকাতির ঘটনাগুলো মিথ্যা। ডাকাতির শিকার লোকজন মিথ্যা অভিযোগ করেছে। থানায় জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমার উভয় ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং তদন্ত করছি।
আরটিভি/এএএ/এস