• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo
বান্দরবানের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান
উঁকি দিচ্ছে মোহনীয় সৌন্দর্যের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
নভেম্বর শুরু না হতেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে উত্তরাঞ্চল। সবুজ ঘাসে জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের উত্তরাকাশে জেগে উঠেছে বিশ্বের তৃতীয় সবোর্চ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। বিকেল হলেই তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখেছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে এবার চলতি বছরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেপ্টেম্বরের শেষ দিকেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। ভোরে দূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্য দেখতে জেলার আশপাশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেন পঞ্চগড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়া সদরের ডাকবাংলো অথবা স্থানীয় সরকারি বেসরকারি রেস্ট হাউসে রাত যাপনের চেষ্টা করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নতুন বছরে পর্যটক বরণে সাজানো শুরু করেছে হোটেল ও রিসোর্টগুলো। গত বছরগুলোতে পর্যটকের আগমন কিছুটা কম থাকলেও চলতি মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে এ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এখন থেকেই দেশের অন্য জেলা থেকেও ট্যুরিস্টরা পঞ্চগড়ে আসছেন। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় থেকে আগাম শীতের আমেজে রুপালি কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এখানকার মানুষজন বেশ আন্তরিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। তাই ভ্রমণপিাসু আর পর্যটকরা অনায়াসেই এসে ঘুরে যেতে পারেন উত্তরের শুরুর এলাকা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। পর্যটক আসিফ মাহমুদ জানান, গত বৃহস্পতিবার পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন তিনি। পিকনিক কর্নার, ঐতিহাসিক ডাকবাংলো, মহানন্দা নদী, সমতলের চা-বাগান ও বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন। সকাল-বিকাল কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপও দেখেছেন। সোমবার ঢাকায় ফিরবেন তারা। তেঁতুলিয়া উপজেলার কাঠের বাড়ি গেস্ট হাউজের মালিক হুমায়ুন কবির উজ্জ্বল বলেন, প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে পর্যটকরা আসেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যটকরা বেশি আসেন। তবে চলতি বছর অক্টোবরের শেষের দশক থেকেই পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। আমরা হোটেল, আবাসিক ও রিসোর্ট মালিকরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছি।  তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী বলেন, এই উপজেলায় প্রতি বছরে শীত আগেই শুরু হয়। তেঁতুলিয়ার নানান নান্দনিক দৃশ্য উপভোগে পর্যটকদের মনোনিবেশ বাড়ে অক্টোবরের শেষের দিক থেকে। কাঞ্চনজঙ্গা পর্যটকদের হ্রদয়কে বেশি আকর্ষণ করে, যার কারণে নভেম্বরে পর্যটকদের ভিড়ও বাড়ে। পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেই দিকটা নজরে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি। কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার (দিবারাত্রি) বাস রয়েছে। রাজধানী থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার একাধিক পরিবহন রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে চড়েও তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। বাস ভাড়া পড়বে নন-এসি    ১,০০০-১,১০০ টাকা এবং এসি ১,৩০০-১,৯০০ টাকা। ট্রেনে খরচ পড়বে শোভন চেয়ার ৬৯৫ টাকা এবং কেবিন ২৩৯৮ টাকা। সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়ার জন্য নিজে যা খরচ করবেন। রাত্রি যাপনের জন্য তেঁতুলিয়ায় সরকারি তিনটি ডাকবাংলোর পাশাপাশি কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ডাকবাংলোগুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে আগেভাগেই উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকলে সেখান থেকেই আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ। আরটিভি/এসএপি
এই শীতে ঘুরতে যাওয়ার মতো দেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান
সেন্টমার্টিনে যাতায়াত ও রাত্রিযাপনে নতুন সিদ্ধান্ত
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ
দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতায় আগ্রহী আরব আমিরাত     
এক ভিসায় সৌদিসহ ৬ দেশ ভ্রমণের সুযোগ
এবার ইউরোপের শেনজেন ভিসার আদলে উপসাগরীয় ছয় দেশ ‘জিসিসি গ্রান্ড ট্যুর’ নামে নতুন ভিসা চালু করছে। ফলে এক ভিসায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, বাহরাইন এবং কুয়েত ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে দ্য ইকোনমিক টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেনজেন ভিসায় যেমন ইউরোপের ২৭টি দেশ ঘোরা যায়, ‘জিসিসি গ্রান্ড ট্যুর’ নামে নতুন ভিসায় তেমনি উল্লিখিত ছয় দেশে অবাধে বেড়াতে পারবেন পর্যটকরা। প্রতিটি দেশ দেশের জন্য ফ্লাইট ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে জনপ্রতি এক হাজার ৫০০ দিরহাম থেকে ভ্রমণ প্যাকেজ শুরু হবে। প্যাকেজে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং সৌদি আরবে কয়েক দিন থাকা ও ভ্রমণের জন্য প্রায় চার হাজার থেকে ৫ হাজার দিরহাম খরচ হবে। এই খরচে রাত্রিযাপনসহ ফ্লাইট, হোটেল, যাতায়াত এবং ভ্রমণ সব খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আরব আমিরাতের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌক আল মারি সম্প্রতি অ্যারাবিয়ান ট্রাভেল মার্কেটের এক প্যানেল আলোচনায় এ উদ্যোগটির কথা জানান। তিনি জানান, এর লক্ষ্য হলো জিসিসি অঞ্চলজুড়ে ভ্রমণকে আরও সুবিধাজনক করা এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করা। সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,  ইউনিফায়েড জিসিসি ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হলে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক উপসাগরীয় অঞ্চল ভ্রমণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ ১২৮ দশমিক ৭ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে।
এক বছরে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা দ্বিগুণ বেড়েছে বাংলাদেশিদের
এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার ও কূটনৈতিক মিশনের জন্য বিশ্বের প্রযুক্তি পরিষেবা বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান ভিএফএস গ্লোবাল। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভিসা আবেদনের পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় ১৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০১৯ সালের প্রাক-মহামারি সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে সর্বশেষ বছরে ভিসা আবেদনের এই পরিমাণ বেড়েছে আড়াই গুণের কাছাকাছি (২৩৩ শতাংশ)। ভিএফএস গ্লোবালের বাংলাদেশ প্রধান শান্তনু ভট্টাচার্য বলেন, ২০২২ সালে আমরা বাংলাদেশ এবং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া থেকে অনন্য চাহিদা লক্ষ্য করেছি, যার ফলে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থিতিশীল ভিসা আবেদনের পাশাপাশি একটি দুর্দান্ত ভ্রমণ মৌসুম তৈরি হয়েছিল। নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, প্রযুক্তিগত ও নির্ভরযোগ্য সমাধানের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী গ্রাহক পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি আমরা। এ সময় আবেদনকারীদের সতর্ক করে দিয়ে শান্তনু ভট্টাচার্য বলেন, ভিএফএস গ্লোবালের নাম ব্যবহার করা ভুয়া ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজ থেকে যারা অর্থের বিনিময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিক্রি করে, তাদের কাছ থেকে সাবধান হতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো ভিএফএস গ্লোবালের ওয়েবসাইটে বিনা খরচে প্রদান করা হয় এবং আগে আবেদন করার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হয়। একটি দায়িত্বশীল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে থাকবো এবং আমরা আবেদনকারীদের অনুরোধ জানাচ্ছি যেন  তারা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আগে থেকেই করেন। বেশিরভাগ দেশ ভ্রমণ তারিখের ৯০ দিন আগ পর্যন্ত ভিসার আবেদন গ্রহণ করে উল্লেখ করে শান্তনু ভট্টাচার্য বলেন, সংশোধিত শেনজেন ভিসা কোড অনুসারে, ভ্রমণ তারিখের ছয় মাস আগপর্যন্ত শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। বিশেষ করে এই বছর উচ্চ চাহিদা এবং সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট থাকায়, আমরা আবেদনকারীদের তাদের ভিসার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবেদন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কানাডার ভিসা যুক্ত করার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে দীর্ঘ অপেক্ষার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, চাহিদা ও যোগানের সম্পর্কের কারণে এটা হচ্ছে। দূতাবাস থেকে আমাদেরকে যে পরিমাণ অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতে বলে, আমরা সেটাই দিচ্ছি। ভিএফএস গ্লোবাল বলছে, মহামারির পর থেকে ভ্রমণকারীদের মাঝে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আচরণ লক্ষ্য করা গেছে, যা হলো ব্যাপক পরিমাণে ব্যক্তিগত পরিষেবা গ্রহণ। ভিএফএস গ্লোবাল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ভিসা আবেদন কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১৬টি ক্লায়েন্ট সরকারকে সেবা দিয়ে আসছে।
১৯৩ দেশ ঘুরে ৭৯ বয়সি লুইসার রেকর্ড
জাতিসংঘ তালিকাভুক্ত দেশের সংখ্যা ১৯৩ ভ্রমণ করেছেন। ইচ্ছা আছে আরও ৭টি দেশ ভ্রমণের। দেশগুলো ভ্রমণ করতে সময় নিয়েছেন ৫০ বছর। নিজের টাকা ব্যয় করে এসব দেশে ভ্রমণে গেছেন তিনি। নাম তার লুইসা ইউ। নিজের ৭৯ বছর বয়সে সদ্যসমাপ্ত বছরের নভেম্বরের ৯ তারিখ সার্বিয়ায় পা রাখার মাধ্যমে এ যাত্রা শেষ করেছেন তিনি। লুইসার জন্ম ১৯৪৪ সালে ফিলিপাইনে। ১৯৬৭ সালে ২৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে। দেশটিতে এসে লেখাপড়ার পাশাপাশি ভ্রমণের নেশা চাপে তার মাথায়। তিন বছর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৫টি অঙ্গরাজ্য ভ্রমণ শেষ হয় তার। ‘দেখব এবার জগৎটাকে’- এমন স্বপ্নে বিভোর লুইসা এরপর বের হন বিশ্বভ্রমণে। ১৯৭০ সালে প্রথম দেশ হিসেবে জাপান ভ্রমণে যান লুইসা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ফিরে আসেন। বিভিন্ন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। উদ্দেশ্য বিশ্ব ভ্রমণের। এর জন্য তো অর্থের প্রয়োজন। নিজে উপার্জন না করলে কে দেবে তাকে টাকা। এভাবে কাজ করে টাকা জমিয়ে বিগত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত ১৯৩টি দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেছেন লুইসা। সর্বশেষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নার্সিং। সেটাও ছেড়ে দেন। এর পর প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট তথা বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ শুরু করেন। সেখানে যে আয় হয় তা দিয়ে দিব্যি একজনের ঘুরতে যাওয়ার খরচ উঠে আসে। বয়সে বৃদ্ধ কিন্তু আদতে যৌবনা মানুষটির বর্তমান নিবাস যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি অঙ্গরাজ্যে। লুইসা ইউ বিশ্বের সব দেশ ঘুরেছেন। দেখেছেন এসব দেশের প্রকৃতি, জেনেছেন সংস্কৃতি সম্পর্কে, বন্ধু বানিয়েছেন স্থানীয় মানুষদের। এত দেশের নামের মধ্যে ভালোলাগার দেশগুলো জানতে চাইলে লুইসা জানান, তার প্রিয় তিন দেশ হলো নিজ দেশ ফিলিপাইন, ইতালি ও থাইল্যান্ড। এত বছর ধরে কীভাবে নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন তিনি, কী ছিল তার অনুপ্রেরণা জানতে চাইলে লুইসা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বপ্ন দেখা থামালে চলবে না। স্বপ্ন দেখে যেতে হয়। আমি ঘুরতে চেয়েছি, সেই চেষ্টা ছিল তাই আমি সফল হয়েছি।’ তরুণ ভ্রমণপিপাসুদের উদ্দেশে লুইসা বলেন, ‘কারও জন্য অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়ো। কারণ তুমি যদি কারও জন্য অপেক্ষা করো তাহলে থেমে যাবে, তোমার এগিয়ে যাওয়া আটকে যাবে।’ আর কিছুদিনের মধ্যে ৮০ বছরে পা দিতে যাওয়া লুইসা দীর্ঘ সাধনা, অধ্যবসায় আর পরিশ্রমে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছেন নিজেকে। নিজ দেশ এবং বিভিন্ন দেশের মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন অনেক। অর্জন করেছেন বেশ কিছু সম্মানজনক পুরস্কারও। লুইসাকে চেনে এবং জানে যারা, তারা সবাই তাকে ডাকে ‘মামা’। লুইসা ইউকে প্রশ্ন করা হয়, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেখে কেমন লাগছে? নিজের সরল জীবনবোধের জায়গা থেকে উত্তর দেন, ‘আঃ খুব খুশি। বেঁচে থাকি যত দিন, তত দিনে বিশ্বের সব দেশ ঘুরব, সেটা শেষ করতে পেরেছি। নিজের একটা বাড়ির স্বপ্নও দেখেছিলাম, সেটাও হয়েছে। আর কিছু চাই না জীবনে। এ যাত্রা শেষে দেখতে পাই- আমার অর্জন শুধুই মানুষের ভালোবাসা।’ সূত্র: এনডিটিভি
হিমালয়ের দেশ নেপাল
জুনের মাঝামাঝি অসহ্য ভ্যাপসা গরম ঢাকায়। মন পাখি বলে ঘুরে আসি হিমালয়ের দেশ নেপাল। বইয়ের পাতায় কত পড়েছি, সেই কাঞ্চনজঙ্ঘার আর হিমালয় পর্বতমালার দেশ যেখানে কিনা পৃথিবীর সর্বোচ্চ দশটি পর্বতের মধ্যে আটটিই অবস্থিত। নেপাল আর চীনের সীমান্তজুড়ে হিমালয় পর্বতমালা। আর এই পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট। এ যেন স্বপ্নপূরণ! বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ তাই বাক্স প্যাটরা গুছিয়ে পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম।  একটা খুব ভাল বিষয় হচ্ছে নেপালে যেতে শুরুতেই ভিসা ঝামেলা নেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নেপালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা। আমরা বেশ কিছু আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে গেলাম। প্রথমেই চেকিং পর্ব। আমাদের কোভিড ভ্যাকসিন সনদপত্র পর্যবেক্ষণ করে কাউন্টার থেকে আমাদের লাগেজ ট্যাগ বোর্ডিং পাস দেওয়ার পর বলাকা লাউঞ্জে অপেক্ষা করছি। এরপর দশটায় বিমানে উত্তরণের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম।   ত্রিশ মিনিট দেরিতে বিমান যাত্রা শুরু করল নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। চোখ বন্ধ করে কল্পনায় আমি সেই হিমালয় আর এভারেস্টের বিশাল চূড়া নিয়ে ভাবছি। আহা মেঘ এসে নাকি পাহাড় ছুঁয়ে যায়! আর কিছুক্ষণ পর সেই স্বপ্ন দর্শন! আমি যখন ওই ঘোরের মাঝে ঠিক তখনই আমার কন্যাদ্বয়ের খুনসুটিতে বাস্তবে ফিরে এলাম। সাধারণত বড় বোনের কথা শুনে ছোটজন প্রথম পাঁচমিনিট কনফিউজড থাকে; পরে আমার শরণাপন্ন হয়। শুনছি বড় জন বলছে, ‘বোন যদি তুমি তোমার সিটের এই বাটনে চাপ দাও সঙ্গে সঙ্গে প্লেনের একটা চাকা খুলে যেতে পারে তাই খুব সাবধান যেন ভুলেও তোমার হাত না লাগে।’ ছোটজন বিস্মিত হয়ে, ‘তাহলে কি হবে?’ প্রতিউত্তর, ‘তোমাকে তাহলে সারাজীবন আকাশে থাকতে হবে।’ তাদের এইসব কথায় আমি হাসি চেপে কৃএিম রাগ দেখিয়ে থামালাম।  আমি প্লেনের জানালায় নিচে দেখার চেষ্টা করছি। কাঠমান্ডুর কাছাকাছি যেতেই বিমান একটু একটু করে কম উচ্চতায় নেমে আসছিল। আমিও নয়নভরে দেখে নিলাম উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সারি। এত সবুজ যে চোখ ফেরানোই দায়। প্রায় এক ঘণ্টা বিশ মিনিট পর আমরা পৌঁছে গেলাম ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে। নেমেই দেখি সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কেউ ভিসা ফরম পূরণ করছে। ইচ্ছে করলে নিজের ফোন থেকেও করা যায়। সবার ফরম পূরণ শেষ হতেই আমরা ইমিগ্রেশন পার হলাম পর্যটক ভিসা নিয়ে। প্রথমে আমরা নাগারকোট থাকব দুইদিন তাই পূর্বেই একটা গাড়ি ঠিক করে নিয়েছিলাম পুরো সময়টার জন্য। বাইরে বের হতেই দেখি বাহাদুর ভাই (গাড়িচালক) আমাদের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে। আমরা গাড়িতে উঠার আগে তিনি আমাদের চারজনের গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে হাসিমুখে এভাবে সংবর্ধনা জানালেন। তিনি বললেন, ‘আপকো স্বোয়াগত হে।’ তার সংবর্ধনায় আমি মুগ্ধ। তিনি খুব ভাল ইংরেজিও জানেন।  নেপালে একটা বিষয় মুগ্ধ করার মতো, তা হলো দেশটির আতিথিয়তা। তারা পর্যটকদের সঙ্গে খুব চমৎকার আচরণ করে। সবাই হেসে কথা বলে। তাদের চেহারাতেও সরলতা বিদ্যমান।  নাগারকোট নেপালের একটা প্রসিদ্ধ গ্রাম যা কিনা ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই গ্রামটি সমুদ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখান থেকে এভারেস্ট পর্বতসহ হিমালয়ের অন্যান্য পর্বতমালা দৃশ্যমান। গ্রামটি থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দৃশ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। নাগরকোট থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকার অপরূপ মনোরম দৃশ্যও দেখা যায়। নাগরকোটের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। আমরা যখন ধীরগতিতে গাড়ি করে যাচ্ছি তখন চারপাশের রঙ দেখে মাতোয়ারা মন। কিছুদূর পর পরই মিষ্টি হলুদরঙ আর নীল রঙের ঘণ্টার মতো ফুল শোভা পাচ্ছে গাছে। গাছগুলো বেশ বড় ও বিস্তৃত তাই দূর থেকে মনে হবে এক রাশ নীলাভ নয়তো হলুদের ঝোপ। আমি বাহাদুর ভাইকে প্রশ্ন করতেই বললেন, এটা ধুতরা ফুল। আমাদের দেশে আমি গ্রামে সাদা ধুতরা দেখেছি কিন্তু এখানে ধুতরা ফুল আকারে বড় এবং অনেক রঙের। পাহাড়ের ওপর রাস্তা ছিল খুব সরু এবং রাস্তায় তেমনভাবে লাইটের ব্যবস্থা নেই। তাই সন্ধ্যার পর খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। বাহাদুর ভাই যখন আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিলেন তখন মাত্র বিকেল চারটা। কিন্তু আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা তাই চারপাশে ঘুটঘুটে আঁধার নেমে এসেছিল। যাওয়ার পথটা এতটাই নির্জন ছিল যে, আমার কিছুটা ভয় ভয় লাগছিল। বাহাদুর ভাই বুঝতে পেরে আশ্বস্ত করলেন যে, এই জায়গা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এতই মনোরম যে পর্যটকদের কাছে এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হাইকিং রুট অর্থাৎ এখানকার প্রাকৃতিক পাহাড়ি দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে পর্যটকরা হেঁটে বেড়াতে বেশি পছন্দ করেন।  পরেরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি সূর্যোদয় দেখবো বলে। না বিধিবাম! আকাশ মেঘলা তাই মনবাসনা অপূর্ণ রয়ে গেল। আরেকটি বিষয় আমরা শুনেছি যে, জুন-জুলাই মাসে নাগকোট শীতের কাপড় না নিলেও হয়। আর এই ভুলটাই আমরা করেছিলাম। দুপুরের রোদের তাপ কিছুটা কমলেই চারদিকে কেমন হিম শীতল বাতাস বইতে থাকে। আর সন্ধ্যা নামলে তো কথাই নেই। আমরা গুগলে দেখেছি তাপমাত্রা জুন-জুলাইয়ে ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তবে রাতে বেশ শীত অনুভব হয়। আমরা যে হোটেলে ছিলাম তার দুতলায় খুব বড় খোলা করিডর ছিল। যেখানে বসে প্রিয় কফির পেয়ালা হাতে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে সবারই খুব স্বপ্নের মতো লাগবে। আকাশটা নীল তার মাঝে সাদা হীরার মত তারা আর চারদিকে নিরবতা। যেখানে শুধু প্রকৃতির মিষ্টি গান শোনা যায়। গাছেদের ফিসফিস পাতার খসে পড়া, দূরে পাহাড়ের চূড়ায় কোনো গ্রামে মিটিমিটি আলো আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ। কোথাও জোনাকি জ্বলছে মিটিমিটি। আহা এ যেন কবির কবিতার মত মনের একান্ত নিজস্ব স্বপ্নীল ভুবনে মুহূর্তে ভেসে যাওয়া। বাস্তবেও বুঝি এমন হয়! আমি আর পতি দুজনেই ভাবছি আমরা আবার এই ভুবনে আসবো।  তাই সবাইকে বলব যখনই নাগরকোট যাবেন অবশ্যই হালকা কিছু শীতের কাপড় নিয়ে নেবেন। রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে।   দুদিন অপেক্ষায় থাকার পর তৃতীয় দিনে আমরা কিছুক্ষণের জন্য সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হলো। কি মনোলোভা নয়ন জুড়ানো সেই দৃশ্য! যেন পাহাড়ের চূড়া থেকে আস্তে- ধীরে একটা লাল টকটকে আগুন বল ডুবে যাচ্ছে তলিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশে। একসময় মিলিয়েও যায়। নাগরকোট গ্রামটি পৃথিবীর সবচাইতে উঁচু স্থানে অবস্থিত; যেখানে সবাই আকাশ দেখে ওপরে তাকিয়ে অথচ নাগরকোট থেকে আকাশ দেখতে গ্রামবাসী মাঠ থেকে নিচে তাকায় যেন তারা স্বর্গীয় সৌন্দর্য উপভোগ করছে মর্তালোক থেকে। এখানকার মানুষ খুব পরিশ্রমী। বাচ্চারা পিঠে ব্যাগ নিয়ে উঁচু নিচু পাথুরে পথ দিয়ে দূরে কোন স্কুলে যায়। মহিলারা পিঠে ব্যাগ বেঁধে একপাল ভেড়া কখনো ছাগল, শুকর নিয়ে হেঁটে যায় তার গন্তব্যে।  পথে দেখা যাবে পাহাড় থেকে খুব সরু ঝিরিঝিরি ঝরনা নেমে এসেছে বিভিন্ন জায়গায়। ছোট ছোট ঘর আর তার উঠোনে মুরগি, শুকরছানা, ছাগল, ভেড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে।  এখানে খুব সাধারণ যা দেখতে আমাদের মুদি দোকানের মত সেখানেও বিক্রি হচ্ছে ওয়াইন এবং নাম না জানা অনেক ধরনের রঙিন পানীয়। সবাই কিনছে কিন্তু দীর্ঘ পাঁচদিনে একবার ও আমাদের চোখে পড়েনি কেউ মদ খেয়ে রাস্তায় মাতলামি করছে বা কোন উচ্ছৃঙ্খলতা। সবাই আচরণে খুব পরিমিত এবং নিয়ন্ত্রিত, যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।  ভক্তপুর নাগরকোট থেকে ভক্তপুরের দূরত্ব প্রায় ১২.৪ কি.মি.। আমরা সকালের নাস্তা সেড়েই রওনা হলাম বাহাদুর ভাইয়ের গাড়িতে। রাস্তা যেহেতু সরু আর পাথুরে তাই সময় একটু বেশিই লাগলো। আমরা যাত্রাপথে চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে প্রায় চল্লিশ মিনিট পর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে।  ভক্তপুর এলাকার সামনে দাঁড়ালে মনে হবে কোন এক প্রাচীন সভ্যতার যুগে আমি চলে এসেছি। আমার ছোট কন্যা সম্প্রতি বিভিন্ন সভ্যতা নিয়ে পড়ছে। সে চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন রেখে বলে, মা আমরা কি মহেঞ্জোদারো নাকি হারিপ্পা সভ্যতায় এসে গেছি? প্রবেশ পথে টিকিট নিতে হয়। টিকিটের দাম একটু বেশি মনে হয়েছে আমার কাছে। আমাদের চারজনের দুই হাজার রুপি লেগেছে। প্রবেশপথে আমাদের একটা লিফলেট দেওয়া হলো যাতে ভাক্তপুরের মানচিত্র আছে। টিকিট নিয়ে সরু রাস্তা ধরে যতই এগিয়েছি ততই বিস্মিত হয়েছি। রাস্তার দুপাশে ছোট স্টলে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রকমের পুঁতি, পাথর আর মেটালের মালা, ইয়াকের হাড়ের তৈরি গহনা, ব্রেস্লেট, চাবির রিং, পশমিনো চাদর, পিতল কাসার ওপর খোদাই কারুকাজ করা মগ, গ্লাস পাত্র। তবে বেশ দামাদামি করতে হয় কিনতে গেলে। এর সঙ্গে আছে বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবির স্টল। শিল্পী নিজে উপস্থিত থেকে তার আঁকা ছবি বিক্রি করছেন। আমি অনুমতি নিয়ে তাদের স্টলের ছবি তুলেছি।  ভক্তপুরে প্রবেশদ্বারে দেখবেন অনেকে বলবে তাদের গাইড হিসেবে নেওয়ার জন্য। তবে এ জায়গাটা মানচিত্র দেখে নিজেরাই ঘুরে দেখা যায় কোন গাইডের সাহায্য ছাড়াই।  ভক্তপুরকে স্থানীয়রা খ্যোপা ( Khwopa) বলে। ইতিহাস বলে এই স্থান দ্বাদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত নেপালের রাজধানী ছিল। এই অঞ্চলের আয়ত ন ৬.৮৮ বর্গ কিলোমিটার এবং প্রায় ১ লাখ লোকের বসবাস। এখানকার জন সাধারণের পেশা হাতে বুনা নকশি কারুকাজ গহনা, বুনন, ব্যাবসা, চিত্রশিল্প, কুমার এবং সাধারণ চাকরি। তারা তাদের বংশ পরম্পরায় কাজের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখানে আছে অসংখ্য মন্দির, প্যাগোডা, স্টুপা, সিটি গেট, টেরাকোটা টেম্পল, পুরাতন বাড়ি, বুদ্ধিস্ট ধর্মাশলায়, শত বছর আগের পানির টানক, দরবার স্কয়ার, গোল্ডেন গেইট, টাওমাধি স্কয়ার, পটারী স্কয়ার এবং আরো অনেক নাম না জানা শত শত বছর আগের ঐতিহাসিক স্থাপনা।  দরবার স্কয়ার এবং টাওমাধি স্কয়ারকে সবচাইতে লোকপ্রসিদ্ধ মনে করা হয়। দরবার স্কয়ারের গোল্ডেন গেটের উপরে রাজা ভোপাতিন্দ্রা  মাল্লার খোদাই করা পাথরের মূর্তি যা এত জীবন্ত যেন চোখ ফেরানো দায়। এই দরবারে আরও আছে ৫৫টি জানালা, ভাঁটসালা মন্দির, পশুপতিনাথ মন্দির, বিগ বেল যাতে আছে নান্দনিক কাঠের কারুকাজ। আছে পাথরের খোদাই করা স্থাপত্য।  টাওমাধি স্কয়ারের প্রধান বৈশিষ্ট এর ভবন নির্মাণশৈলীতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর নান্দনিক অবকাঠামো যা দেখতে অনেকটা চতুষ্কোণ পিরামিডের মত এবং এর পাঁচটি ধাপ।এত আগে কিভাবে এই স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়েছে এটা এক বিস্ময়। সিঁড়ির দুপাশে পাথরের খোদাই করা সিংহের মূর্তি। এখানে আছে কাঠের আর পাথরের ওপর কারুকাজ করা অসংখ্য স্থাপত্য নির্দশন। পটারী স্কয়ার মাটির তৈরি সারি সারি পাত্র, খেলনা, শো পিস উঠোনে শুকাতে দিচ্ছে। কেউবা লাল মাটির মন্ড মাখছে নতুন কিছু সৃষ্টিতে। কুমারের কাজ ভক্তপুরের মানুষের পূর্বপুরুষদের পেশা; যা তারা সযত্নে লালন করছেন। ভক্তপুরের ভেতর কিছু হোটেল আছে যেখানে চাইলে রাতে থেকে যাওয়া যায়। আমরা তখন এই পরিকল্পনা করে নিলাম এরপর এলে অবশ্যই ভক্তপুরে দুদিন থাকব। জায়গাটা প্রাচীন সভ্যতার যুগে নিয়ে যায়। মুহূর্তেই মন চলে যায় সেই ইতিহাসের যুগে। ভক্তপুর পুরোটাই যেন এক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন।  কাঠমান্ডু আমরা ভক্তপুর থেকে হোটেল হায়াত প্লেসে পৌঁছালাম একঘণ্টায়। যাওয়ার পথে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম বাহাদুর ভাইকে নিয়ে। নেপালের খুব প্রচলিত বিখ্যাত খাবারকে তারা বলে থালি। এই থালিতে থাকে বাসমতি চালের সুগন্ধি ভাত আর চারপাশে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন ব্যঞ্জন। আমরা ভেজ থালি নিয়েছি। ঢেঁড়স, করল্লা এত মচমচে করে ভেজে দেয়, যেন মনে হয় কুরকুরে চিপস, আছে ডাল মাখানি যা বিভিন্ন ডালের সঙ্গে কচু শাক দিয়ে রান্না, আলুর দম, পালং শাক, পাপড়, দই ও আচার। তারা ভাতের উপর সুগন্ধি খাঁটি ঘি ছিটিয়ে দেয়। এখানে ভাত, ঘি বা ডাল মাখানি রিফিল নেওয়া যায় চাইলেই। আমার কাছে থালি খেতে অমৃতসম লেগেছে। হোটেল রুমের জানালা দিয়ে শম্ভুনাথ মন্দির দেখা যায়। আশেপাশেই আছে বিভিন্ন স্পা ও ম্যাসেজ ক্লিনিক। একটা বিষয় আমাদের অবাক করেছে পাঁচতারা হোটেল অথচ আশেপাশে নেই কোন আলোকসজ্জা। তারা প্রয়োজনের বাইরে বাতি জ্বেলে রাখে না। আমরা রাত নয়টায় বাইরে হাঁটব বলে বের হবো ভাবছি। হোটেলের দরজার চারপাশে খুব নিরবতা দেখে পিছিয়ে এসে যখন রিসিপশনে জানতে চাইলাম, বাচ্চাদের নিয়ে কি বের হওয়া নিরাপদ। তারা অবাক হয়ে হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই আপনারা নিশ্চিন্ত মনে ঘুরে আসুন। নেপাল আমার কাছে পর্যটকদের জন্য খুব নিরাপদ স্থান মনে হয়েছে। কাঠমান্ডুতে আমার স্বামীর সহকর্মী ছিলেন সেই সময়, তিনি আমাদের তার বাড়িতে নেমন্তন্ন করলেন। তিনি থাকেন কীর্তিপুর। এটা একটা আবাসিক এলাকা। এলাকাটি সমতল থেকে বেশ উঁচু জায়গায়। এখানকার সব বাড়িই ডুপ্লেক্স বা ত্রিপ্লেক্স এবং যা একটি পরিবারের একান্ত আবাসস্থল। প্রতিটি বাড়ির সামনে ছোট উঠোন যেখানে নানা ফুল আর পাতাবাহারের সমাবেশ আরও আছে নাম না জানা ক্যাকটাস। নিচে বসার ঘর সঙ্গে ডাইনিং এবং রান্নাঘর। বাড়ির পেছনেও বাগান তবে সেখানে বিভিন্ন শাকসবজি শোভা পাচ্ছে। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ওপরে শোবার ঘর। ছাদে সুন্দর দোলনা পাতা। প্রতিটি বাড়ির ছাদেই সোলার সিস্টেম আছে যা প্রতিটি বাড়ির পানি সাপ্লাই এবং বেসিক কিছু কানেকশন দেয়া। নেপালিরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে খুব সাশ্রয়ী। তাদের বেশিরভাগ বাড়িতে এসি তো নয়ই অতিরিক্ত ফ্যান পর্যন্ত নেই। বাড়িগুলো দেখে আমার লন্ডন শহরের বাড়ির মতো মনে হয়েছে। সব বাড়ির ডিজাইন এক ধরনের। নেপালের এই এলাকাটি অনেক অভিজাত এবং ছবির মতো সাজানো। শুরুতেই  আমাদের নেপালের ঐতিহ্যবাহী রুটির সঙ্গে একপ্রকার সবজি যা কিনা আচার দিয়ে রান্না করা আর সঙ্গে পানীয় হিসেবে জুস দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। রুটি খুব মজার অনেকটা জিলেপীর মত, রিং রিং এবং খুব মচমচে। হালকা মিষ্টি স্বাদের তাই খেতে খুব সুস্বাদু। আমার শুধু খেতেই বেশি ভাল লাগছিল। যদিও নেপালিরা সেই আচারী সবজি দিয়েই খায়। রাতে ডিনারে ছিল এলাহি কারবার। নেপালিরা খুব অতিথিপরায়ণ। তারা আমাদের মতো এত মশলা ব্যবহার করেনা। এমনকি মাংস রান্নায়ও কোন গরম মশলার ব্যবহার করে না। তারা কালোজিরা রাইস রান্না করে। বাসমতি চাল কে খুব হালকা ভাপে রেখেই নামিয়ে ঘি আর কালোজিরা ছিটিয়ে পরিবেশন করে। সাথে মুরগির ঝোল, কচু শাকের ডাল, মাছের কারি, পালং শাক, করলা ভাজি। আমরা যেমন সবজি দিয়ে চিংড়ি বা অন্য মাছ দিয়ে রান্না করি নেপালিরা কখনোই তা করে না। তারা সবজি খুব মচমচে করে ভেজে না হয় আধা সিদ্ধ খায়। সবার শেষে ডেজার্ট হিসেবে চিনির পায়েস ছিল সঙ্গে নেপালি মিষ্টি।  নেপালিরা আমের আচার খেতে খুব পছন্দ করে। বাড়ির ছাদ ভর্তি আম শুকোতে দেওয়া। আমার মনে হয়েছে এত আম এ দিয়ে অনায়েসে ৫০ বৈয়াম আচার করা যাবে। রাতে আমাদের তারা হোটেলে পৌঁছেও দিলেন। এত আন্তরিক এত অমায়িক একটা পরিবার আমাদের কাছে পুরো সময়টা খুব উপভোগ্য ছিল। চন্দ্রাগিরি কেবল কার কাঠমান্ডু থেকে চন্দ্রাগিরি যেতে গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমরা সকাল দশটায় পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। সেদিন ছিল বেশ আলো ঝলমলে; সোনালী ঝিকিমিকি রোদ্দুর চারদিকে। আমরা টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট নিলাম। সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ১২০০ নেপালি রুপি আর অন্য দেশের ক্ষেত্রে দামটা আরও বেশি। কেবল কার প্রায় ২৫৫১ কি.মি. উচ্চতার উপর দিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে অপর প্রান্তে যেখানে আছে হোটেল, কার রাইডারদের জন্য বিশ্রামস্থল ও বাচ্চাদের জন্য খেলার পার্ক। ঝুলন্ত কেবল কারে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে ১৫ মিনিটের মত সময় লাগে। একটা কেবল কারে ৮ জন বসতে পারে।  কেবল কার যখন প্রায় ৮০০০ ফুট উচ্চতায় উঠে যায় তখন আপনি বিমোহিত না হয়ে পারবেন না। চারদিকে সবুজ বনানী আর পাহাড়ের সারি। আকাশ পরিষ্কার থাকলে আপনি অনায়েসে কেবল কার থেকে হিমালয় সঙ্গে অন্নপূর্ণা ও এভারেস্টের চূড়া দেখতে পারবেন। এখানে চারপাশের শীতল বন্য ফুলের সুবাসিত স্নিগ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নিলে অনায়েসে মন প্রফুল্লিত হয়। এ যেন চারদিকের দূষিত জঞ্জাল যান্ত্রিকতা থেকে কোন এক স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া; চোখ বন্ধ করে অনুভবে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যাওয়া। মাঝে মাঝে মেঘ আপনাকে ছুঁয়ে যাবে। মেঘের ঠান্ডা শীতলতা আপনার চোখে মুখে দোলা দিয়ে যাবে। যারা একটু শীতকাতর তাদের কেবল কার ভ্রমণে শীতবস্ত্র পরিধান করতে হবে। কেবল কারের পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৫ কি.মি.।  কাঠমান্ডু থামেল মার্কেট পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট দোকানে আপনি পাবেন বাহারি হাতের নকশা করা ব্যাগ, পশমিনা চাদর, কুশন কাভার, বিছানার চাদর, মিহি সিল্ক বুননের রঙ বেরঙ কুর্তি এবং উলের চাদর ও পুতুল। আছে ঘর সাজানোর নানা সরঞ্জাম, পিতল ও কাসার মূর্তি, পানির পাত্র, ফুলদানি ও অলংকার। তবে তারা প্রায় দ্বিগুণ দাম হাঁকায়; তাই আপনাকে কিছু কিনতে হলে একটু সময় নিয়ে দরদাম করে কিনতে হবে। নেপালে যে পাঁচদিন আমরা ছিলাম, আমার বার বার একটা কথাই মনে হয়েছে আরও সময় নিয়ে আসা উচিত ছিল। যেন মনের আশ মেটে না।   লেখক : কথা সাহিত্যিক