• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo
জঙ্গীদের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের ভূমিকা
মানুষের সীমাহীন লোভ ও শাসকদের উদাসীনতার কারণে ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে
দেশের মানুষ এখন আর ঘুষখোরদের ঘৃণার চোখে দেখে না। চারদিকে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন ব্যাংকের অসৎ কর্মকর্তারা সস্মিলিতভাবে দেশের অর্থ আত্মসাতের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চোরের সঙ্গে চোরদের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এক চোর বিপদে পড়লে অন্য চোর এগিয়ে আসে ও নানান রকমের বুদ্ধি দিয়ে সাহায়্য করে। যারা ব্যাংক ডাকাতি, ঋণ খেলাপিও  বিতর্কিত তারা অনেকেই আজ রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সংস্থার নীতিনির্ধারক হিসাবে নিয়োজিত। আজকাল ঘুষ না দিলে কোন কাজ হয় না। দুর্নীতি ও ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দেশের মানুষের কাছে নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশে অভাবের কারণে খুব বেশি মানুষ দুর্নীতি করে না, বরং দুর্নীতি হচ্ছে ব্যক্তির সীমাহীন লোভের কারণে। দুর্নীতি ও ঘুষবিহীন জাতি গঠনের প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীন বাঙালি জাতি হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্ত দুঃখের বিষয় ৫৩ বছরের মধ্যেই আমরা আমাদের স্বাধীনতার প্রত্যয় অঙ্গীকার ও শপথ ভুলে গিয়েছি। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত হাত ধরে  বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ণ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ণ, বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় সফলতা, যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ণসহ অবকাঠামোর বিশাল উন্নয়ণ হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও মানুষের মানবিক মূল্যবোধের বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রাসঙ্গিক কারণে এসে যায়, দেশের মানুষের মানুষিক ও মানবিক মূলবোধের কথা। আমাদের দেশে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ দিন দিন ধ্বংস হতে চলেছে? দেশের সম্পদ  কুক্ষিগত করেছে অল্প কিছু মানুষ। পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থায় দেশে অল্প কিছু মানুষের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ-সুবিধার জন্যে রাষ্ট্রের আইন-নিয়ম-কানুন তৈরি হয়েছে এবং এই কারণে কিছু মানুষ বাধ্য হচ্ছে স্বার্থপর হতে, অন্যদিকে শ্রেণি-বৈষম্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী আজ বড়ই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে বা ধ্বংস হতে চলেছে। বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে জনগণের মাঝে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুতোষ গল্পের নামে ছোট বয়স থেকে শিশুদের মিথ্যা শিখানো হচ্ছে। পরিবারিক শিক্ষা ও প্রতিযোগিতার নামে শিশুদের শেখানো হচ্ছে অসৎ মানবিক মূল্যবোধ যা শিশুরা অজান্তেই তাদের মস্তিকে ধারন করছে। ছোট থেকে একটি শিশুর মানসিক বিকাশে মনুষ্যত্বের চেয়ে অর্থের প্রয়োজনীয়তাকে মূখ্য বলে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সুকৌশলে শিশুদের মানবিক মূল্যবোধ না শিখিয়ে তাদের চিন্তায় একটি জিনিস ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, প্রতিষ্ঠিত হওয়া মানেই অর্থের প্রাচুর্যতা। শিশুদের জন্য এই রকম শিক্ষাই মানবিক মূল্যবোধ নষ্টের জন্য দায়ী। যার প্রভাবে সমাজে দুর্নীতি ও অসৎ কাজ বেড়েই চলেছে। ঐতিহাসিক ভাবে বাঙালী জাতি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। কিন্তু নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণে আমরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, খাদ্য সংকটের কারণে বিভিন্ন জাতির মানুষ এক সময় নিজের মধ্যে মারামারি করতো এবং তাদের নৈতিকতা বলে কিছুই ছিল না। ইউরোপের অনেক দেশে অভাব ও ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে নৌকা করে ডাকাতি করতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেত এবং সেই দেশের সম্পদ লুষ্ঠন করে নিজেদের দেশে নিয়ে আসতো। কারণে অকারণে তারা মানুষ হত্যা করতো। এই সকল ডাকাত দলগুলির নাম ভাইকিং হওয়ায় জাতি হিসাবে ভাইকিং পরিচিতি পায় ইউরোপের অনেক দেশ। এই সকল ভাইকিংরা আজ মানবতার শীর্ষের দেশ ও পৃথিবীর সুখি দেশগুলির তালিকায় প্রথম সারিতে আছে। আমাদের অঞ্চলে কখনও খাদ্য অভাব ছিল না, জাতিগত ভাবে আমরা কখনই ডাকাতের জাতি ছিলাম না। কিন্তু কালের বিবর্তনে আমরা আমাদের নিজের দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছি। দুর্নীতি করে দেশ-বিদেশে টাকার পাহাড় বানাচ্ছি। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক সরকারের শাসন আমলেই দুর্নীতি দমনে উদাসীনতা দেখা গেছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। বিএনপি-জামাত শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে একাধারে পাঁচবার  চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায়। প্রচারে দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্সের কথা বললেও কার্যত দুর্নীতি দমনে তারা উদাসীন। দুর্নীতির কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে এতো উন্নয়ণমূলক কাজ ও অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে মানুষ ও রাষ্ট্রের উদাসীনতা দুনীর্তির সবচেয়ে ভাল প্রজননক্ষেত্র। পারিবারিক ও সমাজিক প্রতিরোধ ভেঙে পড়ায় পুরো বাংলাদেশ দুর্নীতির প্রজনন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমরা কেন ভাবি না আমাদের যোগ্যতা অনুসারে প্রাপ্তি হওয়া উচিত? পরিশ্রম করে বড় হলে লজ্জা লাগে কেন আমাদের? সত্য কথা বলতে আমরা দিন দিন ভুলে যাচ্ছি কেন? আসুন আমরা সবাই নিজেকে জানি, নিজের যা কিছু আছে সেটা নিয়ে ভাল থাকি এবং অন্যের কতো কি আছে তার হিসাব করা থেকে বিরত থাকি। আমরা দুনীর্তিকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে না দিয়ে সবাই নিজের প্রয়োজনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আওয়াজ তুলি, দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার বন্ধে ঐক্যবন্ধভাবে কাজ করবো। লেখক: মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক/ ডেনমার্ক আওয়ামী লীগ
অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
নিজেরা হাতে হাতে অস্ত্র রাখে, অথচ আমাদের মানবাধিকার শেখায় যুক্তরাষ্ট্র
লুটপাট আর টাকা পাচারে এগিয়ে কারা?
আজকের জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ!
লাকীর বেদবাক্যে অন্ধ বিশ্বাসীরা সাংবাদিকদের বিতর্কিত করতে বড়ই উৎসাহী
ছাগলকাণ্ডে ধরাশায়ী, লুটেরা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর দম্ভোক্তিকে আমরা চোখ বুজে ‘বেদবাক্য‘ বলেই মেনে নিয়েছি। কোনো যুক্তি, কারণ ছাড়া বিনা প্রশ্নেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত মতিউরের স্ত্রী হলেও তিনি কোনোভাবেই মিথ্যা বলেন না, বলতে পারেন না। আমরা ধরেই নিয়েছি তার মতো পূতপবিত্র নারীর দ্বারা প্রতারণা কিংবা বিন্দুমাত্র কুটকৌশল খাটানো কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। ‘বড় বড় সাংবাদিকদের কিনে এসেছি, সব থেমে যাবে’ কথাটি লায়লা লাকী যে মুহূর্তে বলেছেন, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই তারপ্রতি অন্ধ বিশ্বাস জন্মেছে এবং তা কোরআন-হাদিসের মতোই অন্তরে গ্রোথিত করে নিয়েছি। তার কথা প্রশ্নহীন সত্যবচন হিসেবে মনে করেছি বলেই আমরা সুবিধাভোগী বড় সাংবাদিকদের তালিকার সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। লুটেরা মতিউরের প্রথম স্ত্রী লাকী তাদের পাহাড়সম সম্পদ রক্ষার্থে নিজেকে ও স্বামীকে বাঁচাতে সবরকম ফন্দিফিকির করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। দেশে এখন বড় কোনো অঘটনের ভয়াবহতায় যদি মতিউরের সব গল্প চাপা পড়াটা নিশ্চিত হয়, তাহলে সেই অঘটনটি ঘটাতে কোটি কোটি টাকা ঢালতেও একবিন্দু দ্বিধা করবেন না তারা। নিদেনপক্ষে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, কিংবা সাংবাদিকতাকেই বিতর্কিত করা যায় তাহলে তো কথাই নেই। মুহূর্তেই সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন লাকী-মতিউরের লুটেরা জুটি। এই হালকা বুদ্ধির সহজ পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই তারা সাংবাদিকদের বিভাজন-বিতর্কিত করার অপকৌশলে নামলেন কি না, এমন কিছু আমাদের সন্দেহমূলক ভাবনাতেও কিন্তু আসে না। আমাদের বদ্ধমূল ভাবনায় শুধু আসে লায়লা লাকীর (পরিকল্পিত ভাবে) প্রকাশ করা ‘টাকা দিয়ে সব থামানোর’ বিষয়টি। বড় সাংবাদিকদের বস্তায় বস্তায় টাকা দেওয়ার বিষয়টি গুজব হলেও তা আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে চাই। এ জন্য যুক্তি, প্রমাণ, পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন বোধও করছি না। সত্য-মিথ্যা অনুসন্ধান করে দেখার এতটুকু আগ্রহও জাগে না মনে। বলা হচ্ছে, একজন সাংবাদিকের চাঁদপুরস্থ খামার বাড়ি বেড়ানোর উছিলায় বড় সাংবাদিকদের কিনে ফেলা হয়েছে। এমন উড়ন্ত তথ্য পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বাসও করে নিচ্ছি। সূত্রবিহীন অনুমান নির্ভর সে তথ্যকে পুজি বানিয়ে দেদারছে অপপ্রচারও চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পেশাদারিত্বের সঙ্গেও কী বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ?  অপেশাদারিত্বের এসব কাজ তো কথিত টিকটকার, ব্লগার, ইউটিউবারদের ভাইরাল ঘৃণ্যতা বলেই মনে করা হয়। এখন কী সে ভাইরাল ভুত সরাসরি পেশাদারদের কাধেও চেপে বসল? সাংবাদিক হয়েও আমরা তাদেরকেই অনুকরণ, অনুসরণ করছি নাতো? মতিউরের লুটপাটকৃত সম্পদের সবচেয়ে বেশি অংশের সুবিধাভোগী নারী লায়লা লাকীর সূত্রহীন, প্রমাণহীন নিছক বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই সাংবাদিকদের বিতর্কিত করার কর্মকাণ্ডে আমরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ফেসবুকে টিকা-টিপ্পনী, রম্য, কার্টুন প্রকাশের ক্ষেত্রে রীতিমত পাল্লাপাল্লি চলছে বৈকি। বাস্তবেই পান থেকে চুন খসলে সাংবাদিকতাকে বিতর্কিত করতে একশ্রেণির সাংবাদিকই অতি উৎসাহী ভূমিকায় নামেন বরাবর।  এরইমধ্যে বড় সাংবাদিক আর ছোট গণমাধ্যমের প্রসঙ্গ তুলে কেউ কেউ বিরাট আয়তনের বিভাজন সৃষ্টির কথাবার্তাও লিখতে শুরু করেছেন। এরপর হয়তো প্রিন্ট পত্রিকা, অনলাইন ও টিভি চ্যানেলকে আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত করার বিতর্কও উঠে আসবে। মোট কথা, মতি-লাকীর প্রসঙ্গ গোল্লায় যাক, আগে সাংবাদিকদের সাইজ করি। একটু ভাবুন তো, এ পর্যন্ত লুটেরা মতিউরকে ঘিরে যতটা নিউজ কাভারেজ হয়েছে তা কি অপ্রতুল? মোটেও না। কোনো গণমাধ্যম মতিউর গংকে একচুল ছাড় দিয়ে রিপোর্ট করার নজির আমার চোখে পড়েনি। অনলাইন সংযুক্তি আছে এমন টিভি চ্যানেল, পত্রিকা, পোর্টাল ঘেঁটে দেখা যায়, ছাগলকাণ্ড, মতিউর এবং তার পরিবারের সদস্যদের ঘিরে অন্তত ৪৩টি ভিন্ন ধরনের শতশত নিউজ প্রকাশ হয়েছে। যেদিন লাকী সাংবাদিক কিনে ফেলার কথা প্রকাশ করেছেন- সেই নিউজও কিন্তু মিডিয়াগুলোতে কাভারেজ পেয়েছে। এটা কি থামিয়ে দেওয়া প্রমাণ করে? ঈদের পূর্ব সময় থেকে শুরু হওয়া ছাগলকাণ্ডের মতিউরের বিষয়াদি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের নজির আজকেও রয়েছে।  বিষয়টি আমার অজ্ঞতা থেকে ভুল ভাল বিশ্লেষণও হয়ে থাকতে পারে- কিন্তু একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনিও নিজের বিবেক দিয়ে তা ভেবে দেখুন তো। মিডিয়ার চলমান সংবাদ কাভারেজের পরিবর্তে মতি গংয়ের সাফাই গাওয়ার নজির এখনো চোখে পড়েনি। প্রয়োজনীয় সংবাদ তথ্যও কী এড়িয়ে যাচ্ছেন কেউ? সেসব যদি না ঘটে থাকে তাহলে সাংবাদিকদের বিতর্কিত করার অতিউৎসাহ কার স্বার্থে? লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক  
অস্ত্র কিনতে বাইডেন পুত্রের মিথ্যাচার ও যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার চর্চা 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি মাদকাসক্ত হওয়ার পরেও বলেছেন তিনি মাদকাসক্ত নন। প্রভাব খাটিয়ে অস্ত্র বিক্রেতার নথিতে মিথ্যা তথ্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পাশাপশি হান্টার ১১ দিন অবৈধভাবে কেনা আগ্নেয়াস্ত্রটি নিজের কাছে রেখেছেন। ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনের ফেডারেল আদালতের ১২ জন জুরির কাছে এই ৩টি অভিযোগই প্রমান হয়েছে। ৫৪ বছর বয়সি হান্টার এই রায় দেয়ার সময় প্রায় প্রতিক্রিয়াহীন ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি  নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, অস্ত্র কেনার সময় তিনি মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে এসেছেন।  রায়ের আগে বাইডেন বলেছিলেন, রায় যাই হোক তিনি মেনে নেবেন। রায়ের পর ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। রায়ের আগে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট, কিন্তু আমি একজন বাবাও। হান্টার এখন মানুষ হয়ে উঠেছে, সে জন্য আমরা খুবই গর্বিত। আমি ও আমার স্ত্রী সব সময় হান্টারের পাশে থাকব এবং আমাদের পরিবারের বাকি সবাই ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে তাঁর পাশে থাকবে” বিচারক সাজা ঘোষণার জন্য কোনো তারিখ দেননি। তবে জানান, ১২০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর হবে। এই ইস্যুতে মার্কিন আইনে ১৫ থেকে ২১ মাস সাজা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা গণমাধ্যমে জানান, এ ধরণের মামলায় দোষিরা সহজ সাজা পান।  এই পুরো বিষয়টা গত কয়েকদিন ধরে পত্রপত্রিকায় আসছে। তবু্ও আলোচনার সুবিধার জন্যে আরেকবার বললাম। অপরাধ যেখানে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অস্ত্র কেনার মত গুরুতর, সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে খুব সাধারণ কোন ঘটনা। যেটার বিচার না করলেও চলে। খোদ রাষ্ট্রপতিও বিষয়টি দেখছেন সাধারণ বিষয় হিসাবে। যেন কিছুই হয়নি। বিষয়টা আসলেই তাই। গোটা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যাবহার সংস্কৃতি তাই বলে। সারা পৃথিবীর মানুষকে মানবাধিকার রক্ষার জ্ঞান বিতরণকরা যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ নাগরিক মনে করেন, অস্ত্র রাখা তার মৌলিক অধিকার।  অস্ত্র ব্যবহারের মত বিষয় যারা অবাধ করতে চায়, তারা অস্ত্র কেনার জন্যে দু’একটা মিথ্যা বলাটাকে অপরাধই মনে করবে না সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশ হলে প্রশ্ন আসতে পারতো। এমনিতেই তো রাষ্ট্রপতি পুত্রের নিরাপত্তা পাওয়ার কথা। তাঁকে মিথ্যা বলে অস্ত্র রাখতে হবে কেন? ব্যক্তিগত অস্ত্র রাখার এত তাড়া কেন তার? অস্ত্র নিয়ে তিনি কী করতে চেয়েছিলেন? সেটা কতটুকু মানবাধিকার সম্মত? কিন্তু দেশটির নাম যখন যুক্তরাষ্ট্র তখন সেসব প্রশ্নের বালাই নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশ যারা প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষার ঘেরাটোপে পড়ে, সেব দেশের মানুষেরা এই প্রশ্ন তুলতেই পারেন।    যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিভক্তি রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভাল হান্টারের বাবা বাইডেনের ডেমোক্রটিক দল রাজনৈতিকভাবে অস্ত্রের অবাধ ব্যবহারের বিপক্ষে। তাদের কংগ্রেস, সিনেট, গণমাধ্যমে প্রায়ই দুই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক হয়। অস্ত্রের অবাধ ব্যবহারের বিপক্ষে থাকা ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় থাকার পরেও অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। একের পর এক গোলাগুলি হচ্ছেই।  যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান তৈরি হয় ১৭৮৭ সালে শুরু হয়ে ১৭৮৯ সালে শেষ হয়। ১৭৯১ সালে একটা সংশোধনী আসে। সেখানে বলা হয়, কখনও কেন্দ্রীয় সরকার অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে যে কোন নাগরিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারবে। ১৮৮১ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ এই প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় পর ১৯৬০ এর দশকে দলগত হানাহানি বেড়ে যাওয়ায়, প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যার পর প্রথম অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে আসে মার্কিন প্রশাসন।    এই সাংবিধানিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকার কারণে বেশিরভাগ মার্কিনী মনে করেন অস্ত্রের ব্যবহার মৌলিক অধিকার। এর পরিবর্তন তাদের কাছে অবমাননার মত। নাগরিকের এই মনোভাব সবচেয়ে বেশি বোঝে রিপাবলিকানরা। তাই তারা সরাসরি তারা ব্যক্তিগত অস্ত্রের ব্যাবহার মৌলিক অধিকার হিসাবে রাখার পক্ষে। আর ডেমোক্রেটরা ওপরে ওপরে না না করেন, কিন্তু অনুশীলনের যায়গায় অস্ত্রের পক্ষেই থাকেন। যদিও দেশটিতে বাড়ছে ছিনতাই, ডাকাতি, দলগত সহিংসতা। দিন দিন নিরাপত্তাহীন হচ্ছে অভিবাসী এবং অ-সেতাঙ্গরা। তবু তাদের পার্লামেন্টে পাশ হয় না অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন।  মানবাধিকারের সবকদাতা যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাধর অস্ত্রব্যবসায়ীরা। তারা রাজনীতিকদের নিয়ন্ত্রণ করে। অস্ত্র অধিকার সমর্থনকারী রাজনীতিকরা পার্লামেন্টে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে যেন আইন পাশ না হয় তা নিশ্চিত করেন। বিষয়গুলো সেদেশে এতটাই প্রকাশ্য যে, তাদের গণমাধ্যম এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছে 'গান লবিং' । গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, বন্দুকের পক্ষের লোকজন শুধু লবিং করতেই, ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। তাদের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন শুধু ২০২০ সালেই অস্ত্র অধিকার রক্ষায় খরচ করে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।  যুক্তরাষ্ট্রে এমন মানুষের অভাব নেই, যাঁরা মনে করেন, আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে অস্ত্র রাখা জরুরি। তাই অনেক রাজ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত গুলিভরা অস্ত্র বহন করার অনুমতি রয়েছে। কোনো কোনো রাজ্য আছে, যেখানে কোন বাড়িতে কোন মানুষ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির মালিক যদি মনে করেন আগন্তুক সন্দেহজনক। তিনি সেই সন্দেহের ওপর ভিত্তি করেই গুলি চালাতে পারেন এবং তিনি যদি সন্দেহ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তার শান্তি হয় না। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অস্ত্রের ব্যবহারের বর্ননা লিখে শেষ করা কঠিন। প্রতিবছর গড়ে এক হাজারের বেশি নিরাপরাধ মানুষ মারা যায় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারে।  এখন প্রকাশ্য হচ্ছে অস্ত্র নিয়ে বাইডেন ও তার দলের দ্বিমুখী চরিত্র। কারণ তিনি বা তার দল যত হাকডাকই দিন না কেন, এ বছর তাদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের আইন পাস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বলা যায় তিনি এবং তার প্রশাসন প্রকাশ্যে মানবাধিকারের বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছেন। যেমনটা তারা সবসময় দাঁড়ান। কিন্তু নানা ছলে ও ছায়ায় ঢেকে রাখেন। কিন্তু ঠিক এই সময় অস্ত্র নিয়ে ছেলের মিথ্যচারের পাশে দাঁড়াতে হলো তাঁকে। এর ফলে যেটা হলো, তাদের মানবাধিকার চর্চার প্রকৃত চরিত্রটি সবাই দেখতে পেলো। আমি জানি না, এখন কী করবেন ফজল আনসারিরা। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রের কাছে কী অস্ত্র নিয়ে হান্টারের প্রমাণিত মিথ্যাচার এবং তার পাশে বাইডেনের দাঁড়ানো নিয়ে কোন প্রশ্ন করবেন?  লেখক: গণমাধ্যম কর্মী  
হঠাৎ বড়লোক দেশের আপদ
বৈধ আয়ের পথ ছাড়াই রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া কয়েক হাজার মানুষ দেশের বড় আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারাই গড়ে তুলেছে লুটপাটের সাম্রাজ্য। দেশের ভরাডুবি ঘটিয়ে বিদেশে টাকা পাচার, ইউরোপ-আমেরিকায় সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম বানানোসহ বড় বড় ব্যবসা বাণিজ্য ফেঁদে বসেছে। তাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে অসম পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, ঘটাচ্ছে সীমাহীন বিশৃঙ্খলা। সমাজে কোন্দল-সংঘাত, জবর দখলদারিত্ব, একচ্ছত্র আধিপত্যের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাসহ লাগামহীন অপরাধ অপকর্মের নেতৃত্বও দিচ্ছে তারা।  হঠাৎ বড়লোকদের একটি বড় অংশই দলীয় নানা পর্যায়ের নেতৃত্ব দখল করছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে জনপ্রতিনিধির চেয়ারও। ফলে সর্বত্রই শাসন শোষণের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদকে রাতারাতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করার দুর্ণিবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ প্রতিযোগিতার বিপরীতে অপরাধ-অপকর্ম, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি থেকে শুরু করে সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে বাধাহীনভাবে।  অর্থবিত্তের বেপরোয়া দাপটে সর্বত্রই নীতি নৈতিকতা জলাঞ্জলী দিয়ে একে অপরকে টপকে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। গত বছরেই নতুন কোটিপতি হয়েছেন ৩০ হাজার ব্যক্তি। তাদের অধিকাংশের বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বা কর ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিক হিসেবেও এসব কোটিপতির নাম তালিকা ছিল না। এমনকি ব্যাংকিং একাউন্টের হিসেব কষে তাদেরকে চিহ্নিত করার উপায় নেই। এদের মধ্যে চার সহস্রাধিক কোটিপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতি-লুটপাট সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে- তবে সেসব অভিযোগ কোনো ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়নি। ফলে সহসা তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ নেই।  হঠাৎ ক্রোড়পতি হয়ে ওঠা লোকগুলোই সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আপদ। উৎসহীন বেশুমার টাকার গরমে তারা সমাজ, দল ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে নানা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জানান দেয়। সর্বত্রই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলে, অসম লড়াই বাধিয়ে নিজের বাহাদুরী প্রমাণ করে। পাহাড়সম অর্থবিত্তের দাপটেই আপদ মার্কা লোকগুলো সমাজের কর্তৃত্ব কিনে নেয়, টাকা ছিটিয়েই দখল করে দলীয় পদ-পদবীও। রাতারাতি তারা এমপি, মন্ত্রী এমনকি আরো আরো প্রতাপশালী মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ফলে সবকিছুকেই তারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা দেখাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। হঠাৎ দাপুটে হয়ে ওঠা লোকগুলো সব অসম্ভবকেই সম্ভবে পরিনত করার মধ্য দিয়ে বিকৃত আনন্দবোধ করে।   নানা তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, দেশে হঠাৎ বড়লোক বা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার বৈধ কোনো উপায় নেই। ‘যদি লাইগ্যা যায় মার্কার লটারী‘ ব্যবস্থাও সচল নেই। আছে-রাতারাতি অলৌকিক কায়দায় আলাদীনের মতো আশ্চর্য জাদুর প্রদীপ লাভ করা, ‘ম্যাগনেটিক পিলার’ কিংবা তক্ষক লেনদেনের বাণিজ্য, ঠিকাদারী ব্যবসা চালানো, ইয়াবা বাণিজ্যে অংশগ্রহণ আর তাদের সবচেয়ে সেরা পথ হচ্ছে তদবিরবাজীর দাপুটে বাণিজ্য।  যে পথে হঠাৎ ক্রোড়পতি  অলৌকিকতার বাইরে রাতারাতি অগাধ টাকার মালিক হওয়ার সার্বজনীন পথ হলো 'ঠিকাদারী বাণিজ্য।‘ ক্ষমতাসীন দলের সুগন্ধী দেহে লাগিয়ে, নানা ধূর্ততা, কুটকৌশল আর বহুমুখী প্রতারণাকে পুঁজি করে ঠিকাদারীর সাইনবোর্ডে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়া হচ্ছে। ঠিকাদাররা সরকারের নানা সেক্টরে কাজ করলেও স্বাধীন ব্যবসায়ি, তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো জবাবদিহিতাও নেই। দুই-চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া সরকারের সিংহভাগ কাজই ঠিকাদাররা যেমন খুশি তেমন ভাবেই করতে পারেন, ফলে লুটপাটও চলে যথেচ্ছা। ঠিকাদারি কর্মকান্ডে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী, রডের পরিবর্তে বাঁশ-কঞ্চির ব্যবহারসহ টেন্ডারের শর্ত ভঙ্গ, কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা তুলে নেয়ার মতো হরিলুটের ঘটনা এখন অলিখিত নিয়মে পরিনত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা লুটপাট সহযোগিতায় বরাবরই তৎপর থাকেন। একটু চোখ মেলে তাকালেই হঠাৎ ফুলে ফেপে প্রতাপশালী হওয়া মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু, জি.কে শামীম থেকে শুরু করে শাহেদ করিম পর্যন্ত অজ্ঞাত ক্ষমতাধারী অসংখ্য ঠিকাদারের চেহারাই ভেসে উঠে। তারা সবাই ঠিকাদারী বাণিজ্যের কেউকেটা। ঠিকাদারীর ক্ষেত্রে প্রভাব বলয় সৃষ্টির জন্য তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে ক্ষমতাসীন দল কিংবা সহযোগী সংগঠনে নাম লেখান এবং পদ-পদবী দখল করে নেন। আবার রাজনৈতিক নেতারাও ঠিকাদারী বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠার অসংখ্য নজীর রেখে চলছেন। নিত্যনতুন কুটকৌশল আর নেটওয়ার্ক মেইনটেন করে নিমিষেই কোটিপতি, শত কোটিপতি হয়ে ওঠার আরেকটি নিশ্চিত পথ হলো ইয়াবা বাণিজ্য। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর ভূমিকায় মাঝে এ ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে পড়লেও তা বন্ধ হয়নি মোটেও। বরং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তার সমন্বয়ে মাদক গডফাদাররা ইয়াবার বাণিজ্যের আরো বিস্তৃতি ঘটিয়ে চলছেন। এক সময় প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িদের থেকে দিন, সপ্তাহ, মাসিক বখড়া আদায়ের বিপরীতে ইয়াবা বেচাকেনার সুযোগ দিতেন। গত কয়েক বছর যাবত প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বখড়ার পরিবর্তে নিজেদের অংশীদারিত্বেই ইয়াবা বাণিজ্য পরিচালনা করছেন মর্মে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ইয়াবা আনা-নেয়া বাণিজ্যে জড়িত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা হাতেনাতে গ্রেফতারও হয়েছেন। সর্বনাশা মাদক ইয়াবা বাণিজ্যে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারাও হঠাৎ কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। এর আগে ইয়াবার কল্যাণে (?) চাল-চুলোহীন পাঁচ শতাধিক লোক শত কোটিপতিতে পরিনত হয়েছেন, আর ক্রোড়পতি হয়ে উঠেছেন অন্তত তিন হাজার ক্ষুদে বিক্রেতা।   তবে কোটিপতি হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে তদবির বাণিজ্য। ধোপদুরস্ত পোশাক পরিচ্ছদ, চলনে বলনে ওভারস্মার্ট- আর সবকিছুর উপরে একটা মুজিবকোর্ট জড়াতে পারলেই সোনায় সোহাগা। সরকারী দল বা সহযোগী সংগঠনে পদ-পদবী থাকুক না থাকুক তাতে কোনো সমস্যা নেই। কখনও একা, কখনও দল বেধে তারা সরকারি দপ্তরে দপ্তরে, শিল্প-কারখানা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়েই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, নেত্রীর অযাচিত প্রশংসার বিরতিহীন বক্তব্য শুরু করে দেন। দলের জন্য নিজের কল্পিত ত্যাগের বুলি আউড়িয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করেন তারা। কোনো জনসভা, মিছিলে অংশ নেয়ার কিংবা নেতার সঙ্গে ছবি তোলা থাকলে তো কথাই নেই। বার বার তা মোবাইল স্ক্রীনে প্রদর্শন করেই তদবিরের আসল বাণিজ্যে নেমে পড়েন এসব ধান্ধাবাজ।  আগে শুধু নিয়োগ, পদোন্নতি, পোস্টিং নিয়ে টুকিটাকি তদবির চালালেও এখন তাদের তদবিরবাজীর ধরন পাল্টেছে, বিস্তৃতিও ঘটেছে। তারা জামায়াত-বিএনপির যেসব নেতা কর্মি মামলায় মামলায় জর্জরিত হয়ে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন- তাদেরকে সরাসরি ক্ষমতাসীন দল-উপদলে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এমনকি পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্থিক যোগানের বিনিময়ে তাদের পদ পদবীধারী নেতা বানানোর তদবির বাণিজ্যেও মেতে উঠেছেন তারা। আবার দলের অচেনা অজানা সাধারণ কর্মি সমর্থককে ওয়ার্ড, থানা, জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা, বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এনে দেয়ার তদবিরবাজীতেও ব্যস্ত থাকছে চক্রটি। এসব কাজে সফল হোক বা না হোক, লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করে দিব্যি আলীশান জীবন যাপন করে চলে তদবিরবাজরা
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: গৌরবময় সাফল্যের স্বর্ণালী ইতিহাস
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে। শাসকদল মুসলিম লীগ ছিল সাম্প্রদায়িক। ফলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশও অনেকটা সাম্প্রদায়িক চেহারা পায়। এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনেও পড়ে সাম্প্রদায়িকতার ছায়া। পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন তারুণ্য ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কৃত্রিম খোলসে মুখ ঢাকা রাখতে বেশিদিন রাজি থাকেনি। তাদের উদ্যোগে পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে প্রথমে ছাত্রলীগ, পরে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানেও আওয়ামী লীগের শাখা গঠিত হয়। ফলে গোটা পাকিস্তানেই আওয়ামী লীগ একমাত্র বড় জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের একই ভূ-খন্ড নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র দুটির একটি ‘পূর্ব পাকিস্তান’ অন্যটি ‘বাংলাদেশ’। এ কথা সর্বজনবিদিত যে, পাকিস্তান নামক ঔপনিবেশিক ধরনের কৃত্রিম রাষ্ট্রের নিগড়ে বাঁধা বাঙালি জাতি তার নিজস্ব একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে থেকে ভাষা-সংগ্রাম, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের জন্য ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভেতর দিয়ে একদিকে এই ভূ-খন্ডে পাকিস্তানের কবর রচনা করে, অন্যদিকে বাঙালির নিজস্ব প্রথম জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। এই সংগ্রাম ও যুদ্ধে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব প্রদান করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জনকল্যাণের ব্রত নিয়ে ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির আত্মপ্রকাশ, দুই যুগেরও কম সময়ের ব্যবধানে, ১৯৭১ সালে সেই দলটির নেতৃত্বেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্মকালে যে দলটির নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ, সেই দলটিই আজকের আওয়ামী লীগ। প্রথম কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন সে সময়ের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে সে সময়ের কথা উল্লেখ আছে। যখন ঢাকার রোজ গার্ডেনে দলের গোড়াপত্তন হচ্ছে, তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে। তরুণ শেখ মুজিব যে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কথা ভেবেছিলেন, তা কার্যকর হতে খুব বেশিদিন লাগেনি। ১৯৪৯ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ পরবর্তীকালে নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নেতৃত্ব দলকে একটি অসাম্প্রদায়িক দলে রূপান্তর করে। তখন এটি ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে “বাংলাদেশ” নামে নামকরণের ঘোষণা দেন। ১৯৫২ সালে ভাষা সংগ্রামের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়-আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গৌরবগাঁথা, বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক আত্ম প্রকাশ তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা পাকিস্তানের রাজনীতির দৃশ্যপট বদলের ও সূচনালগ্ন হিসেবে চিহ্নিত। আওয়ামী লীগের জন্ম ছিল পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক ধরনের শাসন শোষণ এবং মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক-স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতির অবসানের অনিবার্যতার ফল।  স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় কেবল নয়, একটি আত্মমর্যাদাশীল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই ছিল আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এইচএম কামরুজ্জামান তাদের জীবন দিয়ে এসই অঙ্গীকারের মূল্য পরিশোধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের সেই ষড়যন্ত্র ৭৫’ এর ট্রাজিডি সৃষ্টি করে। তা  সত্বেও  বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতির পিতার অঙ্গীকার ও স্বপ্ন জয়ের পথে অকুতোভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ।  দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। আদর্শবাদী, উদারনৈতিক এই রাজনৈতিক দলটির অস্তিত্ব বিনাশের চেষ্টাও হয়েছে। দলের ভেতরের কোন্দলও অনেক সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেয়েছে; কিন্তু আলোর পথযাত্রী আওয়ামী লীগ সব বাধা-বিপত্তি মাড়িয়ে এগিয়ে গেছে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে প্রবাসে নির্বাসিত জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। সেই বছরের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশের এক ক্রান্তিকালে দেশে ফেরেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একটানা ৪৩ বছর দলটির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে ২১ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পায়। খুব কম দেশেই একটি দল ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮, ২০২৩ টানা চারবার জনগণের ম্যান্ডেট পায় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগে মুজিব যুগই হচ্ছে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল যুগ। তিনি অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রচার করেন। ঘোষণা করেন পূর্ব পাকিস্তান নয়, এই ভূখন্ডের নাম বাংলাদেশ। আমরা হাজার বছর ধরে বাঙালি। আমাদের পরিচয় হবে বাঙালি। বড় ঢেউ তোলে বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালির যে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তার মিল দেখা যায় অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সভ্যতার সঙ্গে। বাংলাদেশে সেই ঐতিহ্য ধারণ করেন শেখ মুজিব এবং সেই জাতীয়তার বাহক হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। মুজিব যুগের আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। আওয়ামী লীগে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটে। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন শোষিতের গণতন্ত্র। সেই অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতির পিতার  স্নেহধন্য,  ত্যাগী ও নিবেদিত প্রাণ, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের প্রাক্তন সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বার কে গভীর শ্রদ্ধায় স্বরণ করছি।   উপমহাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বলা চলে, এই দলটির ইতিহাসই হচ্ছে বাংলাদেশের গত ৭৫ বছরের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস যাঁরা পাঠ করবেন, তাঁদের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠ করা তেমন দরকার হবে না। জনগণের জন্য, জনগণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই দলটির প্রতি এখনো জনগণের অবিচল আস্থা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দলটির অসাম্প্রদায়িক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক। ৭৫ বছর পূর্ণ করেও আওয়ামী লীগ তার তারুণ্য হারায়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, যুগান্তরের লক্ষ্য ও কর্মসূচি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বএই তিনটি রক্ষাকবচের জোরেই আওয়ামী লীগ নতুন প্রাণ পাবে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস অপরাজেয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ গঠনের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।                                 আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ভাষা সংগ্রামের পথ ধরে ৬৬ সালে ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ এবং সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ৭৫ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে দলটি। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র করা হয়। দলের ভেতরেও শুরু হয় ভাঙন।  ১৯৮১ সালে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শক্ত হাতে এবং তাঁর সাহসী নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং বারবার  ঘুরে দাঁড়ায়।  গণতন্ত্র, ভাষা সংগ্রাম, স্বাধীকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর জাতীয় পূর্নগঠন, বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাসড়কে উত্তরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ তথা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, নারীর ক্ষমতায়ন, সমুদ্র বিজয়, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২১ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্য অর্জন, নিজস্ব অর্থে পদ্মসেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রোরেল, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীতে সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণ, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সফলভাবে কোভিড মহামারি মোকাবেলা ও দ্রত সময়ে টিকাদান সম্পন্ন এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জন প্রভৃতি উল্লেখ করলেও আওয়ামী লীগের অর্জনের কথা শেষ হবে না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।  বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমরা শুধু একটি কথাই বলব, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুখে-দুঃখে, বিপদে আপদে সর্বদা দেশবাশীর পাশে আছে এবং থাকবে। অপ্রতিরোধ্য আওয়ামীলীগ কেবল অতীত বর্তমান নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের নির্মাতা। আওয়ামীলীগ চিরজীবী হোক।    লেখক : প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২
আম নিয়ে কষ্টগাঁথা
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে উচ্ছ্বসিত ছিলাম। বিশাল বিশাল আম বাগানে ঘুরছি-ফিরছি, নানা জাতের সুমিষ্ট আম খাচ্ছি। আমের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ উপভোগ করার মজাই আলাদা। এর মধ্যেই যে আমচাষি আর বাগান মালিকদের রক্তক্ষরণ, কষ্ট-কান্না শুনতে পাব, তা তো কল্পনায়ও ছিল না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ কানসাটের অদূরে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সন্নিকটে উদ্যোক্তা ও গণমাধ্যমকর্মী আহসান হাবিবের আম বাগানে পৌঁছেই যেন চোখ কান খুলে গেল। নিজের বহুমুখী আম বাগান প্রকল্পটি দেখানোর ফাঁকে ফাঁকেই আহসান হাবিব জানালেন কষ্টের কথাগুলো। বললেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৮ হাজার হেক্টরজুড়ে আম উৎপাদন হয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক লাখ আমচাষি। আম মৌসুমে জেলায় কর্মযজ্ঞে জড়িয়ে পড়ে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতি মৌসুমেই আম ঘিরে লেনদেন ঘটে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। অথচ, স্থানীয়ভাবে আম কেনার ক্ষেত্রে ফড়িয়া, ব্যাপারী, দালাল, আড়ত মালিক সিন্ডিকেট ৪০ কেজির স্থলে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে আমের মণ ধরে। এভাবে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। এর একবিন্দু সুবিধাও ভোক্তারা পাচ্ছেন না। বছরের পর বছর ধরে এই যে বিশাল অংকের চাঁদাবাজি ঘটে চলছে তা বন্ধের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ তথা সরকারের কোনো রকম উদ্যোগ নেই।  ধান চালের ক্ষেত্রেও বস্তার গায়ে নির্দিষ্ট করে ওজন, উৎপাদনের তারিখ ও জাত লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমের ক্ষেত্রে সেইটা কেন হচ্ছে না? চাষিরা বলেছেন, সারা দেশের সব আম বাজার ও আড়তে কাঁচা পণ্য হিসেবে ওজনে প্রতি মণে আমরা ৪-৫ কেজি আম বেশি দিতে রাজি আছি, কিন্তু সেটাও সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হোক। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখানকার কৃষি বিভাগ নয়, আড়ত মালিকরাই কৃষি অফিসের সহায়তায় দিয়ে থাকেন আইএসও ক্লিয়ারেন্স। প্রশিক্ষিত চাষিরা অতিরিক্ত খরচের মাধ্যমে যে উন্নতমানের আম চাষ করছেন সেগুলো কিনছে না রপ্তানিকারকরা। তারা বিভিন্ন আড়ত থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে নানা মিশেল দেওয়া ও গ্যাপ মেইটেনেন্সের বাইরের আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। এতে যেকোনো সময় নিম্ন-মানের আম চিহ্নিত হয়ে আম রপ্তানি বন্ধের আশঙ্কাও রয়েছে। অথচ, সরকারের দায়িত্বশীল মহলও অনেক বাগানকেই আদর্শ খামার হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে থাকে। সচিব, কুটনীতিক, এমপি, মন্ত্রী সেখানেই বারবার যান পরিদর্শনে। এটা ওই বাগান মালিকের জন্য একক ব্যবসার পুঁজি হয়ে উঠেছে।  কৃষি বিভাগ আম চাষিদের জন্য নানান প্রকল্প নেওয়ার ঘোষণা দিলেও মাঠ চাষিরা নামকাওয়াস্তে মাত্র কয়েক বস্তা সার ছাড়া কিছু পান না বললেই চলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম সর্বপ্রথম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও ব্যান্ডিং, ট্যাগিং, মার্কেটিং ও প্রচারণা নিয়ে সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। ৬ থেকে ৭ বছর পার হলেও এর ট্রেডমার্ক ব্যবস্থা পর্যন্ত হয়নি। এমন সব কষ্ট লুকিয়ে রেখে আমচাষিরা প্রতিবছর উন্নত আম উৎপাদনের উদ্যোগ দেন, সে আম ছড়িয়ে দেন দেশ বিদেশে। যেসব বাধা আম রপ্তানিতে:  চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকার সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিকটন আম উৎপাদন হয়। এ সময় কর্মযজ্ঞে জড়িত থাকে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতিতে জোরালো ভূমিকা রাখে আম। বাংলাদেশের আম অন্য যেকোনো দেশের আমের চেয়ে সুস্বাদু হলেও কার্গো খরচ বেশি হওয়ায় রপ্তানিতে টিকতে পারছে না। বাংলাদেশ ছাড়া যেকোনো দেশ বিমানে আম পাঠায় অর্ধেকেরও কম খরচে। আম রপ্তানিতে দেশে সরকারের নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা একটা বড় সমস্যা। অন্যদিকে কার্গো বিমানে ভাড়া বেশি ও বিমান লোডারদের স্মুথলি লোড না করার জন্য আম নষ্টের ঝুঁকি থাকে। আম রপ্তানিতে এসব সমস্যা বড় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।  সুইডেন প্রবাসী ও আম আমদানিকারকের মতে, ভারত ও পাকিস্তান থেকে বিমানে সুইডেন আম আসতে যে খরচ, বাংলাদেশ থেকে আসতে তার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া কার্গো বিমানে। পরিবহন খরচ কমের কারণে ভারত-পাকিস্তানের সাথে পাল্লা দিয়ে পারা যায় না। অথচ বাংলাদেশি আমের স্বাদ ভিন্নতার কারণে যেকোনো দেশের চেয়ে ভাল ও চাহিদাও রয়েছে বেশি। ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও আম উদ্যোক্তা আহসান হাবিব জানান, আম রপ্তানিতে কার্গো ভাড়া কমানো, উৎপাদনকারীদের বীমার ব্যবস্থা করা জরুরি। রপ্তানীসহ আমের নায্য দাম ও সরবরাহে সমস্যা না থাকলে সব ধরনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। চাঁপাইনবগঞ্জের আম রপ্তানিযোগ্য প্যাকিং নিশ্চিতকরণ, সহনীয়ভাবে সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা, ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সুযোগ তৈরি করা, আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও কৃষি বীমা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবহন বিমানে ভাড়ার হার সহনীয় না থাকা, আম রপ্তানির জন্য নীতিমালা না থাকা এবং ভ্যাপার ও হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সুবিধা না থাকার কারনে আম রপ্তানীতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বাজার অনুসন্ধান, বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আম মৌসুমে আম উৎপাদনকারী জেলাগুলো পরিদর্শন করার ব্যবস্থা, সরকারি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা প্রেরণের মাধ্যমে বাজার অনুসন্ধান, আম রপ্তানি করার জন্য প্যাকেজিং সামগ্রির ওপর ভর্তুকি প্রদান, বিদেশে সম্প্রসারণ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এসব সমস্যার সমাধান করা হলে আম রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বৈদিশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনার পাশাপাশি উৎপাদকরা নিশ্চিত নায্যমূল্য পাবে। সমস্যা সমাধানে করণীয়  ১. আম রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আম উৎপাদনে কৃষির উত্তম চর্চার অভাব, রপ্তানিযোগ্য জাতের অপর্যাপ্ততা, নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক গুনগত মানসম্পন্ন আমের জাত নির্বাচন, বাজার যাচাই ও সৃষ্টিতে সমন্বয়ের অভাব, প্রান্তিক কৃষকদের অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক প্রাপ্তিতে সমস্যা, কার্গো বিমান ভাড়া বেশি, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের ব্রান্ডিং ইমেজ সৃষ্টি না হওয়া, আর্ন্তজাতিক মানের প্যাকেজিংয়ের অভাব।  ২. আমের বিকল্প পন্য উৎপাদনে উন্নত প্রশিক্ষন ও যান্ত্রিকীকরনে সহায়তা দেয়া হলে কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সুযোগের পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন উৎপাদনকারী ও উদ্যোক্তারা। ৩. আমের মান ভাল রাখতে আমদানীকৃত আম ব্যাগের ট্যাক্স মওকুফ ও কৃষি বীমার আওতায় আমচাষীদের আনা দরকার।  চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক সময় ছিল আম গবেষনা কেন্দ্র। অনেক আগে থেকেই তা হয়ে যায় আঞ্চলিক উদ্যানত্বত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্র। এতে করে আম কেন্দ্রিক যে গবেষনা তা বারীতেই সীমাবদ্ধ। দরকার একক আম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার। ৪. খাওয়ার উপযোগী সময়ে গাছ থেকে সংগ্রহ, প্যাকেটজাত, পরিবহন, উৎপাদন, সার ও সেচ ব্যবস্থা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহনে লোড-আনলোড বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা। ৫. আম বাগানীদের সোলার সেচ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হলে পরিবেশ রক্ষা হবে, উৎপাদন খরচ কমবে এবং ডলার সাশ্রয় হবে। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
আর্থিক খাতের অপরাধ নিয়ে আংশিক রিপোর্টের ‘টেইলর’ ভাসে
‌‘আংশিক নয় পুরো সত্য’ স্লোগান দিয়েই একটি পত্রিকা দেশবাসীর দৃষ্টি কেড়েছিল, পত্রিকাটি নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল পাঠক সমাজ। পাঠকরা বুঝিয়ে দিয়েছিল পুরো ঘটনা জানতেই তারা বেশি আগ্রহী। কিন্তু দেশে সাংবাদিকদের অনুসন্ধান নির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে-তা আর পরিপূর্ণ রিপোর্টের আদল পাচ্ছে না। যেমন এক বেনজীর আর মতিউর কাণ্ড নিয়ে যেভাবে সাংবাদিকরা একের পর এক ফলোআপ রিপোর্ট করে চলছেন সেভাবে কী অন্যদের নিয়ে ফলোআপ হচ্ছে? সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞা, বরিশালের ডিআইজি জামিল হাসান, বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে যে ৪ এমপির প্রতিষ্ঠান ২৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন তাদের নিয়ে কি কোথাও কোনো ফলোআপ রিপোর্ট হচ্ছে?বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা লুটপাট, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিবের কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, মন্ত্রীর পার্টনার, খাগড়াছড়ির বাদাম বিক্রেতা অমলের বিত্ত বৈভব নিয়ে আর কি কেউ এক লাইনও লিখেছেন? ময়মনসিংহের সব থানার ওসির স্ত্রীরা শত ক্রোড়পতি, ইউরোপ আমেরিকায় তাদের বাড়ি গাড়ি। সে ব্যাপারেও কোনো সাংবাদিক দুই লাইন ফলোআপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন? তাহলে কী দাঁড়াল? দাঁড়ালো, আংশিক খবর জানিয়ে পাঠক সমাজকে কাতুকুতু দিয়েই রিপোর্টাররা আত্মতৃপ্তিতে ঘুমিয়ে পড়ছেন?  চব্বিশটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে গ্যাড়াকলে ফেলে সাদ মুসা গ্রুপ সাড়ে পাঁচ সহস্রাধিক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে দিয়েছে। এর আগে স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়া মিঠু লুটপাট করেছে আট হাজার কোটি টাকারও বেশি। তিনিও সব টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে সেখানে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুুলেছেন। দেশের শত্রু পিকে সাহাও হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকা-সেগুলোও পাচার হয়েছে দেশের বাইরে। অথচ টাকা পাচারের আগে কিংবা পাচারের পক্রিয়া চলাকালেও সে খবর দেশবাসী জানতে পারে না কেন? আসলে তাদের জানতে দেওয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে, টাকা নিয়ে পাচারকারীরা নিরাপদে দেশ ত্যাগের পরই সে খবর রটানোর মাধ্যমে অভিযুক্ত কর্তারা বাঁচার পথ করে নেয়। সেই অপকর্মের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে প্রকাশিত খবরা খবর কেবলই সহযোগীর ভূমিকা পালন করে থাকে। পাঠক হিসেবে আমাদের অর্থ খাত  কেন্দ্রিক দুর্নীতি, লুটপাট, অপরাধ সংক্রান্ত রিপোর্টের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাতে কারোর ক্ষোভের কারণ দেখি না।  ফারমার্স ব্যাংক-পদ্মা ব্যাংক কেন্দ্রিক লুটপাট পরিস্থিতি, ইউনিপেটুইউ, যুবক, বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক কেলেঙ্কারী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের সর্বশেষ তথ্য কি সংশ্লিষ্ট রিপোর্টাররা দেশবাসীকে জানাতে পারছেন? অর্ধ শতাধিক এমএলএম কোম্পানি চার কোটি মানুষের সর্বনাশ ঘটিয়ে দুই লক্ষাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিউজ ছাপিয়ে একেকটি হায় হায় কোম্পানি বন্ধ করা গেছে - কিন্তু সর্বস্বহারা মানুষজন কি ১০/১২ বছরে একটি টাকাও ফেরত পেলেন? পাননি। জনস্বার্থ বিষয়ক সেসব রিপোর্টের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার নজীর আছে কি? কেন নেই? বেনজীর-মতিউর কাণ্ডের চেয়ে সেগুলো কি কম গুরুত্বের? আমি তো মনে করি দৈনিক পত্রিকায় বেশুমার লুটপাট ও টাকা পাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে স্থায়ী একটা কর্ণার বানিয়ে প্রতিদিনই আপডেট জানানো উচিত। যেমন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের আজ ৬৫৬ তম দিবস- এখনও ফিরিয়ে আনা যায়নি সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা’, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের আজ ৬৫৭ তম দিবস- তদন্তকারী কর্মকর্তা অন্য কাজে ব্যস্ত’ ইত্যাদি। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিকতায় কোনো অনুসন্ধানই চুড়ান্ত কোনো রুপ পায় না। জনসাধারণকে মুভির টেইলর দেখানোর মতো একঝলক ঘোষণা দিয়েই হারিয়ে যায়। হয়তো সাংবাদিককে হারিয়ে যেতে বাধ্য করা হয় কিংবা সাংবাদিক নিজেই তৃপ্তিবোধে অচেতন হয়ে পড়েন। তাছাড়া আর্থিক খাতের লুটেরা চক্র মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তারা গণমাধ্যমের মালিকপক্ষকেই বশ করে ফেলেন। হোক তা দাপট দেখিয়ে, না হয়তো সুবিধা দিয়ে। জাহিদুজ্জামান ফারুক ভাইদের গড়ে তোলা আধুনিক অর্থ বাণিজ্য ব্যাংকিং সাংবাদিকতাকে শওগাত আলী সাগর ভাইয়েরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন। এখন শুনি, রাজনৈতিক দালাল নেতারা অর্থনীতি বিষয়ক পত্রিকার মালিক সম্পাদক, তার ভক্ত সমর্থকরাই লিখে আর্থিক খাতের রিপোর্ট। কিন্তু জানা উচিত যে, অর্থনৈতিক, আইন, জ্বালানি বিট হচ্ছে বিশেষায়িত রিপোর্টিং বিট। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশুনা ছাড়া, নির্দ্দিষ্ট দক্ষতা ব্যতিত এসব বিটের রিপোর্টার হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক বিষয়ক রিপোর্টারকে অর্থ, বাণিজ্য, ব্যাংকিং খাতের সবকিছু টু দ্যা পয়েন্টে জানতে বুঝতে সক্ষম থাকতে হয়। একমাত্র অর্থ বিটের সাংবাদিকদেরই আগাম শঙ্কা কিংবা সম্ভাবনা বুঝার মতো মেধা জ্ঞ্যান সম্পন্ন হতে হয়। সেখানে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মিরা অর্থনৈতিক বিষয়ক রিপোর্টার হলে আর্থিক খাতে নিত্য নতুন চাদাবাজির স্টাইল ছাড়া আর কিইবা আবিস্কার করতে পারবেন? যদিও মানসম্পন্ন গণমাধ্যমের জানাশোনা মেধাবী সাংবাদিকেরাও যে আহামরি কোনো অবদান রাখছেন তা বলছি না।  আজ পর্যন্ত বিদেশে টাকা পাচারের মেশিন ও পাইপ লাইনগুলো কি সাংবাদিকরা চিহ্নিত করে দিতে পেরেছেন? পেরেছেন কি তা বন্ধের পরামর্শ তুলে ধরতে? বড় অঙ্কের টাকা পাচারের হুন্ডি ব্যবস্থাপনাকারী হাতে গোণা কয়েকজন- তাদের মুখোশ উন্মোচণের সাহস কি একজন সাংবাদিকও রাখেন না? অথচ বাংলাদেশ থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে ভারতীয় মিডিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে। এসব দেখেও কি বাংলাদেশী রিপোর্টারদের মধ্যে অনুশোচনা বোধ হয় না? (আমার এ লেখনিকে কেবলই একজন পাঠকের খোলামত হিসেবে বিবেচনায় নিলে খুশি হবো। কারণ, আমি নিজেও তো বিশেষায়িত অর্থবিটের দক্ষ কোনো সাংবাদিক নই।) লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
দুর্নীতি-লুটপাটের খবর উদ্ঘাটনে সাংবাদিকদের সক্ষমতা প্রমাণিত
পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ প্রকাশের পর থেকেই দেশের সাংবাদিকদের সক্ষমতা কি হঠাৎ করেই বেড়ে গেল? এরপর থেকে প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটের কাহিনি ফাঁস হতে দেখা যাচ্ছে। এক বেনজীরকে কেন্দ্র করে অন্তত ২০ জন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার অর্থবিত্তের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। দুর্নীতিবাজরা চাকরিতে বহাল আছেন, নাকি অবসরে গেছেন- সেসব নিয়েও ভাবছেন না সাংবাদিকরা। দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের স্বরুপ উন্মোচন করে চলছেন বাধাহীনভাবে, অসীম সাহসে। ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞার বিত্ত বৈভবের বিবরণও উঠে এসেছে পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায়। বেনজীরের চেয়েও বেশি সম্পদ বানিয়ে মিঞা বসে আছেন চুপটি মেরে। পুলিশ ছাড়া সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে কাস্টমসের ঝাড়ুদারের কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবরে জনসাধারণের ভিমরি খাওয়ার অবস্থা।  এসব খবর এতদিন খুব একটা চাউর হতে দেখা যায়নি। একের পর এক ধনকুবের হয়ে ওঠা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, এমপি, এমপি‘র স্ত্রীর কথা ধারাবাহিক ভাবে ফাঁস হওয়ার কথা তো কল্পনাও করা যেতো না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন সাংবাদিকরা হাড়ির খবর বের করা শুরু করলেন? আসলে এসব খবর ছাড়াও দুর্নীতি লুটপাটের আরও আরও খবরা খবর সাংবাদিকদের কাছে ছিল, আছে। কিন্তু নিকট অতীতে লেখালেখির পর সরকারের নির্লিপ্ততার কারণেই সাংবাদিকরা সেসব প্রকাশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ইদানীং বেনজীরের ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তড়িৎ গতিতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করায় সাংবাদিকরা কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ভাবছেন, দেশের স্বার্থে সরকার লুটেরা বিরোধী সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। নিজস্ব এ তৃপ্তিবোধ থেকেই লুটপাটের হাড়ির মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারা। বিপদ, ঝুঁকি, মামলা হয়রানি থোরাই কেয়ার করে একের পর এক লুটেরার চেহারা তুলে ধরছেন সাংবাদিকরা। এখন তো এক ছাগলকাণ্ড থেকেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের হাজার কোটি টাকা সম্পদের তথ্য বের করে আনলেন সাংবাদিকরা। কাস্টমসের এক ঝাড়ুদার থেকে নৈশপ্রহরী হয়েও কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন! শিক্ষক মাহতাব হোসেন টিটু মাত্র সাত বছরে দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা জমিয়েছেন, বানিয়েছেন একাধিক বাড়ি। উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের নানা চিত্র। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এক দলিল লেখকও কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন বেরিয়ে এসেছে সে খবরও। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ২০ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা লভ্যাংশ না দেওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংক আমানতের ১৩৫ কোটি টাকার কোনো দাবিদার নেই- বুঝে নিন লুটপাটের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক। এদিকে শুধু  প্রতারণাকে পুজি করেই ১৭ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন একজন আব্দুল কাদের চৌধুরী। নিজের পরিচয় দিতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের আইনি পরামর্শকও ছিলেন দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া এই ব্যক্তি।  বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে ৪ এমপির প্রতিষ্ঠান ২৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে মাত্র সাতাইশ মাসে দুই ডিজিএম হাতিয়েছেন বিশ কোটি টাকা, গড়েছেন বিপুল সহায় সম্পদ। মাদারগঞ্জে হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সমবায় সমিতির পাশাপাশি সংসদ সদস্যের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাহিনি ফাঁস হয়েছে এরইমধ্যে। ময়মনসিংহের প্রতিটি থানার ওসিদের ঘুসকাণ্ডে তাদের স্ত্রীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে এক পাবনা জেলার দশ বিড়ি কারখানা কীভাবে প্রতিবছর সরকারের সাতশ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তার বিবরণও জানছেন পাঠকরা। খাগড়াছড়িতে সাবেক মন্ত্রীর অঘোষিত ব্যবসায়িক পার্টনার হয়েই বাদাম বিক্রেতা অমল শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। নেতাদের লুটপাটের বিবরণে উঠে এসেছে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই সমরের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের কাহিনি। নিউজের পর কালিয়াকৈরে কর্মরত সাব-রেজিস্টার দুর্নীতিবাজ মো. নুরুল আমিন তালুকদারের  ১২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে দুদক। শেরপুরের শ্রীবর্দী রেঞ্জের বনায়নেরই ১০ কোটি টাকার গরমিলের তথ্যও মিলেছে সংবাদ সূত্রে।  রাজবাড়ীর সাবেক সিভিল সার্জন ও তার সহধর্মিনী ময়মনসিংহের একটি সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বপ্নের আলাদিনের চেরাগ। ময়মনসিংহ শহরের  প্রাণকেন্দ্র প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে ৩২ শতাংশ জমির মধ্যে ছয়তলা বিশিষ্ট  আলীশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দিগারকান্দা এলাকায় জমি ক্রয় করেছেন আরও ৬ কোটি টাকার। সেখানে বাড়ি নির্মাণে খরচ করেছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কক্সবাজারে পোস্টিং নিতেই দুই কোটি টাকা ঘুস দিচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সাতক্ষীরার প্রাননাথ দাশ অবশেষে ভারতীয় পুলিশ এর কাছে আটক হয়েছে। এপার থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে কিভাবে পালিয়ে গেল প্রশ্ন উঠছে সেসব নিয়ে। এ রকম শত শত লুটপাটের কাহিনি বেরিয়ে এসেছে এবং প্রতিদিনই বের হচ্ছে। আসলে তথ্য উদঘাটন আর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সক্ষমতা হারায়নি মোটেও, বরং সরকারের তরফ থেকে উৎসাহ যোগানের ঘাটতি ছিল বরাবরই। এখন সরকার সক্রিয় হতেই সাংবাদিকরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে উৎসাহব্যঞ্জক খবরা খবরের পাশাপাশি হতাশার তথ্যও প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের সংবাদ প্রকাশ হতেই দুদকের কর্মকর্তারা তাদের কাছে হাজির হচ্ছেন তড়িৎ গতিতে। কিন্তু সবকিছু রেকর্ডপত্র ও রেজিস্টার্ডে নাকি উল্লেখ থাকছে না। এ কারণে যাদের লুটপাটের খবর তুলে ধরা হচ্ছে তাদের ব্যাপারে ফলোআপ রিপোর্ট হওয়াটাও জরুরি বলে মনে করছেন পাঠক সমাজ। লেখক: সিনিয়র অনুসন্ধানী সাংবাদিক