• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
ইসলামবিদ্বেষ ঠেকাতে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস, পক্ষে ভোট বাংলাদেশের
যে ব্যক্তির রোজা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন
রমজানের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে মুসলমানগণ অবহিত আছে। অবহিত আছে এই মাসের বিশেষ করণীয় সম্পর্কে। রসুলুল্লাহ (সা.) এই মাসটি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। এই মাসে ইবাদত-বন্দেগিতে তিনি সময় বেশি দিতেন। কোরআন তিলাওয়াত ও দান-সদকা সবই অধিক পরিমাণে পালন করতেন।  রোজা ফারসি শব্দ, অর্থ উপবাস থাকা। কোরআন-হাদিসে এটিকে সিয়াম বলে। রোজা শব্দটিই প্রচলিত। সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে।  তবে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজার হক আদায় হয়ে যাবে না। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং অন্যান্য আমল ও ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে, তবেই রোজার পূর্ণ হক আদায় হবে।  কিন্তু আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ দেখতে পাই, যারা রোজা রেখেও আরেকটি ফরজ ইবাদত নামাজ ছেড়ে দেয়। রোজা রাখা সত্ত্বেও অন্যের ওপর জুলুম থেকে বিরত হয় না। সুদ, ঘুষ ও হারাম ভক্ষণের মতো ভয়াবহ পাপ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারে না। রোজা রেখেও কিছু মানুষ মাপে কম দেয়। রোজার মতো মহান আমলটি করা সত্ত্বেও গিবত ও পরনিন্দা, চোগলখুরি, অপর ভাইয়ের সম্মানহানি ইত্যাদিতে কিছু মানুষ ব্যস্ত সময় কাটায়। সত্যি কথা হলো, এ ধরনের রোজাদারদের রোজার কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। বরং এটি নিছকই কিছু সময় ক্ষুধার্ত থাকা। আর কিছু নয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি, হাদিস, ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৬৮৯) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘রোজা হলো বান্দার জন্য ঢালস্বরূপ, যতক্ষণ না এটাকে সে ভেঙে না ফেলে।’ বলা হলো, ‘এটা কীভাবে ভাঙা হয়?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘মিথ্যা অথবা গিবত তথা পরনিন্দার মাধ্যমে।’ (আল মুজামুল আওসাত: ৪৫৩৬) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) আরেক বর্ণনায় বলেন, নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে, রোজা থেকে তার প্রাপ্য কেবলই ক্ষুধার্ত থাকা ও পিপাসার্ত থাকা। এবং অনেক রাতের নামাজ আদায়কারী এমন আছে, যাদের এ নামাজের অংশ শুধুই দাঁড়িয়ে থাকা।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৪৮১)  অর্থাৎ রোজার শিষ্টাচার বজায় না রাখার কারণে এবং রোজার সম্মান বিনষ্ট করার কারণে আল্লাহর কাছে সেটা আর গৃহীত হয় না। ফলে সেটা একেবারেই মূল্যহীন হয়ে যায়। রোজা তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যম : আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩) যেহেতু রোজা আল্লাহর বিধান এবং আমাদের জন্য তা ফরজ করা হয়েছে, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রোজা পালন ও রোজার অন্যান্য হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। (মুসলিম, হাদিস, ২৭৬০) রমজান পেয়েও যে হতভাগা : জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। তার কথার সাথে একমত পোষণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমিন বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের অভিশাপ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।  
রমজানে একাধিকবার ওমরাহ নিষিদ্ধ করল সৌদি  
আরব আমিরাতে ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ
টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে কি রোজা ভেঙে যায়?
রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত কী?
রমজানে রাসুল (সা.) যে চার আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন
ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে সমহিমায় হাজির হয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়। এই মাস কল্যাণময় মাস। এ মাসে পবিত্র আল-কোরআন নাজিল হয়েছিল। এ মাস তাকওয়া ও সংযম প্রশিক্ষণের মাস। এ মাস সবরের মাস। এ মাস জীবনকে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়। নাজাত বা মুক্তি পাওয়ার জন্য রাসুল (সা.) রমজানে যে ৪ আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন, সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো- রাসুল (সা.) বলেন, পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে একজন মুমিনের জন্য আল্লাহ তাআলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের সেরা মাস। এই মাস কল্যাণময় মাস। এ মাসে পবিত্র আল-কোরআন নাজিল হয়েছিল। এ মাস তাকওয়া ও সংযম প্রশিক্ষণের মাস। এ মাস সবরের মাস। এ মাস জীবনকে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩) পুরো রমজান তাসবিহ, ইসতেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে বিশেষ আদেশ দিয়েছেন প্রিয়নবী (সা.)। যাতে মানুষ এ বিশেষ আমল ও দোয়ার মাধ্যমে নিজেকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করতে পারেন। বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি করে চারটি আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিন মুসলমান যদি রমজান মাস জুড়ে আল্লাহর কাছে এ ৪টি কাজ করেন, তবে দুনিয়া ও পরকাল সফলকাম হবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই রোজার মাসে তোমরা ৪টি কাজ বেশি বেশি করো- ১. বেশি বেশি কালেমা শাহাদাত ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়া।  ২. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার করা।  ৩. আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা।  ৪. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।
রোজার প্রথম জুমায় বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের ঢল
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমায় মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল দেখা গেছে। মুসল্লিদের উপস্থিতিতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ রাজধানীর প্রতিটি মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেলা সোয়া ১২টার পর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে মসজিদে। দুপুর পৌনে ১টা বাজতে না বাজতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় মসজিদের ভেতর বাহির প্রাঙ্গণ।  দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে মসজিদে ছুটে আসেন মুসল্লিরা। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নামাজ পড়েন মুসল্লিরা। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রমজানের প্রথম জুমায় প্রতিটি মসজিদেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে। একজন মুসল্লি বলেন, রোজার প্রথম জুমা আজ, তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে কবুল করে নেন। আরেক মুসল্লি বলেন, রমজান মাসের জুমায় সওয়াবের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই কাজ শেষ করে চলে এসেছি।  মগবাজার থেকে এসেছেন একজন মুসল্লি তিনি বলেন, সাধারণত জুমার নামাজ এলাকার মসজিদেই পড়ি। তবে রমজানের প্রথম জুমাটা বায়তুল মোকাররমে পড়তে চেয়েছিলাম, তাই চলে এলাম। নিরাপত্তা জোরদারে ও  অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
হজ পালনে হেঁটেই সৌদি আরবে বাংলাদেশি যুবক
বিমানে, জাহাজ ও গাড়িতে নয়।  হেঁটে সৌদি আরব পৌঁছেছেন বাংলাদেশি যুবক আলিফ মাহমুদ। দৃঢ় সংকল্প থেকে হেঁটেই পুণ্যভূমি সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তিনি। জানা গেছে, এ বছর পবিত্র হজে অংশগ্রহণের জন্য গত বছরের ৮ জুলাই হেঁটেই মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বটতলী ইউপির বাতাবাড়িয়া গ্রামের উত্তরপাড়ার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মো. আলিফ মাহমুদ আদিব। এরপর নানা বাধা পেরিয়ে দীর্ঘ ৮ মাসের যাত্রায় ৭ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও অন্তত ৬টি দেশের মাটিতে হেঁটেছেন তিনি। দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরব।  সৌদি আরব পৌঁছে আলিফ বলেন, ‘এটা আমার স্বপ্নের দেশ আমাদের প্রিয় নবির দেশ। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, আমি আমার প্রিয় নবির দেশে হাঁটছি এবং যখন ক্লান্ত হচ্ছি তখন মরুভূমির রোদ্রে জলা মাটিতে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। এই দেশের মাটি ও বাতাস সবকিছুর মধ্যেই শান্তি খুঁজে পাওয়া যায় যে অনুভূতি কাউকে কোনোদিন বোঝানো সম্ভব না।’ তিনি আরও বলেন, শুরুতে সাইকেলে চড়ে মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও, পরে হেঁটে যাওয়ার সংকল্প করি।   হেঁটে হজ যাত্রা সম্পর্কে ইসলামি বিশেষজ্ঞগণ বলেন, যানবাহনের খরচ বহনের সক্ষমতা সত্ত্বেও হেঁটে হজে যাওয়া সুন্নাহ সমর্থিত নয়। ইসলামে এমন অতিউৎসাহ বা বাস্তবতা বিবর্জিত অতি আবেগের কোনো মূল্য নেই। পদব্রজে হজ করার মধ্যে বিশেষ কোনো ফজিলত ও মাহাত্ম্য নেই। তারা নিজেদের দাবির পক্ষে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের ওপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেন, তার কী হয়েছে? তারা আরও বলেন, কেউ যদি বাস্তবিক অর্থেই অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকার কারণে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হেঁটে হজ করে- এতে বাধা নেই।  
মাহে রমজানের প্রথম জুমা আজ
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ)। রহমতের দশকের চতুর্থ রোজায় পড়েছে বরকতময় এ জুমা। দিনটির বিশেষ গুরুত্ব কোরআন হাদিসে এসেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা, (৬২), আয়াত, ৯-১০) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়। এই দিনেই তাকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। - সহিহাহ ১৫০২, সহিহ আবু দাউদ ৯৬১, মুসলিম, তা’লীক সহিহ ইবনু খুজাইমাহ ৩/১১৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৮৮ [আল মাদানী প্রকাশনী] আগে মসজিদে যাওয়ার সওয়াব : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ  দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস, ৮৮২) দোয়া কবুল : জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিনে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস : ১৩৮৯)
ইফতারে দোয়া না পড়লে কি রোজা শুদ্ধ হবে?
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন করেছে রমজান। মাসটি সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। রমজানে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে। রোজাদারকে আল্লাহ নিজ হাতে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম: ২৭৬০)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, হে মুমিন সকল। তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা-১৮৩) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি শরিফ: হাদিস নং ১৯০১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫২) রমজানে ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে রোজাদার রোজা ভেঙে থাকেন। ইফতারের পূর্বে ও পরে কিছু দোয়া পড়তে হয়। ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়তে হয়। يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ উচ্চারণ : ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী। অর্থ : হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। ইফতার করার জন্যও রয়েছে দোয়া। যার মাধ্যমে নেকি লাভ করা যায়। দোয়াটি হলো- اللهم لك صمت و على رزقك افطرتاللهم لك صمت و على رزقك افطرت উচ্চারণ- আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু আ'লা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বি রাহমাতিকা ইয়া আর হামার রা-হিমীন। অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি। ইফতারের বাংলা দোয়া- হে আল্লাহ তায়ালা আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমজানের ফরজ রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনেই রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার আরম্ভ করছি। তারপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার করা। ইফতারে এই দোয়াও পড়া যায়। তা হলো- اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ উচ্চারণে : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু অর্থ : হে আল্লাহ। আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি, আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ, সাওম অধ্যায়)   ইফতার করার সময় বা ইফতার করার পরে আরেকটি দোয়ার কথা হাদিসে এসেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার করাকালীন এই দোয়াটি করতেন। ইফতার করাকালীন বা পরবর্তী দোয়া ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ উচ্চারণে : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ। অর্থ : (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)। ইফতারের পূর্বে এবং পরে দোয়া পড়া সুন্নত। তবে কেউ দোয়া না পড়লেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। রোজা শুদ্ধ হয়ে যাবে।
রমজানের যে সময়ে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হয়
ক্ষমার মহান বার্তা নিয়ে সমহিমায় হাজির হয়েছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। দেশের আকাশে দেখা মিলেছে মুমিনের হৃদয়ে প্রহর গোনা রমজানের একফালি চাঁদ। এ মাসে প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান যেমন বহুগুণে বেড়ে যায়। নিঃসন্দেহে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে মাহে রমজান। এ মাসটিতে আল্লাহ তার বান্দার আমল এবং দোয়ার মাধ্যমে তার ১১ মাসের সব ভুল-ত্রুটি তথা অপরাধ ক্ষমা করে দেন। রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু সময় থাকলেও সারা মাসজুড়েই চলে ক্ষমা এবং অনুগ্রহ দানের এক মহোৎসব। পুরো রমজান দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে কাটানো উচিত। আসন্ন মাহে রমজানকে যথাযথভাবে দোয়া, ইস্তিগফার, কুরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। রমজান মাসে রয়েছে দোয়া কবুলের কয়েকটি বিশেষ সময়, সে সময়গুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ বান্দান দোয়া ফেরত দেন না। এর মধ্যে অন্যতম সময় হলো রাতের শেষ প্রহর। প্রিয় নবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল— কোন সময়ের দোয়া আল্লাহ বেশি কবুল করেন? উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, রাতের দুই তৃতীয়াংশের পর যে দোয়া করা হয়। অর্থাৎ রমজানের সেহেরির সময়ের দোয়া বেশি কবুল করেন। সুরা আল আহযানের ২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’ অন্যদিকে, সহিহ হাদিস এর মাধ্যমে আমরা রাসুলের জীবনের আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারি। নগদ ইসলামিক অ্যাপে ‘ইসলামিক জীবন’ ফিচারে আসুন পড়ি সহিহ হাদিস এবং আমল করি রাসুলের দেখানো পথে। অন্য এক হাদিসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আমাদের পালনকর্তা মহান আল্লাহ প্রতি রাতের তৃতীয় প্রহরে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছো, আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে আছো, আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। এভাবে তিনি ফজরের ওয়াক্ত স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (বুখারি, মুসলিম) রমজানের শেষ রাতগুলো আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ। এ সময়ের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। সুতরাং আমাদের উচিত দোয়া কবুলের এই মোক্ষম দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে অতিবাহিত করা। দ্বিতীয়ত দোয়া কবুলের বিশেষ সময়ের মধ্যে আরেকটি সময় হলো সারা দিন রোজা রেখে ইফতারি সামনে নিয়ে ইফতারির আগমুহূর্তে রোজাদার ব্যক্তি যে দোয়া করেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফেরত দেন না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দোয়া এবং জালিমের বিপক্ষে মাজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ) এজন্য আমাদের উচিত ইফতারের আগমুহূর্তে সকল কাজ থেকে ফারেগ হয়ে গোনাহ মাফ এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়ায় মশগুল হওয়া। অনেক সময় দেখা যায়, ইফতারির আগমুহূর্তে হৈ-হুল্লোড়, কথা-বার্তা বলতে বলতে আজান হয়ে যায়। অথচ আমরা চাইলে এসময়ে আমাদের যাপিত জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারি। আমাদের উচিত বাহুল্য কথা ত্যাগ করে দোয়ার মধ্যে এ মূল্যবান সময় পার করা। তৃতীয় রমজানে দোয়া কবুলের আরেকটি বিশেষ সময় হলো ফজরের পর। হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুলকে (সা.) কোন সময় দ্রুত দোয়া কবুল হয় মর্মে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন, রাতের শেষ প্রহর এবং ফজরের পর। (সুনানে তিরমিযি: ৩৪৯৮ ) রমজানে অধিকাংশ মানুষ এই সময়টা ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু এ সময় দোয়া কবুল করানো, ক্ষমা ও আল্লাহর অনুগ্রহ লুফে নেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। এছাড়াও দোয়া কবুলের জন্য অন্যতম সময় লাইলাতুল ক্বদর। শুধু রমজান নয়, বরং সারা বছরের মধ্যে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল ক্বদর। এ রাত দোয়া কবুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ রাতে মাগরিব থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে ক্ষমার ঘোষণা দেওয়া হয়। অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
শুরু হলো মাহে রমজান
বছর ঘুরে আবারও শুরু হলো রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের মাস রমজান। সোমবার (১১ মার্চ) রাতে তারাবির নামাজ আদায় করে ভোরে সেহরি খেয়ে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন মুসল্লিরা। সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের এই মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেন মুসলমানরা। বহু ফজিলত ও পুণ্যময় বৈশিষ্ট্যে ভরা এ মাসটিতেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়। এ মাসেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত-লাইলাতুল কদর। ২১ থেকে ২৯ রমজানের যেকোনো বেজোড় একটি রাত হবে কদর।   মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জন করতে পারো। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (সহি বুখারি, মুসলিম)। উল্লেখ্য, রমজান মাস শেষেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফেতর। এবার ৩০টি রোজা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে ১১ এপ্রিল হতে ঈদ উদযাপন হতে পারে।