• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo
৬ দিন পর ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আল জাজিরাকে যা বললেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নৈরাজ্যের পর দেশে শান্তি ফেরাতে যা যা করণীয় সরকার তাই করেছে। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যে কোনও আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র জনগণকে রক্ষা করছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই)‘টক টু আল জাজিরা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ এ আরাফাতের এই সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকার নেন আল জাজিরার সাংবাদিক নিভ বারকার। মোহাম্মদ আরাফাত বলেছেন, চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীসহ তৃতীয়পক্ষ বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের সন্ত্রাসী বা অরাজকতা সৃষ্টিকারী বলছি না। তৃতীয় পক্ষ যারা এই আন্দোলনে ঢুকে এ সব কিছু শুরু করেছে। আরাফাত আরও বলেন, ‘আমরা উত্তেজনা কমানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু লোক আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে যাতে তারা ফায়দা লুটতে পারে এবং সরকার পতন ঘটাতে পারে।’ আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার-কেন্দ্র বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সদর দফতরে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিটিভি ভবন পাহারারত পুলিশ সদস্যরা সংখ্যায় কম ছিল। তাদের গুলি চালানোর অনুমতি না থাকায় ... দুর্বৃত্তরা বিটিভিতে ঢুকে পড়ে, আক্ষরিক অর্থে আক্রমণ করে, আগুন লাগায় এবং সম্পত্তি ধ্বংস করা শুরু করে। আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা সরকার এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি বলে উল্লেখ করেছেন আরাফাত। তিনি বলেন, নিহত, হতাহত ও আহতের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ জনগণ, পুলিশ, বিক্ষোভকারী বা সরকারের সমর্থকদের মধ্যে কোনও পার্থক্য করতে চাই না। তথ্যমন্ত্রী জানান, একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিটি পুরো ঘটনা তদন্ত করবে। যাতে এই ঘটনায় যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়।
পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ
ভুক্তভোগীদের দাবি  / গ্রেপ্তার হচ্ছেন সাধারণ মানুষও, চাওয়া হচ্ছে টাকা
ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক
দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ১৭৯ নাগরিকের বিবৃতি
কোটা আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তাণ্ডব ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়ে ১৭৯ জন নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে নাশকতামূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বিটিভি ভবন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেতু ভবন, মেট্রোরেল, বিআরটিএ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিজিটাল ডাটা সার্ভার স্টেশন, কারাগার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নবনির্মিত এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করা হয়েছে।  শুধু তাই নয়, কারাগারে হামলা করে অস্ত্র লুটসহ জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়ায় সহায়তা করা হয়েছে। এতে দুস্কৃতকারীরা জনজীবন বিপন্ন ও দুর্বিসহ করে তোলাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আক্রমণ ও হত্যার মাধ্যমে নিজেদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। আমরা এই ধরনের দেশবিরোধী কার্যক্রমের নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও যারা বিদেশি হস্তক্ষেপ আহ্বান করেছে তাদের নেতিবাচক ভূমিকার নিন্দা জানাই। বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, এই গোষ্ঠী ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ ও নাশকতা চালিয়েছে। এরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বর্তমানের এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম। কোটা সংস্কারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এর মাধ্যমে ছাত্রদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার সময়।  একইসঙ্গে সবার প্রত্যাশা- কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে যে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পুনরায় অগ্নিসন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং জনজীবন বিপন্ন করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা বলেন, দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জনগণের সমর্থন নিয়ে জাতি তা দ্রুত পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। একইসঙ্গে নাগরিক সমাজের পক্ষে কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী দেশবাসীকে এই ধ্বংস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে সই করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব বীরপ্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান, চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবী, সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা, সাবেক আইজিপি ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্যব্যক্তিত্বসহ ১৭৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
শনিবারের কারফিউ নিয়ে যে নির্দেশনা
ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ বহাল রয়েছে। তবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তা শিথিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এসব কথা জানান। তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, আন্দোলনে নাশকতার সঙ্গে জড়িত সবাই গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান চলবে। জানা গেছে, এই চার জেলা বাদে অন্য জেলায় কারফিউ থাকবে কি না সেটা জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর আগে, টানা পাঁচ দিন ধরে কারফিউ চলার পর গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) ঢাকা ও আশপাশের কয়েকটি জেলায় ৭ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার (২৪ ও ২৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই কারফিউ শিথিলের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। এদিকে, টানা তিন দিন সাধারণ ছুটির পর সরকারি ও বেসরকারি অফিস খোলা হয়। তবে পূর্ণ সময় নয়, অফিসের সময়সীমা ছিল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে অফিস-আদালত খোলায় রাজধানীতে যানবহনের চাপ ছিল বেশি।
সহিংসতায় ঢাকায় ২০৯ মামলা, গ্রেপ্তার ২৩৫৭
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এদের বেশির ভাগ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে। যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
শনিবারের মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির কারণে চার দিন বন্ধ থাকার পর গত বুধবার থেকে পেট্রাপোল দিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনই দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর খবর পাওয়া যায়নি। শনিবারও (২৭ জুলাই) বন্ধ থাকবে মৈত্রী এক্সপ্রেস। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার (২৭ জুলাই) কলকাতা থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার্তা পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার কলকাতা থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল ১৩১০৮ কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের। একই দিনে ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল ১৩১১০ ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসের। এসব যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। কলকাতার বিশেষ টিকিট কাউন্টারে টিকিটের দাম ফেরত পাবেন যাত্রীরা। কোনও যাত্রী টিকিট হারিয়ে ফেললে টাকা ফেরত পাবেন না। বিদেশি যাত্রীদের প্যাসেঞ্জার রিজার্ভেশন সিস্টেমের (পিআরএস) কাজের সময় টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশ। তার জেরেই গত ১৯ জুলাই মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং কলকাতা-খুলনার মধ্যে যাতায়াতকারী বন্ধন এক্সপ্রেস বাতিল করে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা ভালো হলেও চালু করা হয়নি মৈত্রী এক্সপ্রেস।
দুই সমন্বয়ককে নিয়ে সরকার পতনের আলোচনা করেন নুর
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, সার্জিস আলম ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের মধ্যে সরকার পতনের আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই রাতে ওই দুই সমন্বয়কের সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং ম্যাসেজে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার আলোচনা হয়। রাজধানীর সেতু ভবনে ধ্বংসাত্বক হামলার ঘটনায় বনানী থানায় করা মামলায় এক প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া এ তথ্য উল্লেখ করেছেন। শুক্রবার (২৬ জুলাই) মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে নুরুল হক নুরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আদালতে পুলিশের করা আবেদনে বলা হয়েছে, আসামি ভিপি নুরকে আদালতের নির্দেশনা মেনে নিবিড়ভাবে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামির জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু সাইদ মিয়া জানান, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আদালতের রায় হয়। এরপর থেকেই নুর নাহিদ ইসলাম, নাসানাত আব্দুল্লাহ, সার্জিস আলম, আসিব মাহমুদ, আক্তার হোসেন এবং আহনাফদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে গত ১৮ জুলাই রাতে নাহিদ ইসলাম ও সার্জিস আলম সঙ্গে মোবাইল ফোনে এবং ম্যাসেজে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার আলোচনা হয়। তিনি আরও জানান, ওই দুই সমন্বয়ক নুরকে দাবি-দাওয়াগুলো ম্যাসেজ করে লিখে দিতে বলে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, ইন্টারনেট সচল করা, ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা, স্বরাষ্টমন্ত্রীর পদত্যাগসহ সরকারের পদত্যাগ ইত্যাদি দাবি-দাওয়া লিখে দেয় নুরুল হক নুর। পরের দিন ১৯ জুলাই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য নুর তার নেতাকর্মীদের আহ্বান জানায় এবং বর্তমান সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায়। আসামি মামলার ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর আগে গত ২১ জুলাই ভিপি নুরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো সেতু ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথারীতি অফিসের কার্যক্রম করতে থাকেন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অজ্ঞাতনামা ২৫০/৩০০ জন আসামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র, লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে আমাদের অফিসের সামনে এসে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেতু ভবনের সিনিয়র সচিবসহ কর্মকর্তাদের পদ-পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে হুমকি প্রদর্শন ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্ঘাতমূলক ভীতি সৃষ্টি করে সেতু ভবন লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা অফিসের মূল ফটক ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে সেতু ভবনের নিচ তলায় ভবনের সামনে রক্ষিত জিপ, কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেল, নিরাপত্তা ভবন, সিসি ক্যামেরা, পার্কিং শেড, ক্যানটিন, গাড়িচালকদের কক্ষ, আনসার শেড, মুজিব কনার, জেনারেটরস কক্ষসহ মূল ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ ঘটায়। এ সময়ে সেতু ভবনের সিনিয়র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরাসহ ভেতরে থাকা অফিস স্টাফ ও নিরাপত্তাকর্মী আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে সরে যেতে অনুরোধ করলে আসামিরা তাদের মারধর করে ও গুরুতর জখম করে। এজাহার থেকে আরও জানা যায়, পরবর্তী সময় আসামিরা নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে নিচতলা হতে ১১তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল সামগ্রী চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। আসামিদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচতলা হতে ১২ তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল-প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি, এফডিআর ইনস্ট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইশারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে তা থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, ১টি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, ১টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিলে ভস্মীভূত হয় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার মালামাল। তাৎক্ষণিক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মারফত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিটকে সংবাদ প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন।
নরসিংদীতে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী / মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা কারা পাবে জানতে রিভিউ আবেদন করা হবে
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশের সুবিধা কারা নেবে তা জানতে আপিল বিভাগে সরকার রিভিউ আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক।  শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা সভায় মন্ত্রী একথা বলেন। আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মহামান্য আদালত যে রায় দিয়েছেন, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই। মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ শতাংশের সুবিধা কারা নেবে- তা জানতে আপিল বিভাগের কাছে আমার রিভিউ আবেদন করব। তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে। নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে এ সময় খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কোটা আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দোয়া
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে সহিংসতায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য মোনাজাত ও দোয়া করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা বিশেষ এই দোয়ায় অংশ নেন। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া। গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম দিকে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক বিক্ষোভ চললেও ৭ জুলাই থেকে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করেন তারা। পরবর্তীকালে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিলে সেখানে ঢুকে পড়ে তৃতীয় পক্ষ। বিভিন্ন স্থানে চলে নাশকতা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতার শুরু গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে, যার প্রতিবাদে গত ১৮ জুলাই থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। ওই কর্মসূচি চলাকালে এক সপ্তাহে দেশজুড়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় নাশকতাকারীরা। হতাহত হন অনেকেই।   শুক্রবার (২৬ জুলাই) জুমার নামাজ শেষে গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের স্মরণে দেশের প্রতিটি মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত। সরকারের পক্ষ থেকে আয়োজিত দোয়ায় অংশ নেন সর্বস্তরের মুসল্লি।সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মুসল্লিরা। আর কখনোই যেনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয় এমন প্রত্যাশাও করেন তারা।   তারা বলেন, দোয়া করেছি যেন নিহতদের জান্নাতবাসী করেন আল্লাহ। সেইসঙ্গে হতাহতদের যেন দ্রুত সুস্থ করে দেন। যারা দেশে অরাজকতা করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক   এদিকে, আগামী রোববার (২৮ জুলাই) দেশের সব মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় সুবিধা মতো সময়ে একইভাবে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা।