• ঢাকা রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১
logo
রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
সাবেক রেলমন্ত্রীর ছেলেসহ ৫৪ জনের নামে ৩ মামলা
রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রীর ছেলে মিতুল হাকিম, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিশ্বাসসহ ৫৪ জন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে দ্রুত বিচার আদালত ও পাংশা আমলি আদালতে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মামলা তিনটি দায়ের করা হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলা তিনটি পাংশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছেন। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদ উদ্দিন মোল্লা। মামলা ৩টির বাদী হলেন- পাংশা উপজেলা গুধিবাড়ি গ্রামের মৃত আ. করিম মোল্লার ছেলে মো. আজিজুল ইসলাম রাজা (৬৫), পাংশার মাগুরাডাঙ্গী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন খন্দকার (৪০) ও পাংশা পৌরসভার মাগুরাডাঙ্গী গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ খানের ছেলে মাসুদ রানা জনি (৩৬)। জানা যায়, গুধিবাড়ি গ্রামের আ. করিম মোল্লার ছেলে আজিজুল ইসলাম রাজা বাদী হয়ে ৬ জনসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন, পাংশা পৌরসভার মাগুরাডাঙ্গী গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন খন্দকার বাদী হয়ে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন ও একই গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে মাসুদ রানা জনি বাদী হয়ে ১৭ জনসহ অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে রাজবাড়ী আদালতের অ্যাডভোকেট জাহিদ উদ্দিন মোল্লা বলেন, মাসুদ রানা জনির মামলাটি ওসি ডিবি, আজিজুল ইসলামের মামলাটি ওসি পাংশা ও সুমন খন্দকারের মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৩২ বছরেও চালু হয়নি রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল
সাবেক এমপি কেরামতসহ ১৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সাবেক রেলমন্ত্রীসহ ৫২ জনের নামে মামলা
রাজবাড়ীতে ছাত্রদের ওপর হামলা, ৪৪ জনের নামে মামলা
২৬ দিন পর রাজবাড়ী থেকে লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দীর্ঘ ২৬ দিন বন্ধ থাকার পর রাজবাড়ী থেকে সব রুটে মেইল ও লোকাল (সাটল) ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে চন্দনা কমিউটার ও আন্তনগর ট্রেন বন্ধ রয়েছে।  মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকালে ট্রেনগুলো রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আবদুর রহমান চৌধুরী। জানা যায়, রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৬টায় ভাঙ্গাগামী ‘রাজবাড়ী এক্সপ্রেস’ এবং সোয়া ৬টায় রাজবাড়ী থেকে গোয়ালন্দ ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ‘শাটল’ চলাচলের মাধ্যমে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। পরবর্তী সময়ে এই ট্রেনটি গোয়ালন্দ ঘাট থেকে পোড়াদহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ ছাড়া খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘নকশিকাঁথা কমিউটার’ ট্রেনটি সকাল সাড়ে ৭টায় রাজবাড়ী থেকে ছেড়ে যায়। লাইন সমস্যার কারণে ঢাকায় না গিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল শুরু হয়েছে। তবে প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক কম। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ বিষয়ে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৬ দিন পর মঙ্গলবার সকাল থেকে মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি লাইন সমস্যার কারণে ঢাকায় না গিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছে। এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনগুলো ১৫ আগস্ট চলাচল শুরু হবে এবং চন্দনা কমিউটার ট্রেনটি পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’ স্টেশন মাস্টার আরও বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে গত ১৮ জুলাই থেকে আংশিক ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ ছিল।’
রাজবাড়ীতে থানায় যোগ দেননি পুলিশ সদস্যরা
নবনিযুক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের নির্দেশের পরও রাজবাড়ী জেলার পাঁচ থানায় কাজে যোগ দেননি পুলিশ সদস্যরা। এতে জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঘটছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। পুলিশের অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সদস্য ও আনসার সদস্যরা থানা পাহারা দিচ্ছেন। থানার সামনের গেটও বন্ধ রয়েছে।  শনিবার (১০ আগস্ট) থানার ওসিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, থানার কার্যক্রম শুরু হয়নি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অফিসার-ফোর্সরা থানায় আসার সাহস পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তারা।  এ দিকে ১১ দফা দাবি জানিয়ে শনিবার জেলা পুলিশ লাইন্সে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন জেলার পুলিশ সদস্যরা। পরিস্থিতির জন্য দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে কেন হত্যা করা হলো, প্রশ্ন স্ত্রীর
‘ছেলে ও মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার করার স্বপ্ন নিয়ে তাদের দুজনকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজের ছোট্ট ব্যবসা মুরগির দোকান করেও সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছিলেন আমার স্বামী; কিন্তু আমার স্বামীকে গুলি করে কেন হত্যা করা হলো। এখন আমি কিভাবে সন্তানদের পড়ালেখা করায়ে মানুষ করব।’ এভাবেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের নিহত কোরমান শেখের (৪৯) স্ত্রী শিল্পী আক্তার। গত ২০ জুলাই দুপুরে বাসায় ফেরার পথে সাভারে কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে মুরগি ব্যবসায়ী কোরমান শেখ (৪৯) মারা যান।  তার স্ত্রী জানান, ১৭-১৮ বছর ধরে তার স্বামী ঢাকার সাভারে মুরগির ব্যবসা করতেন। ২০ জুলাই দুপুর ১টার দিকে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই রাত ১১টার দিকে তার নিজ বাড়ি কালুখালী উপজেলার বাগমারা গ্রামে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।  সেই থেকে নিহত কোরমানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় স্ত্রী। অঝোরে কাঁদছেন তিনি। পাশেই বসে আছেন ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক ও প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রমজান শেখ ও মেয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিতু আক্তার মিতা (২০)। শুক্রবার (২ আগস্ট) সরেজমিনে কালুখালীর পূর্নিব রতনদিয়ায় নিহত কোরমান শেখের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত কোরমান শেখের ছেলে রমজান শেখ বলেন, ‘বাবা সামান্য মুরগির ব্যবসা করে কত কষ্ট করে আমার বোন আর আমাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হলো। বাবাকে এভাবে হত্যা করা হবে সেটা কখনো ভাবিনি। আমার মা-বোনকে এখন কে দেখাশোনা করবে। আমার ও আমার বোনের লেখাপড়া করার দায়িত্বটা কে নেবে?’ নিহত কোরমান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার মিতা বলেন, ‘গুলির শব্দ শুনে দুপুরের দিকে মায়ের কথাতে বাবাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলি। বাবা এলো ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। আমিতো চাইনি আমার বাবা লাশ হয়ে ফিরে আসুক। বাবা ছাড়া এখন আমরা কিভাবে বাঁচব? আমাদের সংসার চালানো ও বেঁচে থাকার দায়িত্বটাই বা কে নেবে। আল্লাহর কাছে আমি আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই।’ স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, ‘আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে যারা গুলি করে হত্যা করল, আমি সেই খুনিদের বিচার চাই।’
শিশু ধর্ষণের অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীতে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  বুধবার (৩১ জুলাই) রাতে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখারুল আলম বিষয়‌টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত কিশোর রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। জানা যায়, গত সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে শিশুটি বাড়ির পাশে খেলা করছিল। এ সময় অভিযুক্ত কিশোর শি‌শু‌টিকে চকলেট দেওয়ার কথা বলে বাড়ির অদূরে এক‌টি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ ক‌রে। পরে শিশুটি বাড়িতে এসে বিষয়টি জানায়। পরে ৩০ জুলাই শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখারুল আলম প্রধান জানান, অভিযুক্ত কিশোরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ওই শিশুটির ডাক্তারি প‌রীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও গুলি থেকে রক্ষা পাননি আমার প্রতিবন্ধী স্বামী
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ চলাকালে বুকে ও পায়ে গুলি লেগে নিহত হয়েছেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের মৃত মেহের শেখের ছেলে কোরবান শেখ (৪৯)। রোববার (২৮ জুলাই) কোরবান শেখের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকের মাতম চলছে।  মো. কোরবান শেখের স্ত্রী শিল্পী খাতুন আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি কোনো আন্দোলনে যাননি। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন, অসুস্থ ছিলেন। তিনি দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন। তারপরও তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে বিসিএস ক্যাডার আর মেয়েকে ব্যাংকার বানাবেন। তার স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার ছেলে-মেয়েকে এখন কে দেখবে?’ কোরবান শেখের ছেলে রমজান শেখ বলেন, ‘গত ২০ জুলাই সকালে কারফিউয়ের মধ্যে অনেক দোকানিই তাদের দোকান খোলেন। আব্বুও সকাল ৯টার দিকে দোকান খোলেন। আমাদের বাসা থেকে আব্বুর দোকানে হেঁটে যেতে ৫ থেকে ৭ মিনিটের দূরত্ব। দুপুর ১টার দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনে আমার বোন আব্বুকে ফোন করে বাসায় চলে আসতে বলে। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে বাজারের দোকানি আমার এক চাচা ফোন করে আমাকে জানান যে আমার আব্বুর গুলি লেগেছে। আমি দৌড়ে বাজারে গিয়ে দেখি আমার চাচাসহ কয়েকজন দোকানি আমার আব্বুকে কোলে করে নিয়ে আসছেন। আমরা দ্রুত তাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আব্বুকে ভর্তি করেনি। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক আব্বুকে মৃত ঘোষণা করেন।’ তিনি বলেন, ‘পরে আমি জানতে পারি দুপুরে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনে আব্বু দোকান বন্ধ করে হেঁটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সামনে গুলি করা দেখে আব্বুসহ কয়েকজন দোকানি মাছ বাজারে বরফ কলের গেট আটকে ভেতরে আশ্রয় নেন। বরফ কলের গেট ভেঙে ভেতর ঢুকে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে আব্বুসহ সকলেই আহত হন। আব্বুর বুকে ও পায়ে দুটি গুলি লাগে। এছাড়া বুকে ও মুখে অসংখ্য ছড়ড়া গুলি লাগে। পরে আমার আব্বু মারা যান। ওইদিনই রাত ৯টার দিকে আব্বুর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।’ কোরবান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, ‘আমার আব্বুর স্বপ্ন ছিল ভাইয়াকে বিসিএস ক্যাডার আর আমাকে ব্যাংকার বানাবেন। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার আব্বু অসুস্থতা নিয়েও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাদের পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। আমার আব্বু শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন, তিনি হাঁটতে পারতেন না। তিনি কোন আন্দোলনেও যাননি। তাকে দেখে যে কোনো মানুষের মায়া হওয়ার কথা। তারা কিভাবে পারলো আমার অসুস্থ আব্বুকে গুলি করে মারতে? আমার আব্বু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। সরকারের কাছে আমি আমার আব্বুর হত্যার বিচার চাই। আর আমার ও ভাইয়ার কর্মসংস্থান চাই।’ জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ১৮ বছর আগে দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার সাভারে আসেন কোরবান শেখ। সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে মাছবাজার এলাকায় তার মুরগির দোকান ছিল, স্মরণিকা এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তার ছেলে রমজান শেখ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে অনার্স চতুর্থ বর্ষে আর মেয়ে মিতু আক্তার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়েন।
‘বাবা তোমাকে রৌদে পুড়তে দেব না’ বলা ছেলেটা গুলিতে নিহত
‘মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত, বাবা, আর কটা দিন অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। কেউ কখনও এমন করে আর বলবে না। আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি মাঠে কাজ করে খাই। আমিও কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই।’ রোববার (২৮ জুলাই) সরেজমিন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে গিয়ে কাটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাগর আহমেদের (২১) বাবা তোফাজ্জল হোসেনকে এভাবে বিলাপ করতে দেখা যায়।  তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি কাউকে দোষ দেব না। আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন, তাই করেছেন। কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছি। আমার বুকের মানিক যেন পরপারে ভালো থাকে।’ তোফাজ্জল জানান, তার মেয়ে নারুয়া লিয়াকত আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। বোনকে নিয়ে সাগরের অনেক স্বপ্ন ছিল। নুশমীকে ঢাকা নিয়ে কোচিং করাবে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবে। দুই ভাইবোন এক জায়গায় থাকবে। লেখাপড়া শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। সাগরের মৃত্যুর আটদিন পরও বাড়িটিতে চলছে মাতম। একমাত্র ছেলে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তোফাজ্জল হোসেন। বেশিরভাগ সময় নির্বাক থাকছেন। মা গোলাপী বেগমের অবস্থা আরও করুণ। ছেলের শোকে মুখে তুলছেন না খাবার, প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্না থামছে না একমাত্র কলেজপড়ুয়া বোন নুশমীর। জানা গেছে, সাগর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। গত ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর তোফাজ্জল হোসেনকে ফোন করে বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। টাকা দেওয়ার পর পেয়েছেন কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন তিনি; কিন্তু রিসিভ হয় না। দুপুর ১টার পর একটা কল দিতেই থাকেন তোফাজ্জল। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন বলেন, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। আরও কয়েকবার কল দেন, রিসিভ হয় না।  সাগরের চাচা মুনছুর আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতে সাগরকে তারা দাফন করেন। আটদিনেও ওর মা-বাবা এবং বোন স্বাভাবিক হতে পারেননি। এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে সাগরের বিষয়ে নানা তথ্য নিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সাগর কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।’