• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
আসছে ঈদ, নদীতে মাছ না থাকায় হতাশ জেলেরা 
ইলিশের ভরা মৌসুমেও হাসি নেই বরগুনার পাথরঘাটার জেলেদের মুখে। একদিকে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় নদী বিষখালী-বলেশ্বর নদীতে নেই ইলিশ। আরেক দিকে ডাঙায় এনজিওর ঋণের চাপ। এ নিয়ে ঈদের আনন্দ সবার হৃদয়ে কড়া নাড়লেও জেলেদের রাজ্যের বিষাদ। নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় ঋণের জালে বন্দি হয়ে আছে ঈদের আনন্দ। শিশুদের গায়ে নতুন জামা উঠবে কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তা। এ দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যয় বেড়েছে জেলেদের। এ কারণে ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন তারা। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলায় মোট জেলে রয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার। এর মধ্যে সরকারি নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮২০ জন। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতি মাসে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ১৬ হাজার ২২৮ জনের পরিবারকে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।  এ বিষয়ে কথা হয় জেলে মনির, ইলিয়াস, বেল্লাল হোসেন, ছরোয়ারের সঙ্গে। তারা বলেন, এক দিকে আবরোধ অন্যদিকে সাগরে নিম্নচাপ। এ দুয়ে মিলে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। অবরোধে মাছ ধরতে পারি না আবার নিম্নচাপের মধ্যে সাগরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। এর মধ্যে কিভাবে আমরা ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঈদ করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই অন্য কাজ করতে চাইলে কেউ কাজ দিচ্ছে না। অশিক্ষিত হওয়ায় পেশার পরিবর্তন করতে পারছি না। আমাদের জালেতো ইলিশ ছাড়া অন্য কোনো প্রকার মাছ ধরা পরে না। আমরা এখন দাদনের জন্য ট্রলার মালিকের কাছে গেলেও তারাও তাড়িয়ে দেন। এ বছরের ঈদ জেলেদের জন্য নয়।  বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় ইলিশের মৌসুম। কিন্তু এ বছর সেই শুরু থেকেই সাগর থেকে জেলেরা ইলিশ শূন্য হাতে ফিরে আসছেন। এবার ঈদকে সামনে রেখে ১০ থেকে ১২ দিন আগেই সাগরে পাঠানো হয়েছে ট্রলার। ইতোমধ্যে যে ট্রলার এসেছে তার মধ্যে দু-একটি ট্রলারে কিছু মাছ পেলেও অধিকাংশ ট্রলার বাজার সদয়ের খরচই উঠাতে পারবে না।  এ প্রসঙ্গে পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপুর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, জেলেদের জন্য কোনো চাল বরাদ্দ নেই। ঈদ উপলক্ষে কিন্তু তাদের জেলে কার্ড থেকে ঈদের আগে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।
০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২৩:৩০

জেলিফিশে বেকায়দায় জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে ভাসছে অসংখ্য জেলিফিশ। চরম বেকায়দায় পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। জেলিফিশের কারণে ঠিক মতো সমুদ্রে জাল ফেলতে পারছেন না মৎস্য শিকারীরা। জালে আটকে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মেরুদণ্ডহীন এ জলজপ্রাণী। ছিঁড়ে যাচ্ছে জেলেদের জাল। তাই বাধ্য হয়ে জাল তুলতে হচ্ছে মৎস্যজীবীদের। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন উপকূলের শত শত সমুদ্রগামী জেলে। গত ১৫ দিন যাবৎ এসব জেলিফিশ জেলেদের জালে জড়াচ্ছে।         সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের আন্ধারমানিক মোহনার লেম্বুরচর থেকে পূর্ব দিকে কাউয়ারচর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত জেলিফিশ। জেলেরা জানিয়েছেন, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চরবিজয়ের বালুতে শত শত জেলিফিশ আটকে আছে। জেলেদের জালে জড়িয়ে মারা যাওয়া জেলিফিশগুলো স্রোতে ভেসে সৈকতের যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে। এগুলো পচে এক ধরনের পোকার জন্ম নিয়েছে। পচা দুর্গন্ধে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অতিরিক্ত জেলিফিশের কারণে বেকার মৎস্য শ্রমিকরা ছেঁড়া জাল বুনছেন। কেউ কেউ সমুদ্রে থেকে জাল তুলে তীরে নিয়ে আসছেন। কেউ আবার শ্যাওলা ধরা জাল ধুয়ে রোদে শুকাচ্ছেন। খুঁটা জালের মাছ ধরা ট্রলারগুলো সৈকতে নিরাপদে রাখছেন।  সৈকতের পূর্ব দিকের ঝাউবাগান পয়েন্টে মম্বিপাড়া গ্রামের জেলে রবিউল হাসান বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে নোনার (জেলিফিশ স্থানীয় জেলেদের ভাষায় ‘নোনা’) জন্য ঠিকমত মাছ ধরতে পারছি না। সব জাল ছিঁড়ে গেছে। এখন ছেঁড়া জাল বুনছি’।  লেম্বরবন এলাকার প্রবীণ জেলে ইউনুচ দালাল বলেন, এ বছর সাগরে অনেক বেশি জেলিফিশ ভাসতে দেখা যাচ্ছে। পানিতে ভাসা অবস্থায় এগুলো কোনোটা চাঁদের মতো আবার কোনোটা অক্টোপাসের মতো দেখা যায়। চর গঙ্গামতি এলাকার জেলে হারুন প্যাদা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে এসব জেলিফিশ সাগরে ভাসতে দেখছি। আমাদের জালে এগুলো আটকে যায়। তবে জালে আটকা পড়লে আমরা ছাড়িয়ে দিলে সেগুলো আর বাঁচে না। গভীর সমুদ্রের মৎস্য শিকারী জেলে ইউনুচ আলী বলেন, প্রতি বছরই নোনা (জেলিফিশ) আসে। কিন্তু এ বছর পরিমাণে অনেক বেশি। অতিরিক্ত জড়ানোর কারণে স্রোতে জাল ছিঁড়ে যায়। সব জাল কূলে আনা হয়েছে। এখনও ছিঁড়া জাল মেরামত করছি।  হোসেনপাড়া গ্রামের জেলে মো. সোহরাফ হোসেন জানান, জালে জড়ানো জেলিফিশগুলো তারা সমুদ্রে ফেলে দেন। কিছু বেঁচে গেলেও বেশিরভাগ মারা যায়। কারণ এগুলো জালে জড়ালে কেটে ভাগ ভাগ হয়ে যায়। মারা যাওয়া নোনাগুলো (জেলিফিশ) জোয়ারের স্রোতে কূলে ভেসে আসে। এখনও এগুলো পচে পোকা হয়েছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।      মম্বিপাড়া রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকার জেলে মো. ইদ্রিস গাজী বলেন, গত ১৫ দিন ধরে হঠাৎ নোনা (জেলিফিশ) জালে জড়াচ্ছে। শুরুর দিকে কম থাকলেও এখন পরিমাণে অনেক বেশি। যার কারণে মাছ ধরতে পারছি না। জালপালা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই জাল তুলে এনেছি। নোনা না কমা পর্যন্ত সাগরে জাল ফেলবো না। ইকোফিশ-২ প্রকল্পের পটুয়াখালী জেলার সহকারী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, এ জেলিফিশগুলো জোয়ারের স্রোতে ভেসে এসে সৈকতের বালুতে আটকে মারা যায়। এরা সাঁতার কাটতে পারদর্শী না বিধায় ভাটার স্রোতে নেমে যেতে পারে না। তবে হঠাৎ করে জেলিফিশের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে, সমুদ্রের স্বাস্থ্য ঠিক নেই। আবার এও হতে পারে জেলিফিশ যেসব মাছের খাবার সেসব মাছ কমে গেছে। যার ফলে আধিক্য বেড়ে গেছে তাদের।  তিনি আরও বলেন, জেলিফিশের শরীর খুবই বিষাক্ত তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য মাছের পোনাও মারা যাচ্ছে। গবেষণা করলে হয়তো সঠিক কারণ শনাক্ত হবে।  কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সমুদ্রে জেলিফিশগুলো মূলত আওরেলিয়া ও আওরেটা প্রজাতির জেলিফিশ। মেরুদণ্ডহীন এসব প্রাণী চাঁদের মতো দেখতে বলে এদেরকে মুন জেলিফিশও বলা হয়। এগুলো মূলত সাঁতারে তেমন পারদর্শী নয়। অনেক সময় খাদ্য অন্বেষণ কিংবা বাতাসের টানে ওপরের দিকে চলে আসে জেলিফিশ। পরে বালুতে আটকা পরে মারা যায়। প্রতি বছরের এ মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় জেলিফিশের দেখা মেলে। এগুলো বেশি দিন স্থায়ীভাবে থাকে না। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে কমে যাবে।  
২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৯
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়