• ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
‘অনেকের ধারণা আমার ব্যক্তিত্বের অভাব রয়েছে’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বরাবরই খোশ মেজাজে ধরা দেন বলিউড অভিনেত্রী সারা আলী খান। তাই অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিত্বহীনতার অভাব রয়েছে তার। শুধু তাই নয়,  সাড়া নিজের জীবন এবং কাজের ক্ষেত্রেও খুব একটা সিরিয়াস নন বলেও কেউ কেউ মনে করেন।  সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে নিজের কাজ এবং নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন সারা। এসময় অভিনেত্রী জানান, পর্দার বাইরে তার হাসিখুশি ইমেজ আর ছটফটে স্বভাবের জন্য অনেকেই হালকাভাবে নেন সারাকে।  তিনি বলেন, আমি মজা করতে পছন্দ করি। চেষ্টা করি সব সময় আনন্দে থাকতে। এই ইমেজ আমার জন্য কতটা ক্ষতিকর, সেটা আমার জানা আছে। মানুষের ধারণা, আমি শুধু এসবই করতে পারি।  অভিনেত্রী আরও বলেন, আমি যদি আপনার সঙ্গে কফি খেতে খেতে কৌতুক বলি, তার মানে এই নয় যে আমার মধ্যে শালীনতা কিংবা ব্যক্তিত্বহীনতার অভাব রয়েছে।  আমার মনে হয়, মানুষ আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিচার করেন। আমার মধ্যে হাস্যরস আর আত্মসম্মানবোধ— দুটি একসঙ্গে কেন থাকতে পারবে না। চলতি বছরের ১৫ মার্চ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে সারা অভিনীত সিনেমা ‘মার্ডার মুবারক’। এরপর গত ২১ মার্চ অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পায় তার ‘অ্যায়ে বতন মেরে বতন’। এ দুই সিনেমায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন তিনি।    ‘মার্ডার মুবারক’ সিনেমায় দিল্লির এক অভিজাত পরিবারের আধুনিক মেয়ের চরিত্রে দেখা গেছে সারাকে। অন্যদিকে ‘অ্যায়ে বতন মেরে বতন’ সিনেমায় ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামী উষা মেহতার ভূমিকায় ধরা দিয়েছেন তিনি। আর এ দুই ভিন্ন ভূমিকায় সারার অভিনয় মন ছুঁয়ে গেছে সিনেমাপ্রেমীদের।  ‘অ্যায়ে বতন মেরে বতন’ সিনেমা মুক্তির পর সবাইকে চমকে দিয়েছেন সাড়া। অনেকেই তাকে এ রকম সিরিয়াস চরিত্রে ভাবতেই পারেননি বলে জানান তিনি।   এ প্রসঙ্গে সারার ভাষ্য, এই সিনেমার প্রোমো মুক্তির পর অনেকেই আমাকে সিরিয়াস চরিত্রে দেখে চমকে গেছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল যে এ রকম এক চরিত্রে   আমি কী করছি? তবে এ রকম এক শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় করে আমি রীতিমতো গর্ববোধ করছি। আরও গর্ববোধ করছি সবাইকে চমকে দিতে পেরে।
০২ মে ২০২৪, ১২:৩৭

রাজধানীতে যুবকের মৃত্যু, চিকিৎসকের ধারণা হিট স্ট্রোক
রাজধানীর ডেমরার আমিন বাগে মেহেদী হাসান (২৩) নামে এক যুবক মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত গরমে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে। মেহেদী হাসান ডেমরার ইষ্টার্ন হাউজিং বাঁশের পোল আমিন বাগের জুয়ের মণ্ডলের একমাত্র ছেলে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকের ধারণা, হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন মেহেদী হাসান। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেরেছন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, মরদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ডেমরা থানা পুলিশকে জানানো হয়ছে। নিহতের খালা ইসরাত জাহান জানান, শুক্রবার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল মেহেদীর। কিন্তু এরই মধ্যে আজ (বুধবার) দুপুরের দিকে নিজ বাড়িতে হঠাৎ সে গরমে অস্থির হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার বমিও করে সে। পরে দ্রুত তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান মেহেদী আর বেঁচে নেই।
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৮

নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ধারণা হিটস্ট্রোক
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য মারা গেছেন। তীব্র তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন তার স্বজনরা। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে তিনি মারা যান। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক আসিফ বিন আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তূর্য অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন বলে তার পরিবার ও স্বজনরা ধারণা করছেন। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। ইশতিয়াক ওয়ারেছ তূর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০২তম ব্যাচের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। তূর্যের বাবা ওয়াহিদুজ্জামান মিনু আফজাল হোসেন মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন তূর্য। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় তূর্যের মৃত্যুর পর বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে তার মরদেহ নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাদ জোহর সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদরাসা মাঠে তার জানাজা হবে।  
২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩৪

বেইলি রোডে আগুনের সূত্রপাতের ধারণা পেয়েছে সিআইডি
রাজধানীর বেইলি রোড ট্রাজেডির ঘটনায় ইলেকট্রিক কেতলি ও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। তিনি বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৫টির বেশি আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক টিম। সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে স্পষ্ট হবে আগুনের নেপথ্যে কী ছিল কারণ। তবে অগ্নিকাণ্ডটি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সূত্রপাতের সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।  সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস যখন সব কাজ শেষ করে আগুন নিভিয়েছে তখন সিআইডির একাধিক টিম সেখানে কাজ করেছে। সেখানে সিআইডির ফরেনসিক টিম, ডিএনএ টিম ও কেমিক্যাল টিম কাজ করেছে। বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সিআইডি প্রধান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাতের সম্ভাবনাই বেশি। কেমিক্যালের আলামতও পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে সেখানে বিস্ফোরকজাতীয় কিছু ছিল কি না। আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। রিপোর্ট পেলেই নিশ্চিত হবে আগুনের কারণ। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুন লাগে। ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১২ জনকে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট। কমিটি চার মাসের মধ্যে বেইলি রোডে আগুনের কারণ অনুসন্ধান করবে এবং কারা এর জন্য দায়ী, তা খুঁজে বের করবে। এ ছাড়া রাজধানীর ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন হবে, তার সুপারিশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে এ কমিটি।
০৭ মার্চ ২০২৪, ১৮:০৭

তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকার আগুনে নিহত সবাই বাংলাদেশি, ধারণা আইওএমের
লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইউরোপ যাত্রাকালে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৯ অভিবাসীর সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এছাড়া ওই ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানা গেছে।  নিহত ৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি উদ্ধার করা ২৬ বাংলাদেশিকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি টিম তিউনিসিয়ার উপকূল এলাকা জারজিসের উদ্দেশে রওনা করেছে। ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া উপকূল থেকে ৫২ জনের একদল অভিবাসী সাগরপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় তিউনিসিয়া উপকূলে তাদের বহনকারী নৌকাতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী নৌকাটি থেকে ৯ অভিবাসীর মরদেহ এবং ৪৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। যে ৯ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে তারা বাংলাদেশি বলে ধারণা করছে আইওএম। দূতাবাসের এ কর্মকর্তা জানান, জীবিত অবস্থায় উদ্ধার অভিবাসীদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমাদের দূতাবাসের একটি টিম ইতোমধ্যে জারজিসের উদ্দেশে যাত্রা করেছে। তারা আইওএম ও রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় নিহত বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জীবিত বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করবেন। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মাত্র দূতাবাস সবাইকে জানিয়ে দেবে। নিহত বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানো ও উদ্ধারদের বিষয়ে দূতাবাসের করণীয় জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, আগে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে। তারপর দূতাবাস সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যাবে। আইওএমের তথ্যমতে, বিভিন্ন দেশের উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে গত বছর তিন হাজারের বেশি অভিবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন ও নিখোঁজ হয়েছেন। ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। লিবিয়া ও তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী তাদের ওপর নজরদারি জোরদার করেছে। ফলে বর্তমানে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ।  
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৪

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দাবি কি বেদবাক্য?
অনেক বছর ধরে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে আসছে। ১৮০টি দেশের প্রতিটির খুবই অল্প সংখ্যক কিছু ব্যক্তিকে মূল্যায়ন করে দেশগুলোর কোনটি কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করা হয় সে অনুযায়ী দেশগুলিকে ক্রমানুসারে সাজায় প্রতিষ্ঠানটি। এমন পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে কারণ একটি দেশের প্রকৃত দুর্নীতি পরিমাপ করা সহজ নয়। তাছাড়াও কাজটি সম্পন্ন করতে যে বিস্তৃত সমীক্ষা চালাতে হবে, তা ব্যয়বহুল। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়গুলোকে সামনে আনার কাজটি ভালোভাবে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এই কার্যক্রমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ জড়িত রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণগুলো অকাট্য সত্য নয়। ফলে সেগুলো বিকৃত সত্য তুলে ধরতে পারে। মনে করি, একটি নিম্ন আয়ের দেশের আইন প্রণেতারা একটি পণ্য চুক্তির বাইরে ব্যবসার বিস্তারিত পরিসংখ্যান দেয় না। এতেই দুর্নীতির সন্দেহ তৈরি হয়, কিন্তু এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো, প্রমাণ নেই। ঘটনাটিতে অনিয়ম হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। দোষ ধরতে হলে দোষী কাউকে খুঁজে পেতে তো হবে। কিন্তু বিশেষ ওই দেশটিতে কর্পোরেট লেনদেন ঠিক ত্রুটিহীন নয় এমন ধারণা আগে থেকে করে রাখলে সেই অনুযায়ী দেশটির দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রভাবিত হবে। তারপরে ধরা যাক, সাংবাদিকরা আসল ঘটনাটি তুলে ধরলো, ‘বড় কোম্পানিগুলো পণ্য চুক্তিটি আটকে দিয়েছে’ শিরোনামে সংবাদ হলো। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এমনটি হতে পারে। তো, সন্দেহ যাচাই করতে কার কাছে যাবে সবাই? অবশ্যই সূচক! তারপর শুরু হবে গল্প বোনা: ‘অমুক দেশটিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে...’। ঘুরেফিরে এটিই দেশটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে পরের বছরের সমীক্ষাতেও দেশটির ভাবমূর্তি খারাপ হয়ে যায়। এভাবেই চলে বছরের পর বছর। যখন একটি নতুন সরকার এসে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রকদের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পরিস্থিতি বদলায়। এমন নয় যে, সরকারটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বরং দুর্নীতির ধারণা সূচকে নিজের দেশকে নামিয়ে তুলনামূলক একটি ভালো জায়গায় আনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করতে থাকে ওই সরকার বা সরকারপ্রধানের মনে। কিন্তু অনেকে এটা ভাবে না যে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ওই সূচকটি প্রকৃত দুর্নীতির প্রমাণ নয়। এমন বিকৃত সত্য তুলে ধরার সূচক তৈরি করে যে প্রতিষ্ঠান, তার কর্মীরা কি ব্যাপারটি বোঝে না? তারা কি অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিবাদ করে না? তারা করেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এই সূচকের মূল স্রষ্টা জোহান গ্রাফ ল্যাম্বসডর্ফ ১৯৯৫ সালে দুর্নীতির ধারণা সূচক উদ্ভাবন করেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালকে আন্তর্জাতিক মনোযোগের স্পটলাইটে তিনিই রেখেছেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোবাস ডি সোয়ার্ডকে জানান, তিনি এই সূচক আর তৈরি করবেন না। খবরটি বেশি প্রচার করতে দেয়া হয়নি। তবে প্রফেসর ল্যাম্বসডর্ফের এমন সিদ্ধান্ত সূচকের চলমান কাভারেজের পক্ষে যায় না। দুর্নীতি সূচক ১৩টি ভিন্ন ধারণা সমীক্ষার মাধ্যমে করা হয়। মূল্যায়ন করেন ‘একদল দেশের অর্থনীতিবিদ’, ‘স্বীকৃত দেশের বিশেষজ্ঞ’, ‘প্রতি দেশে দুইজন বিশেষজ্ঞ’। এসব বিশেষজ্ঞ মূলত লন্ডনের। তবে নিউ ইয়র্ক, হংকং, বেইজিং এবং সাংহাইয়ের বিশেষজ্ঞও আছে। তারা বিশেষজ্ঞদের একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক দ্বারা সমর্থিত। আরও আছে ‘কর্মী এবং পরামর্শদাতা’, ইন-হাউস কান্ট্রি স্পেশালিস্ট, যারা দেশের ফ্রিল্যান্সার, ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে। ‘ব্যবসায়িক নির্বাহী’ এবং আরও অনেকে। এখানে মূল বিষয় এই নয় যে এই সোর্সদের মধ্যে কেউ খারাপ বা ভুল। বিষয় হল তাদেরকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে। ফলাফলে কোনো বৈচিত্র্য নেই। এগুলো ৮০ থেকে ১০০%-র মধ্যে থাকে। কারণ একই ধরণের লোকদের কাছে তাদের ধারণা জানতে চাওয়া হয়। এটা স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এলিট শ্রেণির মতামত নিয়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক বানানো হয়। সাধারণত তারা একইরকম শিক্ষায় শিক্ষিত। এক বা একাধিক জরিপ একটি কোম্পানির জন্য একটি নতুন ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্য খুব দরকারি উৎস হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এমন সব উৎস এক হলে তা কি কোনো দেশের দুর্নীতির আসল চিত্র বা দুর্নীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সত্য তুলে ধরে?  লেখক : অর্থনীতিবিদ এবং প্রধান নির্বাহী, ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক, ইউকে
৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬:০২

দুর্নীতি আর দুর্নীতির ধারণা যারা এক করছে, তাদের উদ্দেশ্য স্বচ্ছ নয়
এবারও দুর্নীতির ধারণা সূচকের প্রতিবেদন প্রকাশ করলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এবার ২৪ স্কোর পেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ নম্বর। ২০২৩ সালে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৭ নম্বরে। অর্থাৎ বিশ্বে বাংলাদেশের চেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ মাত্র ১৭০টি। এভাবেই বলা হয় সবসময়। অথচ প্রতিবেদনে লেখা হয় এটা দুর্নীতির ধারণা সূচক। কিন্তু উপস্থাপন করা হয় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে। খুব সুক্ষ্মভাবে ধারণা শব্দ এড়িয়ে যাওয়া হয়। পরিস্কার করে বলা হয় না যে দুর্নীতি ও দুর্নীতির ধারণার বিষয়টি এক নয়। এবারও তাই হয়েছে।  এ নিয়ে সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন কয়েকজন গবেষক। তারা বলছেন এটা অনেকটা, আপনার একটি বাড়ির মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি এবং সিটি কর্পোরেশন ভিন্ন ভিন্ন ধারণা তৈরি করার মত। তারা প্রত্যেকেই যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বাড়ীর দাম ঠিক করবে এবং কারো সঙ্গে কারণা ধারণা মিলবে না। একটি বাড়ীর ভিন্ন ভিন্ন দাম। এপ্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে প্রচলিত জোকসটি হলো অনেকটা এরকম। আমার বন্ধুবান্ধবের ধারণা আমার বেতন কোটি কোটি টাকা। আর আমার পরিবারের ধারণা আমাকে অফিস থেকে কোনো বেতনই দেওয়া হয় না। অথচ ব্যক্তি কিন্তু সেই আমি।  অর্থাৎ বাস্তবতা আর ধারণা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। একই ভাবে একটি দেশের দুর্নিতী নিয়ে একটি দেশের সম্পর্কে একেক সংগঠনের ধারণা একেক রকম হতে পারে। বাংলাদেশ নিয়ে গত ১৪/১৫ বছর ধরে টিআইবির দুর্নীতির ধারণা সূচক একই জায়গায় স্থির হয়ে আছে। অথচ এর মধ্যে বাংলাদেশে নীতি এবং কাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই দুদকের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রবর্তন, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রসারিত করেছে। শুধু তাই নয়, হুইসেল ব্লোয়ার আইন, তথ্য অধিকার আইন ও কমিশন প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সাথে সারাদেশে ডিজিটাইজেশন করা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দুর্নীতি ও হয়রানি অনেক কমানো হয়েছে।  কিন্তু টিআইবি’র রিপোর্ট দেখে মনে হয় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনো কাজই হয়নি। অথচ এর মধ্যে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২৭৯৩ ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে, জিডিপি ৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ৫০ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। মুড়ির টিনের লক্করঝক্কর জার্নি থেকে দেশ মেট্রোরেলে ব্যবস্থায় রূপান্তর হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুস্বাস্থ্য, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং সামাজিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব সংস্থাগুলো। অথচ টিআইবির প্রতিবেদনে উল্টো চিত্র।  বিশ্বজুড়ে টিআইবির মূল সংগঠন টিআই এর সমালোচকরা বলেন, এদের রিপোর্ট সব সময় একটি রাজনৈতিক দল বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর পক্ষে যায়।  অবশ্য এটা প্রমাণের জন্যে বাংলাদেশের চেয়ে বড় উদাহরণ তো আর হয় না। ২০১২ সালে দূার্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট যেখানে ছিল ২.৬, ২০২৪ সালে এসে তা কমে হয়েছে…। বিএনপির চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ২০০৬ সালেও বাংলাদেশের পয়েন্ট এমনই ছিল। অথচ ২০০৬ সালের বাংলাদেশ আর ২০২৪ সালের বাংলাদেশের মধ্যে আকাশপাতাল ব্যবধান। অথচ টিআই এরকমই ধারণা সূচক তৈরি করছে বছরের পর বছর। তাই সারা পৃথিবীর একাডেমিশিয়ান এবং উন্নয়ন গবেষকরা এই ধারণা সূচক নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের মূল অভিযোগ, টিআই কেন, কার কাছ এবং কিভাবে এই ধারণার তথ্য নিচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয় না।  বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স কোবহ্যাম বলেন, টিআই-এর রিপোর্টগুলো সুশীল সমাজের কথা বলে দুর্নীতির জনপ্রিয় ও বিভ্রান্তিকর ধারণাগুলো সামনে নিয়ে আসে, যা একটি রাষ্ট্র সম্পর্কে অন্য রাষ্ট্রের কাছে ভুল বার্তা দেয়। আরেক বিশ্ববিখ্যাত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক পল হেইউড বলেন, অনেক বছর ধরেই টিআই রিপোর্ট করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। পদ্ধতিগতভাবে টিআই-এর গবেষণায় অনেক ভ্রান্তি আছে। এই গবেষনা বরং সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে 'দুর্নীতির ফাঁদ' তৈরি করার ঝুঁকি বাড়ায়। এসব কারণেই বিশ্বব্যাপী টিআই-এর ধারণা সূচক একটি অগ্রহণযোগ্য প্রতিবেদনে পরিণত হয়েছে।  গত কয়েক বছরে টিআই নিজেই অনেক দুর্নীতিতে জড়িত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এগুলো কোনো ধারণা নয়। প্রামাণ্য দুর্নীতি। যেমন ২০১৪ সালে সিমেন্স কোম্পানি থেকে ৩ মিলিয়ন ডলার ফান্ড টিআইবি নেয়। যে কোম্পানি ২০০৮ সালে বিশ্বে দুর্নীতির জন্য সর্বোচ্চ ১.৬ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিয়েছে। ২০১৫ সালে টিআইবির ‘ওয়াটার ইন্টেগ্রিটি নেটওয়ার্কের’ আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় মিজ আনা বাজোনি নামের এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। দুর্নীতির অভিযোগে টিআই-এর আমেরিকা এবং ক্রোয়েশিয়া চ্যাপ্টার বাতিল করা হয়। সংস্থার ভেতরে দুর্নীতি এবং হুইসেল ব্লোয়ারদের ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে সংস্থার এমডি প্যাট্রিসিয়া মোরেইরা ২০২০ সালে পদত্যাগ করেন। তার পূর্বসূরি আরেক এমডি ডি সোয়ার্ত ২০২১ সালে এই একই অভিযোগ নিয়ে একটা বই লিখেছেন। ২০২২ সালে ব্রাজিলে টিআই এর বিরুদ্ধে একটি নির্দিষ্ট দলের পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা চালানোর অভিযোগ ওঠে। টিআই ব্রাজিলের কয়েকজন কর্মকর্তার একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে টাকা নেয়ার প্রমাণ ও কথোপকথন ফাঁস হয়। এ অভিযোগে টিআই-এর বিরুদ্ধে মামলা চলছে ব্রজিলে। অথচ বাংলাদেশের টিআই এর প্রধান সব সময় বলার চেষ্টা করেন, টিআইবি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করে না। ড. ইফতেখারুজ্জামান ক’দিন আগে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরও এমন কথা বলেন। এবারও নিশ্চয়ই বলবেন।  যাই হোক লেখা শুরু করেছিলাম, দুর্নীতি এবং দূর্নীতির ধারণার সূচক বিষয়ক ধোঁয়াশা নিয়ে। এসে গেলো টিআইবির জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পেক্ষাপট। এবারের রিপোর্ট প্রকাশের আগেও তারা সেই ধোঁয়া পরিস্কার করেনি। আমার মনে হয় না করে ভালই করেছেন। এই সার্বিক আলোচনায় সাধারণ মানুষের কাছে তাদের এত সুশীল প্রীতির বিষয়টি নিশ্চয়ই পরিস্কার হয়েছে। সারা বিশ্বের মত তারাও নিশ্চয়ই এখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ট্রান্সপারেন্সি বা স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন।      লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।
৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়