• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আনুশকার শরীরে মিলেছে রহস্যজনক ‘ফরেন বডির’ আলামত

  ১০ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৫৪
Anushka's body showed signs of a mysterious 'foreign body'
ফাইল ছবি

সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর ঘটনা রাজধানীর কলাবাগানে আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলা। মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের এই ছাত্রীর রেক্টাম ও যৌনাঙ্গে মিলেছে অস্বাভাবিক ‘ফরেন বডি’র আঘাত। কি ছিল সেই ‘ফরেন বডি’? যে রহস্যকে কেন্দ্র করে চলছে গভীর অনুসন্ধান।

আনুশকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই মেডিকেল ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্তের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে কাজ করে যাচ্ছে সিআইডিসহ আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরইমধ্য থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র প্রত্যক্ষ আলামত ও চিহ্নের ভিত্তিতে ধারণা করছে যে- `ফরেন বডি টাইপের’ কিছু একটা ভিক্টিমের রেক্টামে পুশ করানো হয়েছে। যে কারণে যৌনাঙ্গ ও রেক্টাম ফেটে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।

সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে দিহানের সাথে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক চলমান ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। আমরা দিহানের বাসা থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। তবে, তদন্তের স্বার্থে সকল বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত রিপোর্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আসলেই এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি। ফরেনসিক চিকিৎসক অভিমত দিয়েছেন- ‘বিকৃত’ যৌনাচারের কারণে ওই মেয়েটির যৌনাঙ্গ এবং রেক্টাম থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে।

আনুশকা নূরের ময়নাতদন্ত হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, আনুশকার শরীরের নিম্নাঙ্গে ‘কোন ফরেন বডি’ কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। এক কথায় সেখানে বিকৃত যৌনাচার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার পোস্টমর্টেম জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, স্বাভাবিক পেনিস (পুরুষাঙ্গ) দ্বারা এই ইনজুরি মোটেও সম্ভব না। ওটা পেনিসের বাইরে অন্য কিছু ছিল।’

ডা. সোহেল মাহমুদ আরটিভি নিউজকে আরও বলেন, যৌনিপথ ও পায়ুপথ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ তার (আনুশকার) মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় সে ‘হাইপো ভোলেমিক’ শকে মারা গেছে। মানুষের মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বের হয়ে গেলে হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। এ কারণে হৃদযন্ত্র শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না, মানুষ মারা যেতে পারে।

বিকৃত যৌনাচারের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যোনিপথ ও পায়ুপথ দুই রাস্তা থেকেই আমরা রক্তক্ষরণের আলামত পেয়েছি। আমরা জোর জবরদস্তির কোনো আলামত পাইনি। তবে যোনিপথ ও পায়ুপথে কিছু ইনজুরি আমরা পেয়েছি। মূলত সেই ইনজুরিগুলোর জন্যই সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু বডির অন্য কোথাও জোরাজুরির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’

যৌনাচার দলগত ছিল কি না? এমন প্রশ্নে সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘তার (মেয়েটি) বডি থেকে আমরা ডিএনএ সংগ্রহ করেছি। সেটি আমরা ল্যাবে পাঠিয়েছি। তার রিপোর্ট আসলে আমরা জানতে পারব এটা গ্যাং রেপ ছিল কি না।’

গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মামুনুর রশিদ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দিহানের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে দিহান বলেছেন, শারীরিক সম্পর্কের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে বন্ধুদের ডেকে তাদের সহযোগিতায় মেয়েটিকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের পর মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবা আল আমিন আহম্মেদ। মামলার এজহারে মেয়েটির বাবা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার স্ত্রী অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হন। তিনি ব্যবসায়িক কাজে বের হন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার স্ত্রীকে ফোন করে মেয়ে জানায়, সে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনতে যাচ্ছে।

বেলা একটা ১৮ মিনিটে মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোনে কল আসে। ফারদিন ইফতেখার দিহান (১৮) নিজের পরিচয় দেয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলে, ‘সে দিহান। আমার মেয়ে তার বাসাতে গিয়েছিল। আকস্মিকভাবে আমার মেয়ে তার বাসাতে অচেতন হয়ে পড়লে সে আমার মেয়েকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়।’

এই খবর পেয়ে মেয়েটির মা অফিস থেকে বের হয়ে বেলা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে ছুটে যান। এজাহারে আনুশকার বাবা আরও উল্লেখ করেন, ‘সেখানে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছ থেকে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে মর্মে আমার স্ত্রী জানতে পারেন।’

বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে বিষয়টি মেয়ের বাবা আল আমিনকে জানান স্ত্রী। এরপর তিনি পুরান ঢাকার নবাবপুরের ব্যবসাস্থল থেকে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। এজাহারে বাবা উল্লেখ করেন, ‘জরুরি বিভাগে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তার নার্স হাসপাতালে অন্যান্য কর্মচারীসহ উপস্থিত অন্যান্য লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি যে উপরে বর্ণিত বিবাদী ফারদিন ইফতেখার দিহান দুপুরে ১২ টার দিকে বড় মেয়ে আনুশকা নূর আমিনকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনে তার কলাবাগান ডলফিন গলির, লেকসার্কাসের ফাঁকা বাসায় ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়।’

রক্তক্ষরণে মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে দিহান ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বেলা একটা ২৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পৌনে ২টার দিকে মারা যায় মেয়েটি। পরে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি দল হাসপাতালে যায়। তারা মেয়েটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠায়।

কেএফ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
খিলগাঁওয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর
কসবায় ছুরিকাঘাতে কৃষক হত্যা, গ্রেপ্তার ২
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪
বিয়ে না দেওয়ায় মাকে গলা কেটে হত্যা করল ছেলে
X
Fresh