ভিডিওতে যে গোলাপ দেখছেন এর মূল্য ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। যা টাকায় প্রায় ৪, ৭৭৪ কোটি। দেখে হয়তো বুজতেই পারছেন এটি কোনো সাধারণ গোলাপ নয়। মরুভূমি চিন্তা করতে চোখে ভেসে ওঠে ধূসর এক চিত্র। কিন্তু সেই মরুভূমির দেশ কাতারেই কি না ফুটেছে এক বিশাল গোলাপ! যার নাম ডেজার্ট রোজ।
এই গোলাপটি মূলত কাতারের জাতীয় জাদুঘর, যার প্রতিটি পাপড়ি দেখতে অবিকল গোলাপের মতো। এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ। প্রায় ৪০ হাজার বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে এই স্থাপত্যটি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় এক দশক, খরচ হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার! যা টাকায় ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি। ফরাসি স্থপতি জ্যঁ ন্যুভেলের নিখুঁত নকশায় তৈরি এই জাদুঘরটি দেখতে যেন সত্যিকারের এক বিশাল গোলাপ।
কিন্তু কেন এর নাম ডেজার্ট রোজ? কারণ এটি অনেকটা মরুভূমির গোলাপের মতো। কোন গোলাপ? বলছি, মরুভূমিতে জন্মানো স্যান্ড রোজ বা বালুর গোলাপ আসলে কোনও ফুল নয়। কাতারের মরুভূমির জিপসাম আর বালু মিলে বিশেষ ধরনের পাথরের স্তূপ তৈরি করে, যা দেখতে অনেকটা গোলাপ ফুলের মত। এই প্রাকৃতিক আকর্ষণ থেকেই জাদুঘরের নাম ডেজার্ট রোজ রাখা হয়।
জাদুঘরের ভেতরে গেলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে কাতারের তিনটি অধ্যায়। দেশটির প্রাচীনকালের গল্প, জীবনযাপনের বিবর্তন, আর আধুনিক কাতারের উত্থান। ১১টি গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শিত এই গল্পগুলো দেখতে দেখতে মনে হবে যেন এক ঐতিহাসিক যাত্রায় পা রেখেছেন। প্রথম গ্যালারিতে দেখা যাবে ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের পৃথিবী, ফসল আর বিভিন্ন জীবাশ্ম। এরপর ধীরে ধীরে ফুটে উঠবে কাতারের জনগণের জীবনযাপন, তাদের বেদুইন সংস্কৃতি, তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের গল্প এবং আধুনিক উন্নয়নের চিত্র। এই জাদুঘরের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এখানে দেয়ালজুড়ে বিশাল পর্দায় চলমান ভিডিও আর ত্রিমাত্রিক ডায়োরামার মাধ্যমে ইতিহাসকে জীবন্ত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ভেতরের জায়গাগুলো যেমন আকর্ষণীয়, বাইরের পার্কটিও তেমনি মনোমুগ্ধকর। পার্কে ১১৪টি ঝর্ণা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ, যার নাম আলফা। এই বিশাল পার্কটিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে সবুজ গাছপালা আর খেজুর গাছের সারি। ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের এই পার্কে কাতারের মরুর মাঝে এক চমৎকার সবুজ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, জাদুঘরে রয়েছে শিল্পকর্ম, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, এবং দর্শনার্থীদের জন্য অসাধারণ এক গিফট শপ। কাঠ দিয়ে তৈরি শপটি দেখতে থ্রি-ডি ধাঁধার মতো, যা মনোমুগ্ধ করে দর্শকদের। এখানে কাতারের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে ছোট ছোট উপহার সামগ্রী সবই পাওয়া যাবে।
জাদুঘরের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ শুধু কাতারের ঐতিহ্য নয়, বরং তাদের সংগ্রাম, অর্জন আর গৌরবের প্রতীক। আগামী বিশ্বকাপে কাতারে আগত অতিথিরা কাতারের জাতীয় জাদুঘরের এই বিস্ময়কর সৌন্দর্য দেখে আরও মুগ্ধ হবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরটিভি/এফআই