• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
logo
অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস / ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতির প্রাণ
অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস / প্রাপ্তি কতটুকু, সামনে কী চ্যালেঞ্জ
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ হয় ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে। এরপর রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক মিলে সিদ্ধান্ত নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের। ৬ আগস্ট বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। গেল ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ১৩ জন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। পরবর্তীতে তিন ধাপে এখন উপদেষ্টার সংখ্যা ২১ জন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। থানাগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। কিছু সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রধানদের সরিয়ে নেওয়া হলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখনও নিশ্চিত হয়নি। অস্থিরতা চলছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। সড়কে চাঁদাবাজি কিছুটা কমলেও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দাম এখনও সাধারণের নাগালের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী তা করা বেশ কঠিন। যে বিশাল জনআকাঙ্ক্ষার ধারক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে এই সরকার, জনগণের সেই আস্থা ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন কিছু সংস্কার করতে হবে, যার মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম হবে বাংলাদেশের।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দাবি মেটানোর জন্য কাজ করছে, যার বাস্তবায়ন করাটা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার কোন কোন বিষয়ে সংস্কার করতে চায় তার একটি স্পষ্ট রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
পোশাক শিল্পে অস্থিরতায় দেশি-বিদেশিদের ষড়যন্ত্র
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি কমলেও নিত্যপণ্যের দাম পুরনো চেহারায়
অবিশ্বাস্য উচ্চতায় খেলাপি ঋণ, যা বলছেন বিশ্লেষকরা
কোন পথে বাংলাদেশের অর্থনীতি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিজেই দুর্যোগে!
স্বাধীনতার ৫২ বছরেও দুর্যোগ কাটেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের। এক কর্মকর্তা ও এক অফিস সহকারী দিয়ে চলছে উপজেলা পর্যায়ের কার্যক্রম। ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর জন্য ৪৯৫ উপজেলার একটিতেও নেই নিজস্ব কোনো যানবাহন। ফলে চলমান বন্যায় অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে থাকা এই অধিদপ্তর। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১টি জেলা। দুর্গতদের সহায়তায় দেশবাসী এগিয়ে এলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ না পৌঁছানোর অভিযোগে সহসাই প্রশ্ন উঠছে দুর্যোগ মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আসলে কী করছেন?  দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় অফিস থাকার পরও কেন ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না ওইসব এলাকায়। এসব প্রশ্ন নিয়ে মহাখালীর অধিদপ্তর মহাপরিচালকের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় সব অনিয়মের ভয়াবহ তথ্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. আওলাদ হোসেন বলেন, অনেক ত্রাণসামগ্রী আছে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য সমস্যা হচ্ছে। মাত্র দুইজন জনবল নিয়ে এতো বিশাল দুর্যোগ মোকাবিলা আমাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে আমরা বারবার প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে সেটি অনুমোদন হচ্ছে না।  ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে দুর্যোগ মোকাবিলার একমাত্র সংস্থাটি চলছে মাত্র ২ হাজার ৭১০ জন জনবল নিয়ে। যার মধ্যে আবার অনেক পদই খালি। সে বিবেচনায় ৫২ বছরে কর্মী বাড়ার বদলে উল্টো কমেছে। একজন কর্মকর্তার অধীনে একজন সহকারী নিয়ে চলছে ৪৯৫ উপজেলার কার্যক্রম। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় নেই কোনো যানবাহনও। সংকটের কথা স্বীকার করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ও। বলছে, সংস্কারের কাজ শুরু হবে শিগগিরই, বাড়ানো হবে জনবলও। বিশেষজ্ঞরা জানান, জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশে কোনো উদ্দেশ্যে কাদের স্বার্থে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
উন্নয়নের আড়ালে হাসিনা সরকারের যত আর্থিক কেলেঙ্কারি
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে বিপুল পরিমাণ অর্থলুট, পাচার, এবং অনিয়মের ফলে দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ সংকট। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৪টি বড় অনিয়মের কারণে ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এসবের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নেওয়া ঋণের বেশির ভাগই লুট হয়েছে।  বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, আওয়ামী লীগ গত দেড় দশকে কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ, মেট্রেরেলের মতো অবকাঠামো তৈরি করেছে। কিন্তু বিপরীতে ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান। দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নির্বাচন কমিশনসহ বেঁচে নেই কোনো প্রতিষ্ঠানই। সর্বোপরি এসবের ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। যা স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রায়ও। ২০০৯ সালে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। তবে আজ সেই ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে দেড় দশকে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের ফলে দেশের অর্থনীতির ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে, যা আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে ঘটে যাওয়া ধস ছিল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা। ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যায়, কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আকস্মিকভাবে ঘটে ১০ শতাংশ পতন। এর পরের মাসে আরও বড় পতন ঘটে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। সেই সময়ে বাজারের অস্থিতিশীলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন। তদন্তে ৬০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দায়ী করা হলেও, তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে অন্যতম বড় কেলেঙ্কারি হল হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ৩৫ বিলিয়ন টাকা ঋণ নেওয়া হয়। এরমধ্যে ২৭ বিলিয়ন টাকা চলে যায় হলমার্ক গ্রুপের কাছে, আর বাকি টাকা পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে ভাগ হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বড় ব্যাংক জালিয়াতি, যা দেশবাসীকে হতবাক করে দেয়। একইভাবে বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ছিল আরও একটি বিশাল দুর্নীতি। ২০১০-২০১২ সালের মধ্যে, ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা যাচাই ছাড়াই প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার ঋণ ইস্যু করেন। এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়েছে চরম প্রভাব, যা এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কেলেঙ্কারি বিশ্বব্যাংকের ১.২ বিলিয়ন ঋণ বাতিলের কারণ হয়। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করলেও, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ হয়, তবে দুর্নীতির এই অভিযোগ দেশের সুনামকে ক্ষুণ্ন করে। ২০১৬ সালে ঘটে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা-বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি। হ্যাকাররা একটি সাধারণ ইমেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে। এই অর্থ নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত ছিল, যা ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংক এবং ক্যাসিনোতে স্থানান্তরিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার মান পরিবর্তনের ঘটনাও একটি বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে সামনে আসে। ২২ ক্যারেটের সোনা ভল্টে জমা রাখার পর হয়ে যায় ১৮ ক্যারেট। এই অনিয়মের ফলে সরকারের ক্ষতি হয় প্রায় ২ কোটি টাকা। শেখ হাসিনা সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, লুট হওয়া এই অর্থ দেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ এবং (২০২৩-২৪) বাজেটের ১২ শতাংশেরও বেশি। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।  সম্প্রতি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে যখন সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার পর তা ফেরত আসছে না। এদিকে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যে, যদি এই অর্থনৈতিক অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে একটি ‘ঋণ ফাঁদে’ পড়তে হতে পারে। ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখেই ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এই দুর্নীতির তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। তবে এই বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন কতটা সম্ভব, সেটাই এখন সময়ের প্রশ্ন।
যেভাবে প্রবাসীদের ২৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন চার মন্ত্রী ও এমপি
মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে দেড় বছরে ঠকানো হয়েছে অন্তত সাড়ে চার লাখ প্রবাসীকে। বিগত সরকারের ছত্রছায়ায় মন্ত্রী সিন্ডিকেট সদস্যরা দেড় বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই মালয়েশিয়ায় গিয়ে পাচ্ছেন না কাজ, কেউ আবার দেশ থেকে ঋণ করে গিয়ে ফিরে আসছেন খালি হাতে।  যেখানে সরকার নির্ধারিত খরচ ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা, সেখানে একেকজন প্রবাসীকে এই সিন্ডিকেট চক্রকে দিতে হয়েছে ৫ লাখ টাকারও বেশি। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে মাত্র দেড় বছরে এ চক্র প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রবাসীকে ঠকিয়ে মালিক হয়েছেন বিপুল অর্থের। এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ আরও তিনজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। চাঞ্চল্যকর এমন অভিযোগ নিয়ে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম এরইমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। সিন্ডিকেটে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে, অন্যটি মেয়ে নাফিসা কামালের নামে।  দুদকের তথ্যানুযায়ী, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। এরপর সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় স্নিগ্ধা। কিন্তু মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট বা চক্রে যোগ দেওয়ার পর দেড় বছরে প্রায় ৮ হাজার কর্মী গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির নামে। ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে রিক্রুটিং এজেন্সি করেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠালেও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মী। ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে পঞ্চম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর আগে তাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়া গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি। অভিযোগে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য সরকার নির্ধারিত খরচ যেখানে ছিল ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা, সেখানে একেকজন কর্মীকে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে। দেড় বছরে সাড়ে চার লাখের মতো কর্মী পাঠিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে এ খাতে। এই সিন্ডিকেটের কারণে সরকারের নির্ধারিত ফির চেয়ে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমিশন নিয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যরা। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়া এমন ধরনের সিন্ডিকেট বিশ্বের আর কোথাও গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মদতে এই চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে।  মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে গত ১৯ এপ্রিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় বিবৃতি দেয়। বিশেষজ্ঞদের বরাতে এতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেই দুর্বিষহ, মানবেতর ও অমর্যাদাকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। চাকরির ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
নতুন গবেষণায় মিলল বুধ গ্রহে ১৮ কিলোমিটারজুড়ে হীরার স্তর!
সৌর পরিবারের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের পৃষ্ঠদেশের নিচে ১৮ কিলোমিটার পুরো হীরার স্তর রয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকা গ্রহটিতে এত হীরার উপস্থিতির বিষয়ে এর আগে জানা যায়নি। এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছিলাম যে, এর পৃষ্ঠ ভীষণ উত্তপ্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন ও অবাক করা তথ্য—বুধের ভূপৃষ্ঠের নিচে হীরার আস্তরণ থাকতে পারে! প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে ধূলিকণা আর গ্যাসের ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে জন্ম হয় বুধের। তখন এই নবজন্ম গ্রহের গভীরের লাভার মহাসাগরের ওপরে একটি কঠিন গ্রাফাইটের স্তর তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীব্র তাপ আর গ্রহের নিজস্ব চাপে সেই গ্রাফাইটের স্তরটি হীরায় পরিণত হতে পারে। এটাই বিজ্ঞানীদের ধারণা। বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বার্নার্ড শারলিয়ার এবং তার দল এই ধারণা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বুধের ম্যান্টেলের গভীরে থাকা তাপ ও চাপের পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন একটি বিশেষ যন্ত্র—অ্যানভিল প্রেস ব্যবহার করে।  গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বুধের পৃষ্ঠের নিচে থাকা গ্রাফাইটের স্তরগুলো সত্যিই এই তাপ ও চাপের কারণে হীরায় রূপান্তরিত হতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, এই হীরা বাস্তবে পাওয়া সম্ভব কি না? গবেষকরা বলছেন, এই সম্ভাব্য হীরার স্তর আমাদের সৌরজগত সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই হীরা শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের বিষয়ই নয়, এটি ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবে এই হীরার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং এটি সংগ্রহ করার উপায় নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। বুধ গ্রহে হীরার সম্ভাবনা নিয়ে আরেকজন বিজ্ঞানী অলিভিয়ের নামুর বলেন, নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বুধের ম্যান্টেল এবং কোরে যে চাপ রয়েছে, তাতে কার্বন বহনকারী খনিজগুলি গ্রাফাইট নয়, বরং হীরায় পরিণত হয়েছে। এই তথ্যকে ভিত্তি করেই গবেষকরা তাদের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করছেন। বুধের ভূপৃষ্ঠের নিচে থাকা হীরার এই সম্ভাব্য স্তর আমাদের মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এই হীরার মজুত খনন করার মাধ্যমে মহাকাশের সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই খনন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ হবে। যার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন হবে। এই গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে এই গবেষণার আরও বিশদ ফলাফল পাওয়া যাবে। তখন বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে আসবে যা আমাদের সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তন নিয়ে নতুন ধারণা দেবে।  
আইসিটি খাতের অন্যতম মাফিয়া পলক, স্ত্রীও হাজার কোটি টাকার মালিক
দেশের তথ্য ‌ও প্রযুক্তি খাতের অন্যতম মাফিয়া সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার নাম ভাঙিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন তথ্য প্রযুক্তিখাতে। শুধু পলক নয়, হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ২০০৮ সালে নাটোরের সিংড়া উপজেলা থেকে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে করেন নির্বাচন। নির্বাচনী হলফনামায় লেখেন ১৫ শতক কৃষি জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার।  এরপর তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান পলক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা। তাই জয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পান পলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারি। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর পলকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও জয়ের সুপারিশে সব অভিযোগ থেকে বেঁচে যান তিনি। ফলে তিন মেয়াদে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর চেয়ার বদল হলেও পলক একই পদে থেকে যান। টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করেন।  দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেন পলক। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের নামে একের পর এক প্রকল্প বানিয়ে বাজেট থেকে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেন। সজীব ওয়াজেদ আইসিটির উপদেষ্টা হওয়ায় এ খাতে ছিল না কোনো জবাবদিহি। পলকের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দেশের বাইরেও পাচার করেছেন পলক। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, পলকের গেল পাঁচ বছরে সম্পদ ও আয় বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন উদ্যোক্তা। তার স্ত্রীর নামে সিংড়ায় রয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি। ঢাকায় কমপক্ষে ১৫টি ফ্ল্যাট আছে। পলক ও তার স্ত্রীর নামে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও আমেরিকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি রয়েছে। নামে-বেনামে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে পলক ও তার স্ত্রীর কণিকার নামে। পলকের স্ত্রী পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। কিন্তু গেল ১০ বছরে তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এসব সম্পদ মূলত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন। যেকোনো প্রকল্প নিলেই তার ১৫ শতাংশ দিতে হতো পলককে। স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন পলকের আত্মীয় স্বজনরা। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইকেট পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন পলক।  এদিকে পলক, তার স্ত্রী, পরিবার ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউ এ নির্দেশ দিয়েছে।
আ.লীগ সরকার পতনের পর স্বস্তি ফিরছে নিত্যপণ্যের বাজারে
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে ভেঙে পড়ে বাজার ব্যবস্থাপনা। মহাসড়কে পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে চাঁদাবাজি আর সিন্ডিকেট দৌরাত্মে লাগামহীন হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের দাম। তবে, হাসিনা সরকার পতনের পর বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে। কমেছে বেশ কিছু পণ্যের দাম। বাজারঘুরে দেখা গেছে, স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমেছে সবজির দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে বাদামি ও সাদা ডিমের দাম ডজনে ১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মাছের দাম। এ ছাড়া কেজিপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মাছের দাম। নদীর চিংড়ি মাছ কেজিতে ২০০ টাকা কমে এক হাজার ৩০০ টাকা, বাইন মাছও ২০০ টাকা কমে এক হাজার টাকা এবং ইলিশ মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। ক্রেতারা বলছে, বাজারকে বাগে আনতে সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। একইসঙ্গে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।  রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থারটি মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান জানান, রাষ্ট্রসংস্কারে অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বাজারে ব্যবস্থাপনা সংস্কারেও ভূমিকা রাখা উচিত।
পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ
কোটা আন্দোলনের সহিংসতাকে ঘিরে রাজধানীর ৫০টি থানায় আড়াইশোর বেশি মামলায় প্রতিদিন আটক করা হচ্ছে শত শত মানুষ। অভিযোগ উঠেছে, অনেক নিরপরাধ মানুষকেও করা হচ্ছে গ্রেপ্তার, চলছে আটক বাণিজ্য। চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদেরও বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঠানো হয়েছে জেলহাজতে। কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরেও জামিন করাতে ব্যর্থ অভিভাবকরা। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে পড়েছেন শঙ্কায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বকশীবাজারের সিএমএম কোর্টে সকাল থেকেই স্বজনদের অপেক্ষা প্রিয়জনকে একনজর দেখার আশায়। কোনো প্রিজনভ্যান আসলেই দৌড়ে যাচ্ছে তার কাছে, নিচ্ছেন খোঁজ। তবে সাক্ষাতে যেন আনন্দ নয়, ঝরছে চোখের পানি। ১১ দিন পর দিনমজুরের কাজ করা ভাইকে কোর্ট প্রান্তরে দেখে তাই ছোট্ট নাদিয়াও আবেগ আপ্লুত। ধরে রাখতে পারল না চোখের পানি। কোর্টের আনাচে-কানাচে ঘুরছে এমন অনেক গল্পই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও নিয়ে আসা হয়েছে সন্তানকে। জামিন করাতে না পারায় এখন কান্নাই অভিভাবকদের শেষ সম্বল। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে গ্রেপ্তার হওয়া চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। রাজধানীর মিরপুর থেকে কমার্স কলেজের ফরহাদ, সামিরসহ আটক করা হয় এইচএসসি তিন পরীক্ষার্থীকে। তবে গ্রেপ্তারের রাতে একজনকে ছেড়ে দিলেও ফরহাদের অভিভাবকদের ঘুরতে হচ্ছে কারাগারে থেকে শুরু করে আদালতের বারান্দায় বারান্দায়। এসব পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ডিএমপি বলছে, বাণিজ্য নয়- সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই করা হচ্ছে গ্রেপ্তার। তবে এমন গণগ্রেপ্তারের সমালোচনা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার তালুকদার বলেন, ‘এই ধরনের কোনো সংবাদ যদি পুলিশ কমিশনারের কানে আসে তাহলে শুধু প্রত্যাহার নয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থী আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে জামিন পাওয়ার জন্য। তার অপরাধ কী? খুন, সন্ত্রাসী বা ডাকাতি করেছে। কিছুই করেনি। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমেছে। এ জন্য তাকে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হবে কেন?’