• ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১
logo
উন্নয়নের পথে ব্যাংক খাত, আস্থা ফিরছে গ্রাহকদের
আড়াই মাসেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই মাস পার হতে চললেও স্বস্তি ফেরেনি বাজারে। বরং গত দুই সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দামের বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। দামের বাড়িত চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাজার সহনীয় করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও অস্থিরতা কমেনি। দাম নির্ধারণ, মনিটরিং কিংবা অভিযান চালিয়েও ফল পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির খবর নেই। তবে নিম্ন আর মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণকারী ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। যদিও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এখনও বিক্রি হচ্ছে না ডিম। তারপরও ১৪৫ টাকা ডজনে ডিম পেয়ে খুশি ভোক্তারা। এদিকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম সবজি। তবে এখনও এর দাম সাধারণ ক্রেতার ধরাছোঁয়ার বাইরে। শীতের সব সবজিই ২০০ টাকার ওপরে। বাকি সব সবজি মিলছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দোকানে প্রায় ক্রেতা শূন্য। গরু ও খাশির মাংসও বাড়তি দাবে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারেও নেই কোনো সুখবর।  এই যখন বাজারের অবস্থা তখন ভোক্তাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় নেই। সাধারণের স্বপ্ন, কবে ভাঙবে সিন্ডিকেট, বন্ধ হবে চাঁদাবাজি, স্বস্থি ফিরবে বাজারে? ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো শাকসবজির বাজারও এখন শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং না হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, শুধু রাজধানী নয়, উৎপাদন এলাকায়ও চড়া সবজিদর। শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। তবুও মোকামগুলোতে সরবরাহ কম। তবে কিছুদিনের মধ্যে দাম কমতে পারে। আরটিভি/আরএ/এসএ
নিত্যপণ্যের বাজার বাগে আনতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আতঙ্ক নিত্যপণ্যের বাজার
দখল-দূষণে একের পর এক মরছে নদী
৯৩ বছর বয়সেও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সলিমা! 
শুল্ক কমলেও বাড়তি পেঁয়াজের দাম, ভারতীয় সিন্ডিকেটকে দায়ী
২০ শতাংশ কম শুল্ক, টনপ্রতি ১৪৫ ডলার কম দামে আমদানির পরও দেশে কমছে না পেঁয়াজের দর। এর পেছনে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা। তাদের অভিযোগ ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কমপক্ষে ১৫ টাকা বাড়তি দামে পেঁয়াজ রপ্তানি করছেন। ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ায় ব্যাপক হারে রপ্তানির উদ্যোগ নেয় দেশটি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ ও টনপ্রতি পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৫৫০ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৪০৫ ডলারে নামিয়ে আনে ভারত সরকার। এখন কম শুল্কে পেঁয়াজ আমদানি করছেন দেশের আমদানিকাররা। অথচ বাজারে এর প্রভাব নেই। হিলির আমদানিকারকদের দাবি, সব দোষ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম সিন্ডিকেট করে কেজিপ্রতি দাম ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।  রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিকেজি দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে একই দামে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজির দাম ১১০ টাকার মধ্যে। এদিকে, দেশের মানুষকে কম দামে ইলিশ খাওয়ানো উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বন্ধ করেছে রপ্তানি। তারপরও কাজ হয়নি। বরং কয়েকদিনে ইলিশের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। যদিও দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে, রপ্তারি এখনও শুরু হয়নি। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের উদ্যোগ কেন সফল হচ্ছে না? বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেমিতে ফের সক্রিয় পুরানো সিন্ডিকেট। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন জানান, শুল্ক কমানো সুফল যেনো মাঠ পর্যায়ে যায়, সেটার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালে আনতে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। আরটিভি/আরএ/এআর
ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে কি বাংলাদেশ 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই তার প্রত্যর্পণের দাবি উঠতে থাকে। দুই মাস না হতেই হাসিনার প্রত্যর্পণের দাবিটি দৃঢ় আইনি রূপ নেয়। আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে, প্রশ্ন উঠেছে ভারত হাসিনাকে ফেরত দেবে কিনা।  হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আইনি কাঠামোয় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চাইলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে দিল্লি। ভারতের ওই গণমাধ্যম প্রতিবেদনে আরও জানায়, প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তি। এক বছরের শাস্তিযোগ্য অপরাধ থাকলেই আসামিকে প্রত্যর্পণে বাধ্য উভয় দেশ। এ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই হবে, দোষী প্রমাণিত হওয়ার দরকার নেই।  রাজনৈতিক ঘরানার অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধী প্রত্যর্পণে বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু হাসিনাকে রাখার জন্য এ ধারা কাজে লাগাতে পারবে না দিল্লি। কারণ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থাকলে অকার্যকর হয়ে যায় এ ধারা। তবে, হাসিনাকে ভারতে রাখার আইনি বিকল্প হলো চুক্তি বাতিল করা। নোটিশ দিয়ে চুক্তি বাতিল করতে পারবে ভারত। তবে, উভয় দেশের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ভারত এ ঝুঁকি নেবে কি না, সেটি এখন দেখার বিষয়।  আরটিভি/আরএ-টি
অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস / ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতির প্রাণ
সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট আর স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অর্থনীতিকে প্রায় নিঃস্ব করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। এরপর প্রখ্যাত অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসেই ফিরতে শুরু করেছে অর্থনীতির প্রাণ। হু হু করে বাড়ছে রেমিট্যান্স, দখল মুক্ত হচ্ছে ব্যাংক, মূল্যস্ফীতি কমাতেও নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকেই নাজুক হতে থাকে দেশের অর্থনীতি। জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় অস্থির হয়ে ওঠে নিত্যপণ্যের বাজার। ৮৬ টাকার ডলারের দাম উঠে ১২০ টাকার ওপরে। সংকট উত্তোরণে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়নি শেখ হাসিনা সরকার। বরং এর মধ্যেই চলতে থাকে বিদেশে টাকা পাচারের মহোৎসব। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকের ডগায় চলে ব্যাংক লুট। কাগজে প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে এস আলমসহ সরকার ঘনিষ্ঠরা। প্রকৃত মূল্যস্ফীতি উঠে প্রায় ৩০ শতাংশের ওপরে। বিদেশি ঋণ ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূস অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়েই নজর দেন অর্থনীতি পুনর্গঠনে। অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ড. আহসান এইচ মনসুরকে। হাসিনা সরকারের ওপর অনাস্থা প্রকাশকারী প্রবাসী শ্রমিকরাই প্রথমে এগিয়ে আসেন নতুন সরকারের পাশে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোয় হু হু করে বাড়ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। সংস্থাটি তথ্যে, এক মাসে ৩৩০ কোটি ডলার রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে। ব্যাংকের অর্থ লুটপাট বন্ধে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ায় ইসলামিক ব্যাংকসহ প্রায় সব ব্যাংক এখন এস আলমের রাহু মুক্ত। শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। থাকছে না দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। এতে অনেকটাই কমবে অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের হার। দুর্নীতি রোধে আগের চেয়ে বহুগুণ সক্রিয় দুদক। ধরা পড়েছে শেয়ার কেলেঙ্কারি আর ব্যাংকের অর্থ লোপাটের পুরাতন কারিগর সালমান এফ রহমান। অন্যরাও গোয়েন্দা নজরদারিতে। দেশের মানুষকে হাঁসফাঁস অবস্থাতে রেখে অর্থনীতির রঙিন চিত্র এঁকে গেছেন শেখ হাসিনা সরকার। আসলেই অর্থর্নীতির অবস্থা কেমন, তা জানতে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৮০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে বলে কথা রয়েছে। যার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের নতুন অর্থনীতির ভীত গড়বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১ মাস / প্রাপ্তি কতটুকু, সামনে কী চ্যালেঞ্জ
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ হয় ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে। এরপর রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক মিলে সিদ্ধান্ত নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের। ৬ আগস্ট বিলুপ্ত করা হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। গেল ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ১৩ জন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। পরবর্তীতে তিন ধাপে এখন উপদেষ্টার সংখ্যা ২১ জন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এখনও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। থানাগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি পুলিশ সদস্যরা। কিছু সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রধানদের সরিয়ে নেওয়া হলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এখনও নিশ্চিত হয়নি। অস্থিরতা চলছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। সড়কে চাঁদাবাজি কিছুটা কমলেও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দাম এখনও সাধারণের নাগালের বাইরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষানুযায়ী তা করা বেশ কঠিন। যে বিশাল জনআকাঙ্ক্ষার ধারক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে এই সরকার, জনগণের সেই আস্থা ধরে রাখাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ আবু আলম শহীদ খান বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন কিছু সংস্কার করতে হবে, যার মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম হবে বাংলাদেশের।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের দাবি মেটানোর জন্য কাজ করছে, যার বাস্তবায়ন করাটা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার কোন কোন বিষয়ে সংস্কার করতে চায় তার একটি স্পষ্ট রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
পোশাক শিল্পে অস্থিরতায় দেশি-বিদেশিদের ষড়যন্ত্র
দেশের তৈরি পোশাক শিল্প অস্থিতিশীল করে তুলতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। এমন অভিযোগ শিল্প মালিকদের। তারা বলছে, এ মুহূর্তে পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় সংকট নিরাপত্তাহীনতা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিশ্ববাজারে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নের পাশাপাশি ক্রয়াদেশ বাতিলের শঙ্কা তাদের। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশ স্থিতিশীলতার পথে হাঁটলেও হঠাৎ অশান্ত হয়ে ওঠে তৈরি পোশাক শিল্প। সাভার-আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা অজুহাতে আন্দোলন ও কারখানা ভাঙচুর শুরু করে দুর্বৃত্তরা। সহিংসতার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয় বহু কারখানা। প্রশ্ন হলো—পোশাক শিল্প অস্থির করে তুলতে এমন ইন্ধন দিচ্ছে কারা? বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এরা কি শ্রমিক, আমরা তো মনে করি না এরা শ্রমিক। তারা বিভিন্ন কায়দায় চেষ্টা করছে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার। এই সেক্টরটাকে যদি অশান্ত করা যায় তাহলে বায়াররা বাংলাদেশে অর্ডার না দিয়ে অন্যদিকে দিবে। এ পরিস্থিতির জন্য কারা দায়ী এটা আপনারা ভালো করে জানেন। এর পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে এটা বোঝা কঠিন কোনো কাজ নয়।  এদিকে এই বহিরাগত শক্তির সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্রের যোগসাজস থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিকেএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল।   শিল্প মালিকরা বলছে, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়বে পোশাক খাত। ফায়দা নিতে ওত পেতে আছে বেশ কিছু দেশ।  এদিকে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে শিল্প মালিকদের সংগঠন—বিজিএমইএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। তাদের আশ্বাসে শনিবার থেকে খুলে দেওয়া হয় সব কারাখানা। বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে কিছু সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যাবে, আর কিছু সমস্যার সমাধান হতে একটু সময় লাগবে।   তৈরি পোশাক শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। আর পরোক্ষভাবে উপকারভোগী কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ শিল্প বিপদে পড়লে বিশাল জনগোষ্ঠী বিপদে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি কমলেও নিত্যপণ্যের দাম পুরনো চেহারায়
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি কমলেও সে অনুযায়ী নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের বাজার তদারকি ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু দাম আবার পুরনো চেহারায় ফিরেছে। বাজারে ৫০ টাকার ওপর বেশির ভাগ সবজির দাম। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে, আলু ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, পটল ৫০ টাকা আর টমেটো ১৬০ টাকা কেজি। বিক্রেতাদের অভিযোগ, নীরব চাঁদাবাজি আর বন্যার প্রভাবে বাড়ছে দাম।  এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, সোনালি ২৫০ এবং দেশি মুরগি ৫০০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের উচ্চমূল্যের কারণে মুরগির দাম কমছে না। শুধু তাই নয়, রুই থেকে শুরু করে টেংরা, পাবদা ও মলা মাছে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। তবে এখনও চড়া ইলিশের দাম। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এদিকে বন্যার অজুহাতে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজারে চালের সরবরাহ ঠিক থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, বন্যার কিছুটা প্রভাব এবং করপোরেট অসাধু চক্রের কারণে দাম বাড়তি। বিক্রেতারা বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংস্থার বাজার তদারকির কারণে দাম কিছুটা কমলেও নজরদারি অব্যাহত না থাকায় এখন ফের বাড়ছে। একইসঙ্গে নীরব চাঁদাবাজি আর বন্যার প্রভাবে দাম বাড়ছে বলেও জানান তারা। ক্রেতারা বলছে, নিত্যপণ্যের দাম তাদের নাগালের বাইরে। বাজার সিন্ডিকেটকের কারণে এই অবস্থা। মাঝেমধ্যে নয়, বাজারে নজরদারি রাখতে হবে সবসময় ভাঙতে হবে মুনাফখোর সিন্ডিকেট। উল্লেখ্য, বাজারে সয়াবিন, সরিষার তেল, সব ধরনের ডাল ও মসলাসহ আরও কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে।
অবিশ্বাস্য উচ্চতায় খেলাপি ঋণ, যা বলছেন বিশ্লেষকরা
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় দেশের খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে, খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনে বেড়েছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের কর্তাব্যক্তি ও সহযোগীদের সীমাহীন লুটপাটই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। সদ্য সাবেক স্বৈরাচার সরকারের সংস্কৃতিই ছিল খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন রাখা। তবে, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলছে, শেখ হাসিনা সরকার ও ঋণখেলাপিরা গত ১৬ বছর অনেকটা হাতে হাত রেখেই চলেছে।  খেলাপি ঋণের উত্থান সম্পর্কে গত সোমবার পিলে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জুন মাস শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি। অর্থ্যাৎ মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই বেড়েছে ৬৬ হাজার কোটি। খেলাপি ঋণের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। গত জুন পর্যন্ত বিতরণ করা ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ে। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার যথাক্রমে প্রায় ৮ এবং ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে যখন বড় বড় ঋণগুলো পুনর্গঠন করা হয় তখন বলা হলো, এই ঋণগুলো ভবিষ্যতে আর কোনো ধরনের সুবিধা তাদেরকে (ঋণখেলাপিরা) দেওয়া হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী বললেন তাদেরকে এক্সিট দিতে হবে। এর থেকে ওরা (ঋণখেলাপিরা) বুঝল আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি, আমরা আরও ঋণ পাব।  অর্থনীতিবিদ ড. সায়েম আমির ফয়সল জানান, যত ঋণ বরাদ্দ হবে তা পত্র-পত্রিকায় ছাপালে মানুষ জানতে পারবে। তাহলে দুর্নীতির হার ১০০ শতাংশ কমে আসবে। তখন যারা ঋণখেলাপি করবে জনগণ তাদের ছাড়বে না।  এদিকে অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের মামলার স্তূপ বেড়েই চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে, গত মার্চ শেষে খেলাপির মামলা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৯৩টি। আর এসব মামলায় আটকে আছে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।  অর্থঋণ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ সৃষ্টি ব্যাংক নিজেই করে। ঋণটাই এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে এটা খেলাপি হয়। যাতে লোকটা ঋণ পরিশোধ করতে না পারে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শুধু শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। যার বড় অংশই আদায় অযোগ্য।