অবিশ্বাস্য উচ্চতায় খেলাপি ঋণ, যা বলছেন বিশ্লেষকরা
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় দেশের খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে, খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনে বেড়েছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের কর্তাব্যক্তি ও সহযোগীদের সীমাহীন লুটপাটই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
সদ্য সাবেক স্বৈরাচার সরকারের সংস্কৃতিই ছিল খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন রাখা। তবে, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বলছে, শেখ হাসিনা সরকার ও ঋণখেলাপিরা গত ১৬ বছর অনেকটা হাতে হাত রেখেই চলেছে।
খেলাপি ঋণের উত্থান সম্পর্কে গত সোমবার পিলে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জুন মাস শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি। অর্থ্যাৎ মোট ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই বেড়েছে ৬৬ হাজার কোটি।
খেলাপি ঋণের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। গত জুন পর্যন্ত বিতরণ করা ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ঋণের ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়ে। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার যথাক্রমে প্রায় ৮ এবং ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে যখন বড় বড় ঋণগুলো পুনর্গঠন করা হয় তখন বলা হলো, এই ঋণগুলো ভবিষ্যতে আর কোনো ধরনের সুবিধা তাদেরকে (ঋণখেলাপিরা) দেওয়া হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী বললেন তাদেরকে এক্সিট দিতে হবে। এর থেকে ওরা (ঋণখেলাপিরা) বুঝল আমরা পরিত্রাণ পাচ্ছি, আমরা আরও ঋণ পাব।
অর্থনীতিবিদ ড. সায়েম আমির ফয়সল জানান, যত ঋণ বরাদ্দ হবে তা পত্র-পত্রিকায় ছাপালে মানুষ জানতে পারবে। তাহলে দুর্নীতির হার ১০০ শতাংশ কমে আসবে। তখন যারা ঋণখেলাপি করবে জনগণ তাদের ছাড়বে না।
এদিকে অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের মামলার স্তূপ বেড়েই চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে, গত মার্চ শেষে খেলাপির মামলা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৯৩টি। আর এসব মামলায় আটকে আছে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।
অর্থঋণ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোকছেদুল ইসলাম বলেন, খেলাপি ঋণ সৃষ্টি ব্যাংক নিজেই করে। ঋণটাই এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে এটা খেলাপি হয়। যাতে লোকটা ঋণ পরিশোধ করতে না পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শুধু শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। যার বড় অংশই আদায় অযোগ্য।
মন্তব্য করুন