• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
বেলুচিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করল বিএসি
বালুচ আমেরিকান কংগ্রেস (বিএসি) মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি চিঠি লিখেছে এবং বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে তার জরুরি মনোযোগ চেয়েছে। বিএসি ‘জোরালো ভাবে’ বাইডেনকে বেলুচ জনগণের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। জোরপূর্বক গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বেলুচিস্তানে চলমান গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএসি। চিঠিতে বিএসি বলেছে, গত ছয় মাসে বেলুচিস্তানে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোরপূর্বক গুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাইডেনকে লেখা চিঠিতে বিএসি বলেছে, বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি আপনার জরুরি মনোযোগ দাবি করে। আপনার হস্তক্ষেপ অনেক জীবন বাঁচাতে পারে এবং অগণিত ব্যক্তি যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের দুর্দশা লাঘব করতে পারে। বেলুচ জনগণের ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য আমরা আপনার কাছে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ করছি। তা করতে ব্যর্থ হলে তা হবে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যারা একটি স্বীকৃত দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের সামরিক প্রতিষ্ঠানের ভারে পিষ্ট হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বেলুচিস্তানে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এক্স-এর একটি পোস্টে বেলুচ আমেরিকান কংগ্রেস বলেছে, বেলুচ আমেরিকান কংগ্রেস মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছে। চিঠিতে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত জোরপূর্বক নিখোঁজ, বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং বেলুচিস্তানে বেলুচ গণহত্যার বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য উদ্ধৃত করে বেলুচ আমেরিকান কংগ্রেস চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেলুচিস্তানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও লেখকসহ ২৭৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন। বিএসি দাবি করেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (আইএসআই) সদস্যরাই গুমের এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। চিঠিতে বিএসি আরও উল্লেখ করেছে, উপরন্তু, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সমর্থিত ‘ডেথ স্কোয়াড’ এবং প্রক্সি ধর্মীয় সংগঠনগুলি তাদের কার্যক্রম তীব্রতর করেছে। যার ফলে বেলুচিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে মানবাধিকার রক্ষাকর্মী এবং সামাজিক-রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিদিন হত্যা ও অপহরণ করা হচ্ছে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী রাজনৈতিক কর্মীদের অপহরণ, নির্যাতন ও ছিন্নভিন্ন লাশ ফেলে দেয়াটা দুঃখজনক ভাবে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএসি জানিয়েছে, বেলুচ জনগণের ক্রমাগত অমানবিক ও দমনমূলক আচরণের বিষয়ে মাহরং বেলুচের নেতৃত্বে বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটি বেলুচ নিখোঁজ ব্যক্তিদের পুনরুদ্ধারের জন্য ইসলামাবাদে প্রেস ক্লাবের বাইরে মূলত বেলুচ মহিলা, শিশু এবং প্রবীণদের একটি অবস্থান ধর্মঘটের আয়োজন করেছিল। চিঠিতে বিএসি বলেছে, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত ছিল এবং পাকিস্তানি শাসকদের কাছ থেকে কোনও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে ইসলামাবাদ প্রশাসন জোর করে অবস্থান ধর্মঘট শেষ করেছিল। বেলুচিস্তানকে কোণঠাসা করার বিষয়ে অভিযোগ করে বিএসি উল্লেখ করেছে যে, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের বেলুচিস্তানে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে বিএসি উল্লেখ করেছে, ২০০৭ সাল থেকে ৫০০০ বেলুচ রাজনৈতিক কর্মী, নেতা এবং মানবাধিকার রক্ষাকর্মীকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। চিঠিতে বিএসি দাবি করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক শোষণ বেলুচিস্তানে আরেকটি চাপের বিষয়। বেলুচিস্তানে গোয়াদার, সাইনডাক এবং রেকোডিকের মতো তথাকথিত মেগা প্রকল্পগুলির জন্য চীনা কর্পোরেশনগুলিকে বেলুচ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই কর্পোরেশনগুলি নির্মমভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে, নৈতিক ব্যবসায়িক অনুশীলনকে উপেক্ষা করছে এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। বিএসি দাবি করেছে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) বেলুচিস্তানের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। এতে বলা হয়েছে, সিপিইসি সংলগ্ন গ্রামগুলোকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে এবং তাদের জমি স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্মতি ছাড়াই চীনাদের দেওয়া হচ্ছে।
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪১
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়