ঈদের প্রস্তুতি অনেক আগেই নিয়েছিলেন জিম্মি ২৩ নাবিক
জাহাজের ডকে একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা। এসময় তারা নতুন পোষাকে ছিলেন। খাবারেও ছিল ঈদ আয়োজন। বুধবার (১০ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় নামাজ আদায়ের পর একসঙ্গে ছবিও তুলেছেন তারা।
এক জিম্মি নাবিকের পরিবার জানিয়েছে, নামাজের পরে তারা কোলাকুলি করেন এবং পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর তারা পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম আনাম চৌধুরী বলেন, সব নাবিক জাহাজের ওপর ডেকে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ঈদের নতুন পোশাক অর্থাৎ পায়জামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরেছেন তারা। নামাজ পড়ার পর জাহাজের ওপর একসঙ্গে ছবি তুলেছেন। এ রকম একটি ছবি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। ছবিতে ২২ নাবিককে দেখা যাচ্ছে। আরেকজন ছবি তুলেছেন। তারা ২৩ জনই সুস্থ এবং ভালো আছেন।
জানা গেছে, জিম্মি জাহাজটি এখন সোমালীয় জলসীমায় অবস্থান করছে। বুধবার সোমালিয়াসহ ওই অঞ্চলটিতে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এদিন নামাজ আদায়ের জন্য এদিন নাবিকদের জাহাজের ডকে আসার সুযোগ দেয় দস্যুরা।
এক নাবিকের স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বামী বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ফোন করেছিলেন। সকালে জাহাজের নাবিকরা দস্যুদের কাছে নামাজের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে দস্যুরা ঈদের নামাজ পড়তে দেয়। তারা জাহাজের ডেকে নামাজ আদায় করেন এবং এ সময় ভারী অস্ত্রসহ জলদস্যুরা পাহারা দেয়।
তবে তাদের দলীয় ছবি এবং কয়েকজন নাবিকের ভিক্টর প্রদর্শন দেখে নেটিজেনরা নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকে।
এ বিষয়ে এম আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হামরাহে যাচ্ছিল। ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে ভেবে নাবিকরা ঈদের জামা-কাপড় জাহাজে উঠার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছেন। কারণ সমুদ্রপথে নাবিকদের কোনও না কোনও দেশে ঈদ করতে হতো।
কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, তারা গত ২৭ মার্চ থেকে নাবিকদের কেবিনে থাকতে দিচ্ছে, পাশাপাশি জাহাজে কাজ করার সুযোগও দিচ্ছে। সবশেষ বুধবার ঈদের দিন জাহাজের ডকে তাদের একসঙ্গে নামাজ আদায়ের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ভালো খাবারের ব্যবস্থাও করে সৌমালি দস্যুরা। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দস্যুদের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় অগ্রগতি আছে। আশা করছি যেকোনও দিন নাবিকরা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবেন।
এদিকে বুধবার সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে আটক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও নাবিকদের উদ্ধার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা নাবিকদের পরিবারকে আশ্বস্ত করতে চাই, সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছে। প্রথমত যারা অপহরণ করেছে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়ত তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রচুর চাপ তৈরি করা হয়েছে। নাবিকরা ভালো আছেন, নিয়মিতভাবে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, এমনকি ভিডিও কলেও কথা বলছেন। সুতরাং যে উদ্বেগটা কিছুদিন আগে ছিল সেটি এই মুহূর্তে নেই। আমরা আশা করছি তাদেরকে শিগগির মুক্ত করতে পারবো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলদস্যুদের হাত থেকে নাবিক এবং জাহাজ দুটোই উদ্ধার করার ক্ষেত্রেই অল্প সময়ের মধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তাদেরকে মুক্ত করতে পারবো। তবে উদ্ধারের দিনক্ষণ বলাটা কঠিন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে হাইজ্যাক করে সোমালীয় দস্যুরা। এরপর জলদস্যুরা জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করে ২০ মার্চ। এর আগে ১৬ মার্চ রাত ৮টায় ওই জাহাজের এক নাবিকের সঙ্গে মালিকপক্ষের আলাপ হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, জলদস্যুরা এখন নিয়মিত পরিবার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে জিম্মি নাবিকদের আলাপ করতে দিচ্ছে।
এর আগে ২০১০ সালে একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এমভি জাহান মণি ২৬ নাবিকসহ সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সেবার প্রায় চার মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই এমভি জাহান মণির জিম্মি নাবিকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিসও। তিনি বলেন, তাদের ক্ষেত্রে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার পর হেলিকপ্টার থেকে দুটি পানিরোধী কার্টনে মুক্তিপণের অর্থ সাগরে ফেলা হয়েছিল। দস্যুরা নৌযান নিয়ে গিয়ে প্যাকেট দুটি জাহাজে তুলে আনে। দাবিকৃত অর্থ বুঝে পেয়ে পরদিনই ভোরে জাহাজটি থেকে নেমে যায় দস্যুরা। এরপর জাহাজ আবার চলতে শুরু করে দেশের পথে।
১১ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৬