• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
সংসদ সদস্যের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
একাদশ সংসদ ভেঙে না দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়াকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধীরা বলছে, একাদশ সংসদের ৩৪৯ জন সদস্যসহ বর্তমানে দেশে সংসদ সদস্যের সংখ্যা ৬৪৮ জন, যা অসাংবিধানিক। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন এমপিরা শপথ নিলেও তারা এখনও কার্যভার গ্রহণ করেননি। রাজনৈতিক কারণে সংসদ সদস্যের সংখ্যা নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। এতে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপিসহ ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ২৯৯টি আসনের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ২২৩টি, জাতীয় পার্টি ১১টি ও ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পায়। এরপর গত ১০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরদিন ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে শপথ নেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এর মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির পক্ষ থেকে সংসদের সদস্য সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই মুহূর্তে একাদশ সংসদের ৩৪৯ জন আর দ্বাদশ সংসদের ২৯৯ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন ডাকলে দুই সংসদের সদস্যরাই তাতে যোগ দিতে পারেন। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। তিনি আরও বলেন, ২৯ জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া অবধি এই অরাজকতা থাকবে। এটি একটি চরম সাংবিধানিক লঙ্ঘন। সংবিধান অনুসারে এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ। এ ছাড়া সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি।  তিনি বলেন, সংবিধানের ১২৩-এর (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, পাঁচ বছরের আগে সংসদ ভেঙে দিলে ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর সংসদ ভেঙে না দিলে, সংসদ যদি পূর্ণ মেয়াদ হয়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তারপর স্পষ্ট করে বলা আছে, তবে শর্ত থাকে যে, বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্তির পর নতুন নির্বাচিতরা কার্যভার গ্রহণ করবেন। এখানে শপথ নিয়ে তো নির্বাচিতরা বসে থাকবেন না। কার্যভার গ্রহণ মানে শপথ নেবে। একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্তি হবে ২৯ জানুয়ারি। অতএব এখানে দুটি সংসদের সংসদ সদস্যরা বিদ্যমান রয়েছেন।  এদিকে যারা বলছেন বর্তমানে সংসদ সদস্য সংখ্যা ৬৪৮, তারা সংবিধানকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, দেশে একসঙ্গে ৬৪৮ জন সংসদ-সদস্য রয়েছেন বলে যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তারা (বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা) রাজনৈতিক কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। অথবা তাদের সংবিধানের ১২৩, ১৪৮ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই।  আইনমন্ত্রী বলেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করবেন। নতুন সংসদের অধিবেশন বসার পর বর্তমান সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হবে। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে। এরপর থেকে আর একাদশ সংসদের সদস্যরা বেতনভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এ ছাড়া নতুন মন্ত্রীরা বর্তমানে শুধু মন্ত্রীর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তারা সংসদ সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। ফলে কোনো অসুবিধা নেই।
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৩

ভোট বর্জন বিএনপির বড় ভুল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি বড় ভুল করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, ভোটে অংশ নিলে বিএনপি সরকার গঠন করতে না পারলেও, অনেক বেশি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হতে পারত। কারও কারও মতে, ভোটের ট্রেন ছেড়ে দিয়ে বিএনপি ‘ঐতিহাসিক ভুল’করেছে।  বিএনপি’র ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘিরে শুধু দলটির ভবিষ্যৎই নয়, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতি কোন পথে এগোবে সেই প্রশ্নও এখন জনমনকে নাড়া দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই প্রধান বিরোধী পক্ষ হবে, যদি না তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে বিরোধী দল নিয়ে ভোটের আগেই আলোচনা তুঙ্গে।  রাজনীতির ধারাবাহিক পর্যবেক্ষক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. হারুন অর রশিদ মনে করেন, এই নির্বাচনের পর বিএনপি আসল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। দলের গণতন্ত্রকামী, নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী অংশের প্রশ্নের মুখে পড়বে নেতৃত্ব। বিক্ষুব্ধ অংশের পৃথক দল গড়াও অসম্ভব নয়। তখন আরও বড় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে খালেদা জিয়ার দল।’  তবে একই সঙ্গে অধ্যাপক রশিদ মনে করেন, ‘বিএনপি দলগতভাবে দুর্বল হলেও তাদের আদর্শে বিশ্বাসী মানুষেরা রাতারাতি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে না।’ তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি আজ বিলুপ্ত। বিএনপি তাদেরই অবতার। ওই দুই দলের মতো বিএনপি যদি মুছেও যায় তাহলেও তাদের মতাদর্শবাহী মানুষ থাকবে। হয়তো তারা ভিন্ন কোন দলে গিয়ে ভিড়বে।’ ড. রশিদের কথায়, ‘জেনালের জিয়াউর রহমানের শাসনামল এবং বিএনপির সরকারের সময়কে যোগ করলে এই শক্তি কম-বেশি ২৯ বছর ক্ষমতা ভোগ করেছে। বিএনপি’র দ্বারা উপকৃত মানুষ তাই এ দেশে নেহাৎ কম নয়। তাঁরা চাইবে না বিএনপি ভেঙে যাক।’ এই অবস্থায় তিনি মনে করেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিকে বাংলাদেশে বিএনপি’র বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক একটি বিরোধী দল তৈরির প্রেক্ষাপট হিসাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই ব্যাপারে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকেই উপযুক্ত অনূকূল পদক্ষেপ করতে হবে।’  আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মান্নান মনে করেন, বিএনপির প্রধান সংকট দুটি। এক. আদর্শিক। দুই. সাংগঠনিক। তাঁর কথায়, ‘দলটি গঠন করেছিলেন জেনারেল জিয়া। দলের বিস্তার ঘটান তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া। আর দলটি পতনের মুখে পড়েছে তাঁদের পুত্র তারেক জিয়ার হাতে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল জিয়া বিএনপি-কে বড় করতে প্রাক্তন ও কর্মরত সেনা এবং প্রশাসনিক কর্তাদের দলে নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের দল ও সরকারে স্থান দিয়েছিলেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীত রাজনীতি কখনও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। এটা বুঝতে না পারা বিএনপি’র বড় ভুল।’ ড. মান্নান আরও বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক শক্তি ছিল সন্দেহ নেই। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাঁর পুত্র দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম ভেঙে দলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু লন্ডনে বসে কতদিন দল চালানো সম্ভব? স্থানীয় নেতাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিলে দলটি হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারত।’ অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজার কথায়, বিএনপি’র ভোট বয়কটের সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব তৈরি করবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। কারণ, আদর্শ গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধী দল সংসদে থাকা জরুরি। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় বিরোধী পরিসর নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। সেনা শাসক হুসেইন মহম্মদ এরশাদের দল বিরোধী দলের তকমা নিয়ে সংসদে গেলেও তারা সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।  আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মনে করেন নির্বাচনের পর বিএনপি পুরোপুরি ভেঙে যাবে। কারণ লন্ডন থেকে তারেকের কথা বিএনপির নেতারাই মানেছে না। তাছাড়া সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচনকে এড়িয়ে যাওয়া মস্ত বড় ভুল। ভোটের ট্রেন ছেড়ে দিয়ে বিএনপি ‘ঐতিহাসিক ভুল’করেছে বলেও মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি।
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:০১
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়