উপজেলা নির্বাচন / নৌকার অনুপস্থিতি কি ঠেকাতে পারবে অরাজনৈতিকদের?
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ব্যাপারটাকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের বেশিরভাগের মতে, নৌকা প্রতীক না থাকায় এবার 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে; যেখানে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাদের জন্য নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের ভালো একটা সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। টাকা ও প্রতীকের জোরে হুট করে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ব্যক্তিদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে সামনের নির্বাচনে।
অবশ্য দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এ সিদ্ধান্তে নাখোশ খোদ আওয়ামী লীগেরই এক শ্রেণির নেতা। তাদের মতে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতেই দলের এই কৌশল। গণতান্ত্রিক বিশ্বের অনুসরণে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ বলছে, দেশে একসময় স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছিল নির্দলীয়। তবে ২০১৫ সালে আইন পরিবর্তনের পর কাউন্সিলর ও ইউপি সদস্য পদ ছাড়া বাকিগুলো দলীয় মনোনয়নে হচ্ছে। এতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে হুট করে রাজনীতিতে আসা ব্যক্তিরাও নৌকা প্রতীক পেয়ে জয়ী হয়েছেন। বঞ্চিত হয়েছেন পোড়খাওয়া অনেক তৃণমূল নেতা। এ কারণে এবার স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলেছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি। তিনি বলেন, প্রতীক দেওয়ার কারণে অনেক কর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে সরে গেছেন। আবার অনেক অরাজনৈতিক ব্যক্তি প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে যান। এ জন্য প্রতীক না দেওয়া ভালো।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমরা ধরেই নিয়েছি বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যারা আছে, তারা এ নির্বাচনে (স্থানীয় সরকার) আসবে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে আরও প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর করতে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা জনপ্রিয়, তারা নিজ যোগ্যতা প্রমাণ করে নির্বাচন করে আসুক। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব বের হবে, একইসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, সেটাও দূর হবে।’
আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, কুমিল্লা সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ৯টি পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না বলেও জানান খায়রুজ্জামান লিটন। এসব নির্বাচনের তফসিল সোমবার ঘোষণা হলেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান জানায়নি আওয়ামী লীগ। অতীতে তফসিল ঘোষণার দিনই দল থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের আহ্বান জানানো হতো।
২০১৫ সালে আইন করার পর ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনের আগেও নৌকা প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের দাবি তুলেছিল দলটির একটি অংশ। তবে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তা অনুমোদন হয়নি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও দেশে ওই পর্যায়ের নির্বাচন হতে অনেক সময় লাগবে। যুক্তরাজ্যে দলীয় প্রার্থী এক বছর আগেই নির্ধারণ করা হয়। আর বাংলাদেশে তফসিল ঘোষণার পরে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। ফাঁকফোকর গলে অনেক অরাজনৈতিক, টাকাওয়ালারা দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য একটা জায়গায় একাধিক প্রার্থী থাকতে পারেন। কিন্তু সবাই তাকিয়ে থাকেন ওপরের দিকে। একজনকে দিলে বিভেদ সৃষ্টি হয়। উন্মুক্ত করে দিলেও যোগ্য ও জনপ্রিয়রাই প্রার্থী হবেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আপাতত দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক (নৌকা) ব্যবহার না করার অভিমত দিয়েছে কার্যনির্বাহী কমিটি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এতে একমত পোষণ করেছেন।
২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৮