• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
কেএনএফের হামলায় প্রশ্নবিদ্ধ পার্বত্যের শান্তি ও নিরাপত্তা
কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সমঝোতায় আসার সময়ে কী কারণে দুই দিনে তিন ব্যাংকে হামলা চালালো তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ এসব হামলা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়েও জাগিয়েছে সংশয়৷ গত বছরের ২৯ মে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিল শান্তি স্থাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের কমিটি। ক্য শৈ হ্লা বলেন, আমরা তাদের এই আচরণে হতাশ। তারা কেন সমঝোতা ভঙ্গ করলো তা আমরা বুঝতে পারছি না। ব্যাংকে হামলার পর আমরা তাদের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা ও সমঝোতা স্থগিত করেছি। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র এবং কমিটির সদস্য সচিব কাঞ্চন জয় ত্যাংচঙ্গা বলেন, আমরা গত বছরের ৫ মে প্রথম বৈঠক করি। এরপর গত মাসের ৫ তারিখে আরো একটি বৈঠক হয়। তাদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ তখন দেখিনি। আর চলতি মাসের ২০ তারিখে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। চার দফা সমঝোতার মূল বিষয় ছিল চাঁদাবাজি ও আক্রমণ না করা, শান্তি বজায় রাখা ইত্যাদি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও বিস্মিত হয়েছি যে, তারা পরপর ব্যাংক ও থানায় আক্রমণের এত শক্তি কোথায় পেল? তারা এখন আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। আর আমরাও তাদেরকে যোগাযোগ করে পাচ্ছি না। রুমা ও থানচির তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি এবং পরে থানচি ও আলীকদম থানায় আক্রমণের পর পুরো বান্দরবান এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রুমা সোনালী ব্যাংকের অপহৃত ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে শুক্রবার উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বান্দরবানে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কেএনএফের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ এই অভিযান কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চলবে। সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের মতো সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বান্দরবানের সব থানাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। কেএনএফ আলোচনায় আসে ২০২২ সালে। পুলিশ ও র‌্যাব তখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযানও পরিচালনা করা হয়। পুলিশ তখন জানায়, সমতলের জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবানের কেএনএফের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি সংগঠন অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করেছে। এর পর অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গহীন জঙ্গল থেকে জঙ্গি ও কেএনএফের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। কেএনএফ মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান কেন্দ্রিক আঞ্চলিক সংগঠন। কেএনএফ পার্বত্য তিন জেলার প্রায় অর্ধেক আয়তনের অঞ্চল তথা লামা, রুমা, আলীকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকলসহ আশপাশের এলাকায় তৎপর রয়েছে গত চার-পাঁচ বছর ধরে। কেএনএফ প্রধান হলেন নাথান বম। তারা কথিত কুকিল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের একটি ম্যাপও আছে কথিত ওই কুকিল্যান্ডের। বম বা কুকি সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতের মনিপুর ও মিজোরাম এবং মিয়ানমারে রয়েছে। ওই দুই দেশেও তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা আছে। কেএনএফ দাবি করে, ২০২১ সাল থেকে তাদের প্রশিক্ষিত দলটি কাজ শুরু করে। তার আগে তারা কাচিনে প্রশিক্ষণ নেয়। বান্দরবানে হামলার পর থেকে তারা তাদের ফেসবুক পেজে নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, কেএনএফ একটি ক্রস বর্ডার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তারা ভারতের মনিপুর ও মিজোরাম এবং মিয়ানমারে সক্রিয়। ওইসব এলাকায় এই সময়ে যে অস্থিরতা চলছে, তারই প্রভাবে কেএনএফ ফের তৎপর হতে পারে। তবে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বান্দরবান এলাকার নিরাপত্তায় যে ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছিল তাতে আমি বিস্মিত। কেএনএফ একটি ত্রিদেশীয় সংগঠন। তারা এক দেশের শক্তি অন্যদেশে ব্যবহার করতে পারে। তাদের অবস্থান তিন দেশের সীমান্ত এলাকায়। ভূ-রাজনৈতিক কারণে কোনো দেশ তাদের মদত দিচ্ছে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। ভারতে মনিপুরে যে সংকট, সেটা এখানকার কুকিদের প্রভাবিত করতে পারে। আমরা এর আগে দেখেছি, কোনো দেশ তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে তারা পাশের দেশে আশ্রয় নেয়।  তার মতে, এটা ক্রস বর্ডার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হওয়ায় তারা অস্ত্র এবং অর্থের বিনিময় করে। মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার মনে করেন, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার তিন দেশেই কুকি-চীনরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। ফলে তাদের একটা ত্রিদেশীয় শক্তি এবং যোগাযোগ আছে। ভারতের মনিপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আবার আগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এরা উচ্চমূল্যে অস্ত্র ক্রয় করে। আবার পরস্পরকে সহায়তা করে। আমার মনে হয়েছে, তাদের অর্থের প্রয়োজন। তারা সেই কারণেই ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি এ-ও মনে করেন, কেএনএফের পোশাক পরে অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এটা করেছে কিনা তা-ও দেখা প্রয়োজন। কারণ, ওই এলাকায় এখনো অনেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে বিস্ময় মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শহীদুল হক বলেন, তারা তিনটি গাড়িতে করে এসে রুমা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি করেছে। পরের দিন থানচির দুই ব্যাংকে হামলা ও ডাকাতি করেছে। রাতে থানচি ও আলীকদম থানা এলাকায় হামলা চালিয়েছে। এইসব ঘটনায় আমরা বিস্মিত। কারণ, পাহাড়ি এলাকা এবং ওই ধরনের গোষ্ঠী যেখানে তৎপর থাকে, সেখানে নিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকে, গোয়েন্দা তৎপরতা থাকে। সেখানে আমি বলবো, আমরা পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। মিয়ানমারের রাখাইনে যুদ্ধ চলছে। তার সীমান্তে আলীকদম। আমাদের কোনো হিসাব থাকবে না? তার কথা, এই কুকি-চীনরা বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার এবং চীনের সঙ্গে যুক্ত। তাদেরকে হালকাভাবে নেয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, এই অঞ্চলে মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরাম ও মনিপুরে যে সংকট চলছে, তার কোনো সূত্র বান্দরবানে হামলার সঙ্গে থাকতে পারে। তিনি মনে করেন, টাকার জন্য তাদের ব্যাংক লুট করতে হয় না। ওই এলাকায় যে পরিমাণ চাঁদা ওঠে, তাই যথেষ্ট। একটি উপজেলার ব্যাংকে কত টাকা থাকতে পারে তা তাদের জানা। তারা আমার মনে হয় শক্তির মহড়া দিচ্ছে। তারা পাশের দেশগুলোকেও শক্তির জানান দিতে চায়। মেজর জেনারেল ( অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, রুমায় ব্যাংকে পুলিশ ছিল। থানচিতে ব্যাংকের পাশেই পুলিশ ও বিজিবির ক্যাম্প ছিল। কিন্তু কোথাও আমরা প্রতিরোধের কোনো খবর পাইনি। এতে স্পষ্ট যে, যারা ওখানে ছিলেন, তাদের মধ্যে সেই ধরনের মনোবল ছিল না। ফলে তারা কোনো বাধা দেয়নি। তাদের অস্ত্র লুট করেছে, ব্যাংক লুট করেছে, আর রুমায় ডাকাতি হওয়ার পর পুরো জেলার ব্যাংকেই তো নিরাপত্তা জোরদার করার উচিত ছিল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, একটি সমঝোতা করার পর সব নিরাপত্তা ঢিলেঢালা করে দেয়া হলো। রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট করা হলো না, এটা মেনে নেয়া যায় না। এই তিন জনই মনে করেন, পাহাড়ে কুকি-চীনের এই তৎপরতায় অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোও উৎসাহিত হতে পারে। জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমার সঙ্গে শাস্তি চুক্তি হলেও পাহাড়ে এখনো কমপক্ষে পাঁচটি বড় গ্রুপ সক্রিয়। আর কুকি-চীনদের ব্যাপারে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে কাজ করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।
০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১২

ঢাকার লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি দেশের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে : কাদের
রাজধানী ঢাকায় চলাচল করা লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলো দেশের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে আসে এবং আমাদের লক্কর-ঝক্কর গাড়ি দেখে, তখন আমাদের খুব লজ্জা হয়। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পরিবহন মালিকদের এদিকে নজর দিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ঢাকার বাইরে থেকে ফিটনেস বিহীন গাড়ি ঢাকায় ঢোকে। আমি তো বলবো, বাইরে থেকে সিটিতে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি কম আসে। বরং সিটিতেই অনেক লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির কারখানা আছে। আমি সেগুলো নিজের চোখে গিয়ে দেখেছি। ঈদের আগে সেগুলোতে রং লাগাতে দেখেছি, যে রং আবার ১০ দিনও থাকে না।  
২১ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৮

এই নির্বাচন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না : ইসি আনিছুর
কোনোভাবেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান। এজন্য প্রশাসনকে সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। আনিছুর রহমান বলেন, এবার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য করতে আমরা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রই ব্যর্থ হয়ে যাবে। দেশ সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কোনোভাবেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। প্রশাসনে রদবদল নিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, রদবদল হয়েছে অনেক, প্রয়োজন ছিল বলেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের একটাই নির্দেশনা-অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আনিছুর বলেন, কিছু সমমনা দল নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিচ্ছে। অন্য যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় এবার সহিংসতা কম হয়েছে। আশা করি, ২০১৪ সালে যে ব্যাপক সহিংসতা ও জানমালের ক্ষতি হয়েছিল এবার তা হবে না।
০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৮
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়