• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভার্চুয়াল বইমেলা নিয়ে দুই মেরুতে লেখক-প্রকাশকরা

  ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:২২
Authors-Publishers on Two Poles with Virtual Book Fair
অমর একুশে গ্রন্থমেলা (ফাইল ছবি)

করোনা মহামারীর আশঙ্কা থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১’ স্টল বসানো স্থগিত করে ভার্চুয়ালি মেলা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। আর এই সিদ্ধান্তে কিছু লেখক ও প্রকাশক একমত পোষণ করলেও দ্বিমত পোষণও করেছেন অনেকে। বইমেলা সৃজনশীল কাজ। সেখানে প্রকাশকদের ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনার তুলনায় লেখক ও পাঠকদের করোনা সংক্রমণের কথা ভাবছে বাংলা একাডেমি। অন্যদিকে প্রকাশকরা বলছেন, করোনায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব হবে।

স্টল বসিয়ে বইমেলা স্থগিতের বিপক্ষে আজ শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রয় সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ এর যৌথ বিবৃতি বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ একতরফা মিটিংয়ে আসন্ন অমর একুশে বইমেলা ২০২১ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বইমেলার সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা পর্ষদ’বিষয়টি ওয়াকিবহাল নয়। এছাড়া বইমেলার অংশীজন প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্বকারী দুই সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি কারও সঙ্গেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা করা হয়নি।

অন্যদিকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আরটিভি নিউজকে বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কায় এবার বাঙালির প্রাণের উৎসব ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’স্টল বসিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। তবে ভার্চুয়ালি মেলার আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা একাডেমি।

তিনি বলেন, আগামী বছরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ভার্চুয়ালি কীভাবে আয়োজন হবে এবং বইমেলার জন্য স্টল বসিয়ে কোন মাসে আয়োজন করা সম্ভব হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। মেলা বাতিল হয়নি। শুধু বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত তারিখে মেলা শুরু হবে না।

প্রতিবছর বই মেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা চাঙা থাকেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে প্রকাশনায় ও স্টল বরাদ্দে ভাটা পড়েছে। স্টল বরাদ্দ নিয়ে তাদের আগ্রহই ছিল না। গতবার একুশে গ্রন্থমেলায় ৫৬০ প্রতিষ্ঠান স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়েছিল। এবার ৮৬ স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ হয়েছে।

বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বইমেলায় এসে একজন পাঠকও যদি করোনা সংক্রমিত হন সেটি একজন লেখকের কাছে যেমন লজ্জ্বার তেমনি বাংলা একাডেমির কাছেও দোষের। তাই তো ভার্চুয়ালি বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে দ্বিমত থাকবে সেটিই স্বাভাবিক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী আদিত্য অন্তর আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার কারণে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ নেওয়া হয়নি। করোনাকালীন সার্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্ত সময় উপযোগী। এরপরও বাংলা একাডেমি বইমেলা স্থগিতে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ বইমেলা মানেই প্রকাশক ও লেখক। প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করে বইমেলা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বইমেলা স্থগিতে বাংলা একাডেমি সিদ্ধান্ত ভুল বলে আখ্যায়িত করেন এই প্রকাশক।

বাংলা একাডেমি স্টল বসিয়ে বইমেলা স্থগিতের বিষয়ে কবি ও লিটল ম্যাগাজিন ‘শালুক’ সম্পাদক ওবায়েদ আকাশ আরটিভি নিউজকে বলেন, ভালো কিছু আশা করলে সেটি কবি ও লেখকদের মধ্য থেকেই শুরু হওয়া উচিত। এখন গার্মেন্টস কিংবা মার্কেট খোলা রয়েছে, এরসঙ্গে বইমেলা খোলা রাখার তুলনা করলে হবে না। কারণ বইমেলায় আসতে গিয়ে একজন মানুষও যদি করোনায় আক্রান্ত হন তা হবে দুঃখজনক। করোনা মহামারীর কারণে বাংলা একাডেমি বইমেলা স্টল বসিয়ে স্থগিত করা এবং ভার্চুয়ালি বইমেলার আয়োজনের সিদ্ধান্তকে স্বাগতম জানাই।

তিনি আরও বলেন, বইমেলায় এসে পাঠকদের বই কিনতেই হবে তা নয়। একজন পাঠক ইচ্ছে করলে শাহবাগ, নীলক্ষেত কিংবা আরও অনেক মার্কেটে থেকে বই কিনতে পারেন। এখন বই কেনা আরও সহজ হয়েছে- পাঠক ইচ্ছে করলেই বাসায় বসে অনলাইনে বইয়ের অর্ডার দিলে বাসায় পৌঁছে যাবে। বর্তমানে বই কেনার কোনো সমস্যা নেই।

বইমেলায় এসে ১০০ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলেন। এরমধ্যে ৫০ জন মারা গেলেন তখনও তো সমালোচনা হবে। কারণ বইমেলা প্রাঙ্গণের সামনের রাস্তায় মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে বই মেলার আয়োজন হলে করোনার স্বাস্থবিধি মেনে চলার কথা বললেও মানুষ তা মানতে পারবে না বলে মনে করছেন কবি ওবায়েদ আকাশ।

লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ তানজীনা ইমাম বলেন, করোনা মহামারীতে গণপরিবহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শপিংমল খোলা। শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই মানুষ চলাচল করছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গিজগিজ করছে মানুষ। কই এসব ক্ষেত্রে তো কোনও নিষেধাজ্ঞা দেখি না। আর মহান একুশে গ্রন্থমেলা কি শুধুই বই ব্যবসা? বইমেলা লেখক পাঠক প্রকাশকসহ কত শত মানুষের মিলন মেলা। একুশে গ্রন্থমেলা এ ভূখণ্ডের ঐতিহ্যের অংশ। আমরা ভার্চুয়াল নয় একচুয়াল বইমেলা চাই।

বইমেলা স্থগিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেক লেখক, প্রকাশক ও পাঠক বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বেহুলা বাংলার প্রকাশক চন্দন চৌধুরী লিখেছেন, ‘বইমেলা ভার্চ্যুয়ালি করা গেলে বিপণিবিতান, রাস্তাঘাট, খাবারদাবারও ভার্চ্যুয়ালি করা যেতে পারে! কারা এবার বইমেলার বিরুদ্ধে? কয়েকটি বিষয় মাথায় নিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে-
১. যারা বইমেলা চায় না তারা বাংলা ভাষা, অমর একুশ, বাংলা সংস্কৃতি কতটা চায়!
২. তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন কতটা চায়!
৩. তারা স্বাধীনতার ৫০ বছরের উৎসব কতটা চায়!

যারা এসবের বিরোধী তারাই এবারের বইমেলার বিরুদ্ধে। কিছু বিপণিবিতানে ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকতে হয়, বাসে ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়; শুধু বইমেলাতে সমস্যা!’

কবি ব্রাত্য রাইসু তার এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সারাবছরে বাংলা একাডেমির একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ বইমেলা। এটা যদি না হয় তো বাংলা একাডেমিও তো হবে না। তাই না?’

বইমেলা না হলে টাকার বিনিময়ে বই প্রকাশ করা প্রকাশকদের ক্ষতি হলেও জ্ঞানের ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট লেখক সরকার আমিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বইমেলা না হলে এবার কিছু প্রকাশকের ক্ষতি হতে পারে, যারা টাকার বিনিময়ে বই বের করেন, জ্ঞানের ক্ষতি হবে না।’
এফএ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh