• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মধু চাষ করে তারা শূন্য থেকে লাখপতি

মুগনিউর রহমান মনি

  ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০৪
By cultivating, honey they are zero to millionaires, rtv news
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় এক মধুচাষি

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় মধু চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মধু চাষের মাধ্যমে অনেক পরিবার সচ্ছল জীবন যাপন করতে শুরু করেছে। মধু চাষের ফলে পরাগায়নের মাধ্যমে যেমন ফলন বাড়ছে, খাদ্যে ভিটামিনের যোগান দিচ্ছে, তেমনি মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হচ্ছে এলাকাবাসী।

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এ মধু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু সরিষার মৌসুম নয়। সারা বছরই সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার গজারি বনে বাক্সে মৌমাছি পালন করে মধু চাষ করছে বহিরাগত ও স্থানীয় দুই শতাধিক মৌচাষি। বড় আকারে যারা মৌচাষ করছে তাদের একশ থেকে আড়াইশত বাক্স রয়েছে। আবার অনেকেই পারিবারিকভাবে দুই থেকে চারটি বাক্সের মাধ্যমে মৌচাষ করছেন। উন্নত জাতের মেলিফেরা ও সিরেনা এই দুটি জাতের মৌমাছি দিয়ে এখানকার চাষিরা মধু সংগ্রহ করছেন। একশত বাক্সে বছরে ৪-৫ টন মধু সংগ্রহ করা যায়। খরচ বাদ দিয়ে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। গারো পাহাড়ের গজারি বনের মধুর কদর বেশি থাকায় অন্য এলাকার মৌচাষিরাও এখানে আসেন বাক্স নিয়ে।

ঝিনাইগাতীর প্রথম মধুচাষি গুরুচরণ দুধনই গ্রামের মো. আব্দুল হালিম বলেন, তিনটি বাক্স দিয়ে এ অঞ্চলে প্রথম মধুচাশি হিসাবে তার যাত্রা শুরু হয়। আট বছরে এসে এখন তার বাক্সের সংখ্যা দাড়িয়েছে দুইশতে। বছরে একশত বাক্সের জন্য খরচ প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি বছরে দশ থেকে এগার লাখ টাকা আয় করেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশে চার প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এপিস মেলিফেরা, এপিস সিরেনা, এপিস ডটসাটা, এপিস ফ্লোরিয়া। এর মধ্যে এপিস মেলিফেরা ও এপিস সিরেনা জাতের মৌমাছি বাক্সে পালন করে তারা মধু আহরণ করছে।

আব্দুল হালিম জানান, নভেম্বরের ১৫-২০ তারিখ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরিষার মধু, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কালিজিরা ও ধনিয়ার মধু, মার্চের শুরু থেকে লিচুর মধু এবং এপ্রিল মাস থেকে গারো পাহাড়ে বনের মধু আহরণ করা হয়। এছাড়াও অক্টোবরের ২৫ তারিখ থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ জন খামারি মধু আহরণের জন্য এ পাহাড়ি অঞ্চলে আসে। তখন প্রত্যেক খামারি কম করে হলেও ১০ মণ মধু আহরণ করেন।

আবদুল হালিম আরও জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২-৩টি করে বাক্সে প্রায় দুইশত চাষি এপিস সিরেনা মৌমাছি চাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণ শেষে বাড়তি অর্থ উপার্জন করছে।

ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়ার পানবর এলাকার মধুচাষি কানুরাম কোচ জানান, শুরুতে তার ১৬টি বাক্স ছিল। গেলো ছয় বছরে একশত বাক্স হয়েছে। তিনি আশা করছেন এবার একশত মণের বেশি মধু পাবেন। গাড়ো পাহাড়ের মধু পাইকারি ১৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা হয়।

করোনা মহামারীর কারণে এখন মধুর বেশ কদর রয়েছে। পূর্বের তুলনায় দামও কিছুটা বেশি। এতে করে তার খামার ও পরিবারের আরও উন্নয়ন হবে বলে তিনি জানান।

ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া গ্রামের মোহন মিয়া জানান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তাকে মৌমাছিসহ সাতটি বাক্স প্রদান করা হয়। এখন তার একশরও বেশি বাক্স রয়েছে। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি মধু চাষ শুরু করেন। তিনি মনে করেন শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি মধু চাষে এগিয়ে আসেন তাহলে তাদের আর চাকরির পেছনে দৌড়াতে হবে না। এটি দিয়েই স্বাবলম্বী হওয়া যাবে।

রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইলিছুর রহমান আরটিভি নিউজকে জানান, জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় স্থানীয় ও বহিরাগত মিলে দুই শতাধিক মৌচাষি রয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার দুধনই গ্রামের অস্বচ্ছল পরিবারের সদস্য আব্দুল হালিম মাত্র তিনটি বাক্স নিয়ে মৌচাষ শুরু করেছিল। এখন তার দুই শতাধিক বাক্স রয়েছে। বর্তমানে আব্দুল হালিম খুব সচ্ছল জীবন যাপন করছে। তাকে দেখে এই এলাকায় অনেকেই মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আব্দুল হালিম মৌচাষে এ এলাকায় পথিকৃৎ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, শেরপুরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, বিসিক ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় প্যাকেজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ মৌ চাষে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ মধু চাষিরা সরিষার ফুল ছাড়াও কালিজিরা, লিচু ও বনের ফুল ফলান্তে মধু চাষে মনোযোগী হচ্ছে। এতে করে এ এলাকায় মধু আহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মধুশিল্প প্রসারে এ এলাকার চাষিরা বিশাল ভূমিকা রাখবে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করলে মধুচাষ এ এলাকায় সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করবে বলে মনে করেন এখানকার মৌচাষিরা।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শেষ হাসি হাসলেন তারানা হালিম
এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য হলেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম
X
Fresh