• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
দায়িত্ব অবহেলায় সাপাহার কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একটি কেন্দ্রে দাখিল ও সমমান পরীক্ষা চলাকালে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে আসায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের আটকের নির্দেশ দেন এবং বহিষ্কার করেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (কেন্দ্র সচিব) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাপাহার উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সাপাহার উপজেলা সদরের সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদরাসা দাখিল পরীক্ষার একটি কেন্দ্র। কেন্দ্রটিতে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট ৭৭৫ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল দাখিল পরীক্ষার আরবি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। গতকাল অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের দেওয়া ছবি ও সাক্ষর যাচাই করে ১০টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৫৯ জন পরীক্ষার্থী ভুয়া হিসেবে শনাক্ত হয়। এর মধ্যে আন্ধারদিঘী মহিলা দাখিল মাদরাসার ১৭ জন, তুলশিপাড়া মহিলা দাখিল মাদরাসার ১৪ জন, শিমুলডাঙ্গা দাখিল মাদরাসার ১১ জন, পলাশডাঙ্গা দাখিল মাদরাসার ৮ জন, দেওপাড়া-শিংপাড়া দাখিল মাদরাসার ৩ জন, মানিকুড়া দাখিল মাদরাসার ৩ জন, বলদিয়াঘাট মহিলা দাখিল মাদরাসার ২ জন এবং আলাদিপাড়া দাখিল মাদরাসার ১ জন পরীক্ষার্থীকে অন্যের হয়ে আরবি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।  ইউএনও মাসুদ হোসেন বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে আমাদের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে ওই কেন্দ্রে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আগেই ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কক্ষ পরিদর্শকদের সতর্ক করে দেওয়া হয় এবং প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ছবি ও সাক্ষর মিলিয়ে দেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই করে আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়। এরা সবাই দাখিল পরীক্ষার জন্য নিবন্ধিত প্রকৃত পরীক্ষার্থী হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর তাদেরকে আটক ও বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই সমস্ত পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আটক পরীক্ষার্থীদের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে বহিষ্কার ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হইনি। আটকের পর ওই সব পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকে তাদের হেফাজতে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে এ ধরণের জালিয়াতির সঙ্গে না জড়ানোর জন্য সতর্ক করা হয়। একই সঙ্গে কর্তব্যে অবহেলার কারণে ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পরীক্ষার সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়া আটটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে এই জালিয়াতির সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর বদলি পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামসহ লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়িারি থেকে শুরু হওয়া দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার গতকাল ছিল তৃতীয় বিষয়ের (আরবি দ্বিতীয় পত্র) পরীক্ষা। অন্যের হয়ে দুই বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার পর তৃতীয় বিষয়ের পরীক্ষার দিন তারা ধরা পড়েছে। ইউএনও মাসুদ হোসেন বলেন, বহিষ্কার হওয়া পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষার্থী হিসেবে নিবন্ধিত প্রকৃত পরীক্ষার্থীর হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল। এদের কেউ দশম শ্রেণি, আবার কেউ দাখিল পাশ করে একাদশ কিংবা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে দেওয়া স্বাক্ষর ও ছবি যাচাই করে প্রকৃত নিবন্ধিত পরীক্ষার্থীর সঙ্গে পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীর মিল না পাওয়ায় তাদের ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।  আগের দুই বিষয়ের পরীক্ষার্থীতেও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে কিনা এবং এর সঙ্গে কক্ষ পরিদর্শকেরা জড়িত কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  এক কেন্দ্রে ৫৯ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে ওই কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ও সরফতুল্লাহ ফাজিল মাদরাসার সুপারিটেনডেন্ট মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০৪ নম্বর কক্ষের এক পরিদর্শক ওই কক্ষের পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র যাচাই করার সময় প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক পরীক্ষার্থীর মিল না পাওয়ায় বিষয়টি জানান। এরপর বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে অবহিত করি। এরপর ইউএনও স্যারের নির্দেশে কেন্দ্রের ৭৭৫ জন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র যাচাই করে আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন পরীক্ষার্থীকে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।  এর মধ্যে ৪৪ জন ছাত্রী ও ১৫ জন ছাত্র। আগের দুই বিষয়েও সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য কক্ষ পরিদর্শকদের প্রতি আমার নির্দেশনা ছিল। এখানে আমার প্রতিষ্ঠান থেকেও ৫০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে শনাক্ত হইনি।  
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২৩
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়