• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo
জয়ের নেতৃত্বে আইসিটি বিপ্লব হচ্ছে বাংলাদেশে : কাদের
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে নিরবে-নিঃশব্দে দেশে আইসিটি বিপ্লব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  তিনি বলেছেন, আজকে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশে আসে, আবার চলে যায়। নিরবে আসে, নিঃশব্দে চলে যায়। কেউ টেরও পায় না। কিন্তু তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটা নিঃশব্দ বিপ্লব হচ্ছে, আইসিটি বিপ্লব। এই বিপ্লবের স্থপতি হচ্ছে জয়। তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিরবে আবার চলে যাচ্ছে। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সেতুমন্ত্রী। সভার সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের বলেন, পঁচাত্তরে যখন ফিরে যাই, জাতির পিতার রক্তাক্ত লাশ পড়েছিল ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে, সেই লাশ দুই দিন পর আনা হয় টুঙ্গিপাড়ায়। ৫৭০ সাবান আর রিলিফের কাপড় ব্যবহৃত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দাফনে। ১৮-১৯ জন লোককে জানাজা পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুকে দাফন দিয়ে তারা ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে মানুষ ভুলে যাবে। তাদের হিসাবের অংক কত যে ভুল! আজ টুঙ্গিপাড়া বাঙালির তীর্থকেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, আজকে জাতির পিতার কাছে আমরা কী শিখবো? আমাদের রাজনীতিতে আমরা কীভাবে শিক্ষাগ্রহণ করব, আমাদের রাজনীতিতে কী যোগ্যতা প্রয়োজন আমরা সেটা কীভাবে শিখবো? আমি বলবো, এদেশে বঙ্গবন্ধুর পরিবারই সবচেয়ে বড় আদর্শের জায়গা। সততা ও সাহস, রাজনীতির প্রধান দুটি গুণ। একটি পরিবার ক্ষমতার ১৫ বছরে ক্ষমতার কোনো বিকল্প সেন্টার এই পরিবার করেনি। এদেশে হাওয়া ভবন নেই। এই পরিবারের সন্তানেরা মেধাবী। যে যেখানে আছে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই পরিবার সততার প্রতীক। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, অ্যাডবোকেট কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
১৮ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪৩

বাংলাদেশে পালিয়ে এলেন ১৭৯ বিজিপি, দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ মেম্বার
মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘর্ষে পর্যুদস্ত হয়ে আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা। সোমবার (১১ মার্চ) সকাল থেকে এ পর্যন্ত বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মোট ১৭৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ১১ বিজিবির অধীনস্থ জামছড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১৭৯ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের দেখতে গিয়ে বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর জামছড়ি ওয়ার্ডের মেম্বার সাবের আহমদ। স্থানীয়রা জানান, আজ সোমবার বিকেলে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের দেখতে সীমান্তবর্তী জামছড়ি এলাকায় ভীড় করেন উৎসুক জনতা। এ সময় হঠাৎ মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে মেম্বার সাবের আহমদের কোমরের ডান পাশে। সাবের আহমদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিনও। আহত এই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।  এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মি ও স্বাধীনতাকামী নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর যৌথ স্বশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের জান্তা সমর্থিত সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
১২ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৬

চলতি বছরে বাংলাদেশে আসতে পারেন সৌদি যুবরাজ
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ড. হাছান জানান,  মার্চের শুরুতে তুরস্কে তিন দিনের আনাতোলিয়া ডিপ্লোম্যাটিক ফোরামে ১৯ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ ৭৩টি দেশের পররাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্টবিষয়ক মন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগদান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে সামনাসামনি পরিচিত হতে অত্যন্ত সহায়ক ছিল। আনাতোলিয়া ফোরামের সাইডলাইনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ও সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগন্যাসিও ক্যাসিসের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ক্ষেত্রসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথা জানান হাছান মাহমুদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের জেদ্দায় ৫ মার্চ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান ও ইসরায়েলকে বয়কট করার প্রস্তাব অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। পাশাপাশি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ এবং ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল।  তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে আগের শুধু জনশক্তি রপ্তানির সম্পর্ককে বহুমাত্রিক সম্পর্কে রূপ দিয়েছে এবং সৌদিতে ১০ বিলিয়নসহ পুরো গালফ দেশগুলোতে ৫০ বিলিয়ন গাছ লাগানোর উদ্যোগে বাংলাদেশ অংশ নেবে। এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনগণকেও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, রমজানে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার যেমন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে ও অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য কৃত্রিম উপায়ে দাম বাড়ায় যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সারা বিশ্বে উৎসব পার্বণে দ্রব্যমূল্য কমে আর আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বেশি রাখে। সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর।
১১ মার্চ ২০২৪, ২২:১৪

ফের বাংলাদেশে পালিয়ে এলেন মিয়ানমারের ২৯ সীমান্তরক্ষী
মিয়ানমারের রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষে পর্যুদস্ত হয়ে আবারও বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা।  সোমবার (১১ মার্চ) সকালে বিজিপির ২৯ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে ১১ বিজিবির অধীনস্থ জামছড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে ২৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মি ও স্বাধীনতাকামী নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর যৌথ স্বশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের জান্তা সমর্থিত সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
১১ মার্চ ২০২৪, ১৯:২৮

বাংলাদেশে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা: করণীয় ও প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের নারীরা যুগ যুগ ধরে শোষিত ও অবহেলিত হয়ে আসছে। পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে তাকে সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। তার মেধা শ্রমশক্তিকে শুধু সাংসারিক কাজেই ব্যয় করা হয়েছে। সমাজ ও দেশ গঠন কাজে তাকে কখনও সম্পৃক্ত করা হয়নি। নারী আন্দোলনের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন– ‘তোমাদের কন্যাগুলিকে শিক্ষা দিয়া ছাড়িয়া দাও, তাহারা নিজেরাই নিজেদের অন্নের সংস্থান করুক।’ তাঁর এ আহ্বানে নারীর অধিকার অর্জনের পন্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও লিঙ্গভিত্তিক সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবু নারীদের নিরাপত্তা, বিশেষ করে শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করা একটি স্থায়ী চ্যালেঞ্জ হিসাবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা মৌলিক অধিকার এবং ক্ষমতায়নের মূল চালিকা হিসেবে বিবেচিত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ ও সংস্কৃতির নানামুখী পরিবর্তন হয়। শিক্ষা শুধু যে আত্মিক বিকাশের জন্যই অপরিহার্য তা নয়; বরং শিক্ষা বর্তমানে কর্মের দৃঢ় সুযোগ এবং সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭২ সালে নবগঠিত রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় রচিত এ সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে ২৭ ধারায় উল্লেখ আছে যে ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ ২৮(১) ধারায় রয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না’। ২৮(২) ধারায় আছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন’। ২৮(৩)-এ আছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষভেদ বা বিশ্রামের কারণে জনসাধারণের কোনও বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনও নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না’। ২৮(৪)-এ উল্লেখ আছে যে ‘নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের কোনও অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনও কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’। ২৯(১) এ রয়েছে–  ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে’। ২৯(২)-এ আছে–  ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না’। এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্র, অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি  বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গৃহীত হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ সালে কার্যকর হয়। নারীর জন্য আন্তর্জাতিক বিল অব রাইটস বলে চিহ্নিত এই দলিল নারী অধিকার সংরক্ষণের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড বলে বিবেচিত। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ তিনটি ধারায় [২, ১৩(ক), ১৬(ক), ও (চ)] সংরক্ষণসহ এ সনদ অনুস্বাক্ষর করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ১৯৯৭ প্রণয়ন করে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত ও অবহেলিত এ দেশের বৃহত্তর নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়ন করা। এতদসত্ত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর ওপর যৌন হয়রানি ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির ঘটনা যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভিভাবক মহলে দুশ্চিন্তার রেখাপাত দাঁড় করিয়েছে। একটি গবেষণা সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় যে পড়াশোনার মান নিয়ে সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীরা একই ধরনের মত দিলেও নিরাপত্তার বিষয়ে বিশাল মত পার্থক্য দেখা গেছে। পুরুষ শিক্ষার্থীদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও নারী শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ঝুঁকির মতো বিষয়গুলোতে দুই দলের এই বিশাল মতপার্থক্য এটি স্পষ্ট করে দেয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনও নিরাপদ বোধ করার মতো পরিবেশ নারী শিক্ষার্থী প্রদান করা যায়নি। বাংলাদেশের সামাজিক রীতি-নীতিতে বরাবরই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটে আসছে। বাংলাদেশে আর্থিক উপার্জনমূলক খাতে নারীর পদচারণা আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক উভয় কর্মক্ষেত্রেই বেড়েছে। নারীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার বাড়ায়, নারীদের আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রের পরিধি ও অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের আওতায় শিল্প, কলকারখানা, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে নারীর উপস্থিতি বাড়ছে। নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি যোগ্যতা ও দক্ষতাতেও পরিবর্তন এসেছে। সরকারি চাকরিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৭ শতাংশ নারী। উদ্যোক্তা হিসেবেও নারীদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে, বিশেষত অনলাইন ব্যবসায়। গত তিন দশকে নারীর ক্ষমতায়ন হলেও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পেছনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে কর্মজীবী নারীর নিরাপত্তা। যৌন হয়রানির ফলে একজন নারীর কর্মজীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি, মর্যাদাহানি এবং নারীর জীবনের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে, নারীর পরিবারে দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা ও অসম্মান ভোগ করে। তাই যৌন হয়রানি বন্ধে সরকারকে আইন, বিচার ও প্রশাসন রাষ্ট্রের এই তিন অঙ্গের সবকটি দ্বারা নারীর জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা প্রদানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশের হাইকোর্ট একটি নির্দেশনা দিয়েছিল। সেখানে বলা আছে, কোনও প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্ত এবং প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু কর্মজীবী নারীদের এবং শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই হাইকোর্টের এই নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক গত ২০১৯ সালের ১০ জুন জেনেভাতে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ১০৮তম সেশনে ‘Elimination of Violence and Harassment in the world of work’ শীর্ষক কনভেনশন ১৯০-এ বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসনে একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা গ্রহণ করে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে এই কনভেনশনের প্রস্তাবনা একদিকে একটি শক্তিশালী ফ্রেমওয়ার্ক ও সুরক্ষা কবজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে শিক্ষার সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রাথমিক স্তরে ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষার হার সমান হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা মাত্র ৩ শতাংশ পিছিয়ে। তবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ৬ শতাংশ এগিয়ে মাধ্যমিক স্তরে। পেশাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে। পেশাগত শিক্ষায় নারী ৩৮ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় ৩৩ শতাংশ। অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করেই এগিয়ে চলেছেন দেশের নারীরা। আকাশে বিমান ওড়াচ্ছে নারী। হিমালয়ের চূড়ায় উঠছে নারী; বন্দুক কাঁধে যুদ্ধেও যাচ্ছে। নারীর নিয়োগ বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে। রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরতদের ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী। শিক্ষায় নারীর নিরাপত্তার উন্নয়নে অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং হয়রানির ব্যাপকতা। নারী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই মৌখিক অপব্যবহার, যৌন হয়রানি এবং এমনকি শারীরিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির সম্মুখীন হয়, যা তাদের অ্যাকাডেমিক কর্মক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তদুপরি হয়রানির অভিযোগের সমাধান এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থার অভাব সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ অভিযোগ প্রতিকারের ব্যবস্থার অভাব রয়েছে এবং হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রায়ই রিপোর্ট করা হয় না, যা দায়মুক্তি এবং নীরবতার সংস্কৃতিকে স্থায়ী রূপ দান করছে। কিন্তু এরপরও সিংহভাগ নারীকে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। একক নারী, নারীর একক পরিবার এবং একক মা—নারীর এই পরিচয়কে সমাজ করুণার চোখে দেখে। উন্নয়ন ও আধুনিকতার এই ডামাডোলের মধ্যেও নারীকে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশে চলাফেরা করতে হয়। ঘরে, বাইরে, পরিবহনে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে নারীর যতই অর্জন থাকুক কিন্তু নিরাপত্তা ও অধিকার নারীরা ঠিক সেই অর্থে পাচ্ছেন না। অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন, দেশে ৪৩ শতাংশের বেশি নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজে যুক্ত। পুরুষের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। দেশের জিডিপিতে মোট জাতীয় উৎপাদনে নারীর অবদান ২০ শতাংশ। এই কাজগুলো কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা ছাড়াই গৃহিণীরা করে থাকেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গসমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেসকোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কিছু হতাশা থাকলেও নারীর ক্ষমতায়নে দেশের অর্জন অনেক। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জেন্ডার সমতাভিত্তিক এক উন্নত-সমৃদ্ধ বিশ্বে প্রবেশের মাধ্যমে উন্নত দেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারি কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। প্রান্তিক নারী প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলোর কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত নীতি তৈরি করা দরকার। যেসব আইন ও নীতি আছে, তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা গুরুত্বপূর্ণ। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ অবসানে স্কুলের পাঠ্যক্রমে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এছাড়া নারীর নিরাপত্তার উন্নয়ন, সহিংসতার শিকার নারীদের আইনি সেবা পাওয়ার সহজপ্রাপ্যতা, সহিংসতা রোধে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সে বিষয়গুলো সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের কার্যক্রম ও কৌশলে স্থান পাওয়া উচিত। এছাড়াও দেশের শিক্ষাঙ্গন ও কর্মক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। করণীয়– ১. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কার্যক্রমের শুরুতে এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গীয় সমতা ও যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত দিকনির্দেশনাটি বই আকারে প্রকাশ করতে হবে। ২. নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ৩. আদালতের নির্দেশনা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে জন্য সরকারি উদ্যোগে একটি তদারকি কমিটি থাকা উচিত। ৪. গণপরিসরে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা। ৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলীর মাঝে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত আইন, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধী একটি কমিটি থাকতে হবে। ৭. নারীবান্ধব অবকাঠামোগত বরাদ্দ বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে নারী সত্যিকার অর্থে স্বাধীন হয়। ৮. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নিজস্ব নৈতিক নীতিমালা বা কোড অব কন্ডাক্ট থাকা প্রয়োজন। ৯. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন সেল গঠন ও তার কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত করা। ১০. নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশনগুলো অনুমোদন এবং সে অনুযায়ী আইন সংস্কার জরুরি। সর্বোপরি, নারীবান্ধব শিক্ষা ও কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই পরিবেশ উন্নত হলে বাংলাদেশ তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে, যা আগামীর জন্য সুখী, সমৃদ্ধশালী ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে। লেখক: প্রভাষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
০৯ মার্চ ২০২৪, ১৭:৪৩

বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী প্রচারের নেপথ্যে কি?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারত বিরোধী এক ধরনের প্রচারণা চলছে। সেখানে ভারতীয় পণ্যসহ দেশটিকে 'বয়কট' নিয়ে করা বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে কয়েকটি ছোটখাটো  রাজনৈতিক দলও যুক্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশিরভাগ পোস্টদাতা বলছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারত অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এই কারণে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন।’ এখন প্রশ্ন হলো- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন দেশ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের অবস্থান কেমন ছিল? আর কেনই বা শুধু ভারত-বিরোধী প্রচারণা চলছে? চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল। এই দুই দেশের ব্যাপারে নীরবতা কেন? দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশি তৎপর ছিল আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপির পক্ষে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছিলন পিটার হাস। সরকারকে চাপে রাখতে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা না, তার মিত্রদেরকেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রকম তৎপরতায় সামিল করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপতারার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হলেও আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।’ বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীনও। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, ‘সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন চায় চীন। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই নির্বাচন নিয়ে বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।’ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি দেশটির জনগণই ঠিক করবে।  বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক দিকে প্রকাশ্যে বিরোধীতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীন, রাশিয়া এবং ভারত। অথচ গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারকে সমর্থন করার দায়ে ‘ইন্ডিয়া আউট’প্রচারণা চলছে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠেছে, শুধু ভারত বিরোধী কেন? ‘চীন আউট‘এবং রাশিয়া আউট’প্রচারণা চলছে না কেন? তারাও তো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। বাংলাদেশে ভারত বিরোধী এই অবস্থান নতুন নয়। মূলত ধর্মীয় কারণে ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তান প্রেমী মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার কারণেও তারা ভারতকে পছন্দ করে না। আবার চীন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও এ বিষয়ে তাদের কোনও ক্ষোভ দেখা যায় না। ভারত বিরোধীতা বাংলাদেশে ট্রাম কার্ড হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত পদ্ধতি। ভারত বিরোধী এই রাজনীতি তীব্র হয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এরশাদ বা তার পরবর্তী সময়েও ভারত বিরোধীতা চলে এসেছে। নব্বই দশকে রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা কার্ডটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সময় ভোট আসলেই প্রচার চালানো হতো- ‘ভারতের বিভিন্ন স্থানে নৌকা টাঙানো রয়েছে’, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে ঢাকা হবে দিল্লি’ কিংবা ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনী শোনা যাবে’। এ ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধিতা এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী বীজবপণ করার চেষ্টা করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপিকে ভারত ইস্যুতে সরব হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের চুক্তি সম্পাদনের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে টানা ১৫ বছর আন্দোলন করে জনসমর্থন না পেয়ে ‘ভারত বিরোধী’সেই পুরোনা কার্ড ব্যবহার করছে বিএনপি। দলটির নেতাদের কথাতেও তাই ফুটে উঠেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে। সরকারও এ সুযোগে দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছে।’ আর বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্ত করছে ভারত সরকার। তারা তাদের পছন্দের বাইরে যেতে পারছে না।’ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধানকে সমর্থন করায় ভারতের ওপর এতো রাগ বিএনপির। কিন্তু একই কারণে চীন বা রাশিয়ার বিষয়ে কিছু বলছে না তারা। চীন বা রাশিয়ার পণ্য বয়কট নিয়ে মুখে রা নেই বিএনপি নেতাদের। তারা জানেন বিরোধীতার ক্ষেত্রে ধর্ম একটা বড় হাতিয়ার। পাকিস্তানকে এখনও বাংলাদেশের যত মানুষ বন্ধু ভাবে, তার মূল কারণ ধর্ম। একাত্তরে পাকিস্তানিদের গণহত্যা তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির মাঠে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে বারবার বেছে নিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে আবারও ভারত বিরোধী মনোভাব কাজে লাগাতে চাইছে দলটি। যাকে ‘প্রেসার ডিপ্লোমেসি’ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন,  প্রকাশ্যে ভারতের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি একটি বার্তা দিতে চাইছে যে, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশে শেষ কথা নয়। যার ফলে ভারত তার নিজের স্বার্থের জন্যই যেন বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে- এটাই তাদের কৌশল। লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
০৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:২০

বাংলাদেশে রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে যেদিন
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করেই রোজা কবে থেকে রাখা হবে তা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পর থেকে বাংলাদেশ রোজা রাখা শুরু হয়। দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ১০ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কোথাও খালি চোখে বা টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। তবে পরের দিন ১১ মার্চ আকাশ পরিষ্কার থাকলে খালি চোখেই সৌদিসহ অন্যান্য আরব দেশে রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও ১১ মার্চ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও খালি চোখে চাঁদ দেখা সম্ভব বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ‘ক্রিসেন্ট মুন ওয়াচ’। অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবে এ বছর একই দিনে চাঁদ দেখা যেতে পারে। সময়বিষয়ক সংস্থা ‘টাইম অ্যান্ড ডেটের’ তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১১ মার্চ বাংলাদেশে চাঁদ ওঠবে সকাল ৬টা ৪৭ মিনিটে। আর চাঁদ অস্ত যাবে সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে। অপরদিকে সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে। সূর্যাস্তের পর চাঁদ খালি চোখে দেখা যাবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়।
০৭ মার্চ ২০২৪, ১০:৪০

বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিল ভারত
বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের (এনসিইএল) মাধ্যমে এই পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে।  সোমবার (৪ মার্চ) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তরের (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ১৪ হাজার ৪০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করবে ভারত। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ডিজিএফটি। বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি বলেছে, ভোক্তা বিষয়ক বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে পেঁয়াজ রপ্তানির রূপরেখা তৈরি করবে এনসিইএল। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলেও দেশটির সরকার কিছু বন্ধু রাষ্ট্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।  প্রসঙ্গত, বিশ্ব বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ রপ্তানিকারক ভারত। স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির সরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় দফায় মার্চের শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায় দেশটি। রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে দেশটির সরকার প্রথমে পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তারপরও আশানুরূপ ফল না মেলায় পেঁয়াজের রপ্তানি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ভারত। ওই সময় বলা হয়, পেঁয়াজ রপ্তানির এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। গত বছরের অক্টোবরে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে খুচরা বাজারে ভর্তুকি দিয়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ রূপিতে বিক্রির লক্ষ্যে মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। বিশ্বে ভারতের পেঁয়াজের শীর্ষ তিন ক্রেতা বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৪ আগস্টের মাঝে ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয় দেশটি থেকে। 
০৪ মার্চ ২০২৪, ১৮:১৮

বাংলাদেশে ফের নকিয়া ফোন উৎপাদন শুরু
দেশে আবারও বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড নকিয়ার মোবাইল ফোন উৎপাদন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি গাজীপুরের টঙ্গিতে ৫৩ হাজার ৭১৫ বর্গফুট জায়গা নিয়ে মোবাইল কারখানা শুরু করে সেলেক্সট্রা লিমিটেড। সেখানেই তৈরি হচ্ছে নকিয়া ফোন। এ উপলক্ষে দেশে প্রথমবারের মতো নকিয়ার মূল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবালের চিফ অপারেটিং অফিসার আলা লুসানসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কারখানা পরিদর্শন করেছেন। আলা লুসান বলেন, এখন পর্যন্ত ৭টি মডেলের নকিয়া মোবাইল ফোন এই কারখানায় উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি আমার দেখা সবচেয়ে সেরা কারখানা। অদূর ভবিষ্যতে সেলেক্সট্রার সঙ্গে এইচএমডি গ্লোবাল বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন পণ্য ও সেবা নিয়ে আসবে। সেলেক্সট্রা লিমিটেডের বোর্ড চেয়ারম্যান আশরাফ বিন তাজ বলেন, এই কারখানায় উৎপাদিত প্রতিটি নকিয়া ফোনের মানের প্রতি আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মোবাইল শিল্পের এই বিকশিত বিশ্ববাজারে, আমরা বাংলাদেশেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই। নকিয়া ফোন দিয়ে উৎপাদন শুরু হওয়া সেলেক্সট্রার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট মোবাইল ফোন উৎপাদনের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন আধুনিক গ্যাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৪৪

শবেবরাত যেভাবে বাংলাদেশে উৎসবে পরিণত হলো
পবিত্র শবেবরাত আজ। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাত মুসলমানরা শবেবরাত হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি লাইলাতুল বরাত হিসেবেও পরিচিত। বহুকাল ধরে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা কর শবেবরাত পালন করছে। যদিও শবেবরাতকে কেন্দ্র কের যেসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয় সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিতর্ক দেখা যায়।  ইসলামের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তিদের মতে মুসলিমদের মধ্যে শবেবরাত পালনের প্রথা ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির সময় থেকেই শুরু হয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে নফল নামাজ পড়তেন ও কবরস্থান জিয়ারত করতেন, তা অনেক হাদিসেই বর্ণিত রয়েছে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, রোজার মাস শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে বিশ্বনবী এই আচার পালন করতেন এবং তার অনুসারীদেরও পালন করতে বলতেন। তার মতে, বিশ্বনবীর সময়কাল এবং তার পরবর্তী সময়ে আরব থেকে ইসলাম প্রচারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যারা সফর করেছেন, তাদের মাধ্যমেই বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে শবেবরাত পালনের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। আর এই আনুষ্ঠানিকতাকে উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হতো বলে ধীরে ধীরে এই দিনে ভালো খাবার তৈরি ও খাবার বিতরণের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার প্রথা তৈরি হয়েছে। উপমহাদেশে যেভাবে ছড়িয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে শবেবরাত পালনের চল কবে থেকে শুরু হল সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই অঞ্চলে শবেবরাত পালন সংক্রান্ত সবচেয়ে পুরনো নথি পাওয়া যায় খাজা শামসুদ্দিন মিরার লেখায়। চীনের উইঘর অঞ্চলের কাসগারে জন্ম নেওয়া খাজা শামসুদ্দিন ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরতাজাবাদে আসেন এবং সেখানেই থেকে যান। ইরানের ইয়াজদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্বের অধ্যাপক মোহসেন সাইদি মাদানি তার ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত গবেষণা ধর্মী বই ‘ইমপ্যাক্ট অব হিন্দু কালচার অন মুসলিমস’ বইয়েও উল্লেখ করেছেন যে দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে শবেবরাতে হালুয়া-রুটি তৈরি ও বিতরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। খাজা শামসুদ্দিনের লেখার বরাত দিয়ে মোহসেন সাইদ মাদানি তার বইয়ে লিখেছেন ‘দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে শবেবরাত যে জৌলুসপূর্ণভাবে আয়োজিত হত, তার প্রথম দলিল পাওয়া যায় শামসুদ্দিন মিরার লেখায়।’ পরবর্তীতে অষ্টাদশ-উনবিংশ শতকে শাহ ইসমাইল শহিদ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ আর মৌলভি সৈয়দ আহমেদ দেহলভীর লেখায় শবেবরাত পালনের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় বলে উঠে এসেছে মাদানির লেখায়। সে সময় হালুয়া-রুটি বিতরণের পাশাপাশি আতশবাজি পুড়ানো ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হত বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পূর্বোক্ত লেখকদের বরাত দিয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন যে শবেবরাতের আলোকসজ্জা ও আতশবাজি পুড়ানোর বিষয়টি হিন্দুদের দ্বীপাবলি উৎসব থেকে নেওয়া হতে পারে। তবে ইসলামিক ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, উপমহাদেশে শবেবরাত পালনের চল অষ্টম শতক থেকেই শুরু হয়েছে, যখন থেকে ইসলাম প্রচারে মধ্য এশিয়া ও আরব থেকে উপমহাদেশে মুসলিম ধর্ম প্রচারকরা এসেছেন। তিনি আরও বলেন, ত্রয়োদশ শতকে কুতুবুদ্দিন আইবেক, বখতিয়ার খিলজী দিল্লিতে সালতানাত প্রতিষ্ঠা করার পর উপমহাদেশে রাজনৈতিকভাবে ইসলাম ছড়িয়ে পরে। কিন্তু ৭১২ সালে মোহাম্মদ বিন কাসেম মুলতান আর সিন্ধ জয় করেন। সেটি ছিল উপমহাদেশে ইসলাম ছড়িয়ে যাওয়ার শুরু। এছাড়া আরব, চীনা বণিকরা সাগরপথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে এসেছেন। তাদের মাধ্যমেও উপমহাদেশে ইসলাম ছড়িয়েছে এবং ইসলামিক রীতি-রেওয়াজও মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছে। আতশবাজি ও হালুয়া-রুটির প্রচলন বাংলাদেশের বিশেষ করে ঢাকার মানুষ শবেবরাত বলতে বুঝতো এমন একটি দিনকে, যেদিন সবার ঘরে ঘরে হালুয়া তৈরি করা হবে ও তা বিতরণ করা হবে আত্মীয়-স্বজন ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। মসজিদে মসজিদে সারারাত জিকির করা বা নামাজ পড়ায় ব্যস্ত থাকবে পুরুষরা। আর সন্ধ্যার পর পোড়ানো হবে আতশবাজি। শবেবরাতে এই আতশবাজি পোড়ানো ও আলোকসজ্জা করার রীতি কয়েকশ বছরের পুরনো। ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিদ্যাধর মহাজন তার বই ‘হিস্টরি অব মিডিইভাল ইন্ডিয়া’য় লিখেছেন যে দিল্লির সুলতানদের আমলে এবং মোঘল আমলে শবেবরাতের রাতে বাদশাহদের প্রাসাদ ও মসজিদ আলো দিয়ে সাজানো হত। মোঘল আমলে শবেবরাত পালনের এই চিত্র উঠে এসেছে পার্বতী শর্মার ‘জাহাঙ্গির: অ্যান ইনটিমেট পোর্ট্রেট অব এ গ্রেট মোঘল’ বইয়েও। যেখানে সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে (১৬০৫-১৬২৭) শবেবরাত উদযাপনের সময় হালুয়া মিষ্টি জাতীয় খাবার বিতরণ ও আলোকসজ্জা করা হত বলে লিখেছেন তিনি। ১৮৮০ সালে প্রকাশিত বৃটিশ পাদ্রী এডওয়ার্ড সেলের লেখা বই ‘ফেইথস ইন ইসলামে’ উঠে আসে যে সেসময় আতশবাজির পেছনে বিপুল পরিমাণ খরচ করা হত। এডওয়ার্ড সেল ১৮৬৫ সাল থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের মাদ্রাজে পাদ্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে, হালুয়া তৈরি করে আত্মীয় ও স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে বিতরণ করার সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি বলছিলেন, আমরা জানি যে বিশ্বনবী মিষ্টি খুব পছন্দ করতেন। তার পছন্দের জিনিসকে উম্মতরা পছন্দ করবেন, সেটাও তাকে পছন্দ করার একটা ধরন। ফলে মিষ্টি হিসেবেই হালুয়া বানানোর প্রচলন শুরু। কারণ হালুয়া বানানোর উপকরণ এই অঞ্চলে রয়েছে। আর আনন্দের ভাগ অন্যদের দেওয়ার জন্য বিতরণের রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি আর সামাজিকতা রক্ষা – দুটো বিষয়ই জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশে যেভাবে প্রচলন হলো বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে শবেবরাত পালনের সবচেয়ে পুরনো প্রমাণ পাওয়া যায় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, প্রায় ১৫০ বছর আগে। সে সময় ঢাকার নবাবরা ঘটা করে শবেবরাত পালন করতেন বলে বলছিলেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, যিনি বাংলাদেশের উৎসবের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন ও বই লিখেছেন। তিনি বলেন, সে সময়ে হিন্দুদের আধিপত্য থাকার কারণে সেটিকে মোকাবেলা জন্য ঢাকার নবাবরা শবেবরাতের জন্য অনেক বড় আয়োজন করতো। এতে ঢাকার নবাবদের মুসলমান পরিচয় এবং আধিপত্য - এ দুটো বিষয় একসঙ্গে তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যেত। অধ্যাপক মামুন বলেন, নবাবরা যেহেতু মুসলিম ছিলেন এবং ঢাকাকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন, সেজন্য উৎসবগুলোকে তারা গুরুত্ব দিতেন। এর মাধ্যমে নবাবদের আধিপত্য, মুসলমানদের আধিপত্য এবং ধর্ম পালন এই তিনটি বিষয় একসাথে প্রকাশ হতো। ১৯০০ শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শবেবরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। এমনটাই বলছেন অধ্যাপক মামুন। সেই ধারাবাহিকতায় শবেবরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মতে আরও আগে থেকেই বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে শবেবরাত পালন হয়ে আসছে। তিনি বলেন, আরব আর চীনা বণিকরা যখন সাগরপথে ব্যবসা করতে আসতো, তখন চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাদের জাহাজ ভিড়তো। সেসময় তাদের অনেকেই এখানে থেকে যেতেন। তাদের মাধ্যমে ইসলামিক রীতি-রেওয়াজের সঙ্গে সেখানকার মানুষের পরিচয় হয়েছিল। তার মতে, ঢাকার নবাবরা জাঁকজমকের সঙ্গে শবেবরাত পালন করলেও তারও কয়েকশ বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডের মানুষ এই রেওয়াজের সঙ্গে পরিচিত ছিল। সূত্র : বিবিসি বাংলা  
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫১
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়