• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
১৮ বছর শিকলে বন্দি হাফেজ আব্দুল খালেকের মানবেতর জীবনযাপন
নিজ ঘরে প্রায় ১৮ বছর ধরে শিকলে বন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ৩৫ বছরের যুবক হাফেজ আব্দুল খালেক। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর জানাজার নামাজ পড়াবেন, এমন স্বপ্ন নিয়ে মেধাবী ছেলেকে মাদরাসায় দেন বাবা-মা। তবে ছেলে কোরআনের হাফেজ হলেও বাবা-মায়ের সেই স্বপ্ন আর নেই। হাফেজ হওয়ার মাসখানিকের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আব্দুল খালেক। এরপর থেকে গত প্রায় ১৮ বছর ধরে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। ছেলে অসুস্থ হওয়ার পর সম্পত্তি ও গরু বিক্রি করেও তার চিকিৎসা করা হয়েছে। এতেও হাফেজ আব্দুল খালেক সুস্থ না হওয়ায় তার বাবা আব্দুল কুদ্দুস দুঃখে-কষ্টে কয়েক বছর আগে মারা যান। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ভোটাল গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে হাফেজ আব্দুল খালেক। তারা ৫ ভাই ৩ বোন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে ৩য় আব্দুল খালেক সবার আদরের ছিলেন। পড়ালেখায় যেমন ভালো ছিলেন, তেমনি এলাকায়ও ভদ্র ছেলে হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ছিল। উপজেলার জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করে আব্দুল খালেক কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। পড়াশোনায় তিনি খুব মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু হাফেজ হওয়ার মাস খানেকের মধ্যে আস্তে আস্তে খালেক মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন। পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী তার চিকিৎসা করানো হয়। অসহায় এই পরিবারটি তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করেও খালেককে সুস্থ করতে পারেনি। পায়নি কোনো সাহায্য সহযোগিতা। এগিয়ে আসেনি কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা। সুস্থ না হওয়ায় বসতঘরের একটি কক্ষে এভাবে হাফেজ আব্দুল খালেককে ১৮ বছর শিকলবন্দি মানবেতার জীবন যাপন করতে হচ্ছে।   গত ৩ বছর পূর্বে উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর মাত্র ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ পর্যন্ত আর কোনো সহযোগিতা পায়নি এ পরিবারটি। অর্থের অভাবে আব্দুল খালেকের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না, এজন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছে তার বৃদ্ধা মা শামসুন্নাহার। কেঁদে কেঁদে হাফেজ আব্দুল খালেকের মা শামসুন্নাহার বলেন, মেধাবী হওয়াতে আব্দুল খালেককে হাফেজি মাদরাসায় পড়িয়েছেন। ছেলে হাফেজ হয়ে ইসলাম প্রচারের সঙ্গে নিজের বাবা-মায়ের শেষ যাত্রায় জানাজার নামাজে ইমামতি করবেন। কিন্তু ওই সন্তান হাফেজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তার নিজের জীবনই এখন বিপর্যস্ত। তাকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ছেলের এই করুণ পরিণতি দেখে গত ১৩ বছর পূর্বে তার বাবা মারা গেছেন। হাফেজ আব্দুল খালেকের ভাই মো. মোস্তফা, আবু বকর সিদ্দিক ও বেলায়েত হোসেন বলেন, সে বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। অনেক সময় এদিক-সেদিক চলে যায়। পরিবারের পক্ষে সারাক্ষণ দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য তাকে ঘরে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পারিবারিক অর্থিক অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না। স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করে আব্দুল খালেক কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। খুব মনোযোগী ছিলেন। ১৮ বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর জমিজমা বিক্রি করে আমাদের পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ী তার চিকিৎসা করানো হয়। ভাইয়ের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। জয়শ্রেরী রাহমানিয়া আরাবিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মহসিন মিয়া বলেন, আবদুল খালেক খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরাসহ তার পরিবরের সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি চিকিৎসার জন্য, কিন্তু সে সুস্থ হয়নি। বর্তমানে সে শিকল বাঁধা অবস্থায় আছে, বিষয়টি অনেক দুঃখজনক। সরকার অথবা কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি তার চিকিৎসার দায়িত্ব বহন করে। আমরা বিশ্বাস করি সে সুস্থ হয়ে উঠবে। প্রতিবেশী মো. ইয়াছিনসহ আরও কয়েকজন বলেন, একজন কোরআনে হাফেজের এমন মানবেতর জীবন খুবই দুঃখজনক। সমাজের বৃত্তবানরা যদি অসহায় এ পরিবারটি পাশে দাঁড়িয়ে হাফেজ আব্দুল খালেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাহলে আমরা আশা করি হাফেজ আব্দুল খালেক সুস্থ হয়ে উঠবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সহিদ এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারসহ সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।   গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি খোঁজখবর নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো ও চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করব। ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, হাফেজ আব্দুল খালেকের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং একটি প্রতিবন্ধী ভাতার বই করে দিয়েছি। হাফেজ আব্দুল খালেকের সু-চিকিৎসা হলে আবার সে সুস্থ জীবনে ফিরে আসবে মনে করছেন তার পরিবার। তাই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা গ্রামবাসীর।  
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৬

এরশাদের ছেলে বললেন, খুব কষ্ট হচ্ছে, মানবেতর জীবনযাপন করছি
অর্থের অভাবে মানবেতর দিন কাটছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদ। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকায় অবস্থিত পৈতৃক বাসভবন পল্লি নিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এরিক। এসময় তার মা বিদিশা এরশাদ সংবাদ সম্মেলনে না এসে দূরে দাঁড়িয়েছিলেন।  সংবাদ সম্মেলনে এরশাদপুত্র বলেন, আমি একজন এতিম ছেলে, আমার বাবা নেই। আমার নামে বাবার করে যাওয়া ট্রাস্ট থেকে কোনও টাকা পাচ্ছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার মানবেতর দিন কাটছে। ট্রাস্টের টাকা লুটে পুটে খাচ্ছে আমি চরম অসহায়ত্ব বোধ করছি।  এ সময় এরিক বলেন, মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে মরহুম বাবা এরশাদের কবর জিয়ারত করার জন্য রংপুরে আসি। জিয়ারতের পর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত পল্লিবন্ধু এরশাদ কোল্ড স্টোরেজে যাই মাকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে গেলে বারী মুন্সি, মুকুল ও তার ছেলে মান্নু আমাকে ও আমার মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমাদের কোল্ড স্টোরেজে ঢুকতে দেননি। এমনকি আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই কোল্ড স্টোরেজের মালিক আমি, আমাকে ঢুকতে দেবে না, দেখে নেবে! দুই বছর ধরে কোল্ড স্টোরেজে যে আয় হচ্ছে, সেখান থেকে আমাকে এক পয়সাও দেওয়া হচ্ছে না। সব টাকা তারা লুটেপুটে খাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের বোঝা উচিত, আমি এতিম ছেলে, আমার বাবা নেই। তারা আমার মাকেও গালি দিয়েছে, তার অশোভন আচরণ করেছে। বিষয়টি আমরা পুলিশকে বলেছি, তারা পূর্ণ সহায়তা করেছে। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এরিখের সংবাদ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদিশা এরশাদ। তিনি বলেন, প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ একমাত্র সন্তান এরিকের কল্যাণের জন্য জন্য তিনি জীবিত থাকা কালে একটি ট্রাস্ট করে যান। যার নাম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট। রংপুরে পল্লী নিবাস বাস ভবন, নগরীর মাহিগঞ্জে একটি কোল্ড স্টোরেজসহ ঢাকায় কিছু সহায়সম্পদ আছে। এরশাদ যে ট্রাস্টের কমিটি করে গেছেন। তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখনও দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। ফলে আয়-উপার্জন না থাকায় এরিখ প্রচণ্ড রকম কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বারবার বলার পরেও ট্রাস্টের দায়িত্ব এরিখকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এ ছাড়া এরিখের চাচা জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান তাকে পুরো বিষয় জানানো হবে তিনি কি করেন দেখি। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের পাল্টাপাল্টি দল করার ব্যাপারে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৩
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়