• ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo
অকালে ঝরে যাওয়া বলিউডের নক্ষত্র ইরফান খান
বলিউডের তিন খানের মতো তার নামের পাশেও রয়েছে খান। প্রায় তিন যুগের ক্যারিয়ারে এমন সব সিনেমা উপহার দিয়েছেন যা অন্য অনেকের জন্যই অনুকরণীয়। বলছি বলিউডের অন্যতম নক্ষত্র ইরফান খানের কথা। আজ (২৯ এপ্রিল) তার চলে যাওয়ার দিন। দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ২০২০ সালের এই দিনে মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার চলে যাওয়ার পর অস্কারের মতো সর্বোচ্চ সম্মাননার আসরে তাকে স্মরণ করা হয়েছে। সিনে দুনিয়ায় অসামান্য খ্যাতি পাওয়া এই তারকা ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। বেশ ভালো খেলতেনও। কিন্তু অল্প কিছু টাকার জন্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায় তার। সেই ঘটনা ২০১৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইরফান।  সেটার সূত্র ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন বলছে, ক্রিকেট মাঠে অলরাউন্ডার ছিলেন ইরফান। তবে বোলিং ছিল তার অধিক প্রিয়। দলের অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্টও তার বোলিংয়ের ভক্ত ছিল। প্রতি ম্যাচে গড়ে ২-৩ উইকেট তার ঝুলিতে আসতো। এমন প্রতিভার জোরে ইরফান সুযোগ পান কর্নেল সিকে নায়ডু ট্রফিতে। কিন্তু পরিবার খেলাধুলায় মোটেও রাজি ছিল না। তাই লুকিয়ে খেলতে যেতেন ইরফান। বাড়িতে ফিরে দিতেন নানা অজুহাত।   সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেছিলেন, আমি যখন সুযোগ পাই তখন আমাদের জয়পুর থেকে আজমেড় যেতে হতো। সেজন্য ২০০-২৫০ রুপি লাগতো। আমি সেই টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি। সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম, এটা আমার জন্য নয়। এই সামান্য টাকার অভাবই ঘুরিয়ে দিয়েছিল ইরফান খানের জীবন। তার এক আত্মীয় কাজ করতেন যোধপুরের থিয়েটারে। তাকে দেখেই অভিনয়ে আগ্রহ জাগে ইরফানের। তিনিও যোগ দেন থিয়েটারে। স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ও করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি দিল্লি গিয়ে ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি)। অভিনয়ের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেন আর ওমনি কাজ পেয়ে গেলেন, এমন ছিল না মোটেও। সংগ্রামের সেই দিনগুলোতে তিনি এয়ার কন্ডিশনার মেরামতের কাজ করতেন ইরফান। যেটা দিয়ে নিজের খরচ মেটাতেন। এই কাজের সুবাদেই একবার রাজেশ খান্নার বাড়িতে যান ইরফান। আর তাকে দেখেই ইরফানের মনে অভিনেতা হওয়ার আগ্রহ আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ১৯৮৭ সালে এনএসডি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর একটি ছবিতে ছোট এক চরিত্রে সুযোগ পান ইরফান খান। মিরা নায়ের নির্মিত ছবিটির নাম ‘সালাম বোম্বে’। মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। এরপর এরকম ছোট ছোট চরিত্রে আরও কিছু সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজে কাজ করেছিলেন ইরফান। ২০০৪ সালে এসে ইরফান খান গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সুযোগ পান এবং বাজিমাত করেন। বিশাল ভরদ্বাজ নির্মিত ওই ছবির নাম ‘মকবুল’। এর পরের বছরই প্রধান চরিত্রে হাজির হন ইরফান। ‘রোগ’ নামের ছবিটিতে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছিল সমালোচকদের। অতঃপর সাফল্য, জনপ্রিয়তা আর পুরস্কার সমান্তরালে আসতে থাকে ইরফানের ঝুলিতে। ক্যারিয়ারে যুক্ত করেছেন ‘পান সিং তোমার’, ‘লাইফ অব পাই’, ‘পিকু’, ‘লাঞ্চবক্স’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘তলোয়ার’, ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’, ‘মাদারি’, ‘কারিব কারিব সিঙ্গেল’, ‘আংরেজি মিডিয়াম’র মতো নন্দিত সব সিনেমা। একবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়টি ফিল্মফেয়ার, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী এবং ফিল্মফেয়ারের আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৩৫

খালেক বিন জয়েনউদ্দীন : ভণিতাহীন নক্ষত্র আমাদের
  বাংলা একাডেমির ফেলো প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদ্দীন আর নেই! রোববার বিকেলে ফেসবুকে দুঃসংবাদটা দেখি। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। মুহূর্তেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেন। সঙ্গে সঙ্গে খালেক ভাইর নাম্বারে কল করি। হৃদয়ভাঙা কণ্ঠে সত্যতা নিশ্চিত করেন একজন। শ্রদ্ধাভাজন ছড়াকার, খালেক ভাইর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছড়াকার মোহাম্মদ ইল্ইয়াছ ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি কান্না জুড়ে দিলেন। বুঝতে বাকি থাকলো না আর!  ০২. খালেক ভাইর সাথে প্রথম দেখা ২০০৫ সালের মার্চে। স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর আগেই। ছারছীনা থেকে আমরা আসতাম তার কচি-কাঁচার আসরে। দৈনিক ইত্তেফাকের অফিসে। প্রথম দেখাতেই তিনি বুকে টেনে নেন। গ্রামের এক সহজ-সরল, আলাভোলা ছেলের লেখা লিড করে ছাপান কচি-কাঁচার আসরে। এত সহজে মানুষকে এতটা কাছে টানা যায় কে শিখিয়েছেন আর? সন্তানতুল্য ভালোবাসা দিয়ে ধন্য করেছেন আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষকে। ফোন করে লেখা চাইতেন। ছড়া ও কিশোর কবিতা ছাপাতেন পরম যত্নে ইলেস্ট্রসনসহ।  ০৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর খালেক ভাইর সাথে কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লেখাপড়া আর জাগতিক প্রেসারের মায়াজালে আটকে যাই। কিন্তু খালেক ভাইর ভালোবাসা আটকে না। কী অসম্ভব রকম ভালোবাসতেন আমাকে! কত বড় বড় ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিককে তিনি পাত্তা দিতেন না। কিন্তু আমাকে রাখতেন মাথায় তুলে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত একজন কবির সামনে দুই মাস আগেও বলেন, "আপনার চেয়ে ভালো ছড়া জিয়া হক লিখে ফেলেছে ২০০৫ সালেই! ওকে কী ভাবছেন আপনি!" খালেক ভাইর পরম আশ্রয়ে, লজ্জায় মরে যাই যাই ভাব। একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি চোখ টিপেন আমাকে। মুচকি হাসেন।  ০৪. খালেক ভাইর সাথে কত যে মধুর স্মৃতি, কত যে গল্প! আমরণ আনন্দে চোখ ভেজাবে। দুঃখে বুক চিনচিন করে উঠবে। মানুষ কতটা নির্ভেজাল, ভণিতাহীন, অকপটে; তাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।  গ্রামের সরলতা, গ্রামের সহজ-সরল স্বভাব, সাদা-সিদে  চলা-ফেরা, আঞ্চলিক কথা-বার্তা কিছুই বদলাতে পারেননি এই দিন বদলের শহরের বাতাসে মিশে গিয়েও। শহরের দেয়াল তাকে দেয়ালে আটকাতে পারেনি। দেয়ালবন্দি করতে পারেনি কোনো দিন। তার মনের জানালা ছিল গ্রামের ভাঙাচোরা ঘরের দখিনা জানালা। ফুলের গন্ধ, পাখির ডাক, রোদের মায়া, জোসনার প্রেম হুট করেই ঢুকে যেতে পারতো মনের মধ্যে। তার মনটা ঠিক যেন ৫০ বছর আগেকার কোনো লুঙি পরা কিশোরের। সামান্য কোনো লোভ, পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব না বোঝা ফাস্ট ইয়ারের কোনো গ্রাম্য শিক্ষার্থীর। আহা খালেক ভাই, এই ধবধবে সাদা মন আর এই ‘লুঙ্গি পরা জীবন’ আপনি কোথায় পেলেন!! ৫. আমার প্রথম বই ‘গন্ধরাজের ডানা’র আলোচনা লিখে ইত্তেফাকে ছবিসহ ছাপিয়ে আমাকে বিভোর করা খালেক ভাই। আজও আপনার শিশুসুলভ সরলতায় বিভোর আমরা। কিছুদিন আগেও বাংলা একাডেমির পরিচালক কবি তপন বাগচী দাদার অফিসে আমাদের দীর্ঘক্ষণ আড্ডা হলো। কত রকমের কথা-বার্তা! রাতে ফোন করে বলেন, ‘তোমার শিশুমেয়ে জারাকে কিচ্ছু কিইন্যা দিতে পারলাম না। ওরে নিয়া বাসায় আহো।’ ৬. গত বছরের মার্চে কয়েকবার খালেক ভাইর রাজাবাজারের বাসায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। সাতই মার্চ হুট করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘বিকালেই চইল্যা আহো।’ কথা মতো গিয়েই দেখি হাতে এতটা কাগজ নিয়ে বসে আছেন। বলেন, ‘জিয়া, তিনটা থেকে তোমার অপেক্ষায়। তোমার বিকাল বুঝি পাঁচটায়!’ কিছুটা লজ্জিত হই। বলেন, ‘বহো, বহো। শোনো।’  খালেক ভাই শোনাতে থাকেন, ‘জিয়া হকের সাহিত্যচর্চার শুরুতেই আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলাম। ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে ডাকে লেখা পাঠাতো সে। আমি তখন পাতার সম্পাদক। ওর লেখা পড়ে চমকে উঠতাম। ছন্দ-মিল ও বিষয়ের সে-কী বর্ণনা। আমি বড়দের সারিতেই লেখা স্থান দিতাম। যা ভেবেছিলাম জিয়া তাই- এখন সে নিজের স্থান দখল করে নিয়েছে। দখল কেউ না দিলেও সেই অভিযাত্রা আদৌ থেমে থাকবে না। মাভৈঃ জিয়া।’ ‘ঢেউ দোলানো নদীর মায়া’র কবিতাগুলোয় তরুণ মনের নানা প্রশ্ন বা অভিপ্রায়-ছবি ফুটে উঠেছে এবং প্রত্যেকটি রচনাই উজ্জ্বল তারকার মতো। আগেই বলেছি, ছন্দ-মিলের গাঁথুনি ও শব্দচয়নে জিয়া হক শৈলি ও বিন্যাসে অপূর্ব মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। তার দৃষ্টি বা পর্যবেক্ষণে সমাজে যত অনিয়ম, সেখানেই তিনি আঘাত করেছেন। জিয়ার এ কাব্য-দর্শনটি আত্মোপলদ্ধির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। পড়লে লাভ আছে, ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। কাব্যদিগন্তে তার অভিযাত্রাকে অভিনন্দন জানাই। উদ্ভাসিত হোক তার দীপ্তিময় কাব্য-জিজ্ঞাসা।’ ‘ঢেউ দোলানো নদীর মায়া’ নিয়ে খালেক ভাইর এই বক্তব্য। দীর্ঘ লেখার আংশিক এখানে। খালেক ভাইর দীর্ঘ জীবন, বহুমুখী কাজের আংশিকই জানি আমরা।  ৭. খালেক ভাই, এত দ্রুত আপনাকে হারাতে হবে কখনো বুঝতে পারিনি। শিশু একাডেমিতে গত ৩১ জুলাই শেষ দেখা আপনার সাথে। দূর থেকে জিয়া হক বলে ডেকে কাছে নিলেন। কুশল জানলেন। দোয়া চাইলেন। অসুস্থতার খবর জানালেন। কত গল্প আপনার। আপনার মুগ্ধতার গল্প কোনোদিন শেষ হবে না। আপনার অপার মুগ্ধতার গল্প এখন শুনুক জান্নাতের ফুল-পাখিরা। আপনাকে মধ্যমণি করে কচি-কাঁচার আসর জমুক প্রতিদিন। আপনি আমাদের হৃদয়ে কচি-কাঁচার মতোই নিষ্পাপ-নিষ্কলঙ্ক হয়ে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর। খালেক ভাই, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৫৬
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়