গ্রামীন ব্যাংকের স্পষ্ট ব্যাখ্যার পরেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে ইউনূস সেন্টার
বাংলাদেশে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণসহ সাতটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যকার দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। ১৭ ফেব্রুয়ারি ডাকা সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীন ব্যাংক স্পষ্ট করে বলেছে কেনো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কোন ব্যক্তির নয়। এরপরেও ১৮ ফেব্রুয়ারি আবারও ইউনূস সেন্টার বিবৃতি দিয়ে পাল্টা বক্তব্য হাজির করায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করছেন বিশ্লেষকরা।
অধ্যাপক ইউনূস অভিযোগ করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জবরদখল’ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, 'তাদের টাকাতেই ওইসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে' দাবি করে গ্রামীণ ব্যাংক বলছে, আইন মেনেই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এখন আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে প্রতিষ্ঠানটি।
সর্বশেষ ঘটনা প্রবাহের শুরু গত সপ্তাহে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অধ্যাপক ইউনূস সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রতিষ্ঠানে 'জবর দখলের' অভিযোগ করেন। পাল্টা জবাব হিসেবে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের দাবি সঠিক নয়।
এর আগে, সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের ঢুকে পড়ে এবং তারা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ দাবি করেছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও গ্রামীণ ব্যাংকসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোেত ড. ইউনূসের কোনো মালিকানা বা অংশ নেই।
‘সব প্রতিষ্ঠানই তৈরি করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায়, এসব প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের’; শনিবার সাংবাদিকদের বলেন গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাইফুল মজিদ।
গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের মালিকানা নেই বলে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ড. ইউনূস নিজেই বারবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংকসহ তাঁর সৃষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে তাঁর কোনো শেয়ার বা মালিকানা নেই। এ ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক ব্যতীত তাঁর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর ২৮ ধারা অনুসারে গঠিত। যার কোনো ধরনের মালিকানা থাকে না। গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণে ড. ইউনূস আর চেয়ারম্যান নেই, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে ড. ইউনূস চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন।
গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণে ড. ইউনূস আর চেয়ারম্যান নেই, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বক্তব্য হচ্ছে, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ টেলিকমের জন্মলগ্ন থেকে ড. ইউনূস চেয়ারম্যান পদে নিয়োজিত আছেন। প্রতিষ্ঠান দুটির শুরুতে তাদের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনে চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা গ্রামীণ ব্যাংকের হাতে ছিল। পরে প্রতিষ্ঠান দুটি পরিচালনার সুবিধার্থে কোম্পানি আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশনের ৪৮ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। সেটি ২০১১ সালের ২৫ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের যুক্তি অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য এবং তারা তাদের যুক্তির অংশ হিসেবে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিবে। ড. ইউনূস একভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা চাইতে পারেন কিনা প্রশ্নে ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এটা অসম্ভব। তিনি নিজেও সেটা জানেন। এখানে যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলা হচ্ছে তার কোন মালিকানা থাকে না। উনি নিজেকে কেনো এখনও চেয়ারম্যান দাবি করছেন সেটাও আমাদের বোধগম্য নয়।
গ্রামীন ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার বলেন, কমপ্রিহেন্সিভ অডিট করছি। সেখানে খুব চাঞ্চল্যকর বিষয় উঠে আসছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ড. ইউনূস যখন ব্যাংকের এমডি ছিলেন সেই সময় বোর্ডের মাধ্যমে। এটার মালিকানা তিনি নিজে ব্যক্তি হিসেবে কীভাবে দাবি করতে পারে।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫৩