• ঢাকা সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo
জন্মান্ধ হয়েও ঘরের ইলেকট্রিক কাজ করেন রিপন
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের তের বাড়ি সমাজের মরহুম আব্দুস সোবহানের ছেলে ইমরোজ হোসেন রিপন (৩৬)। তিনি জন্মান্ধ। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়—এমনটা প্রমাণ করতে যেন তার লড়াইটা জীবনের প্রথম দিন থেকেই শুরু। মনের আলোয় উদ্ভাসিত এ যুবক পেশায় একজন ইলেকট্রিক ও প্লাম্বার মিস্ত্রি। পাশাপাশি বাড়ির পাশে করছেন ছোট্ট একটি ইলেকট্রিক দোকান। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারও কাছে হাত না পেতে করছেন ইলেকট্রিক ও পাইপ ফিল্টারের কাজ। স্থানীয় এলাকাবাসী তার এমন প্রয়াসে অনুপ্রাণিত। তিনি যেন নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই। ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন রিপন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বর্তমানে তার মা দুই ছেলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। আমেরিকা প্রবাসী বড় বোন সুমনা ও ডাক্তার শাহজান আক্তার এবং ছোট ভাই শিপনের সহযোগিতায় বাবার দিয়ে যাওয়া ঘরে এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন রিপন। নিজ গ্রামে বিদ্যুতায়ন শুরু হলে ইলেকট্রিকের কাজ শেখার স্বপ্ন জাগে তার। কিন্তু এতে বাধা দেন মা-বাবাও স্থানীয় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিরা। এরপর একা একা নিজেদের বসতঘরে ইলেকট্রিকের কাজ শিখতে চেষ্টা চালান রিপন। একপর্যায়ে এ নিয়ে রাগ করতেন তার মা-বাবা। এ কারণে ইলেকট্রিকের কাজ করার যন্ত্রপাতি লুকিয়ে রাখতেন। পরে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় চলে যান। সেখানে একাকী দীর্ঘ চেষ্টার পর আয়ত্ত করেন ইলেকট্রিক, প্লাম্বার ও সোলারের কাজ। এরপর তিনি গত ১৮ বছরে নিজ গ্রামে বেশ কয়েকটি মসজিদসহ ১৫০-২০০টি ঘরের ইলেকট্রিক কাজ সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও টুকটাক অসংখ্য মেরামতের কাজ করেছেন। নিজের গ্রামের সকল রাস্তার সঙ্গে তার নাড়ির সম্পর্ক। কারও সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তাঘাটে চলাফেরা করেন। একা একা যান নিজের দোকানে। গোসল থেকে খাবার সবই করেন নিজে হাতে কারও সাহায্য ছাড়া। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি রিপন। তবে তিনি সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেও তেমন আগ্রহী নয়। রিপনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার বলেন, স্বামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও অন্যদের থেকে তিনি পুরোপুরি আলাদা। তিনি নিজের সকল কাজ নিজে করতে পারে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যে স্বপ্ন পূরণের জন্য বাধা নয় তার উজ্জল দৃষ্টান্ত রিপন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অবিরাম কাজের পেছনে ছুটে চলেছেন। দৃষ্টি তার সামনে এগোনোতে কোনো বাধা হতে পারেনি, উল্টো সে এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী রিপন কারও বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। তার এ উদ্যোম ও মনের শক্তি সমাজের প্রতিটি মানুষের কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা। তাকে খুব দ্রুত একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।
০১ মে ২০২৪, ১৯:২০
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়