রোজা রেখেও ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যায়: জাহানারা
কমনওয়েলথ গেমসে যোগ হয়েছে নারী ক্রিকেট। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বার্মিংহ্যামে বসতে চলা এই আয়োজনের মূল পর্বে পা রাখার আগে বাংলাদেশকে খেলতে হবে বাছাই পর্ব। চলতি বছর রয়েছে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ। তার আগে শ্রীলঙ্কা সফর রয়েছে বাংলাদেশ নারী দলের। চলমান লকডাউনে কোনও খেলা নেই। রমজান মাসে নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছেন জাতীয় দলের পেসার জাহানারা আলম। মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে।
আরটিভি নিউজ
কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমবারের মতো নারীরা অংশ নিচ্ছে। ইতিহাসের পাতায় যোগ হতে চলেছেন আপনারা। ২০২২ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ। তার জানুয়ারিতে খেলতে হবে কমনওয়েলথ বাছাই পর্বে।
জাহানারা আলম
কমনওয়েলথে খেলাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা বড় পাওয়া হবে। যদি আমরা এই টুর্নামেন্টে খেলতে পারি তাহলে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবো। বিশ্বকাপ ছাড়া এশিয়ার বাইরে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে খেলাটা কঠিন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলার সুযোগ কম থাকে। বাছাই পর্বটা টপকাতে পারলে প্রচুর ম্যাচ খেলার সুযোগ হবে। যা নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্যও বাড়তি পাওয়া। অবশ্যই চাইবো সুযোগটা যাতে হাত ছাড়া না হয়।
আরটিভি নিউজ
পাকিস্তানকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার কথা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে পাকিস্তান অংশ নিচ্ছে না। তাই লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ হতে পারে। বছরের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কার বসবে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব। কয়েকদিন আগেই সিলেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছেন। বাংলাদেশ গেমস ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছেন কেমন হলো প্রস্তুতি।
জাহানারা আলম
দক্ষিণ আফ্রিকার ইর্মাজিং দল এসেছিল। তিন মাসের মতো ক্যাম্প করার সুযোগ হয়েছিল আমাদের। তবে কোনও টুর্নামেন্ট খেলার আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হয়। সেই হিসেবে তাদের সঙ্গে খেলেছি। বাংলাদেশ গেমসে খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা বেশ ভালোই প্রস্তুতি সেরেছি। আসন্ন খেলাগুলোতে আশা করি ভালো করতে পারবো।
আরটিভি নিউজ
গত বছরের মতো লকডাউনে কর্মহীনদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন। এবারও আপনাকে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিতে দেখা গেছে।
জাহানারা আলম
সব সময় কম-বেশি করার চেষ্টা করি। সবকিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করি না। তবে মাঝে মাঝে করি, যদি আমাকে দেখে কেউ উৎসাহিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। সবার কাছে আহ্বান জানাবো একে অপরের পাশে থাকুন।
আরটিভি নিউজ
ফেসবুকে আপনাকে প্রায় ২০ লাখ লোক অনুসরণ করেন। ইনস্টাগ্রামে তা ১ লাখের বেশি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নানা মন্তব্য করেন। সেগুলো কি আপনি পড়েন? মন্তব্যগুলো ব্যক্তি জাহানারার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে?
জাহানারা আলম
আমার ভক্তরা আমার জন্য কমেন্ট করেন সেগুলো অবশ্যই আমি পড়ি। সবগুলো পড়ার সুযোগ কম হয়। তার মধ্যে নেগেটিভ-পজেটিভ দুই রকমই কমেন্ট আছে। আমি একজন অতি সাধারণ মানুষের মতো চলার চেষ্টা করি। অনেকেই আমার জন্য পজেটিভ কমেন্ট করেন। আমার পোস্ট করা ছবি-ভিডিও থেকে ভালোটা যদি নিতে হয় সেটা নিবে। আমি মনে করি এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কে কেমনে নিজের মনোভাব প্রকাশ করছেন এটাও তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। মানুষের মন মানসিকতার নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে নেই। আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে ভালো কাজ করা। সেগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। যে ভালোটা নিতে পারবে সে নিবে। যেটা পারবে না সেটা তার ব্যাপার।
আরটিভি নিউজ
সবশেষ যে ভিডিও পোস্ট করেছেন অনেকেই প্রশ্ন করছিল আপনি রোজা রেখেছেন কি না। এমন আরও অনেক থাকে যেগুলো বিব্রত হওয়ার মতোই। আপনি কীভাবে এগুলো দেখেন।
জাহানারা আলম
হাজার হাজার কমেন্ট আসে। সবাইকে কিন্তু আলাদা করে বোঝানে সম্ভব না। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য হয়তো লাইভে এসে যুক্তিযুক্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব। প্রথমবার যখন আইপিএল (২০১৯) খেলেছিলাম। তখন কিন্তু রোজা রেখেই খেলেছি। ইফতার করার সময় ছিল না। ম্যাচ চলাকালে সময় মতো পানি পান করে আবারও খেলেছি। আমি কিন্তু কখনও বলিনি যে রোজা রেখে খেলছি। রোজা রেখে খেলাও যায় আবার ফিটনেসের কাজ করা যায়। আমি মুসলমান আমার বিবেক কি বলে আমি সেভাবেই চলি। কারও জবাব আমি দিতে চাই না। তবে আমার কাছ থেকে ভালো কোনও পরামর্শ নিতে চাইলে তা আমি দিতে রাজি আছি। অনেকেই আছে জানতে চান, কীভাবে রোজা রেখে ফিটনেস ঠিক রাখার কাজ করতে হয়।
আরটিভি নিউজ
অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা রোজা রেখে খেলতে নামেন। দেশ-বিদেশে অনেক উদাহরণ রয়েছে।
জাহানারা আলম
মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক ভাইরা সব সময় রোজা রেখে কাজ করেন। ফেসবুকে পোস্টও করেন। আমরা সবাই জানি। এখান থেকে প্রেরণা পাওয়া যায়। গত বছর লকডাউনে যখন বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না তখন রোজা থাকা অবস্থায় ট্রেডমিলে রানিং করেছি। আগেও রোজা থাকাকালীন ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। লকডাউনে যাদের জায়গার অভাব তারা বাসায় ফিটনেসের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। যাদের মাঠে যাওয়ার সুযোগ আছে তারা যেতে পারেন। বলতে দ্বিধা নেই আজকেও প্রচণ্ড গরমে মাঠে রানিং করেছি। জিম করেছি। রোজা রাখা অবস্থায় আপনি সময় নিয়ে কাজ করতে পারবেন। যেটা করতে আপনার এক ঘণ্টা লাগতো তা তিন ঘণ্টায় করুন। বিশ্রাম নিয়ে করুন। ফিটনেস নিয়ে কাজ করা মানেই যে রোজা রাখা যাবে না অথবা পানি পান করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। অনেকের কৌতূহল থাকতে পারে। তবে নেগেটিভ কমেন্ট যারা করে তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
আরটিভি নিউজ
আপনি ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছেন। নারীদের আইপিএলেও একাধিকবার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। যারা আপনাকে অনুসরণ করে তাদের জন্য কোনও বার্তা আছে?
জাহানারা আলম
আমি সৎ উপায়ে, পরিশ্রম করে ক্রিকেটের মাধ্যমে উপার্জন করছি। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। আমাকে যারা অনুসরণ করে তাদের মধ্যে অনেক নারী ক্রিকেটার রয়েছেন। অনেক পুরুষ ক্রিকেটাররাও আছেন। শুধু দেশে নয় দেশের বাইরে থেকেও ক্রিকেটাররা আমাকে অনুসরণ করেন। তারা অনেক সময় উৎসাহিত হন। অনেক মাধ্যমে বিষয়গুলো আমি জেনেছি। গুটি কয়েক মানুষের কথা চিন্তা করে আমি আমার কাজ বন্ধ রাখতে পারবো না। আমি বিশ্বাস করি যারা নেগেটিভ কমেন্ট করেন তাদের চিন্তা চেতনা, মন মানসিকতা বদলাবে। আমার মতো যারা ভালো কাজ করছেন তাদের উচিত না থামা। ভালো কাজ করলে পরিবর্তন আসবেই।
ওয়াই
মন্তব্য করুন