• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

ক্রাইমজোনে পরিণত হয়েছে সাতছড়ি উদ্যান, আতঙ্কে পর্যটকরা

সায়েদুজ্জামান জাহির, হবিগঞ্জ

  ১২ জানুয়ারি ২০২০, ১৬:০০

হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যান ক্রাইমজোনে পরিণত হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দুটি গণধর্ষনের মতো ঘটনা ঘটেছে এখানে। ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনাও। এতে করে আতঙ্কে রয়েছে পর্যটকরা। ফলে দিনদিন পর্যটক হারাচ্ছে উদ্যানটি। পর্যটকরা মনে করছেন স্থায়ী কোনও ধরনের নিরাপত্তা না থাকার কারণে উদ্যানে বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। তবে কর্তৃপক্ষ দাবী করছেন এখানে নিরাপত্তার কোনও অভাব নেই।

সূত্রমতে, পর্যটন সম্ভাবনাময় হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পট চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রতি বছর সেখানে শীতের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্যানের ভেতর থেকে বারবার অস্ত্র উদ্ধার ও ছিনতাইয়ের পর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা। সম্প্রতি এক মাসের ব্যবধানে উদ্যানের ভেতরে দুটি গণধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে। এর আগেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে উদ্যানের ভেতরে। আবার তরুণ-তরুণীরা উদ্যানে গহীন অরণ্যে গিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়- গেল ৭ জানুয়ারি উদ্যানে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয় বৃন্দাবন কলেজের এক ছাত্রী। এ ব্যাপারে ৮ জানুয়ারি প্রেমিকসহ ৫ জনকে আসামি করে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা করেন তিনি। বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে চুনারুঘাট থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি ভোরে মামলার প্রধান আসামী শামীম আহমেদ মামুনকে (২২) আটক করে পুলিশ।

এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর সাতছড়ি উদ্যানে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক স্কুলছাত্রী। প্রেমিককে গাছের সঙ্গে বেধে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, কিছুদিন পরপরই ঘটে এমন ধর্ষণের ঘটনা।

এদিকে, শীত মৌসুমে সাতছড়ি উদ্যানে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিনোদনপ্রেমি নারী-পুরুষরা উদ্যানের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু গেল কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমের শুরুতেই উদ্যানের গভীর অরণ্য থেকে বিভিন্ন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। যার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সারাদেশের পর্যটকরা। মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সাতছড়ি থেকে।

সাতছড়ি উদ্যানে ঘুরতে আসা কুতুব উদ্দিন জানান, ‘আমরা প্রায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে সাতছড়িতে ঘুরতে আসি। কিন্তু সম্প্রতি এখানে ছিনতাই ও ধর্ষণের একাধিক ঘটনা আমাদের মনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

হবিগঞ্জের কবি সাহিত্যিক ও নারী নেত্রী তাহমিনা বেগম গিনি বলেন- ‘পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় জেলা হবিগঞ্জ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পর্যটনস্পট সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। কিন্তু সেখানের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। পর্যটকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাজমুল হক জানান, সাতছড়িতে ঘুরতে আসা অনেকেই গালফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। পাশাপাশি দুটি ঘটনার ভিকটিমই বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরতে এসেছিল। অনেক সময় পর্যটন এরিয়ার বাহিরে চলে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। তারপর পুলিশের সবসময় সজাগ রয়েছে। কোনও ব্যক্তিই অপরাধ করে পার পাবে না।

সাতছড়ি ফরেস্ট অফিসার মাহমুদ হোসেন জানান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ট্যুরিস্ট গাইড সব সময় থাকে কিন্তু তরুণ-তরুণীরা নিজেদের অনীহার কারণে ট্যুরিস্ট গাইড তাদের সাথে যেতে পারে না।

তিনি বলেন, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকে এর মধ্যেও ছোটখাটো ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা চেষ্টা করি সব সময় পর্যটকদের চলাচল নিশ্চিত করতে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh