• ঢাকা সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
logo

শেখ হাসিনাতেই আস্থা

মো. মাজেদুল হক

  ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:১৫
মো. মাজেদুল হক
লেখক : মো. মাজেদুল হক

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানকে (এখন বাংলাদেশ) শোষণ, বঞ্চনা, সীমাহীন বৈষম্য ও লুণ্ঠনের অসহায় শিকারে পরিণত করেছিল পাকিস্তানের শাসকরা। যার কারণে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম ছিল।

সকল ক্ষেত্রে যে সীমাহীন বৈষম্য ছিল তা মেনে নিতে পারেনি পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসকারী লোকজন। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এবং ৩০ লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে বাংলাদেশ নামকরণ করা হলো। যুদ্ধবিধস্ত দেশকে তখন তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র আট বিলিয়ন ডলার। যুদ্ধবিধস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার অনেকগুলো সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।

বঙ্গবন্ধু সরকার এর উদ্যোগের কারণে সাড়ে তিন বছরে মাথাপিছু জিডিপি (বর্তমান ইউএস ডলারে) ১৮৬ শতাংশ বেড়েছিল। তাঁর আমলে অর্থনীতির আকার ৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলাওে দাঁড়িয়েছিল।

দুর্বল অর্থনীতিকে সামনে টেনে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার এর নির্দেশে গঠন করা হলো পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশন প্রথম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ১৯৭৩ – জুন ১৯৭৮) গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮১-১৯৮৫), তৃতীয় পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৮৫- ১৯৯০) গ্রহণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে চতুর্থ পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯০-১৯৯৫) পঞ্চম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯৭-২০০২) এর মাঝে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ও ষষ্ঠ পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) বাস্তবায়ন করা হয়। সপ্তম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এর আওতায় ছিল দারিদ্র্য কমানো, জনসংখ্যা বৃদ্ধিও হার কমিয়ে আনা, রপ্তানি বৃদ্ধি, দেশজ সঞ্চয়, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মোট দেশজ উৎপাদনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন।
যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁর দেখা স্বপ্নগুলো মেরে ফেলে। এরপর থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি থেমে যায়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে। এ সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ শুরু করেন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেওয়া কর্মসূচীগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করা আরম্ভ করেন। বঙ্গবন্ধুর দেখা অনেকগুলো স্বপ্নের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি জানতাম বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি দেশবাসী খাবার না পায় , যুবকরা চাকরী বা কাজ না পায়, তাহলে স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে- পূর্ণ হবে না। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলতে হবে। হ্যাঁ, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে বাংলাদেশকে এখন নানাভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ বা উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

বিগত এক দশকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনা সরকারে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিধর অর্থনীতি ভারত থেকেও চার বছর আগে মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

২০২৩ এ ভারতের মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়ায় ২ হাজার ৬১২ ডলার সেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২ হাজার ৬২১ ডলার। আর আট বছর আগে থেকেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। এক দশক ধরে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির হার, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার এবং নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।

বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে নারীর হার বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ, ভারতে ২৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২০ শতাংশ। বিগত এক দশকে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ ডলার। এখন তা বেড়ে ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। উল্লেখ্য, গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে মাথাপিছু আয় বেড়েছে বাংলাদেশে।

দারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মত দেশে দারিদ্র্য কমানো সহজ কাজ নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার কমে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে।
অতি দারিদ্র্যের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে নেমে আসে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু আয় ৬৯৯ ডলার থেকে প্রায় চার গুন বেড়ে ২ হাজার ৬৮৮ ডলার হয়েছে।

২০০৫ সালে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুবরণ করতো ৫১ জন । এখন কমে ২২ জন। ঐ সময় প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৩৭৬ জন। এখন কমে এসেছে ১২৩ জনে। মানুষের গড় আয়ুষ্কাল ২০০৫ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ২ বছর। এখন তা বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। ২০০৫ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ উপভোগ করা পরিবারের অনুপাত ছিল ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।

আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রোল মডেল হয়েছে। যার দরুন, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে আয়-বৈষম্য এবং টাকা পাচার কমিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই অর্থনৈতিকভাবে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে অনেক কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হবে। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখেই দেশবাসী অপেক্ষা করছে কবে বাংলাদেশ সোনার বাংলায় রূপান্তর হবে।

লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক এবং সেন্টার ফর ইষ্ট এশিয়া ফাউন্ডেশনের গবেষণা পরিচালক।

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সবারই বিকল্প আছে কিন্তু শেখ হাসিনার বিকল্প নেই: শেখ পরশ
‘শেখ হাসিনার লড়াইয়ের গল্প বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই হোক অঙ্গীকার’
গণমানুষের নেতা থেকে আজ বিশ্বনেতায় পরিণত শেখ হাসিনা : শেখ পরশ
‘গত ৪৪ বছরে সবচেয়ে সাহসী রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা’
X
Fresh