• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদস্বরূপ

প্রফেসর ড. ওমর ফারুক মিয়াজী

  ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৮
প্রফেসর ড. ওমর ফারুক মিয়াজী
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে নর ঘাতকরা ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।

তবে তার কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সে সময় দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী।

১৯৭৫ সালে ক্ষমতার রদবদলের পর আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দেয়, এর ফলশ্রুতিতে দলে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিদেশে থাকার সময় ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দেশ রত্ন শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।

শেখ হাসিনা দিল্লিতে থাকাকালীন তাকে দলের সিনিয়র নেতারা সভাপতি নির্বাচিত করার বিষয়ে অবহিত করেন। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতক গোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে রাতে দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াদেজ পুতুলকে ছোটবোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। প্রায় ছয় বছর নির্বাসনে থাকার পর বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে লাখো মানুষ তাঁকে স্বাগত জানান। তখনকার রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে ছিল কালবৈশাখীর হাওয়া। প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি আর দুর্যোগও সেদিন গতিরোধ করতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখ লাখ মানুষের মিছিল। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তাঁরা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন নেত্রী কখন আসবেন এই প্রতীক্ষায়। অবশেষে ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে জনসমুদ্রের জোয়ারে এসে পৌঁছান জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ

সময় গণতন্ত্রকামী জনতার স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বিমানবন্দর এলাকা। সেদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা এবং জীবনকে তুচ্ছ করে বিমানবন্দরের দেয়াল টপকে জনতার মিছিল চলে গিয়েছিল বিমানবন্দরে ভেতরে।এক পর্যায়ে সকল বাধা ডিঙ্গিয়ে প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে বিমানবন্দরের রানওয়ে পর্যন্ত ছুটে যায় সাধারণ মানুষ।

তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত রাস্তাগুলো রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে। তখন স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস।

জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে লক্ষ ভাই বেঁচে আছে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই।’

দেশের মাটিতে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনতার সংবর্ধনায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই । আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।’

সেই থেকে চার দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আপন কর্ম মহিমায় হয়ে উঠেছেন-নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। এভাবেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেত্রীত্বের গুনাবলীর মাধ্যমে দেশ নেত্রী হতে হয়ে ওঠেন বিশ্ব নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সকল অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, তিনি তার অধ্যবসায় এবং সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের একজন বিশিষ্ট নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার দুঃসাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই আওয়ামী লীগ আজ দল হিসেবে অনেক বেশি শক্তিশালী।

প্রত্যাবর্তনের ৪৪ তম বার্ষিকী আজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক: অধ্যাপক, জেনেটিক্স এন্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য ইন্ডিয়া টুডে এনই’র ক্ষমা প্রার্থনা