• ঢাকা রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেলো গো মরার কোকিলে

পি আর প্ল্যাসিড (টোকিও, জাপান থেকে)

  ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৮
পি আর প্ল্যাসিড
লেখক : পি আর প্ল্যাসিড

সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত হলো ২৩ তম টোকিও বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল ১৪৩১। এ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো দেশ থেকে কিছু শিল্পী আসার কথা ছিলো। কিন্তু ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের কতিপয় বেরসিক কর্মকর্তা তাদের ভিসা না দিয়ে নাকি জাপানে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রবাসীদের বিনোদন দিতে সহযোগিতা করেননি। তাই তড়িঘড়ি করে আমেরিকা থেকে আমেরিকান পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী খ্যাতিমান কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়।

শিল্পী বেবী নাজনীন যেহেতু আমেরিকার পাসপোর্টধারী তাই তাকে আমেরিকা থেকে জাপান আসতে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সমস্যা হবে না মনে করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সমস্যা অবশ্য একটা ঘটেছিল অন্যত্র। নির্ধারিত সময় শিল্পী জাপানের উদ্দেশ্যে আমেরিকা থেকে রওনা হলে হঠাৎ একটি দুঃসংবাদ পান। ( মায়ের মৃত্যু ) এতে পথ ঘুরিয়ে তিনি চলে যান বাংলাদেশে। কারণ, সেই মূহুর্তে তাঁর মায়ের মৃত্যু সংবাদ তাকে কিছুটা হলেও মর্মাহত করে। ( আল্লাহ শিল্পী বেবী নাজনীনের মায়ের আত্মাকে বেহেশত নসীব করুন)।

মায়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে মন শক্ত করে যথাসময় চলেও আসেন তিনি জাপান। জাপানে শিল্পী বেবী নাজনীনের আসার সংবাদে মেলার আগেরদিন বাঙালী কমিউনিটিতে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে। এই জোয়ার বইতে দেখা যায় শিল্পীর ভক্তদের চেয়ে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের শিবিরে।

স্থানীয় কয়েকজন আমার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে কথা বাড়াইনি। কারণ, অধিকাংশের কথা ছিলো, বেবী নাজনীনের জাপান আগমনে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে তিনি একজন শিল্পী এটাহ বড় পরিচয়, তাই। আমিও তখন তাদের সেই যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু ফেসবুকে কয়েকজনের স্ট্যাটাস দেখে পরবর্তীতে সেটা আর মনে হয়নি। মনে হয়েছে সকলের যুক্তির উল্টো কথা।

জাপানে যারা রাজনীতি সচেতন বলে দাবীদার তাদের কয়েকজনের সাথে এবিষয়ে কথা বলে ঠিক এমনটাই মনে হয়েছে যে, বেবী নাজনীন শুধুই একজন কন্ঠশিল্পী। জাপানে তিনি কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আসেননি। রাজনৈতিক ইস্যু টেনে আমি যেন কোনো কথা না বলি। শুনে ভালো লেগেছে এই জন্য যে, একটা বিষয়ে অন্তত মানুষগুলোর বোধোদয় হয়েছে। এটাকে রেফারেন্স ধরে হলেও আগামীতে কথা বলা যাবে। আর এখানেই আমার মনে হয়েছে, শিল্পীর জনপ্রিয় এক গানের কথা, " আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেলো গো মরার কোকিলে "। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই রেফারেন্স যে কাজ হবে না, তা বুঝে গেলাম বৈশাখী মেলার দিন শিল্পীকে নিয়ে ঘটে যাওয়া হট্টগোল দেখে। আর তখনই মনে হলো গানের পরের লাইন, " আমায় পাগলও করিলো গো মরার কোকিলে "।

জাপানে এবার ২৩তম বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলা জাপান প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণের মেলা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভান্ডারে ২৩তম মেলা করতে প্রতিবার ছোট বড় এমন ২৩টি ঘটনার জন্ম হয়েছে। আর এসবে জন্ম হয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলের কথিত সমর্থকদের আচরণ থেকে। তারপরেও দেশের বাইরে এতো সুন্দর একটি অনুষ্ঠান করতে তাদেরই বারবার অংশগ্রহণ কেন জরুরী? তারা কি খরচ দিয়ে মেলা চালায়? নাকী এর পিছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে? আশা করি বেবী নাজনীন ইস্যুতে বিষয়টি পরিষ্কার করার পরিবেশ তৈরী হয়েছে এবার।

দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের সদস্যদের মুখে যেভাবে খই ফোটার মতো বলতে শুনেছি, বেবী নাজনীন একজন কণ্ঠশিল্পী, তাকে নিয়ে বিতর্ক চলে না। এখন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, দেশ থেকে খ্যাতিমান সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দীন অতীতে বৈশাখী মেলায় উপস্থিত হলে তাদের বেলায় কি আচরণ করা হয়েছিল? কি হয়েছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর কালের দৃশ্য? আপনারা এতো সহজে সেসব ভুলে যান কি করে? ভুললে চলবে না কোনোটাই। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর জন্য রাস্তায় ফুল ছিটান। তবেই আমাদের রাজনীতির পথ সুন্দর ও প্রশস্ত হবে। হবে আমাদের মঙ্গলও। আমরা সব মানি তবে তালগাছ আমার বললে কখনও ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না।

টোকিও তথা জাপানে বাঙালী কমিউনিটি আয়োজিত সবচেয়ে বড় ইভেন্ট এই বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল। এই একটি আয়োজনের জন্য সারাটা বছর অপেক্ষায় থাকে জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী সহ অনেকে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রতিবছরই কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে সংশ্লিষ্টরস মাপ চেয়ে সাময়িক সমাধানও করা হয় মূচলেকা দিয়ে। যে কারণে পরবর্তীতে একই ঘটনা ঘটাতে সাহস পায় তারা। এর স্থায়ী সমাধান কাম্য।

মেলাকে ধরে রাখতে এবং জাপানের মাটিতে বাঙালির সংস্কৃতিকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে চাইলে আবেগ আর লোভ সংবরণ করে কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। যেমন, রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী কেউই মেলার কোনো দ্বায়িত্বে রাখা যাবে না। যারা একবার মেলা স্থলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত হয়েছে তাদের মেলায় নিষিঘোষণা বা পুলিশ অনুমোদন নিয়ে মেলা স্থলে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি ভালো কিছু প্রত্যাশা করা হয় তাহলে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে, সেসকল সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে জাপানে বসবাসরত বাঙালীরা তাদের সুনাম ধরে রাখতে পারবে না।

আমার প্রত্যাাশা করছি, সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবারের বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভেলে ঘটে যাওয়া বেবী নাজনীনকে নিয়ে ঘটানো ঘটনা থেকে।

লেখক : জাপান প্রবাসী সাংবাদিক

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মা হারালেন সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন
X
Fresh