• ঢাকা সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১
logo

যুগে যুগে নজরুল

রুদ্র মাহমুদ

  ২৫ মে ২০২৪, ১৪:০৯

‘আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুন মহাবিপ্লব হেতু
এই স্রষ্টার শনি মহাকাল ধূমকেতু!
সাত সাতশো নরক-জ্বালা জলে মম ললাটে,
মম ধূম-কুণ্ডুলি করেছে শিবের ত্রিনয়ন ঘর ঘোলাটে!’

ধুমকেতু কবিতায় এভাবেই নিজের ফিরে আসার কথা বলে গেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, আমাদের জাতীয় কবির ফিরে আসার দিন। । ১৩০৬ বঙ্গাব্দের আজকের দিনে পৃথিবীর রূপ দেখে ছিলেন কাজী নজরুল, সেই হিসেবে তার ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ।

বাংলা ও বাঙালির অহংকার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একদিকে অনন্ত প্রেম, অন্যদিকে বিদ্রোহ। কী কবিতায়, কী গানে, উপন্যাসে, গল্পে সর্বত্রই মানবমুক্তি প্রেমময় বাণী ও দ্রোহের বাণী। দুই-ই ঝঙ্কৃত হয়েছে জাতীয় কবি নজরুলের সৃষ্টিতে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, কুসংস্কার, হীনম্মন্যতার বিরুদ্ধেও শিখিয়েছেন রুখে দাঁড়াতে।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে (বাংলা সন ১৩০৬, তারিখ ১১ই জ্যৈষ্ঠ) মঙ্গলবার কাজী আমিনউল্লাহ্র পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় পত্নী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতকের সন্তানের নাম রাখা হয় কাজী নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশ ভারতবর্ষের বাংলা প্রেসিডেন্সির চুরুলিয়া গ্রামে (বর্তমান ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকের চুরুলিয়া গ্রাম) জন্ম নেন তিনি। বাল্যকালে কাজী নজরুল ইসলাম এলাকায় ‘দুখু মিয়া’ নামেই বেশি পরিচিত ছিল।

কাজী নজরুল ইসলাম বিস্ময়কর এক দ্রোহী সত্তার নাম। রবীন্দ্র প্রতিভার দ্যুতি-দীপ্তিতে যখন বাংলা সাহিত্যের ভুবন ছিল আলোকোজ্জ্বল, ঠিক তখনই বিদ্রোহী কবি নজরুলের ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব। যিনি রবীন্দ্র বলয়ের প্রভাবমুক্ত হয়ে বাংলা সাহিত্যকে প্রথম দেখিয়েছিলেন নতুন পথের দিশা। সৃষ্টি করেছেন এক স্বতন্ত্র ধারা। অমরত্বের আকাক্সক্ষা নিঃসঙ্কোচে পরিহার করে আজীবন সংগ্রামে, প্রেমে নিজেকে উজাড় করেছেন সার্বজনীনতায়। সবার হৃদয়ের অলিন্দে রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকার কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, চেতনা, মননে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহমান।

প্রেম, দ্রোহ, সংগ্রাম, সাম্য, মৈত্রী, অসাম্প্রদায়িকতা এবং মানবতার প্রতিটি বলয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের শুভবোধ ও অনাবিল প্রতীতি। কবি প্রতিবাদের আগুনে যেমন জ্বেলে দিতেন বিদ্রোহী পূর্ণিমা তেমনি প্রেম ও মানবতায় জেগে উঠতেন বারবার। তিনি ছিলেন দ্রোহ, বিপ্লব, বিধ্বংসী চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ এক নতুন ধারার কবি। মাত্র বাইশ বছরের সাহিত্য সাধনায় বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাকে তিনি তাঁর অফুরান সৃজনশৈলীতে সমৃদ্ধ করেছেন। কাব্যধারায় নজরুল সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেই বাংলা সাহিত্যে কিংবদন্তির আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে পরিণত হয়েছেন কালের অগ্নিবীণায়। জন্মেই তিনি অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে নিখাদ দেশচেতনা নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। নিজের দুঃখ-দুর্দশার চাইতেও দেশের পরাধীনতা তাঁকে খুব পীড়া দিয়েছিল। সমাজ বাস্তবতার অমানবিক বৈষম্য, পাশবিক সাম্প্রদায়িকতা, নির্মম শোষণ আর ব্রিটিশের নজিরবিহীন অত্যাচার-অপশাসনের বিরুদ্ধে দ্রোহের শব্দাবলিতে সাহিত্যকে করে তুলেছিলেন এক স্বতন্ত্র শক্তিশালী উচ্চকণ্ঠের মাধ্যম।

১৯২০ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত নজরুলের সাহিত্যকর্মের ব্যাপ্তিকাল। এ স্বল্প পরিসরে তিনি যে সাহিত্যকর্ম উপহার দেন তা কালোত্তীর্ণ। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিটির মাধ্যমে কবি নজরুল চিরভাস্বর। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেন তাঁর কবিতা, গানের কথার মতোই আমাদের কাছে প্রেরণার আধার, চেতনার সূতিকাগার। বিপ্লবে শক্তি জোগাতে, সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হতাশাগ্রস্তদের মনে আশার আলো জ্বালান কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি যতদিন থাকবে ততদিন কবি নজরুল চির অমর চির অক্ষয় হয়ে থাকবেন। তাঁর কবিতা ও গানের পঙ্ক্তিমালার ভেতর দিয়ে আজু জাতির ক্রান্তিকালে অশুভবিনাশী শক্তিরূপে তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত হন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিটির মাধ্যমে কবি নজরুল আজও চির ভাস্বর, চির অম্লান।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‌‘শিক্ষা-গবেষণা ও উন্নয়ন দিয়ে দাগ কাটতে চাই’
চাঁদপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী পালিত
২৪ মে : ইতিহাসে আজকের এই দিনে
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ২ সাংবাদিক আহত