শিশুদের প্রযুক্তি আসক্তি যেভাবে দূর করবেন
বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের মধ্যে অভিভাবকদের অন্যতম দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে ছেলে-মেয়েদের মোবাইল ফোন, ট্যাব বা কম্পিউটার ব্যবহারে আসক্ত হওয়ার বিষয়টি। বিশেষ করে করোনার এই সময়ে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং অনলাইন ক্লাস চালু থাকায় কম্পিউটার ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার ও আসক্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। অনেক অভিভাবকই সন্তানদের এই আসক্তি থেকে বের করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে না। করোনা পরবর্তী সময়ে নিউ নরমাল লাইফে বড় ছোট সবার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে। তাই অভিভাবকদের উচিত কীভাবে শিশুদের জন্য কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার যতটা কম করা যায়, সেদিকে লক্ষ রাখা। কীভাবে এর সঠিক ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এ কারণে বাবা মাকেও প্রযুক্তির বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।
শিশুদের কম্পিউটার আসক্তি দূর করার উপায় :
• অনলাইন ক্লাসের বাইরে যদি ডিভাইসের ওপর আসক্তি হয়ে যায়, তাহলে তার কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহার সময় বেধে দিতে হবে।
• প্রয়োজনে কিছুদিন কম্পিউটার ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রযুক্তির বিকল্প বিনোদনের মাধ্যম তৈরি করতে হবে।
• খেলাধুলার দিকে মনোযোগী করতে হবে। সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
• শিশুরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করবে সেই কম্পিউটারটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, ইন্টারনেটের বাজে সাইট বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর এমন সব ওয়েবসাইট বন্ধ করতে হবে।
• শিশুরা যাতে বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে আসক্তি না হয় সে বিষয়ে বোঝাতে হবে। বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করা বা তাদের সঙ্গে গল্প খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শিশুরা যখন কোনো প্রতিযোগিতা বা ধ্বংসাত্মক কোনো গেম খেলে বা আন প্রসেস স্ক্রিন টাচে যায় তখন তাদের মস্তিষ্কে কোপামিনেট সিক্রেশান বাড়ে। তারা কোনো কিছুকে হারিয়ে দেওয়া বা ধ্বংস করার সুখ অনুভূতি ও উত্তেজনা বোধ করে। সে ভাবতে থাকে আমি জিততে পেরেছি সবাইকে ধ্বংস করতে পেরেছি এবং এ জায়গা থেকে সে সহজে বের হয়ে আসতে পারে না। অভিভাবকদের উচিত এ ধরনের গেম থেকে সন্তানদের দূরে রাখা, খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখা। দিনের বেলা খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রম হলে শিশু কিশোররা ক্লান্ত বোধ করবে এবং রাতে দ্রুত ঘুমাবে।
অভিভাবকদের যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে-
• কম্পিউটার সিনড্রোম অর্থাৎ বেশি সময় কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করলে চোখ দিয়ে পানি পড়া, মাথা ব্যথা, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, উচ্চরক্তচাপ বিষয়ে তাদের জানাতে হবে।
• শিশুকে খাওয়ানোর সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে।
• অনেক সময় বিভিন্ন গেমস ও কার্টুন চরিত্র শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে। গেম এ বিভিন্ন মারপিট বা সহিংস দৃশ্য শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাঘাত ঘটায়। এসব থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন।
• দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার কারণে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় বাচ্চাদের আচরণগত অনেক পরিবর্তন ঘটতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
• ছবি আঁকা, গান, কবিতা লেখা নাচ বা হাতে তৈরি জিনিস তৈরির প্রতি অভ্যস্ত করুন।
• ঘুমানোর আগে বা অবসর সময়ে শিশুকে গল্প শোনাবেন।
• বাড়ির আশপাশে বা ছাদে জায়গা থাকলে তাকে বাগান করানোর অভ্যাস করুন।
• প্রয়োজন ছাড়া বাসায় বসে অভিভাবকরা ল্যাপটপ কম্পিউটারে অফিসের কাজ করবেন না। শিশুর সামনে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তাদের সঙ্গে গল্প করুন।
• ছুটির দিনে শিশুকে ঘরে বাহিরে খোলা জায়গা, পার্ক অথবা দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যান। যদি সম্ভব হয় গ্রামে ঘুরতে নিয়ে যান।
মন্তব্য করুন