কাজ নেই, ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করছে আফগানরা
কাবুলের চামান-ই-হোজোরি এলাকায় বিক্রির জন্য চারটি কার্পেট নিয়ে এসেছেন শুকরুল্লাহ। তবে তিনি একা নন, এখানে আরও অনেকেই বিক্রির জন্য অনেক জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। এই তালিকায় রেফ্রিজারেটর, সোফা, ফ্যান, বালিশ, চাদর, কাঁটাচামচ, পর্দা, বিছানা, ম্যাট্রেস, রান্নার জিনিসপত্র এবং শেলফ। খবর আল জাজিরার।
যেখানে এই জিনিসপত্র সারি সারিভাবে রাখা হয়েছে, সেখানে একসময় সবুজ ঘাসের মাঠ ছিল। কিন্তু বহু বছরের অনাগ্রহ এবং খরায় এই এলাকা এখন ময়লা এবং ধূলাময় হয়ে উঠেছে। বিক্রির জন্য যেসব জিনিসপত্র এখানে নিয়ে এসেছেন কাবুলের বাসিন্দারা, তা ২০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তারা। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে এগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
শুকরুল্লাহ বলেন, আমরা ৪৮ হাজার আফগানি (৫৫৬ ডলার) দিয়ে এই কার্পেটগুলো কিনেছি। কিন্তু এখন এগুলোর দাম উঠেছে মাত্র ৫ হাজার আফগানি (৫৮ ডলার)। গত ১৫ আগস্ট তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে আফগানরা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয় বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আফগানিস্তান জুড়ে সব ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়। আর এটিএম মেশিন থেকে টাকাও তোলা যাচ্ছে না।
তবে সম্প্রতি অনেক ব্যাংক তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যদিও সপ্তাহে ২০ হাজার আফগানির বেশি তোলা যাবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শত শত নারী এবং পুরুষ টাকা তোলার আশায় ব্যাংকের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু শুকরুল্লাহ’র মতো পরিবারগুলোর অবশ্য ব্যাংকের বাইরে লাইনে দাঁড়ানোর উপায় নেই।
তিনি বলেন, ময়দা, চাল এবং তেল কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ জোগাড় করতে হবে আমাকে। শুকরুল্লাহ বলেন, গত বছর তার পরিবারের ৩৩ জন এক বাড়িতে উঠেছে।
করোনাভাইরাস মহামারি এবং খরার কারণে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে যাওয়া এবং তালেবানদের ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই ধুঁকছিল। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি আফগানিস্তানের ৯৭ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যেতে পারে।
আফগানিস্তানের জন্য মানবিক সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে সোমবার জেনেভায় একটি তহবিল সংগ্রহের সম্মেলন আহ্বান করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এই সম্মেলন থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি, যেই অর্থের এক-তৃতীয়াংশই যাবে খাদ্য সহায়তার জন্য। আগে থেকেই আফগানিস্তানের আর্থিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ এবং দেশটি ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়তে’ পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল তারা।
আফগানিস্তানের এই সংকট সহসাই দূর হবে না। চলতি সপ্তাহে আটলান্টিক কাউন্সিলে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জেনারেল আজমল আহমাদি বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া না হলে দেশটির জিডিপি ১০-২০ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, পশ্চিমাদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দিয়েছে চীন এবং রাশিয়া সেই জায়গা করবে বলে আশাবাদী তার সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বেইজিং বা মস্কোর কেউই সেই কমতি পূরণ করতে পারেনি। তাই বিভিন্ন শহরে সংকটের এই চিত্র ফুটে উঠেছে। মানুষজন যা বিক্রি করার আছে, তা বিক্রি করে খাবার কিনছে।
দেশের আর্থিক সংকটের আরেকটি উদাহরণ হলেন আব্দুল্লাহ। ৪০ বছর বয়সের কোঠায় সাবেক এই সৈন্য আগে প্রতি মাসে প্রায় ২০০ ডলার আয় করতেন। তালেবানরা দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাজে ফিরতে বললেও আব্দুল্লাহ এখনও ডাক পাননি। তাই এখন দিনমজুরের কাজ করছেন তিনি। প্রতি কয়েকশ’ আফগানি আয় হয় তার। সেই টাকা দিয়ে মাসে ৩ হাজার আফগানি বাড়ি ভাড়া এবং খাবারের জন্য অর্থ জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, যা করা দরকার ছিল তাই করেছি আমি। আমি দেশের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু এখন আমি আমার ৮ সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য ময়লা এবং ধুলোবালির মধ্যে পণ্যবাহী গাড়ি টানছি।
এ
মন্তব্য করুন