• ঢাকা রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
logo

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ আমার নির্মাণের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে: অমি

  ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৭:৫০
কাজল আরেফিন অমি

বর্তমান সময়ের বাংলা নাটকের যে কজন তরুণ নির্মাতা রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় কাজল আরেফিন অমি। তবে খুব অল্প সময়েই যে তিনি তার নির্মাণের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। এর জন্য বেশ পরিশ্রম, মেধা এবং সততা দিয়েই নিজেকে একজন সফল নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তার অনন্য কাজ দিয়ে হয়েছেন আলোচিত এবং প্রশংসিত আবার সমালোচিতও হয়েছেন।

তার নির্মিত সিঙ্গেল নাটকের সংখ্যা আসলে এখন আর গণনায় আনা যাচ্ছে না। অসংখ্য নাটক তিনি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। এই সিঙ্গেল নাটকের বাইরে বলতে গেলে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে যে নাটকটি সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হুম পাঠক, একদম ঠিক ধরেছেন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট।দীর্ঘ এই ধারাবাহিক নাটকটির দর্শক জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে একের পর এক সিজন নির্মাণ করে যাচ্ছেন তিনি।

দর্শকরা নিজ উদ্যোগে মানববন্ধন করে ব্যাচেলর পয়েন্টের নতুন সিজন দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সিজন-৩ এর পর তিনি আবারও নির্মাণ করতে যাচ্ছেন নাটকটির সিজন-৪। এমন ইঙ্গিত দিয়ে ইতোমধ্যেই কলাকুশলীরা সামাজিক মাধ্যমে জানান দিয়েছেন। কেমন হচ্ছে এবারের সিজন? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকটি দেখা দর্শকের মনে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ও নির্মাতার সাম্প্রতিক কাজ এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কুদরত উল্লাহ।

আরটিভি: প্রথমেই জানতে চাই সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কি নিয়ে?

অমি: ইউটিউব ও ওয়েব প্লাটফর্মের জন্য বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট’র শুটিং শেষ করেছি। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি কাজগুলো দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করার। এরমধ্যে হয়তো ‘দ্য সিক্রেট’ মুক্তি পাচ্ছে। আর ‘হেল্প মি’, ‘কিডনাপার’ বাকিগুলো বিশেষ দিনে মুক্তি পাবে। আর এখন একটু বেশি ব্যস্ত ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ফোর নিয়ে।

আরটিভি: সম্প্রতি সিজন-ফোর নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি ঘোষণা দিয়েছেন আপনারা সবাই। এটা নিয়ে কিছু বলুন...

অমি: হ্যাঁ, একটু মজা করার জন্যই দিয়েছি। ওই কথাই তো বলতে যাচ্ছিলাম। দর্শকের জন্য আমরা সবসময়ই কিছু ব্যতিক্রম টাচ দিতে চেষ্টা করি, সেই জায়গা থেকেই ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট' নিয়ে যখন যেটা করি, সেটা একটু ভিন্নতা রেখেই করি। কারণ নাটকটি দেখার চাহিদা অনেক বেড়েছে। যার জন্য এখন অনেক কিছুই বলতে পারি না।

আরটিভি: কেমন হতে যাচ্ছে এবারের ব্যাচেলর পয়েন্ট?

অমি: (মুচকি হেসে) সিজন ৪ আসছে এটা নিশ্চিত করলাম। তবে এবারের সিজনের গল্পের প্লট এখনই যদি বলে দেই তাহলে তো মজাটা থাকছে না। দর্শকের আগ্রহে কিছুটা ভাটা পড়বে। তবে আপনাকে এতোটুকু বলতে পারি, গল্প, স্ক্রিপ্ট, চরিত্র, লোকেশন সব মিলিয়ে এবারের সিজন দারুণ হতে যাচ্ছে। সব কিছু গুছিয়ে খুব দ্রুতই আমরা এর দৃশ্যধারণ শুরু করব। তবে এখনও কারও শিডিউল ঠিক করা হয়নি। আমরা চেষ্টা করব এই বছরের মধ্যেই শুটিং শেষ করে প্রচার করার জন্য। তবে সেটা সম্ভব না হলে আগামী বছরের প্রথম দিকেই প্রচার শুরু হবে। এতটুকু বলতে পারি। দর্শক ভিন্নতা খুঁজে পাবেন নিশ্চয়ই। তাই আমি দর্শকদের বলব আরও কিছুদিন কষ্ট করে অপেক্ষা করতে। অপেক্ষার ফল মিঠা হয়। এবারের ফল আরও বেশি মিঠা হবে।

আরটিভি: ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির মাধ্যমে আপনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এটা বিশ্বাস করেন?

অমি: এটা আসলে আমার জন্য বলা মুশকিল। কারণ হলো, আমি তো আমার নির্মাণের সব কিছুর নির্মাতা। তাই আমার নির্মিত সব কিছুই আমার ভালো লাগে। যেটা ভালো লাগে না তা আমি বানাই না। আমি যে কাজটা করছি তা করে যদি আনন্দই না পাই তাহলে তো আমি সেই কাজটি করব না কখনও। তবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে বলতে গেলে এই ধারাবাহিক নাটকটি আমার নির্মাণের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। যার সকল প্রশংসা সৃষ্টিকর্তার এবং আমার প্রিয় দর্শকদের। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

আরটিভি: নির্মাতা অমির নির্মাণ মানেই এখন দর্শক জনপ্রিয়তা, এর পেছনে কারণ কি?

অমি: আলহামদুলিল্লাহ, বিষয়টা হচ্ছে আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যে কাজটি করেছি তা মন দিয়ে করেছি। সেটা নির্মাণ হোক আর ভিন্ন কোনও কাজ হোক। আমার বাবা-মায়ের দোয়া, মানুষের ভালোবাসা সব মিলিয়েই আমি আজ নির্মাতা অমি। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাই আমার পক্ষ থেকে সবার জন্য ভালোবাসা।

আরটিভি: কিছুদিন আগে সিলেটে গিয়েছিলেন। ঘটনা কি?

অমি: কারণ বলতে কোন শুটিংয়ের জন্য নয়। আমি ও আমার টিম মিলে অনেকদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। করোনা ও লকডাউনের মধ্যে আসলে ঘোরার মতো মুডও ছিল না। এজন্যই একটু ঘুরতে যাওয়া। কারণ আমি চাই আমার টিমের প্রতিটা মানুষ আনন্দে কাজ করুক। তাই সুযোগ পেয়ে একটু ঘুরে আসলাম।

আরটিভি: ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকটির বাইরেও আপনি একই অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে আলাদা সিঙ্গেল নাটক নির্মাণ করেন। এবারও কি এই ধরণের চমক থাকছে?

অমি: হ্যাঁ, অবশ্যই থাকছে। প্রতিবার যেভাবে থাকে এই সিজনেও থাকবে। তবে আপাতত বলছি না কি ধরণের চমকটা থাকবে। (হাসি)

আরটিভি: দর্শক নির্মাতার নির্মাণের প্রশংসা করে কিন্তু আপনার নিজের শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন?

অমি: আমি শুটিংয়ের সময় অনেক ভালো থাকি। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার চেষ্টা করি। শত ধরণের পেইন আসলেও বিচলিত হই না। অ্যাকশন বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মধ্যে অটোমেটিক এনার্জি চলে আসে। আমি শুটিংয়েও হ্যাপি মানুষ।

আরটিভি: ব্যক্তিগত জীবন কেমন যাচ্ছে?

অমি: অনেক ভালো আছি ব্যক্তিগত জীবনে। নিজের সংসার, পরিবার, কাজ নিয়ে আমি হ্যাপি। করোনার কারণে অনেকে অনেক ধরণের বিপদে পড়েছেন। কষ্ট লেগেছে, সাহায্য করার চেষ্টা করেছি নিজে থেকে। এখন পরিস্থিতি আসলে কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে। তাই মনে একটু আনন্দ কিন্তু ভয়টাও কাজ করে।

আরটিভি: বাসায় বসে নাটক কিংবা সিনেমা দেখা হয়?

অমি: চেষ্টা করি আগে নিজের দেশের নির্মাতারা কি বানাচ্ছেন, কেমন বানাচ্ছেন তা দেখার জন্য। বলতে গেলে সব ধরণের গল্প দেখার চেষ্টাই করি। দেশ ও বিদেশের গল্পও দেখি নিয়মিত।

আরটিভি: শুটিংয়ের বাইরে নিজেকে কতটুকু সময় দিতে পারেন?

অমি: আসলে তেমন ভাবে তো সময়টা বের করতে পারি না। তবে চেষ্টা করি একটানা শুটিং শেষ করে অন্তত কিছুদিন ব্রেক নিয়ে নিজের ফ্যামেলিকে সময় দিতে। কারণ ভালো কাজ করার জন্য কিন্তু মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা খুব জরুরি। তাই ফ্যামেলিতে যদি কোন প্রবলেম থাকে তাহলে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই আমার মানসিকতার উপরে চাপ পড়বে। তাই চেষ্টা থাকে শুটিংয়ের শেষে নিজের ফ্যামেলিতে সময় দিতে। যদি কোন প্রবলেম থাকে তার সমাধান দিতে। এতে আমার মানসিকতা ভালো থাকে।

আরটিভি: আপনার নির্মাণের বিশেষত্ব কি?

অমি: বিশেষত্ব তো আসলে ঠিক কি সেটা বলা আমার জন্য কঠিন। কিন্তু আমি আমার কাজটাকে বিশ্বাস করি। যা নির্মাণ করছি তা আসলে আমি আমার চোখে দেখার গল্পই বলছি। কিংবা বলতে পারেন মানুষ যা দেখে তাই আমি আমার নির্মাণে দেখাতে চাই আপাতত। যাতে দর্শক দেখে বলতে পারেন, আরে এই গল্পটা তো আমার গল্প।

আরটিভি: আপনার নির্মাণে মানুষ হাসে আবার মানুষ কাঁদে কিন্তু আপনার জীবনে এটা কখন ঘটে?

অমি: বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের সবার জীবনেই ভালো সময় আসে আবার খারাপ সময়ও আসে। এই ভালো মন্দ মিলিয়ে তো আমাদের জীবন। একটু হাসি একটু কান্না নিয়েই তো আমাদের পথ চলতে হয়। তাই আমার জীবনও কিন্তু গল্পের বাইরে নয়। আবার যদি দর্শকের কথা বিবেচনা করে বলি তাহলে তাদের মতোই কিন্তু আমার জীবন। চেষ্টা থাকে সবসময় হাসি খুশি থাকা এবং পাশের মানুষটিকে হাসিখুশি রাখার।

আরটিভি: প্রশংসার পাশাপাশি কাজের সমালোচনাকে কিভাবে দেখেন?

অমি: কাজ করলে অবশ্যই কাজের সমালোচনা থাকবে। আমি তো আর সবজান্তাও না। আমারও তো জানার কমতি আছে, মেকিংও কমতি থাকবে। আমার একটা কাজ বানানোর যে কমতি থাকবে সেটা নিয়ে অবশ্যই সমালোচনা হবেই। এটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা নিয়েই নির্মাণ করে যেতে চাই। সমালোচনা থেকে যদি মনে হয় যে সমালোচনাটা আমার জন্য পজিটিভ, তাহলে তা আমি গ্রহণ করি। আমার কাজ দেখে কোনো দর্শক যদি বলে গল্পটা ভালো হয়নি তখন আমি ভাববো এই টাইপের গল্প কেন আপনার ভালো লাগেনি। আমি তো এক ধরনের গল্পে কাজ করি না। ফ্যামিলি ড্রামা, রোমান্টিক, কমেডি গল্পে কাজ করি। তাই সমালোচনা সব কাজেই থাকবে। আমি মানুষের চোখে দেখা গল্প বলি।

আরটিভি: চলচ্চিত্রে নির্মাণ করার কোনো পরিকল্পনা আছে?

অমি: আসলে চলচ্চিত্র নিয়ে অনেকের সঙ্গেই কথা হচ্ছে। সামনে আরো কিছু মিটিং আছে। যদি সবকিছু মিলে যায় তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিবো। ফিল্ম আসলে কোনো কম্প্রোমাইজের জায়গা না। নট অনলি ফিল্ম হোক সেটা নাটক ফিকশন যাই বলুন। এখানে নির্মাণের জন্য প্রত্যেকটা সেকেন্ডের জন্য টাকা খরচ করতে হয়। ভাবনার কিন্তু শেষ নেই, আপনি যা খুশি ভাবতে পারেন তার জন্য আপনার অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। এখানে বাজেটের একটা বিষয় থাকে। বাজেট একটা বড় ব্যাপার। আমি এখন পর্যন্ত নাটক, ফিকশন বানিয়ে মোটামুটি একটা জায়গা তৈরি করেছি। এখন আমি যদি ফিল্ম বানাই দর্শকরা প্রত্যাশা করবে আমি কি বানালাম, কেমন হলো আমার ফিল্ম। যারা আমার জন্য ফিল্মটা দেখতে যাবেন তারা যেনো নিরাস না হোন এবং হলে বসে বিনোদন পান। তারা সেই কনফিডেন্সটা পায় যে অমির সেকেন্ড ফিল্মটাও হলে দেখতে আসবে। ওই জায়গা থেকে আমি ফিল্মটা বানাবো। যদি ব্যাটে-বলে মিলে যায় তাহলে আমি ফিল্মে মুভ করতে চাই। আমি আমার ফিল্মের জন্য পারফর্মার নিবো। হোক সে ছোটপর্দার কিংবা বড়পর্দার। গল্পের সঙ্গে যাকে ডিমান্ড করবে আমি তাকে নিয়েই কাজ করবো।

কেইউ/এনএস/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘ডাইনিগুলা তোরা জাহান্নামে যা’
দুঃসংবাদ দিলেন ফারিয়া
আপাতত আমাকে আর একটু তৈরি হওয়ার সুযোগ দিন : অমি
‘শেষমেশ’, যে গল্প কাঁদিয়েছে দর্শকদের
X
Fresh