• ঢাকা রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে যা বললেন কুদ্দুস বয়াতি (ভিডিও)

আরটিভি নিউজ

  ১৫ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৮
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে যা বললেন কুদ্দুস বয়াতি (ভিডিও)

লোকসংগীতের দুই কিংবদন্তি শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া ও কুদ্দুস বয়াতি। একসঙ্গে দেশে-বিদেশে বহু মঞ্চ মাতিয়েছেন তারা। বয়সের ভারের সাথে পাল্লা দিয়ে কমেছে তাদের জমজমাট পরিবেশনা। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ভাটা পড়েনি। তাইতো অসুস্থ বান্ধবী কাঙ্গালিনীকে দেখতে তার গ্রামের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন কথা ও অভিনয়ের বাচনভঙ্গি দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখা কুদ্দুস বয়াতি। কাঙ্গালিনীকে দেখতে যাওয়া এবং তার বাড়িতে কাটানো সময়টুকু ক্যামেরায় বন্দী করে দর্শক ও ভক্তদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।

নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ভিডিওতে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বাড়িতে ঢোকার রাস্তা দেখিয়ে কুদ্দুস বয়াতি বলেন, ‘সুফিয়ার বাড়ির গেট। এই গেটেই আমার যাইতে হবে। এই রাস্তা দিয়ে ভালো একটা মোটা মানুষ যাইতো না। আপনারা লক্ষ্য রাখুন, সারা বিশ্বে একটা শিল্পী কত রঙের গান গাইছে, আর আজকে তার এই অবস্থা। আমি যে সময় আবিষ্কার হইছিলাম, কাঙ্গালিনী সুফিয়াও সেই সময় আবিষ্কার হইছে। আমাদের শিল্পীরা করোনায় পইরা এখন আর পেটে ভাত নাই। আপনারা দেখেন- আমরা শিল্পীরা কত কষ্টে আছি, কত অসুবিধায় আছি।’

এরপর সেই সরু রাস্তা দিয়ে দেয়াল ঘেষে কাঙ্গালিনীর বাড়িতে ঢোকেন কুদ্দুস বয়াতি। বান্ধবী কাঙ্গালিনীকে ঘর থেকে বের করার সময় আপন মনে তিনি গেয়ে উঠেন- ‘কত কষ্ট কইরা আমি, রিকশা বাইয়া বাড়িত আহি রে...তবু বান্ধবীর মন পাইলাম না রে, বুড়া হইছি তোর কারণে...।’ (এ সময় কাঙ্গালিনীর চোয়াল ভাঙা গালে ফোকলা হাসি ফুটে ওঠে)।

কাঙ্গালিনী সুফিয়া বলেন, ‘এতদিন পরে মনে পরলো? আমি অসুস্থ আছিলাম। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসা হইলাম। এহনো অসুস্থই আছি। তবে এহন অসুস্থ ওষুধের কারণে, ওষুধ নাই। সব ফুরাই গেছে’।

বান্ধবীর আক্ষেপে সুর মিলিয়ে কুদ্দুস বয়াতি বলেন, ‘তিন-চার বছর তো আমি অসুস্থ। তবে আমি আবার এসেছি ফিরে, কাঙ্গালিনীকে নিয়ে আবার নিত্যনতুনভাবে দেশ জাগ্রত করবো। যেখানেই যাবো তুমি আমার পাশে থাকবে।’

গল্পের এক পর্যায়ে কাঙ্গালিনীর বাড়ির উঠানে বসেন কুদ্দুস বয়াতি। এসময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন কাঙ্গালিনীর মেয়ে পুষ্প। সেই আড্ডায় নিজেদের অনেক পুরনো স্মৃতি স্মরণ করেন কুদ্দুস। কাঙ্গালিনী তার কথার সঙ্গে সায় দিতে থাকেন।

কুদ্দুস বয়াতি বলেন, ‘আমার সাথীরা কেমন আছে সেটা আমার খোঁজখবর নেয়া দরকার। কারণ কেউ তো এদের খোঁজ নেয় না। চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে এরা কিভাবে গ্রামে পড়ে আছে সেটার খবর কেউ রাখে না। যখন গান হয়, তখন আমাদের যত্নের শেষ থাকে না। কিন্তু যখন গান শেষ হয়ে যায়, তখন আর আমরা সমাদরের কোন লোক পাই না। কারো কাছে টাকা বাকি থাকলে সেটা না দিয়েই পালিয়ে যায়।’ (কাঙ্গালিনী বলতে থাকেন, হ্যাঁ ঠিক ঠিক)

ভিডিওর এক পর্যায়ে- মাকে নিয়ে কিভাবে আছো? কুদ্দুস বয়াতির এমন প্রশ্নের জবাবে কাঙ্গালিনীর মেয়ে পুষ্প বলেন, ‘খুব কষ্টেই আছি। কয়েকদিন আগে সে অসুস্থ হয়ে গেছিলো। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রাখার মতো টাকা আমার কাছে নাই। যেখানেই যাই টাকা লাগে। টাকা যখন নাই তখন আর কি করার রোগী বাড়িত নিয়ে যাই। পরে আমি রোগী বাড়িত নিয়ে আইছি। আইসা (এসে) একজনের কাছ থেকে কর্জ (ঋণ/ধার) করে ওষুধ কিনছি।'

একদিন হয়তো এভাবেই অনাদরে চলে যাবেন লোকগানের এই কিংবদন্তি শিল্পী। সেদিন তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের মিছিলে অশ্রুশিক্ত শুভানুধ্যায়ীদের অভাব হবে না। সেখানে হয়তো তারাও থাকবেন যারা কাঙ্গালিনীকে ঠকিয়েছেন, তাকে ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করেছেন। কাঙ্গালিনীকে কাঙাল করে রাখা মানুষগুলো তাদের জীবন অবসানের পরপরই হারিয়ে যাবেন কিন্তু কাঙ্গালিনী রয়ে যাবেন এই বাংলায় পৃথিবীর সমান আয়ু নিয়ে। কোনোদিন যদি দুই মুসাফির গল্পটি বাস্তবে চিত্রায়িত হয়, তবে সেখানে লালন ফকিরের মতো কাঙ্গালিনীই রাজত্ব করবেন, তাকে ঠকিয়ে খাওয়া মানুষেরা নয়।

এনএস/এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাকে মুগ্ধ করেছে’
X
Fresh