ড্র করলেই সেমি ফাইনালে বাংলাদেশ
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ‘এ’ গ্রুপ থেকে শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় ম্যাচটি।
হাই ভোল্টেজ এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে বা ড্র করলে পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে। এ ক্ষেত্রে হারলে পড়তে হবে সমীকরণের হিসেবে। আর আগের দিনের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের হয়ে একটি করে গোল করেছেন হাসান বশির, মোহাম্মদ রিয়াজ ও ফাহিম আহমেদ।
বাংলাদেশ স্কোয়াড
শহিদুল আলম, ওয়ালি ফয়সাল, তপু বর্মণ, টুটুল হোসেন বাদশাহ, জামাল ভূঁইয়া, মামুনুল ইসলাম, সাদ উদ্দিন, বিশ্বনাথ ঘোষ, বিপলু আহমেদ, মাহবুবুর রহমান ও মাশুক মিয়া জনি।
আরও পড়ুন :
ওয়াই/পি
মন্তব্য করুন
এবার জোড়া দুঃসংবাদ পেলেন রোনালদো
সম্প্রতি নিজের পারফরম্যান্সে ব্যাপক আলোচনায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কয়েকদিন আগেই জোড়া হ্যাটট্রিক করেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। সৌদি লিগে রীতিমত উড়ছেন সি’আর সেভেন। তবে এমন পর্যায়ে এসেও জোড়া সুসংবাদ পেলেন রোনালদো।
সোমবার (৮ এপ্রিল) আল-হিলালের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখেন রোনালদো। একই সঙ্গে তার দলও সৌদি সুপার কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। এবার অসংযত আচরণের জন্য জরিমানার কবলেও পড়েছেন তিনি।
এদিন একের পর এক সুযোগ মিস ও অফসাইডে গোল বাতিল হওয়ায় বেশ চাপে ছিলেন রোনালদো। তার চোখে মুখে হতাশ আর বিরক্তিও দেখা গেছে। সেই চাপেই কিনা শেষমেশ মেজাজ হারালেন সি’আর সেভেন। ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে সময় ক্ষেপণ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বসেন রোনালদো। ম্যাচে এর আগেই হলুদ কার্ড দেখা রোনালদোকে ফের কার্ড দেখান রেফারি। এতে বেশ ক্ষুব্ধ হলেও এই পর্তুগীজ মহাতারকাকে লাল কার্ড নিয়ে বাধ্য হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়।
এমন আচরণে পর্তুগিজ তারকার ওপর ম্যাচ প্রতিবেদনে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রেফারি মোহাম্মেদ আল-হুওয়াশি। ফলে দুই ম্যাচে নিষিদ্ধও হচ্ছেন রোনালদো। সেইসঙ্গে আর্থিক জরিমানাও থাকছে। সবমিলিয়ে এক রাতেই রোনালদোকে কয়েকদফা দুঃসংবাদ শুনতে হলো। খবর আল রিয়াদিয়া।
শাস্তি হিসেবে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছে সৌদি ফুটবল ফেডারেশন শৃঙ্খলা কমিটি। একইসঙ্গে ২০ হাজার রিয়াল জরিমানাও করা হয়েছে। এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে দর্শকদের দিকে বাজে অঙ্গভঙ্গির কারণে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি।
প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে পিএসজিকে হারাল বার্সা
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বার্সেলোনা। শুরুর দিকে কোণঠাসা থাকলেও কাতালনাদের জাগিয়ে তুলেন ব্রাজিলিয়ান রাফিনিয়া। তার জোড়া গোলেই মূলত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
বুধবার (১১ এপ্রিল) পার্ক দেস প্রিন্সেসে প্রথম লেগে ৩-২ গোলে জয় তুলে নিয়েছে কাতালানরা।
ম্যাচের শুরুটা ছন্দহীনভাবে করলেও ধীরে ধীরে দাপট দেখাতে থাকে বার্সা। অন্যদিকে বার্সার রক্ষণে শুরু থেকেই আক্রমণ চালায় লুইস এনরিকের শিষ্যরা। তবে কাতালানদের গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের নৈপুণ্যে ফরাসি জায়ান্টদের বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট হয়।
তবে চাপ কাটিয়ে দ্রুতই চেনা ছন্দে ফেরে জাভির দল। ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে রাফিনহার গোলে লিড নেয় বার্সা। লামিনে ইয়ামালের দুর্দান্ত শট ফিরিয়ে দিলেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি পিএসজি গোলরক্ষক দোনারুম্মা। সুযোগে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া পিএসজি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফেরে। বিরতি থেকে ফিরে পিএসজিকে সমতায় ফেরান উসমান ডেম্বেলে।
এরপর লিড নিতেও সময় নেয়নি ফরাসি জায়ান্টরা। ফাবিয়ান রুইজের বাড়িয়ে দেওয়া বলে ম্যাচের ৫১তম মিনিটে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে নেন ভিতিনহা।
তবে ম্যাচের ৬২ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে বার্সেলোনাকে সমতায় ফেরান রাফিনহা।
কাতালানদের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে তার গোলে জয় নিশ্চিত করে জাভির দল।
উল্লেখ্য, আগামী মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বার্সার ঘরের মাঠে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
সেমির পথে এগিয়ে গেল আতলেতিকো
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই সফরকারীদের চেপে ধরেছিল আতলেতিকো। ফলে শুরুর দিকেই এগিয়ে গিয়েছিল দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা। তবে রক্ষণের ভুল এড়িয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে পারতো ডর্টমুন্ড।
বুধবার (১১ এপ্রিল) ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় প্রথম লেগে ২-১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ডর্টমুন্ড।
ঘরের মাঠে শুরুতেই ডর্টমুন্ডকে চেপে ধরে আতলেতিকো। এতে ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল। তবে এজন্য সফরকারীদের রক্ষণভাগই দায়ী।
গোলরক্ষকের দেওয়া পাস চাপে নাগালে রাখতে পারেননি ইয়ান মাটসেন। সুযোগ লুফে নিয়ে দলকে এগিয়ে দেন বিশ্বকাপজয়ী তারকা রদ্রিগো ডি পল।
এরপর পিছিয়ে পড়ে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায় সফরকারীরা। বিপরীতে একের পর এক আক্রমণ করে আতলেতিকো। ম্যাচের ২৫ মিনিটের মধ্যেই ৭টি শট নেয় সিমিওনের শিষ্যরা; যার তিনটিই লক্ষ্যে ছিল।
প্রবল আক্রমণের একপর্যায়ে দ্বিতীয় গোলেরও দেখা পায় স্বাগতিকরা। ম্যাচের ৩২তম মিনিটে আতোয়া গ্রিজমানের বাড়িয়ে দেওয়া পাস থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্যামুয়েল লিনো।
বিরতি থেকে ফিরে বেশ কয়েকটি আক্রমণ শাণায় ডর্টমুন্ড। তবে কাঙ্ক্ষিত গোল পেতে ব্যর্থ হয় তারা।
এরপর ম্যাচের ৮১তম মিনিটে ডর্টমুন্ডের হয়ে গোল করে ব্যবধান কমান ক্যানসারজয়ী ফুটবলার সেবাস্তিয়ান হলার। শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে আতলেতিকো।
‘ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা অবশ্যই ফর্মে ফিরবে’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এখনও খুব একটা ভালো পারফর্ম করতে পারেনি ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা। তবে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তির বিশ্বাস, অচিরেই কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ অন্য তারকারা নিজেদের ফর্মে ফিরবেন।
চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিত চারটি কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচই দারুণ আনন্দ দিয়েছে সমর্থকদের। তবে বড় আসরে যে সমস্ত বড় তারকাদের দিকে চোখ ছিল, তারা কেউই সেভাবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি।
পিএসজির তারকা স্ট্রাইকার এমবাপ্পে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৩-২ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে হতাশ করেন। অন্যদিকে মাদ্রিদ ডিফেন্ডার এন্টোনিও রুডিগার ও ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড আর্লিং হালান্ডও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মাদ্রিদের শীর্ষ গোলদাতা জুড বেলিংহাম সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ৩-৩ গোলের ড্রয়ের ম্যাচটিতে ফর্মহীনতায় ভুগেছেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রিদ বসের মন্তব্য, ‘ধৈর্য ধরো, হতে পারে প্রথম লেগে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি তারা। কিন্তু এখনও ম্যাচ বাকি আছে, তাদেরকে সময় দাও। অবশ্যই তারা স্বরূপে ফিরে আসবে।’
আনচেলত্তি আরও বলেন, ‘২০ বছর বয়সী বেলিংহাম তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে চলেছেন। যদিও মৌসুমের শুরুতে তিনি যেভাবে গোল পেয়েছেন, সেই ধারা আর ধরে রাখতে পারেননি।’
মাদ্রিদের হয়ে সব ধরনের প্রতিযোগিতায় এবার ২০ গোল করেছেন বেলিংহাম। তবে শেষ ১৩ ম্যাচে অবশ্য করেছেন মাত্র তিন গোল।
আনচেলত্তির ভাষ্য, ‘বেলিংহামের গোলের ধারা কিছুটা কমে গেছে, এটা বিস্ময়কর। কিন্তু সে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে চলেছে। মাঠে বেলিংহামের ভূমিকা একজন মিডফিল্ডারের। কিন্তু ফুটবলীয় ধারায় বলা যায় সে দারুণভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছে, কিছুই সে মিস করেনি। গোল করেছে, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছে।’
ঘটনাবহুল ম্যাচে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিতে পিএসজি
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়াটার ফাইনালের প্রথম লেগে পিএসজির ঘরের মাঠে ৩-২ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। তবে দ্বিতীয় লেগে সেই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারেনি স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ঘরের মাঠে ফরাসি ক্লাবটির কাছে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হেরেছে কাতালানরা। এতে বার্সেলোনাকে বিদায় করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে পিএসজি।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ঘরের মাঠে শুরুতে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেয় রাফিনিয়া। ২৮তম মিনিটে দারুণ সেভে ব্যবধান ধরে রাখেন মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন। বক্সের ভেতর থেকে এমবাপ্পের ডান পায়ের নিচু শট ফিরিয়ে দেন জার্মান গোলরক্ষক।
পরের মিনিটেই বার্সেলোনার লাল কার্ডের ধাক্কা। বক্সের বাইরে বিপজ্জনক জায়গায় পিএসজির বারকোলাকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন আরাউহো।
মিনিট পাঁচেক পর রক্ষণে শক্তি বাড়াতে তরুণ ফরোয়ার্ড ইয়ামালকে তুলে ডিফেন্ডার ইনিগো মার্তিনেসকে নামান বার্সেলোনা কোচ জাভি।
প্রতিপক্ষে এক জন কম থাকার সুযোগে চাপ বাড়ায় পিএসজি। ৪০তম মিনিটে তাদের ম্যাচে ফেরান দেম্বেলে। বাঁ দিক থেকে বারকোলার বাড়ানো বলে দূরের পোস্টে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। ১-১ সমতায় থেকে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে গোল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে সফরকারীরা। চাপ ধরে রেখে ৫৪তম মিনিটে আবার বার্সেলোনার জালে বল পাঠায় পিএসজি। বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে গোলটি করেন ভিতিনিয়া। পরের মিনিটে অল্পের জন্য গোল পায়নি বার্সেলোনা। বক্সের বাইরে থেকে ইলকাই গিনদোয়ানের শট পোস্টের বাইরের দিকে লাগে।
একটু পরই রেফারির একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে টাচলাইনে থাকা পানির বোতলে লাথি মারেন জাভি, কিছু একটা বলতে থাকেন রেফারিকে। বার্সেলোনা কোচকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।
৬১তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে স্কোরলাইন ৩-১ করেন এমবাপ্পে। জোয়াও কানসেলো বক্সে দেম্বেলেকে ফাউল করায় পেনাল্টি দিয়েছিলেন রেফারি।
দুই মিনিট পর প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে বক্সে পড়ে যাওয়ার পর পেনাল্টির আবেদন করেন গিনদোয়ান, তবে রেফারির সাড়া মেলেনি বরং রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখেন জার্মান মিডফিল্ডার। একই সঙ্গে ডাগআউটে বার্সেলোনার এক সাপোর্ট স্টাফ দেখেন লাল কার্ড।
ম্যাচের বেশিরভাগ সময় নিষ্প্রভ থাকা রবের্ত লেভানদোভস্কি ৭৩তম মিনিটে গোল পেতে পারতেন। বক্সের বাইরে থেকে পোলিশ তারকার বাঁ পায়ের নিচু শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
৮৯তম মিনিটে ডাবল সেভ করেন টের স্টেগেন। মার্কো আসেন্সিওর শট ঠেকানোর পর এমবাপের প্রচেষ্টাও রুখে দেন তিনি। তবে বল ক্লিয়ার করতে পারেননি বার্সেলোনার ডিফেন্ডাররা। কাছ থেকে শটে ম্যাচের শেষ গোল করেন এমবাপ্পে। দুই লেগ মিলিয়ে বার্সেলোনাকে ৬-৪ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমির টিকিট নিশ্চিত করেছে ফরাসি ক্লাবটি।
এক ম্যাচে ৩১ গোল হজম করার অনুভূতি জানালেন গোলকিপার
২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওশেনিয়া অঞ্চলের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল আমেরিকান সামোয়া। কফস হারবারে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আমেরিকান সামোয়া হেরেছিল ৩১-০ গোলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড এখনো। সেই ম্যাচে আমেরিকান সামোয়ার গোলকিপার ছিলেন নিকি সালাপু। লোকে এখনো নাকি তাকে ম্যাচটি নিয়ে জিজ্ঞেস করে। বিবিসির ‘স্পোর্টিং উইটনেস’ পডকাস্টে সেই ম্যাচ নিয়েই কথা বলেছেন সালাপু।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটির জন্য খুব দ্রুত দল গড়তে হয়েছিল আমেরিকান সামোয়াকে। বেশিরভাগই ছিলেন কিশোর বয়সি। আমেরিকান সামোয়ার ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএএস) ফিফায় অন্তর্ভুক্তি পেয়েছিল ম্যাচটি খেলার মাত্র তিন বছর আগে। সেই সময় ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৫৮ হাজার জনসংখ্যার আমেরিকান সামোয়া এমনিতেই পুঁচকে ছিল।
আর ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে ফিফা জানিয়ে দেয়, শুধু আমেরিকান পাসপোর্টধারীরাই প্রশান্ত মহাসাগরের দেশটির জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত ২০ জনের স্কোয়াডে যোগ্য খেলোয়াড় বাছতে দল উজাড়, টিকেছিলেন শুধু সালাপু। তিনি বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে যে কাউকে খুঁজে বের করতে হতো। আমরা হাইস্কুলের ছেলেদের বাছাই করেছিলাম।
সালাপুর এ কথার ব্যাখ্যা দেবে পরিসংখ্যান। আমেরিকান সামোয়ার দলে ১৫ বছর বয়সী খেলোয়াড় ছিলেন তিনজন। দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ১৮ বছর। সালাপু সেই দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ; তার বয়সই ছিল মাত্র ২০ বছর।
ফলে এই দল নিয়ে প্রথম রাউন্ডে ফিজির কাছে ১৩-০ গোলের ব্যবধানে হেরেছিল আমেরিকান সামোয়া। পরের ম্যাচে সামোয়ার কাছে হার ৮-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে হারের ব্যবধান তো ছাড়িয়ে গেল সবকিছুকে ৩১-০! ওই ৩ ম্যাচে ৫২ গোল খাওয়ার পর টোঙ্গার কাছে ৫-০ গোলের হার আমেরিকান সামোয়ার কাছে জয়ের সমান হওয়ার কথা!
খুব কাছে গিয়েও ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হওয়া অস্ট্রেলিয়া ২০০২ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে মুখিয়ে ছিল। নিজেদের প্রমাণে জিদ কাজ করছিল অস্ট্রেলীয়দের মনে। আমেরিকান সামোয়ার আগে অস্ট্রেলীয়দের সেই জিদের অনলে পুড়েছিল টোঙ্গাও। পলিনেশিয়ান দেশটিকে ২২-০ গোলে গুঁড়িয়ে আমেরিকান সামোয়ার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সালাপু জানিয়েছেন, তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোনোভাবেই ২২-০ ব্যবধানের হার অতিক্রম করা যাবে না।
গোল বন্যার ‘ফটক’ খুলেছিল ম্যাচের ৮ মিনিটে। অস্ট্রেলিয়ার ২২ বছর বয়সী স্ট্রাইকার আর্চি থম্পসন একাই করেছিলেন ১৩ গোল। ৮ গোল করেন ডেভিড জিদ্রিলিক। সালাপু জানিয়েছেন, পুরো ম্যাচে তিনি সতীর্থদের ‘সামনে এগোতে’ বলেছেন। কারণ তার সতীর্থরা বেশিরভাগ সময়েই রক্ষণভাগে জড়সড় হয়েছিলেন। এ কারণে বল দেখতে খুব সমস্যা হচ্ছিল সালাপুর।
৮৬ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার পোস্টে একবারই আক্রমণ করতে পেরেছিল আমেরিকান সামোয়া। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার মাইকেল পেটকোভিচের ম্যাচে সেটাই একমাত্র সেভ। সালাপু মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলেছে, সেটি অখেলোয়াড় সুলভ।
সালাপু জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার কোচ হলে দল ২০ গোল করার পর খেলোয়াড়দের ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত বলের দখল ধরে রেখে খেলতে’ বলতেন। হারের সেই স্মৃতি মনে সইয়ে নিতে সালাপুর প্রায় ১০ বছর লেগেছে। এ সময়ের ব্যবধানে আমেরিকান সামোয়া টানা ৩৮ ম্যাচ হেরেছে ২১৭ গোল ব্যবধানে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নেমেছে ২০৪তম স্থানেও (বর্তমানে ১৮৯)।
২০১০ সালে ডাচ বংশোদ্ভূত কোচ টমাস রনজেনকে কোচ করে আনে আমেরিকান সামোয়া। পরিস্থিতি এর পর ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর টোঙ্গার মুখোমুখি হয় আমেরিকান সামোয়া।
সালাপু জানিয়েছেন, সে ম্যাচে ‘আমাদের পুরো দল জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল’। শেষ বাঁশি বাজার পর পূরণ হলো সেই প্রত্যাশাও। টোঙ্গাকে ২-১ গোলে হারায় আমেরিকান সামোয়া—ফিফা স্বীকৃত ম্যাচে সেটাই প্রথম জয় দলটির। সালাপুকে সেদিনও আবেগ সংবরণ করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, খুবই ভালো লাগছিল। বারবার মনকে প্রবোধ দিয়েছি, ম্যাচে মনোযোগ ধরে রাখতে আবেগ সামলে রাখতে হবে।’
ম্যানসিটিকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
ঘরের মাঠে গোল হজমের ধাক্কা সামলে আক্রমণের ঝড় তুলেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সময় পর কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখায় পায় স্বাগতিকরা। এতে ম্যাচ গড়াই অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে কেউ পেল না জালের দেখা। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে কোণঠাসা হয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ বাজিমাত করলো টাইব্রেকারে। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠল কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাতে ম্যানসিটির ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয়লাভ করে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রথম লেগে ৩-৩ ড্রয়ের ফলে ৪-৪ ব্যবধানের কারণে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়।
এদিন ম্যাচের শুরুটা দারুণ হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের। ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটেই রদ্রিগোর গোলে এগিয়ে যায় স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ডান দিক থেকে আক্রমণে গিয়ে ভালভার্দেকে খুঁজে নেন বেলিংহ্যাম। উরুগুয়ে মিডফিল্ডার থেকে বল নিয়ে রদ্রিগোকে বাড়ান ভিনিসিয়ুস। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের প্রথম শট এদারসন ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি শটে জাল খুঁজে নেন।
গোল হজম করে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সিটি। ১৯তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পায় তারা। ডি ব্রুইনার জোরালো শট ঠেকিয়ে দেন লুনিন। ফিরতি বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হেড নেন হালান্ড, যেটি গোলবারে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি শটে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন বের্নান্দো সিলভা। ২৪তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারত রিয়াল। তবে ভিনিসিয়ুসের দেওয়া দারুণ পাস ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি ভালভার্দে।
২৮তম মিনিটে ডি ব্রুইনা নৈপুণ্যে আরও এক দারুণ সুযোগ পায় সিটি। তবে তার দেওয়া ক্রস ঠিকঠাক হেড নিতে পারেননি হালান্ড। ফলে সহজেই বল নিয়ন্ত্রণে নেন লুনিন। ৩২তম মিনিটে আরও একটি সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। তবে গ্রিলিসের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন দানি কারভাহাল। এতে ১-০ তে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সফরকারীরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে আক্রমণ বাড়ায় ম্যানসিটি। তার সুফলও পায় তারা। তবে অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। ৭৬তম মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার গোলে সমতায় ফিরে ইংলিশ ক্লাবটি। বদলি হয়ে নামা দোকু বল টেনে নিয়ে শট নিলে সেটি ঠেকিয়ে দেন রুডিগার। কিন্তু বক্সে থাকা ডি ব্রুইনা ফিরতি বল লুনিনের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠান। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি আক্রমণ করে তারা। তবে নির্ধারিত সময়ে গোল না হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
৯৯তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত ম্যান সিটি। তবে সিলভার দেওয়া ক্রস ফোডেনের পায়ে লেগে লুনিনের কাছে চলে যায়। অতিরিক্ত সময়ের যোগ করা সময়ে রুডিগারের বুলেট গতির ভলি উপর দিয়ে উড়ে যায়। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে সিটি। ডান দিক থেকে আক্রমণে গিয়ে বল টেনে নিয়ে বক্স থেকে শট নেন আলভারেস। যদিও লুনিন সেটি সহজেই ঠেকিয়ে দেন। পরে আর কোনো গোল না হলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
উত্তেজনার টাইব্রেকারে আলভারেস শুরুতেই স্পট কিকে সফল হন। কিন্তু রিয়ালের প্রথম পেনাল্টি মিস করেন মদ্রিচ। সিটির পরের পেনাল্টি নিতে গিয়ে লুনিনের হাতে বল তুলে দেন সিলভা। তবে রিয়ালের হয়ে এবার সফল কিক নেন বেলিংহ্যাম। তৃতীয় পেনাল্টিতে সিটির কোভাচিচের স্পট কিক ঠেকিয়ে দেন লুনিন। আর রিয়ালের হয়ে গোল করেন লুকাস ভাসকেস। পরবর্তীতে সিটির ফিল ফোডেন ও এদেরসন গোল পায়। আর রিয়ালের নাচো ও রুডিগারের পেনাল্টি মিস না হলে আনন্দে ভাসে ক্লাবটি।
গত আসরে এই মাঠেই সেমি ফাইনালের ফিরতি লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে ওঠার পর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল সিটি। পেপ গার্দিওলার দলের শিরোপা ধরে রাখার অভিযান থমকে গেল শেষ আটেই। শেষ হয়ে গেল তাদের ট্রেবল জয়ের আশাও।