ম্যারাডোনাকে ঢাকায় আনতে না পারার আক্ষেপ সালামের কণ্ঠে
‘আমার মতো খেলোয়াড়দের তার খেলা নিয়ে মন্তব্য করা খুব কঠিন কাজ। তিনি ছিলেন বিশ্ব ফুটবলের স্বপ্নের রাজা। রাজ সিংহাসন থেকে সরে গেছেন। এই আসনে কে বসবে সেই অপেক্ষাই আমরা থাকবো।’ ম্যারাডোনাকে নিয়ে বলছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি। একাধিকবার আর্জেন্টাইন জাদুকরকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল বর্ষীয়ান এই ক্রীড়া সংগঠকের। কিংবদন্তিকে নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে।
চলতি বছরই বাংলাদেশে আসার কথা ছিল ম্যারাডোনার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ঢাকায় পা রাখার কথা ছিল ‘দ্য গোল্ডেন বয়’ খ্যাত ডিয়েগোর। যদিও কোভিড-নাইনটিন অতিমারিতে ভেস্তে যায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পরিকল্পনা।
ফেডারেশনের সিনিয়র সহ সভাপতি বলেন, ‘মুজিববর্ষে আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পরিকল্পনা ছিল। তবে করোনা সব নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা শুরু করেছিলাম। চার জাতীর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ব্রাজিলের সাবেক গোলরক্ষক জুলিও সিজারকে শুভেচ্ছা দূত হিসেবে পেয়েছিলাম। বিশ্বের জনপ্রিয় দুটি ক্লাব নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে একটি ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল আমাদের। ওই ম্যাচের দূত হিসেবে সেরাদের সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনাকে নিয়ে আসা হবে। তবে আমাদের সেই আশা আর পূরণ হলো না।’
এর আগে বিশ্বকাপ জয়ী জিনেদিন জিদান এবং লিওনেল মেসি নেতৃত্বাধীন পুরো আর্জেন্টিনা দল ঢাকার মাঠ মাতিয়েছে। গেল বছরের শেষ দিকে দিনক্ষণ চূড়ান্ত না করলেও বাফুফের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, বাংলাদেশি ফুটবল প্রেমীরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন ফুটবলের মহানায়ক ম্যারাডোনাকে।
বাফুফের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে খেলোয়াড় থেকে ক্লাব পর্যন্ত সবার সঙ্গে এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে ভারতে আসার কথা ছিল ম্যারাডোনার। আমরা তার এজেন্টের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে রেখেছিলাম। সুযোগ বুঝে ম্যাচ আয়োজন করে তাকে ঢাকার মাঠে নিয়ে আসার চেষ্টায় ছিলাম।’
দেশের ফুটবলের অন্যতম প্রাণপুরুষ সালাম। ১৯৮২ সালে ঢাকা লিগে মোহামেডানের হয়ে রেকর্ড ২৭টি গোল করেছিলেন। যা দেশি ফুটবলার হিসেবে এখনও সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, ‘ম্যারাডোনার খেলা দেখার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে বল নিয়ে তিনি নিচে না তাকিয়েই এগিয়ে যেতেন। যার কারণে তাকে ঠেকানো যে কতটা কঠিন ছিল সেটা তার প্রতিপক্ষরাই বার বার জানিয়েছেন। ছিয়াশিতে দুর্বল একটি দল নিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছেন। সে সময় ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ওই ম্যাচটির কথা অবশ্যই বলতে হয়। একটি হাত দিয়ে স্বপ্নের গোল আরেকটি বিশ্বের ইতিহাসের সেরা গোল। এক ম্যাচেই এমন দুটি গোল তুলে আজীবন নিজের নাম বিশ্ব দরবারে মনে করিয়ে দিয়েছেন ম্যারাডোনা।’
আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ককে পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে দেখেছেন সালাম মুর্শেদী।
‘ম্যারাডোনাই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি যখন যেই রূপে খেলেছেন সেখানেই ছিলেন সফল। গোল করতেন আর নিয়মিত গোল করানো ছিল তার কাজ। একাই আর্জেন্টাইনদের বিশ্ব সেরার মুকুট পড়িয়েছেন। অন্যদিকে নেপোলির মতো দলকে ইতালিয়ান লিগে সেরা করেছেন। শুধু খেলোয়াড় নয় আমার চোখে নেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন সফলতম।’
মাঠের বাইরে নানা কর্মকাণ্ডের জন্য শিরোনামে এসেছিলেন ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। তবে সালাম মুর্শেদী মনে করেন বিশ্বে তার মতো এমন চরিত্র আর কখনই পাওয়া যাবে না।
‘মহাতারকা বলেই তাকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা ছিল। যারা বিশ্ব ভূখণ্ডে বেঁচে আছেন খেলোয়াড়, অধিনায়ক ও ব্যক্তি হিসেবে তাকে নানা রূপে দেখেছেন। ম্যারাডোনা একটি ঘটনা, ম্যারাডোনা একটি ইতিহাস। পৃথিবীতে অনেক ফুটবলার এসেছেন, অনেকেই আসবেন। তার মতো দ্বিতীয় কেউই আসবেন না।’
ওয়াই
মন্তব্য করুন