কলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা
এক বছর মেয়াদি ফসল কলা। বারো মাস লাভের অঙ্ক কষে কৃষকের ফল দাঁড়াচ্ছে লোকসানের ঘরে। বাগানেই পেঁকে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কলা। স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বাগানের পাশে। মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য কলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে গবাদি পশুও। কলার দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভাবাচ্ছে চাষিদের। চাষে ভাটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। নীরবে কাঁদছেন কৃষক। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।
ঘাটাইল উপজেলার আয়তনের এক তৃতীয়াংশই হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বারোমাসি এ ফসলের ফলন হয়েছে বাম্পার। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর কলার চাষ হয়েছে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এখানকার কৃষকের ফলানো কলা পুষ্টির চাহিদা মেটায় রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। এদিকে কলার বাজার পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন : বিরোধী দলে ছিলাম, থাকতে চাই : জি এম কাদের
উপজেলার পাহাড়ী সাত ইউনিয়ন সাগরদিঘি, দেওপাড়া, ধলাপাড়া, লক্ষিন্দর রসুলপুর, সন্ধানপুর ও সংগ্রামপুর এসব এলাকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরি ফসল হচ্ছে কলা। সাগরদীঘি এলাকায় কলার ২০ জন বড় চাষি রয়েছেন। অধিকাংশ চাষিই চাষ করেন সাগরকলা। তাদের একজন নাসির সিকদার।
তিনি জানান, এ বছর ৮৫ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। গত বছর কলার যে ছড়া বিক্রি হয়েছে ৫২০ টাকায়, এ বছর একই ধরনের ছড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, লাভ নয়, আসলের ঘর থেকে লোকসান হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। ২৯ বছর ধরে কলা চাষের সঙ্গে জড়িত তিনি। তার ভাষ্য, কলার বাজারে এমন ধস এর আগে দেখেননি।
কৃষক আব্দুল কাদের জানান, এ বছর তিনি ১০১ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। কলা ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন গার্মেন্টসে এখন আর নাকি নাস্তার সঙ্গে কলা দেওয়া হয়না। আর কিছুদিন আগে হরতাল এবং অবরোধের কারণে সঠিক সময়ে তারা কলা বিক্রি করতে পারেননি। তাই কলা বাগানে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : বিরোধী দল গঠন নিয়ে যা বললেন নিক্সন চৌধুরী
তার ভাষ্য, গরু-ছাগলেও কলা খাচ্ছে না। সব মিলিয়ে প্রায় তার ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
কথা হয় কলা ব্যবসায়ী হারুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় সব গার্মেন্টসে টিফিন বন্ধ রয়েছে। কলার বড় একটা চালান আমরা গার্মেন্টসে দিতাম, এখন আর তা হচ্ছে না। ঢাকার পাইকারি বাজারেও খুব একটা টান নেই কলার। কলার দাম গত বছর যা ছিল, এ বছর তার অর্ধেকে নেমে এসছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, টাঙ্গাইল জেলায় মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলা হচ্ছে কলা চাষের জন্য বিখ্যাত। কলা এমন একটা ফল যা সারা বছরই লাগে। প্রকৃতপক্ষে আমরা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। বাজারটা নির্ভর করে সাধারণত মার্কেটিং পলিসির ওপর। কৃষকদের বাঁচানোর জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:২৩