• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অমর্ত্য সেন ও ড. ইউনূসের মামলা : দুটি ভিন্ন শিষ্টতার পরিচয়

মো. ইলিয়াস হোসেন

  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩৪
মো. ইলিয়াস হোসেন,
লেখক : মো. ইলিয়াস হোসেন

এশিয়ার পাশাপাশি দেশ ভারত ও বাংলাদেশ। দুই দেশের দুই অর্থনীতিবিদ। অমর্ত্য সেন ও ড. মোহাম্মদ ইউনূস। দুজনই বাঙালি এবং নোবেল বিজয়ী। তাদের মধ্যে আরও একটি সাদৃশ্য হলো সাম্প্রতিক সময়ে তারা মামলার মুখোমুখি হয়েছেন।

অমর্ত্য সেন, যার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ করেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আরেকদিকে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করার অভিযোগে তাদের করা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তাদের মধ্যকার আচরণগত ও অভিযোগ মোকাবিলার পন্থার বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।

কিন্তু মামলা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে দুজনের মধ্যে বেশ বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। অমর্ত্য সেন যে শিষ্টতার পরিচয় দিয়েছেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস সেখানে ব্যর্থ হয়েছেন।

১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক একরের কিছু বেশি জমি ইজারা নিয়েছিলেন অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেন। পরে সেই জমিতে নিজের বাসভবন ‘প্রতীচী’ নির্মাণ করেন অমর্ত্য সেন।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের তৎকালীন কর্তৃপক্ষ আশুতোষ সেনকে ১ দশমিক ২৫ একর জমি ইজারা দিয়েছিল। কিন্তু অমর্ত্য সেন প্রতীচী নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কিছু জমি নিয়েছেন বাড়ি নির্মাণের জন্য। বর্তমানে তার বাসভবন সংলগ্ন জমির পরিমাণ ১ দশমিক ৩৮ একর। অর্থাৎ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দশমিক ১৩ একর জমি বাড়তি দখল করেছেন, এই অভিযোগ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমি খালি না করলে তাকে উচ্ছেদ করা হবে জানিয়ে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

পরবর্তীতে বীরভূমের মহকুমা আদালত গত বছরের ৬ মের মধ্যে অমর্ত্য সেনকে ওই জমি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। অমর্ত্য সেন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন।

নোবেল বিজয়ী একজন অর্থনীতিবিদ হিসাবে তিনি ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে দেশের ভিতর বা বাহির থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটি না করে আদালতের প্রতি দ্বারস্থ হয়েছেন এবং আদালত কিছুদিন পূর্বে বিশ্বভারতীর দাবি খারিজ করেছেন। এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি তার ব্যক্তিগত শিষ্টাচার ও দেশের আইনের প্রতি আস্থা বিশ্ববাসীর কাছে প্রদর্শন করেছেন।

অপরদিকে, ছুটি নগদায়ন এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের বিভিন্ন বকেয়া পাওনার দাবিতে ২০১৬ সালে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ১৪ কর্মী। পরে বকেয়া পাওনা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ৯৩টি মামলা করেন একই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্মীরা।

ঢাকার শ্রম আদালতে সব মিলিয়ে ১০৭টি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। তিনি আদালতের উপর আস্থা না রেখে ব্যক্তিগত প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়েছেন। তার এই প্রচেষ্টার অন্যতম অংশ হলো হয়রানির অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর চিঠি।

এটি করার অধিকার তার রয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি দেশের আইনি কাঠামোকে বিশ্ব দরবারে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নিজের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অমর্ত্য সেন এখানে ব্যতিক্রম। আর ইউনূস তার কাজ সমাধায় অনেক কিছুই করছেন।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছিলো। এই অভিযোগে অর্মত্য সেনকে নোটিশও দিয়েছিলো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এবার আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়ে গেল সেই নোটিশ।

আর ইউনূস কী করেছেন? তথ্য বলছে, বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার। সে হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা। এভাবে নিজের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টির জন্য দেশের টাকা বাইরে পাচার করছেন ইউনূস।

এতেই প্রমাণিত হয়, কার শিষ্টাচার কেমন? কে কতবড় অর্থনীতিবিদ। একজন দেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখেছেন আরেকজন দেশের অর্থ পাচার করে বিশ্বের বড় বড় ব্যক্তিদের নিজের পক্ষে আনার জন্য টাকা খরচ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন।


লেখক : প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়াল
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আজ স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস
মঙ্গলবার স্থায়ী জামিন চাইবেন ড. ইউনূস
কোথাও আমরা আইনের শাসন পাচ্ছি না : ড. ইউনূস
X
Fresh