• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় শিক্ষাক্রম

মো. শাহরিয়ার শফিক

  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:০৩
মো. শাহরিয়ার শফিক
লেখক : মো. শাহরিয়ার শফিক

জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের অন্যতম হাতিয়ার শিক্ষা। তবে যুগের চাহিদা ও পরিবর্তিত বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষাব্যবস্থায়ও এসেছে পরিবর্তন। ফলে প্রাচীন গুহাবাসী শিকারি ও আহরণজীবী মানুষের শিক্ষার সাথে কৃষিজীবী মানুষের শিক্ষার তফাত দেখা যায়, কৃষিজীবী মানুষের থেকে ভিন্নতর হয় শিল্পবিল্পব যুগের শিক্ষার বিষয় ও পদ্ধতি।

অনানুষ্ঠানিক গুরুগৃহকেন্দ্রিক শিক্ষা থেকে খোলনলচে রূপান্তর ঘটে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবর্তিত হয় পঠন-পাঠন পদ্ধতি। একুশ শতকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চতুর্থ শিল্পবিল্পবের বাস্তবতায় তাই আরও একবার বাঁকবদল ঘটে শিক্ষার।

নতুন শতকের উপযোগী অভিযোজনক্ষম এবং রূপান্তরমূলক দক্ষতা সমৃদ্ধ নাগরিক সৃষ্টির লক্ষে পৃথিবীর ১০২টি দেশ ইতোমধ্যে তাদের শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করেছে।

এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও তাদের শিক্ষাক্রম সংস্কারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন নির্ভর এই শিক্ষাক্রমে সমন্বয় ঘটেছে আধুনিক শিখন চিন্তা ও প্রক্রিয়ার যেখানে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন, এর ভিত্তিতে চিন্তন, তথ্য আহরণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে পারবে।

শিখনের বিষয়বস্তুকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে দেখা, অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাদক্ষতা, গাণিতিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, সমাজ ও পরিবেশ বিষয় জ্ঞান ও দক্ষতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও কর্ম, নৈতিক মূল্যবোধ, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি সামগ্রিক বিষয়ে সমন্বয়ে ঘটেছে, যা ক্রমসম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশে সহায়ক হবে।

কিছু অভিভাবক ভয় পাচ্ছেন যে নতুন শিক্ষাক্রমের অনুসৃত পদ্ধতির বিজ্ঞান শিক্ষার পরিসর কমে যাবে বা পরীক্ষা নির্ভর পদ্ধতি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় অনাগ্রহী হয়ে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীতটাই হবে।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক পদ্ধতিতে একেবারে শিশুকাল থেকে যে পদ্ধতিগত অনুসন্ধান ও বিষয়গত বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে তারা বেড়ে উঠবে তা তাদের জ্ঞান চর্চার বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আরও বেশি বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলবে।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক এই শিখন পদ্ধতির ফলে তারা সহজেই অনেক বিষয় শিখতে পারবে যেটা শত পাতার তথ্য ও তত্ত্ব মুখস্থ করে অর্জন করা সম্ভব হতো না। তাছাড়া এ ধরনের তাত্ত্বিক জ্ঞান একটি নির্দিষ্ট সময় পরে ভুলে যায় যা তার বাস্তব জীবনে কোন কাজে আসে না। কিন্তু অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়ার পথটি দেখিয়ে দেয়, ফলে সে নিজের নিজের শেখার প্রক্রিয়াটি চালিয়ে নিতে পারে।

এখন যেকোনো বিষয় অনলাইনে সার্চ করে মুহূর্তেই পেয়ে যেতে পারি। ফলে তথ্য-তত্ত্বকে মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করে রাখার চাইতে বরং এসব তথ্য ও তথ্য কীভাবে অনুসন্ধান করতে হবে, কিভাবে সেগুলো কাজে লাগানো যাবে, কীভাবে সমস্যার সমাধান খোঁজা যাবে, কীভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা যাবে, কীভাবে সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে যৌথভাবে কাজ করা যায় এসব বিষয় শেখা খুব জরুরি। একুশ শতকের দক্ষতা বলতে এসব দক্ষতাকেই বোঝায় যা নতুন শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মুখস্থ নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে গাঠনিক মূল্যায়ন কৌশল অনুসরণ করা হয়েছে যেখানে নিয়মিতভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদের শিখন ঘাটতি নিরূপণ এবং সেসব ঘাটতি দূর করতে প্রয়োজনীয় নিরাময়ের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। ফলে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর পরিবর্তে প্রত্যেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত শিখন যোগ্যতা অর্জনে সক্ষম হবে।

এছাড়া নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে সাময়িক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামষ্টিক অর্জনও মূল্যায়ন করে তাদের অর্জনের স্বীকৃতি দেয়া এবং প্রত্যেকের সবল দিকগুলো চিহ্নিত করার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও পেশা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব হবে। ফলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম স্মার্ট জনসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।

লেখক : প্রভাষক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

daraz
  • মুক্তমত এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh