• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

আরটিভি নিউজ

  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:৫২
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা
ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘ভাষার অধিকার থেকে স্বাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনের যে ইতিহাস সেই ইতিহাসে গর্জে ওঠা যে শব্দমালা তারমধ্যে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের উচ্চকণ্ঠ উচ্চারিত হয়েছিল। সেই থেকে শুরু করে অদ্যাবধি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির পেছনের মূল কারিগর খেটে খাওয়া সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ।

তিনি বলেন, মাতৃভাষার আলিঙ্গন, ব্যবহার- সেটি ঘরের হোক, বাইরের হোক, ভাষা সুরক্ষায় সাধারণের যে দরদ ও আন্তরিকতা সেটিই বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান ভিত্তি। ভাষাভিত্তিক আলোড়নটি স্বাধিকারের পর্যায় নিয়ে যাওয়ার মূলকারণ ভাষার মধ্যে যে হৃদ্যতা সেটি অনন্য। সেটি ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে প্রতিটি শব্দমালায় এবং উচ্চারণে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। সে কারণেই সাধারণ মানুষ সেটি গ্রহণ করেছে। জাতীয়তাবাদী শক্তির মূল জায়গায় ভাষার শক্তি ছিল প্রগাঢ়।

মশিউর রহমান আরও বলেন, আমাদের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ আধুনিকতাকেও গ্রহণ করেছে। সামরিক শাসনকে বর্জন করেছে। পুঁজিবাদের ছোবল, অন্য ভাষার ছোবল, অন্য সংস্কৃতির হানা এসব থাকবে ঠিকই কিন্তু সাধারণের শক্তির কাছে সবসময় সবকিছু পরাভূত হবে। এমনকি সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিক শাসনও।

তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নতুন প্রজন্মকে মানবিক ও দক্ষ করে গড়ে তুলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অবশ্য পাঠ্য করে থেমে থাকেনি। যখনই আমরা বুঝতে পেরেছি ভাষার ব্যবহারের শক্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংযোগ আছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয় রয়েছে- তখনই আমরা আইসিটিকে পাঠ্য করেছি। আমরা উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে অবশ্য পাঠ্য করেছি। নতুন নতুন বিষয়কে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করছি। ভাষার শক্তি দিয়ে আধুনিকতাকে, বিজ্ঞানকে গ্রহণ করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এই আলোড়নটি তৈরি করতে চায়। এর মূল লক্ষ্য বিজ্ঞানমুখী, প্রযুক্তিমুখী, আধুনিক এক ভিন্ন বাংলাদেশ তৈরি যেটি আগামী দিন বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।

কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বলেন, শুধু দেশ নয়, ভাষা সুরক্ষায় সারাবিশ্ব নিয়ে ভাবতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ দেশের ভাষা ব্যবস্থা ভাষাকে প্রভাবিত করছে। একটা দেশে যখন অনেকগুলো ভাষা থাকে তখন সিঁড়ির মতো তাদের ধাপে ধাপে অবস্থান থাকে। একটা আরেকটার পাশে লেগে থাকে। কিন্তু আমাদের মাথার উপর চেপে আছে ইংরেজি। ভাষাকে ব্রাহ্মণত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। জাত মুছে দিতে হবে। ভাষার ক্ষমতায়নের দ্বারা এটি করতে হবে। নানা জায়গায় ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভাষার লিপি থাকতে হবে। সাহিত্য থাকতে হবে। এর ডিজিটাইজেশন থাকতে হবে।

যত রকম শিক্ষা আছে সেটি মাতৃভাষায় নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাতৃভাষায় সমস্ত রকম শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারি, আইন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সকল শিক্ষা আমার মাতৃভাষায় শেখাব। অর্থাৎ প্রমিত ভাষায় শেখাব। ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ অনেক ছোট ছোট দেশ এটা করেছে। কিন্তু ইংরেজিটাও শেখাব সেটা যখন দরকার হবে। আমাদের ইচ্ছা থাকলে এটা সম্ভব। বাংলাদেশের পক্ষে এটা অসম্ভব হবে না। কারণ বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে অনেক উন্নতি করেছে।

ড. পবিত্র সরকার আরও বলেন, আমরা ভাষাকে যেন জগাখিচুড়ি না করি। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রমিত বাংলা ভাষার প্রতি আমাকে তাকাতে হবে। আমার ভাষা অন্যদের দ্বারা দমিত হচ্ছে কিনা বা কাউকে দমিত করছে কিনা সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। ভাষা নিয়ে আমাদের বহুমুখী লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে আমরা সকলে শামিল আছি। ভাষাকে ভালোবেসে একসঙ্গে যদি এই লড়াই করি তাহলে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।

প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম ভাষা সৃষ্টির আন্দোলন সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বাধীন বাংলাদেশ ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বীজ রোপিত হয়েছিল।

সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দাবদাহ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের ক্লাস বন্ধ   
সোনাইমুড়ীতে ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত
বিকেলে প্রো-ভিসি নিয়োগ, রাতে স্থগিত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রো-ভিসি মিজানুর রহমান
X
Fresh