• ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অনৈতিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ালে আল্লাহ যে শাস্তি দেবেন

আরটিভি নিউজ

  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪১
ফাইল ছবি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। তরতর করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। আর প্রতি বছরই রমজান ঘনিয়ে এলে তা কয়েকগুণে বেড়ে যায়। এতে সেহরি ও ইফতারে বিশেষ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোজাদারদের। এ মাসে এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেন মানুষ সব ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে রোজা এলেই মানুষকে ভাবনায় পড়তে হয় দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম নিয়ে।

আর এই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মজুতদারি। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে বেশি লাভের আশায় অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ক্রেতাদের সংকটে ফেলেন তারা। অথচ অধিক মুনাফার প্রত্যাশায় পণ্য মজুত করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, হারাম। ভোক্তাদের জিম্মি করে অর্থ উপার্জন সামাজিকতা ও মানবিকতা বিবর্জিত। উপরন্তু এতে উপার্জিত অর্থ হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না।

এসব কাজ জাহান্নামে যাওয়ার প্রধান কারণ হবে। উপরন্তু এতে উপার্জিত অর্থ হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুত রাখে, সে আল্লাহ-প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ২০৩৯৬)

ভোক্তাদের জিম্মি করা জায়েজ নয়। কেউ তা করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে, মজুতদারি না করে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করল, এ ব্যবসা পরিণত হবে ইবাদতে। তার উপার্জন আল্লাহ তা’আলা বরকতময় করে দেবেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক প্রদান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর পণ্য মজুতদকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ২/৭২৮)

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাখে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন নাজেহাল হয়ে ওঠে। এদিকে ইসলামে খাদ্য মজুদ করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

হজরত মামার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ফাজালা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারি করে না’ (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না।’ মজুদদার ও অধিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে এদের পাপী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পণ্যদ্রব্য মজুদ করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’ (মিশকাত)

অত্যধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্যদ্রব্য মজুদ করা, সরিয়ে রাখা, অতিরিক্ত পণ্য ধ্বংস করা শরিয়ত গর্হিত কাজ। এই মর্মে রাসুল (সা.) ভীতি প্রদর্শন করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকে রাখে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর মহামারি ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেবেন’ (ইবনে মাজা, বায়হাকি)।

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘মজুদদার খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি, যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায় তা হলে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে আর যদি দাম বেড়ে যায় তা হলে আনন্দিত হয়।’ (মিশকাত)

এমনিভাবে দালালি বা মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে দ্রব্যের দাম বাড়ানোর জন্য হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মূল্যবৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে আগুনের হাঁড়িতে বসিয়ে শাস্তি দেবেন’ (তাবরানি : ৮/২১০)।

নবী কারিম (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসেবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’ (তিরমিজি: ১২১০)

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! নিশ্চয় পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদের অনেকেই মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। আর তারা আল্লাহর পথে বাধা দেয় এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে ওগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর ওগুলো দিয়ে তাদের ললাটে, পার্শ্বদেশে এবং পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে, আর বলা হবে- এটি হচ্ছে ওটাই, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন নিজেদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ কর।’ (সূরা তওবা, ৩৪-৩৫)।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যে কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দেন
নিত্যপণ্যের মতোই লাগামহীন ওষুধের দাম
‘আ.লীগের মতো ককটেল পার্টিতে বিশ্বাসী নয় বিএনপি’
ধ্বংস, মৃত্যু আর ক্ষুধার মধ্যেই গাজাবাসীর ঈদ
X
Fresh