• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বসন্ত এসে গেছে

লামিয়া তানজিন মাহমুদ

  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:১১
বসন্ত
ছবি : সংগৃহীত

ছোটোবেলায় প্রিয় ঋতু নামে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে বেশকিছু রচনা লেখা থাকতো। একেক বইতে একেক পছন্দের ঋতু। খুব কম লেখনেই বসন্ত ঋতুকে কারও প্রিয় ঋতু হিসেবে পড়া হয়েছিল। প্রচুর রঙের আগমনী বার্তার মাসটি ক্ষণজন্মা বলেই হয়তো কেউ সাহস করেনি প্রিয় নামে তালিকাভুক্ত করতে। ‘আনন্দ বিষয়টা দীর্ঘ সময়ের জন্য’ এটা ভাবতেই বেশি ভালো লাগে কী না আমাদের!

এরপর অনেকদিন। তখন টিভি চ্যানেলে বিটিভি বাদেও আরও কিছু চ্যানেলের আবির্ভাব হচ্ছিলো। নতুনত্বের খোঁজে নতুন চ্যানেলে ঢু মারলেও আমরা যারা ছোটো ছিলাম, তাদের জন্য বিটিভিই ছিল একমাত্র অবলম্বন। হঠাৎ একদিন-

আর শীত শীত লাগছে না। ঠান্ডা বাতাসে আর কাঁপছি না।
কী করে? চারিদিক ফুরফুরে। আজ বসন্ত।

সিসিমপুরে এই গানটি শুনেই বসন্তের সাথে আরেক দফা পরিচয় হয়ে যায় নব্বই দশকের শিশুদের। অনেকের তো মুখে মুখেই ছড়িয়ে গেলো বসন্ত নিয়ে করা গানটি। অনেক গানের মধ্যে নাম লেখালো সিসিমিপুরের ‘আজ বসন্ত’ গানটিও। বসন্ত নিয়ে এমন উন্মাদনার কী কারণ হতে পারে, সেটা ওই বয়সে টের না পেলেও এই বয়সে এসে ঢের টের পাচ্ছি অনেকে।

একটু বড়ো হয়ে খেয়াল করলাম, ঠিক ফেব্রুয়ারিটা আসলেই কিছু একটা ঘটে যায় পুরো প্রকৃতিতে। কেমন যেন মন কেমন করা এক অনুভূতি। না ভালো, না খারাপ।আসমান থেকে জমিনে ঘিরে থাকে কিছু ব্যাখ্যাহীন আবহাওয়া। একটা ক্ষণিকের মায়া ঢেলে দিয়ে আবার হারিয়ে যাওয়া বাংলার এক অভিমানি ঋতুর নামই যেন বসন্ত।

এরপর অনেকদিন বসন্ত নিয়ে আক্ষেপ দেখা হয়নি। লাল, গোলাপি, কমলা কিংবা হলুদরঙা শাড়িতে নারী দেখা হয়েছে। একই রঙের পাঞ্জাবিতে পুরুষ দেখা হয়েছে, রমনায় নাগরদোলা দেখা হয়েছে, রমণীর খোঁপায় কিংবা হাতে ফুলের গাঁজরাও দেখা হয়েছে। দেখা হয়নি কেবল বসন্ত নিয়ে আক্ষেপ।

আমার মনে আছে, যেবার কলেজের গণ্ডিতে পা রাখলাম সেবারই বাংলা প্রথম পত্রে বসন্তের সাথে আরেক দফা আলাপ হয়েছিল আমাদের। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটা পড়ে প্রথমবারের মতো একইসাথে আনন্দ এবং দুঃখের সাথে পরিচিত হয়ে মিশ্র অনুভূতিতে ভাসছিলাম। কবিতার লাইনগুলো এরকম-

“কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-

গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোন মতে।”

কী আক্ষেপ! কী বেদনা! এত আকাঙ্ক্ষা আর কোন লেখনে বহুকাল পাওয়া হয়নি। মনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছিল, বসন্ত মানে কি আসলেই এতটা রিক্ততা?উত্তর আর জানা হয়নি। কলেজের বেঞ্চটার পাশে রাখা ডাস্টবিনে ওই প্রশ্ন ফেলে রেখেই আরেকটু বড়ো হওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করেছিলাম। বড়ো-রা বলতেন, এক জীবনে নাকি সব জানতে নেই।

তবে কি শুধু বিষাদই ছড়ায় বসন্ত? এ প্রশ্নে মনে পড়লো বসন্তের বিখ্যাত গানটি।

এই বসন্তে অনেক জন্ম আগে
তোমায় প্রথম দেখেছিলেম আমি
হেঁটেছিলেম নিরুদ্দেশের পানে
সেই বসন্ত এখন ভীষণ দামি
আমার কাছে, তোমার কাছে,
আমার কাছে, বসন্ত এসে গেছে

কী আনন্দ! প্রথম দেখার অপার সুখানুভূতি! এই অনুভূতি ভোলার নয়। এক জোড়া চোরা চাহুনির বিপরীতে এক জোড়া লাজুক দৃষ্টিই যেন কাঙ্ক্ষিত উত্তর। আর ভাগ্যের লিখনে মানুষটাকে যদি নিজের করে পাওয়া হয় তো বসন্তের আনন্দ দ্বিগুণ হতে কতক্ষণ? ভাঙনের সুর যেমন বাজে, মিলনের আবহও তো তেমন তৈরি হয়। এ যেন প্রকৃতিরই আরেক খেলা। শীত যতটা কেড়ে নেয়, বসন্ত যেন ততটাই ফিরিয়ে দেয়। হওয়ারই তো কথা, প্রকৃতি যে সমতায় বিশ্বাসী।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
২০ বছরে সিসিমপুর
ইন্টারনেটে শিশুদের নিরাপদ থাকতে শেখাবে সিসিমপুর
ফিনল্যান্ডে উদযাপন করা হলো ‘বসন্ত উৎসব’
শুরু হচ্ছে সিসিমপুরের নতুন মৌসুম, সিজন ১৬ 
X
Fresh