• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বয়স বাড়লে কেন ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়!

লামিয়া তানজিন মাহমুদ

  ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৯
বন্ধু দিবস
ছবি : সংগৃহীত

চলছে বন্ধু দিবস। পার্টি, উইশ, হ্যাংআউট, সেলফিতে যখন জমজমাট অনেকের প্রাঙ্গণ, তখনই কেউ না কেউ একা বসে উদাস হয়ে ভাবছেন- কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়?

সেই তো! বন্ধু কেন হারিয়ে যায়? বন্ধু কি হারানোর কিছু? বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের সান্নিধ্য থেকে সরে আসার যে বিষয়টা, এটা যেন অনেকেরই বোধগম্য হয় না। তাই বলে কি বন্ধু ধরে রাখার মতন কিছু? বন্ধু তো এমনিই থাকে, থাকবে সুখে-দুঃখে। তা না হয়ে হারায় কেন? আর মেঘই বা আসে কেন হৃদয়-আকাশে?

বড় হতে হতে যে ভারিক্কিভাব ভর করে আমাদের মধ্যে, সে বোধে আমরা টের পাই, ধীরে ধীরে ক্রমহ্রাসমান হচ্ছে আমাদের বন্ধুত্বের গণ্ডি। কারো ব্যস্ততায়, কারো বিয়ে, কারো বিদেশযাত্রা, কারো হুট করে খোঁজ না দিয়ে হারিয়ে যাওয়ায় বন্ধুত্বের বলয় থেকে বেরিয়ে আসছি অনেকেই। বাড়ছে একাকীত্ব আর অন্যের বন্ধুত্ব দেখে সীমাহীন যন্ত্রণা। কিন্তু গবেষণা কী বলছে? কেন আমরা বন্ধু হারাই?

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। অনেক জায়গায় এর বাস্তব প্রয়োগ দেখা যায়। কিছু সার্কেলে কাউকে দেখবেন খুব খরুচে; কাউকে খাওয়াচ্ছে বা উপহার দিচ্ছে। সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই পয়সা ছিটানো বন্ধ হয়ে যায়, দেখবেন বন্ধুদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এসব বন্ধু থেকে সাবধান। আপনাকে খেয়াল করতে হবে, আপনার খরচের বহর দেখে কোন বন্ধু এগিয়ে আসে। যদি কেউ আপনার সুসময় দেখেই এগিয়ে আসে, তবে একটু সাবধান।

তবে, সবাই কি সুসময়ের বন্ধু? অবশ্যই নয়। এমনও বন্ধু আছে, না খাওয়ালেও পাশে থাকে। সবকিছুতে দৌঁড়ে আসে। এমন বন্ধু পেয়ে গেলে যত্ন নিয়ে আগলে রাখুন। দোহাই আপনার, পেয়ে বসবেন না। অনেক ভালো মানুষও নিজেকে গুটিয়ে ফেলে শুধু এই কারণে যে, তাকে কেউ পেয়ে বসে ব্যবহার করছে! নিজেকে ব্যবহৃত হতে দেখে নিশ্চয়ই আপনার ভালো লাগবে না।

সৃষ্টির প্রতিটা মানুষই আলাদা। বাহ্যিক অবয়বে নারী-পুরুষ আলাদা করা গেলেও ভেতরটা কেবলই বুঝে নেওয়া লাগে। প্রতিটা মানুষ ভেতর থেকে আলাদা। বাইরে থেকে তাকে চেনা অসম্ভব। যে মানুষটা আপনার বন্ধু হয়ে জীবনে এসেছে সেও আলাদা। তার চিন্তাভাবনা, ধারণা সবটা আপনার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। এ কারণে কি বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিন্ন করবেন? একদমই না। তার মতামতকে প্রাধান্য দিন, সম্মান দিন। নিজের মতামত সবখানে চাপিয়ে দেবেন না। আপনি কোনো কিছুতে ভালো বোঝেন বলেই অন্যকেও তা বুঝতে হবে, এই ধারণা থেকে একটু একটু করে পিছিয়ে আসুন।

আমাদের অনেকে বেশ জাজমেন্টাল। ও এরকম, সে ওরকম। ও এটা করেছে, নিশ্চয়ই এই কারণে করেছে। এই যে এত এত নেতিবাচকতা মাথায় নিয়ে আরেকজনের বদনাম করে বেড়ানো, এ কিন্তু স্বভাবের একটা বিরাট দোষ। হোক না কেউ একটু অন্যরকম, ক্ষতি কী? প্রত্যেকেই তো আলাদা। সবাই তো এক হবে না। কাউকে তার মতো মানিয়ে নিতে না পারলে সমাধানও আছে; তা হলো- দূরত্ব বাড়ান, এড়িয়ে চলুন৷ তার দোষ নিয়ে মাতামাতি করা ভালো কিছু নয়। অন্তত ভালো ব্যক্তিত্বের মানুষ এ কাজ করেন না। একজন ভালো মানুষ একইসঙ্গে ভালো ব্যক্তিত্বের মানুষও বটে।

বন্ধুদের সার্কেলে প্রত্যেকে সমান স্মার্ট নয়। কেউ গুছিয়ে থাকতে জানে না। কেউ সাজতে জানে না। কারও হয়তো ম্যাচিং সেন্স ভালো না। কেউ কথা বলতে কিংবা বাড়াতে জানে না। কেউ মিশতে জানে না। কেউ হয়তো কথা শুরু করলে থামেই না। এগুলো দোষের বিষয় নাকি গুণের বিষয়, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কেন বন্ধুত্ব নষ্ট করবেন?

থাকুক না মানুষগুলো নিজের মতো। কয়েকটা দিনের দুনিয়া। যে যেভাবে খুশি, থাকুক। কিছু বিষয় পরিবর্তন না হলেও কোনো ক্ষতি নেই। সবসময় স্ট্যাটাস মেনে চলতে হবে, এমনও তো কথা নেই। থাকুক কেউ নিজের খুশিমতো। কেউ আপনার বন্ধু মানে তাকে পূর্ণ হতে হবে সবদিক দিয়ে, তা কেন? কিছু অপূর্ণতা থাকুক। সব পূর্ণতাই সুন্দর তা কিন্তু নয় বরং মাঝে মাঝে কিছু অপূর্ণতা পূর্ণতার চেয়েও অনেক সুন্দর হয়।

লেখক : কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, আরটিভি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গরমে বন্ধুদের নিয়ে মধুমতিতে মাশরাফীর জলকেলি
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রেড ক্রিসেন্টের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন: খাদ্যমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন সম্পর্কে প্রবাসীদের জানানোর আহবান 
X
Fresh