• ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিশ্ব ক্যানসার দিবস

ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশ-এর আলোচনাসভা ও র‌্যালি

আরটিভি নিউজ

  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৫
ছবি : সংগৃহীত

আজ বিশ্ব ক্যানসার দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশ। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলা শহরে ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশ’র উদ্যোগে র‌্যালি ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। মূলত, ক্যানসার সচেতনতা, ক্যানসার পরবর্তি পদক্ষেপ ও ক্যানসার রোধে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে সারাদেশে সংস্থাটি নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সাত্তার হলরুমে ক্যানসার মুক্ত বিশ্ব গড়তে একতাবদ্ধ প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধান আলোচক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করছেন ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ হুমায়ুন কবীর।


এই দিনটি ‘ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থার নেতৃত্বে উদযাপন করা হয়, যা পূর্বে ‘ক্যানসারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন’ নামে পরিচিত ছিল। এই সংস্থার সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত, যার ১৭০টিরও বেশি দেশে প্রায় দুই হাজার সদস্য রয়েছে।
দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য হলো মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই কর্কট রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাহায্য করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করা। ক্যানসার একটি বড় রোগ, যার সময়মতো চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রতিবছর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক মানুষ এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বিশ্বে প্রতিবছর ৮২ লাখ মানুষ ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে সাড়ে ১০ কোটি মহিলা ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় এ মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যানসার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যানসার বা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের বেশি নারী, তবে খুব অল্পসংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান।

যেসব কারণে ক্যানসার হতে পারে :
আমাদের জীবনাচরণে এবং খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সেটি একটি কারণ। এ ছাড়া কারো পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে হতে পারে। কারো যদি ১২ বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়, তারাও ঝুঁকিতে থাকে। সেই সঙ্গে তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা যায়, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।

এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাচ্ছেন বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।একইসঙ্গে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না।

স্তন ক্যানসার সাধারণত দুভাবে শনাক্ত করা যায়- ১. স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ও ২. রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে। স্ক্রিনিং আবার দুভাবে করা যায়- ১. নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা ও ২. ডাক্তার বা নার্সের সাহায্যে পরীক্ষা করা।

স্তন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও প্রধানত দুটি পদ্ধতি রয়েছে- ১. মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স-রে ও ২. স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম।

তাছাড়া এমআরআই এবং বায়োপসির মাধমেও স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা হয়ে থাকে।স্তন ক্যানসার শনাক্তকরণের পরবর্তী পর্যায় হলো এর সঠিক চিকিৎসা করা। স্তন ক্যান্সারের যে চিকিৎসাগুলো প্রধানত রয়েছে তা হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি।

সার্জারির মধ্যে আবার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। তবে কোন ধরনের চিকিৎসা রোগীর জন্য উপযুক্ত, তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন। যেহেতু স্তন ক্যানসারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য স্তন ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যানসার কথাটি শোনামাত্র মানুষের মনে সৃষ্টি হয় এক বিভীষিকার। মহিলাদের কাছে তেমনি এক বিভীষিকার নাম স্তন ক্যানসার। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে একজন স্তন ক্যানেসারে আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন মৃত্যুবরণ করেন। স্তন ক্যানসারে এ পরিসংখ্যান খুবই আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান হয়নি, তাই স্তন ক্যানসারের সঠিক হার জানা যায়নি। তবে এ হার যে খুব কম নয় তা বলা বাহুল্য।

যে কারণে স্তন ক্যানসার হতে পারে :
স্তন ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনো সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি, তবে মহিলাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। বংশগত বিষয় : স্তন ক্যানসারের একটি কারণ হলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত জিন। এসব জিনের মধ্যে রয়েছে BRCA 1 এবং BRCA 2.

চিকিৎসকরা মনে করেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সারের রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে এবং সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যান্সারের লক্ষণগুলি নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায়, এটি কতটা বড় এবং এটি কাছাকাছি কোনও অঙ্গ বা টিস্যুকে কতটা প্রভাবিত করে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তারা বলেন, ক্যানসার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এটা কী ধরনের রোগ, কী কী কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধের জন্য কী কী করণীয় সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।

ক্যানসার প্রতিরোধী যেসব খাবার খেতে হবে :
অনেক বেশি আঁশযুক্ত খাবার ক্যানসার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। এর ফলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে। মটরশুঁটি, তাজা ফল, আস্ত শস্য এবং ফ্ল্যাভনয়েড, ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ সবজি খেতে হবে। পেঁয়াজ, রসুন, পেঁয়াজ পাতা ইত্যাদি সবজিগুলো ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‌্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে এবং ক্যানসার কোষের বিভক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে। এ ধরনের সবজি কাঁচা খেলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সয়াবিন ও অন্য সয়া পণ্য যেমন- টফু ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু মিষ্টি স্বাদের ও রিফাইন্ড সয়া পণ্য যেমন- সয়া দুধ ও সয়া তেল এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন চিনি ক্যান্সারের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। চিনি ক্যানসার জিনকে সক্রিয় করে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে।

করতে হবে শারীরিক ব্যায়াম:
যেসব নারীরা দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করেন তাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি যারা ব্যায়াম করেনা তাদের চেয়ে কম। প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হলে শুধু ক্যানসারযুক্ত গোটা ও আশপাশের কিছু অংশ অপারেশন করে ফেলে দিলে এবং পরবর্তীকালে রেডিওথেরাপি দিলে রোগী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘১০ বছরে ১০০ ক্যানসার-কিডনি রোগীর চিকিৎসা করিয়েছি’
ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার সুরভি আর নেই
ক্যানসারের টিকাও সম্ভব করতে পারে নতুন প্রযুক্তি
ক্যানসার আক্রান্ত অভিনেত্রী আফরোজার পাশে দাঁড়ালেন ফারহান
X
Fresh