বছরে ৪ লাখ জনবল নেবে কানাডা
কানাডায় ফেডারেল নির্বাচন একেবারে নাকের ডগায়। চলতি মাসের ২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। ইতিমধ্যে চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার প্রচারণা। রাজনৈতিক ইশতেহারও ঘোষণা করেছে দলগুলো।
বিশ্ব মহামারীর এই সংকটময় মুহূর্তে কানাডার হঠাৎ নির্বাচনের পাশাপাশি আচমকা যুক্ত হয়েছে আফগান শরণার্থী সংকট। আফগানিস্তানে তালেবান শাসকদের প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে ট্রুডো সরকার ইতোমধ্যেই ২০ হাজার আফগান শরনার্থীকে কানাডায় নিয়ে পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিনে প্রায় ৪ হাজার আফগানকে বিমানযোগে কানাডা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে আরো আফগান শরণার্থী নিয়ে আসার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
কানাডার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশটির ইমিগ্রেশন পলিসি ফেডারেল নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কানাডা দিন দিন আরো বেশি অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই কম। উপরন্তু বয়স্ক লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে অনেক বেশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী দরকার। বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে অনেক খরচ করতে হচ্ছে। কারণ কানাডার স্বাস্থ্য খাতের সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করে। আর সরকারের এই অর্থের যোগান হয় জনগণের দেয়া ট্যাক্স থেকে।
করোনা মোকাবিলায় এবং দেশটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে ডাবল ভ্যাকসিনেটেড করার বিষয়ে কানাডার সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। বিশ্ব মহামারীর সময়ে কানাডার লং টার্ম কেয়ার হোমগুলোতে যে পরিমান প্রাণহানি ঘটেছে এবং সেখানে জনবলের যে অভাব তা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বিশ্ব মহামারীর সময়ে কানাডিয়ানদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালানোর জন্য কানাডায় জনবলের তা প্রকটভাবে ধরা পড়ে। ফলে কানাডা প্রতি বছর কমপক্ষে ৪ লাখ দশ হাজার নতুন ইমিগ্রান্ট আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করেছে। কানাডার ইতিহাসে এযাবতকালের সবচেয়ে বেশি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা এটি। একমাত্র ১৯১৩ সালে কানাডাতে ৪ লাখ ১ হাজার ইমিগ্রান্ট আনা হয়। কানাডিয়ানদের স্বাস্থ্য সেবাসহ ইনফরমেশন টেকনোলজি, ফুড সেক্টর, এগ্রোফুড এবং ফার্মিংসহ অন্য সব ক্ষেত্রেই কোভিড-১৯ এর ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কানাডার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চায় সরকার। এজন্য নতুন জব সৃষ্টিতে বেশি বেশি সংখ্যায় ইমিগ্রান্ট আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
মহামারী পরবর্তী কানাডার চলমান ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করার জন্য নতুন ইমিগ্রান্টদের চাকরি পাওয়া এবং সেটেলমেন্টে বিশেষ সহযোগিতা করতে হবে। ইমিগ্রেশন এন্ড শরণার্থী কাউন্সিল, সেটেলমেন্ট অর্গানাইজেশন, গবেষক, ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল এবং ফেডারেল গভমেন্ট এসব বিষয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নারী, শিশু এবং শরণার্থীদের জন্য আরো অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা তৈরী হওয়া দরকার। বিসনেস ইমিগ্রেশন ঢেলে সাজানো দরকার। ২০১৪ সালের পরে কোনো আধুনিক বিসনেস ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া না থাকায় এবং কুইবেক ইনভেস্টর প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায়, ফেডারেল স্টার্ট আপ ভিসা বা উদ্যোক্তাদের ভিসার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কানাডা অনেক বিসনেস ইমিগ্রান্টদের হারাচ্ছে।
এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে পিএনপির মতো ইন্ডাস্ট্রি এন্ড অকুপেশন স্পেসিফিক ড্র হতে পারে। স্পাউসল এন্ড ফ্যামিলি স্পনসরশিপ প্রক্রিয়াকে তরান্নিত করা প্রয়োজন। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এবং টেম্পোরারি ফরেন ওয়ার্কারদের ভিসা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরী। বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগান শরণার্থীদের নিয়ে আসার এবং পুনর্বাসনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
কানাডার ইমিগ্রেশন পদ্ধতি প্রতিনিয়ত আধুনিক এবং পরিবর্তিত হচ্ছে। এক্সপ্রেস এন্ট্রি এবং মাল্টিইয়ার ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু করে কানাডা বেশি সংখ্যক ইমিগ্রান্ট আনার সদিচ্ছার প্রমাণ রেখেছে। বিশ্ব মহামারীর এই সংকটকালে কানাডা যেভাবে তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু রেখেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
লেখিকা: মাহমুদা নাসরিন, প্রিন্সিপাল কনসালট্যান্ট, ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, ২০৫/৩০৯৮ ড্যানফোর্থ এভেনিউ, টরেন্টো, শিক্ষক ও সমাজকর্মী। সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ও কিং খালেদ বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব। nasrinmahmuda8@gmail.com
মন্তব্য করুন