• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় কী?

স্বাস্থ্য ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৭:২৫
রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় কী?
রমজান মাসে ডায়াবেটিস রোগীর করণীয় কী?

এখন চলছে পবিত্র রমজান মাস। এ সময় ডায়াবেটিস রোগীদের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। রোজার সময় তাদের ঔষধ খাওয়া, জীবন যাত্রার ধরন, ব্যায়াম করার সময় কখন এবং কেমন হবে। রোজার সময় যেহেতু আমাদের খাবারের সময়সূচী পরিবর্তন হয়ে যায় তাই তার উপর নির্ভর করে ঔষধের মাত্রা বা ইনসুলিনের মাত্রারও কিছুটা পরিবর্তন চলে আসে। এ বিষয়ে একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ তুলে ধরা হলো-

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা রাখতে পারবে কী?
ডায়াবেটিস হলে রোগী রোজা রাখতে পারবে না এ কথা সঠিক নয়। যে সকল ডায়াবেটিস রোগী শুধুমাত্র খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখেন তারা রোজা রাখলে স্বাস্থ্য-ঝুঁকি নেই। যারা মেটফরমিন, সিটাগ্লিপটিন, ভিলডাগ্লিপটিন বা পায়োগ্লিটাজন এই ঔষধ গুলো খাবেন তাদেরও সমস্যা হবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যারা সালফোনাইল ইউরিয়া বা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাসসেমিয়া হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। যারা সালফোনাইল ইউরিয়া জাতীয় ঔষধ সকালে খান, সঙ্গে মেটফরমিন খান, তাদের ক্ষেত্রে মেটফরমিনটা রাতের খাবারের সময় নিতে হবে এবং সালফোনাইল ইউরিয়া ইফতারের সময় নিতে হবে এবং যারা সালফোনাইল ইউরিয়া সকালে ও রাতে দুই বেলা খেতেন, তাদের ক্ষেত্রে রাতের ডোজটির অর্ধেক সেহরির সময় খেতে হবে। কারণ পুরো ডোজ খেলে একটা বিশাল সময় প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার কারণে রক্তে সুগারের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে ডোজগুলোকে ভাগ করা হয়। যেমন- শর্ট অ্যাক্টিং, ইন্টারমিটেন্ট অ্যাক্টিং, মিক্সড (শর্ট অ্যাক্টিং + ইন্টারমিটেন্ট অ্যাক্টিং) এবং লং অ্যাক্টিং।

যারা শর্ট অ্যাক্টিং ইনসুলিন তিন বেলা খাবারের আগে নিচ্ছেন তাদের বেলায় ওষুধের মাত্রা বা ডোজ পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই। তবে এবারের রোজা যেহেতু প্রায় ১৫ ঘণ্টার মতো তাই দুপুরে যে ডোজ নিতেন তার অর্ধেকটা ইফতারের পর রাতের খাবারের আগে নিতে হবে। যারা মধ্যম বা ইন্টারমিটেন্ট অ্যাক্টিং নিচ্ছেন শর্ট অ্যাক্টিং’র সঙ্গে তারা সকালের ডোজ সেহরির আগ দিয়ে অর্ধেক মাত্রায় নিবেন। আর যারা লং অ্যাক্টিং বা একবেলার ইনসুলন নিচ্ছেন সেটা আগের নিয়মেই রাতের খাবারের আগ দিয়ে নিতে পারেন।

কারা ঝুঁকিতে আছেন?
ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়ম করে সুগার নিয়ন্ত্রণ না রাখলে ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতায় পড়বে। যেমন রক্তের সুগারের স্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া, আধিক্য বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিস, থ্রম্বো এম্বোলিজম, শরীরে পানি শূন্যতাসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যাদের রোজার আগের গত তিন মাসের এইচবিএ১সি (HbA1c) নিয়ন্ত্রণে নেই, তারা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

এছাড়া যারা রোজার এক বা দুই মাস আগে কিটো এসিডোসিস-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যাদের আরো অন্যান্য কো-মরবিডিটিস রয়েছে যেমন- স্ট্রোক, হার্ট-ফেইলর, ডায়ালাইসের রোগী, যার কিডনির রোগ রয়েছে, অত্যধিক বয়স্ক, অসুস্থ বা লম্বা সময় ধরে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, লিভারের সমস্যা, ক্যান্সারের রোগী, তীব্র পেপটিক আলসার তাদের বেলায় ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্তন্যদানকারী মা বা প্রেগন্যান্ট মহিলা যারা আছেন, তারা যদি পুরোপুরিভাবে সুস্থ থাকেন, তারা রোজা রাখতে পারেন তবে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

যেসব রোগী রোজা রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তাদের রোজা শুরুর একমাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেয়া উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও খাবারের দুই ঘণ্টা পরপর (মোট ৪ বার) রক্তের গ্লুকোজ, খালিপেটে রক্তের লিপিড, লিভার, কিডনি, হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা, ইউরিনে সুগার ও এলবুমিনের পরিমাণ এবং এইচবিএ১সি (HbA1c) ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিতে হবে। আপনার ঔষধের মাত্রা ও রুটিন চেকআপসহ সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা নির্ধারণ করতে পারবেন আপনার ডাক্তার যিনি আপনার শরীর, জীবন ধারণ, অভ্যাস, খাবার মেন্যু, ব্যায়ামের সময় ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত।

রমজানে রোজা রাখা ইসলামের একটি অপরিহার্য ইবাদত। ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিস রোগী যেন নির্বিঘ্নে ফরজ কাজটি সম্পাদন করতে পারে সে জন্য রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ের সমান অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একটি করোনামুক্ত ঈদের আনন্দে পৃথিবীটা ফিরে পাক তার চিরচেনা রূপ, সেই দিনের প্রত্যাশা।


ডা. মৌসুমী আফরিন ইভা
কনসালটেন্ট ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান
ডায়াবেটোলজিস্ট ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট
হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল স্পেশালাইজড চেম্বার
ও মালিবাগ মেডিনোভা, মেডিকেল সার্ভিস
(ফ্রন্ট লাইন ফাইটার মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট)
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এসআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • পরামর্শ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বগুড়ার ৩ উপজেলার ২২২ ভোট কেন্দ্রের ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ
অ্যান্ড্রয়েডে ভয়ংকর ত্রুটি, ঝুঁকিতে শতকোটি ব্যবহারকারী
গাজীপুরে তিন উপজেলায় ১৫৪ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে আসছে জাতীয় নির্দেশিকা
X
Fresh