করোনাকালে এবার অন্যরকম ঈদ
প্রতিবছর ঈদের সময় কেনাকাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি থাকে তুঙ্গে। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে পাল্টে গেছে এবারের ঈদের দৃশ্যপট। হারিয়ে গেছে ঈদের চিরচেনা আমেজ। করোনার এমন সংকটময় সময়ে অন্যরকম এক ঈদ উদযাপন করছে বিশ্ববাসী।
দেশের অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে এবারের ঈদ উদযাপন হচ্ছে ভিন্নভাবে। একেতো লম্বা ছুটি তার ওপর ঈদের আনন্দ নেই। তবে এর মাঝেও কেউ কেউ ব্যতিক্রম সময় কাটাচ্ছেন।
কেন এবারের ঈদ অন্য সময়ের থেকে ভিন্ন
ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিকটি হলো ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা। ঈদ মানেই পরস্পরে হাতে হাত মেলানো, কোলাকুলির মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সেটি করা যায়নি। এমনকি হাত ধরে বাড়ি নিয়ে গিয়ে সেমাই বা মিষ্টি খাবার দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করাও যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে দেশের বেশিরভাগ শপিংমল ও বিপণিবিতানই বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে কিছু দোকান খুললেও নিতান্ত দরকার ছাড়া কেউ যায়নি।
ঈদে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বেরাতে যাওয়া, বাহারি সব খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার রীতি বহু পুরোনো। কিন্তু সামাজিক-শারীরিক দূরত্ব্ব নিশ্চিতের বিষয়ে বারবার সতর্ক করছে ডিএমপি ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
অন্য সময়ে উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্তের অনেকেই ঈদের ছুটি উপভোগ করতে চলে যেতেন বিদেশে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ। প্রতিটি ঈদে তরুণদের কাজই ছিল নিজ এলাকায় কিংবা আশেপাশের এলাকায় গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, গল্প করা, বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু এই ঈদে সবকিছুতেই পড়েছে করোনার প্রভাব। নেই তার কোনো সুযোগ।
অনেকেই বাইরে গিয়ে প্রিয়জনের জন্য ফুল কিনতেন। ঈদ উপলক্ষে নানাবিধ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করত টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। কিন্তু এবার অনেক আয়োজন বাতিল হয়েছে।
তবে এবারের ঈদ ব্যতিক্রম হলেও এতে আপনি নিজেই ঈদের আমেজ নিয়ে আসতে পারেন।
সামাজিক দূরত্ব
এবারের ঈদে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। যদি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে হবে। এছাড়া আত্মীয়স্বজনের কাছে গেলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। বাইরে থেকে বাড়িতে আসার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
ঘরবাড়ি সাজানো
লকডাউনের এক ঘেয়েমি কাটাতে বাড়িকে সাজান। ঈদকে উৎসবমুখর বানাতে এটি অনেক সাহায্য করবে।
নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ
লকডাউনের কারণে অনেকেই শপিংমলে গিয়ে নতুন পোশাক কিনতে পারেননি। অনেকেই আবার শপিংয়ের অর্থ দান করে দিয়েছেন গরিবদের মধ্যে। তবে ঈদের দিন পুরোনো হলেও নিজের পছন্দের পোশাকটি পরুন। অথবা নতুন পোশাক থাকলে সেটি পরুন। এতেও ঈদের আমেজ কিছুটা পাওয়া যাবে।
দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে নামাজ
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মসজিদে নামাজ আদায় করুন। আপনার নিকটস্থ মসজিদের ঈদ জামাতের সময় জেনে নিন। এবার প্রায় সকল মসজিদেই একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তাই খুব ভিড়ের মধ্যে নামাজ আদায় না করে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে নামাজ আদায় করুন।
অনলাইনে শুভেচ্ছা বিনিময়
সামাজিক দূরত্বের কারণে এবার ঈদে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া যাবে না। তাই অনলাইন ভিডিও কল, মেসেঞ্জার, ইমু, হোয়াটসআপ, ভাইবারের মাধ্যমে পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন।
খাবার গ্রহণে সতর্কতা
হয়তো ঈদে আপনার বাড়িতে অনেক খাবারের আয়োজন করা হবে। তবে বেশি খেয়ে পেটে অসুখ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
এস/পি
মন্তব্য করুন