মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে দেখুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
হাত বাড়ালেই যেন শ্বেতশুভ্র হিমালয়! আর একটু এগোলেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলা যাবে চোখ জুড়ানো মন ভোলানো বরফ ঢাকা পর্বতটাকে। হিমালয় মানেই এক বিস্ময়কর রহস্য, ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য! বিভেদের কাঁটাতার পেরিয়ে যাদের পর্বতটাকে দেখার সৌভাগ্য হয় না তারা এখন দেশের মাটিতে বসেই দেখতে পারেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতমালা হিমালয়কে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখা মেলে এই পর্বতশৃঙ্গটির।
জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকে ভারতের কাঞ্চনজঙ্ঘা আর হিমালয়ের দূরত্ব খুব কাছেই।
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে দাঁড়িয়ে বা আর একটু এগিয়ে বাংলাবান্ধা গিয়ে উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে তাকালেই চোখে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর হিমালয়ের মন হরণকারী দৃশ্য।
মনোরম আবহে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসুদের মনে এক অপার্থিব ঘোরের সৃষ্টি করে।
তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মহানন্দা নদীর পারে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায় সূর্যের বর্ণিল আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত এভারেস্ট শৃঙ্গ।
তাই বিকেল হলেই ডাকবাংলো এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে চলা মহানন্দা নদীর তীরে বসে প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডা।
সন্ধ্যা নামার আগে ভিন্ন রূপের মহানন্দা হৃদয় হরণ করে পর্যটকদের। হিমালয় থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস দোলা দিয়ে যায় সবার মনে।
বাংলার আকাশে যে সূর্য ওঠে ভোরে, সন্ধ্যায় আবার সেই সূর্য ডুব দেয় প্রতিবেশী দেশের হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার আড়ালে।
হাজার বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জনপদ হিমালয় কন্যাখ্যাত পঞ্চগড়। পুণ্ড্র, গুপ্ত, পাল, সেন ও মুসলিম শাসনামলের ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ জনপদ। সেইসঙ্গে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
তেঁতুলিয়ায় রয়েছে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট। এখানেই অবস্থিত বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের একমাত্র সম্ভাবনাময় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। সেইসঙ্গে রয়েছে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা। যাতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক এই বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন অতিক্রম করে ভিনদেশে গমন করেন। নিত্যদিন দেশের জিরোপয়েন্ট দেখতে ভিড় লেগেই রয়েছে পর্যটকদের। ভিড় করছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরাও।
পঞ্চগড়ের অনন্য আরেক দিক হলো এখানকার সবুজের নিসর্গ চা বাগান। দেশে একমাত্র এখানেই সমতল ভূমিতে চা চাষ হয়। জেলার চা বাগানগুলোতে সবুজারণ্যে চা গাছ থেকে পাতা তোলার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে আসে। পর্যটকদের কাছে পঞ্চগড়ের আকর্ষণীয় জায়গা ও স্থাপনার মধ্যে আরো রয়েছে মোঘল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বার আউলিয়ার মাজার, সনাতন ধর্মের সতীর গোড়ালী সমৃদ্ধ বোদেশ্বরী মন্দির, ভূগর্ভস্থ পাথর তোলার দৃশ্য, ১৫০০ বছরের পুরাতন সুবিশাল মহারাজার দীঘি, দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন ভিতরগড় দূর্গনগরী ও দেশের একমাত্র পাথরের যাদুঘর ‘রক্স মিউজিয়াম’। এছাড়া এই এলাকার মাটির নিচে পাথর থাকায় এই জেলার ভূগর্ভস্থ পানি অত্যন্ত ঠাণ্ডা ও সুস্বাদু।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৪৫৭ কিলোমিটার। পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার আর তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা ১৭ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সরাসরি বাস যায় তেঁতুলিয়ায়। হানিফ, শ্যামলী ও কেয়াসহ বিভিন্ন পরিবহনের এসব বাসে ভাড়া নেবে মাত্র ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা। এছাড়া পঞ্চগড় থেকে সারাদিন তেঁতুলিয়ায় বাস চলাচল করে। ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য অটোরিকশা, অটোভ্যান ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর মাইক্রোবাসের ভাড়া ২,৫০০-৩,৫০০ টাকা।
পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন কিংবা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
যেখানে থাকবেন
পঞ্চগড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় যেকোনো আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। তবে মহানন্দা নদীর তীরে ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা।
বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে। এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। আর এখানে থাকতে হলে ৪০০ টাকাতেই রুম পেয়ে যাবেন। এছাড়া অতিথিপরায়ণ উত্তর জনপদের মানুষ অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে গ্রহণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পঞ্চগড়ে আসা পর্যটকদের। সেইসঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে কড়া নজরদারি।
আরকে/জেবি
মন্তব্য করুন