• ঢাকা শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
logo
মানুষ বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে: ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি
‘আমার গুলিডা বাইর কর, আমি বাঁচবাম’, চলে গেলেন সেই মাজেদুল
‘হাসপাতালে খালি কইছে, ও আম্মা, আমার গুলিডা বাইর কর, আমি বাঁচবাম। ওই ভাইজান, আমারে বাঁচাও; ও আব্বা আমারে বাঁচাও। পইলা দিন গুলিডা বাইর করলে আমার পুত মরলো না অইলে। ডাক্তরেই আমার ছেড়ারে মারছে।’  আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার গামারিতলা ইউনিয়নের পূর্ব গামারিতলা দড়িয়াপাড়া গ্রামে মাজেদুল ইসলামের মা রেজিয়া খাতুন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম, কিন্তু হুজুররা নিয়ে গেছে। সেদিন (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দিয়ে এলাকার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল মাজেদুল। আমাদের এলাকা শান্ত জানাইছিলাম। তখন বলেছিলাম, বাবা তুমি আন্দোলনে যাইও না, ঘরে থাইকো। হুজুরদের সঙ্গে ঘরে বসে থাকতে বলেছিলাম। বেলা আড়াইটার দিকেও কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিকেলে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই।’ জানা গেছে, মাজেদুল ইসলাম গাজীপুরের মাওনা ওভারব্রিজের কাছে আলহাজ আলাউদ্দিন জামিয়া কোরানিয়া আহাদিয়া মাদরাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র ছিলেন। গত ৫ আগস্ট কোটা বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিজের মাদরাসার কাছেই সেদিন বিকেল চারটার দিকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নাভির নিচে একটি গুলি ও পায়ে ক্ষত হয়। গুলিবিদ্ধ মাজেদুলকে ওই দিন সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাজেদুলের পায়ের ক্ষতের চিকিৎসা করে পরদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়। কিন্তু তার পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। গত ৭ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যায় মাজেদুলের পেটের ভেতরে একটি গুলি আটকে আছে। ওই দিন আবারও তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১০ আগস্ট বিকেলে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। জ্ঞান না ফেরায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাজেদুলের বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আশা ছিল, ছেলে আমার জানাজা পড়বে, কিন্তু ভাগ্যে মিলল না। ছেলের জানাজা আমাকেই পড়তে হলো। আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু লাশ হইয়া ফিরল। ছেলে যে মারা গেল, বিচার চাই। বিচার চাইলে, কেইস করতে হয়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, কোনো কেইস করি নাই।’
ময়মনসিংহে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতার নামে মামলা
আওয়ামী প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রিন্স
গফরগাঁও পৌরসভার মেয়রকে গণপিটুনি, অতঃপর...
শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
অবিলম্বে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে: প্রিন্স 
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, শেখ হাসিনার পতন ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রথম অর্জন। এখন প্রশাসনের ভেতরে থাকা আওয়ামী লীগের জঞ্জাল পরিষ্কার করে প্রশাসনকে নির্বাচনমুখী করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিজয় ধরে রাখতে হলে রাজনৈতিক দলের সরকারে আসতে হবে। তাই আগামী তিন মাসের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে ছাত্র-জনতার বিপ্লব জনগণের চোখ খুলে দিয়েছে। ভালো কিছু ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে।  রোববার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মিলনায়তনে বিএনপির বিভাগীয় যৌথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই শেখ হাসিনা দেশে আসুক, তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তার অহংকারের কারণে দেশের আজ এই অবস্থা। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হিন্দুদের মিছিলে ঢুকে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। সীমান্তে লাখ লাখ হিন্দু ভারতে যেতে অবস্থান নিয়েছে বলে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকবে হবে। অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। তাই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তাদের শেল্টার দেওয়া যাবে না। তারেক রহমান রাষ্ট্র মেরামতে যে রূপরেখা তৈরি করেছেন, তা জনগণ গ্রহণ করেছে। এ সময় ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রিন্স বলেন, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, নারী-শিশু, কৃষকসহ সবাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। অথচ পতনের দুদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছিল, শেখের বেটি পালিয়ে যায় না। শেখ হাসিনা খুনি, তার শরীরে রক্তের দাগ। দিনের ভোট রাতে করে, ডামি নির্বাচন করে উন্নয়নের নামে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। উপমহাদেশে তার মতো স্বৈরাচার আর নেই। সে সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর নির্মমভাবে গুলি করে গণহত্যা চালিয়েছে। হেলিকাপ্টার থেকে গুলি করেছে। শেখ হাসিনা ছাড়া এর আগে কোনো সরকার প্রধান পালিয়ে যায়নি। তিনি বলেন, সারাদেশে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ ধংসাত্মক কর্মকাণ্ড করছে। বিএনপি কোনো ধংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। বিএনপির প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম ও নিপীড়ন করেছে। কিন্তু বিএনপি এসব প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করে না। বিএনপির নাম করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট যারা গণভবনে গিয়েছিল, তারা কেউ বিএনপির নেতাকর্মী না। সাধারণ মানুষ ক্ষোভের কারণে এসব হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় কি হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তা হতে দেওয়া হয়নি। সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের কঠিন নির্দেশনা দিয়েছেন। বিগত আন্দোলন সংগ্রাম হিসাব করে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি (তারেক রহমান) নির্দেশ দিয়েছেন, আপাতত ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোন যোগদান হবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।  এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ আলম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারসহ নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
ময়মনসিংহ নগরজুড়ে উল্লাস, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন এ খবরে জানার পরই ময়মনসিংহ নগরে আনন্দ উল্লাস শুরু হয়।  সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ৩ টার কিছু পর ছাত্র-জনতা নগরের টাউনহল মোড়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। সেখান আনন্দ মিছিল নিয়ে নগরে জুড়ে উল্লাস করে। এতে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ও বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দিনভর নগরের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ উল্লাস করেন। বিক্ষুব্ধরা নগরের পন্ডিতপাড়া এলাকায় ময়মনসিংহে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদের বাসায় ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে রোববারও বাসাটিতে ভাঙচুর করা হয়েছিল। এ ছাড়া নগরের শিববাড়ি রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, আঠারবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের বাসায় অগ্নিসংযোগ, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, রাইফেলস ক্লাব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনির নাহা রোডের বাসায় আগুন, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসিফ হোসেন ডনের বাসায় আগুন দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ নগরের কালিবাড়ি কবরখানা এলাকায় সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর বাসায় ভাঙচুর চালানো হয়, ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমানের নাটকঘর লেনের বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানাতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করা হয়।  সোমবার বেলা ৫টার দিকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, থানাতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগতে পারে।  অপরদিকে ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীর বাসা ও ত্রিশাল অটোরিকশা স্ট্যান্ড সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়। এ দিকে মুক্তাগাছায় পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের ভাবকির মোড় এলাকায় পেট্রোল পাম্পে আগুন, বাসায় আগুন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল আলম মনির বাসায় অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে বিকেল সোয়া ৫টার পর থেকে কয়েকদফা চেষ্টা করা হলেও তাদের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।  এ ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের বাসভবনে হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ, নগরজুড়ে থমথমে অবস্থা 
বৈষম‍্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের একদফা দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথমদিনে ময়মনসিংহ থেকে সব সড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে নগরীর বেশিরভাগ দোকানপাট, মার্কেট ও ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে নগরীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে নগরীর মাসকান্দা, চরপাড়া, নতুন বাজার, গাঙ্গীনাপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। এ সময় নগরীর অভ‍্যন্তরীণ সড়কগুলোতে সীমিত পরিসরে চলতে দেখা গেছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। এতে যাত্রীদের সংখ‍্যাও অতি নগণ‍্য।  এ ছাড়াও সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে সারাদেশের সঙ্গে ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  নগরীর একাধিক বাসিন্দা জানান, সরকারের পদত‍্যাগের দাবিতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। পুলিশ ও সরকারি দলের অস্ত্রধারীরা প্রকাশ‍্যে গুলি করে মানুষ মারছে। এই অবস্থায় আন্দোলনকারীরা এক দফার ডাক দিয়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। এর ফলে নগরীতে থমথমে অবস্থা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।  এ দিকে সকালের দিকে নগরীতে পুলিশ ও বিজিবির টহল সীমিত পরিসরে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার পর সড়কগুলোতে তাদের উপস্থিতি তেমনভাবে চোখে পড়েনি।  অপরদিকে নগরীর নতুন বাজার, টাউন হল মোড়, কাচারী, কাচিঝুলি ও চরপাড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের ব‍্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। এতে বিএনপি, সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় বাঁশের লাঠি হাতে ছাত্র-জনতাকে সড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। 
ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে জনস্রোত
এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহে কোটাবিরোধীদের বিক্ষোভ মিছিলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে। এতে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহের অলিগলি।    শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ২টায় নগরীর টাউন হল মোড় থেকে এ বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে নগরীর নতুন বাজার, গাঙ্গিনাপাড়, দুর্গাবাড়ী, কাচারি সড়ক হয়ে ফের টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়।  এর আগে বেলা ১১টা থেকে টাউন হল মোড়ে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলের জন‍্য শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়।  এ সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ, সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট‍্যজন, চিকিৎসক, শ্রমিকনেতা, বেসরকারি শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীরা অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে সমর্থন জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এই বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আরিফুল হক, আবদুল্লাহ আল নাকিব প্রমুখ।  বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব এক সমাবেশে সমন্বয়করা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। আমরা তাদের অভিবাদন জানাই এবং আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকার আহ্বান জানাই।  এ দিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে নগরীতে যানবাহন চলাচল ছিল অতি নগণ্য। নগরীর অভ‍্যন্তরের বেশির ভাগ সড়ক ছিল বন্ধ। সীমিত আকারে খোলা রয়েছে দোকানপাট ও ব‍্যবসা প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে নগরীর কোন সড়কেই পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস‍্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। 
ছাত্র-জনতার গণমিছিলে উত্তাল ময়মনসিংহ
কোটাবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার গণমিছিলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নেমেছে। এতে নগরীজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।  শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুর ৩টার দিকে নগরীর টাউন হল মোড়ে গিয়ে সরেজমিনে এ গণজামায়েত দেখা গেছে।  এর আগে জুমার নামাজের পর পর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছাত্র-জনতার গণমিছিলে জড়ো হতে থাকেন। এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ময়মনসিংহের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান, আরিফুল হক, আব্দুল্লাহ আল নাকিব প্রমুখ।  পরে বিকাল ৪টার দিকে ময়মনসিংহের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণমিছিল টাউন হল মোড় থেকে বের হয়ে নতুন বাজার ও গাঙ্গীনার পাড় সড়ক হয়ে স্টেশন এলাকার কৃঞ্চচূড়া চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।   সমাবেশে এই আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, শহীদ হওয়া ছাত্র ভাইদের খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে না। ৯ দফা দাবি আদায়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে এবং চলবে।  
ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, পাল্টা অবস্থানে ছাত্রলীগ
ময়মনসিংহ নগরীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা ৯ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংলগ্ন নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু করে। এ সময় জিরো পয়েন্টের সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকায় কোটা সংস্কারের বিপক্ষে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা ছাত্রলীগের মিছিলটি সরিয়ে দেয়। পরে জিরো পয়েন্টে কোটা আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে কাচারি সড়ক হয়ে নগরীর টাউন হল মোড়ে গিয়ে ফের অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। পরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন শেষে পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা টাউন হল মোড় থেকে সরে যায়।   এর আগে, বেলা ১১টা থেকেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। একই সঙ্গে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিকে ঘিরে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ডিবি ও আনসার সদস্যদের উপস্থিতি ছিল বেশি।  সমাবেশে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, ৯ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দাবি আদায়ে শহীদ ভাইদের মতো আমরাও জীবন দিতে প্রস্তুত। এ সময় অপর সমন্বয়ক মো. আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীতে শহীদ শিক্ষার্থী রোদোয়ান হোসেন সাগরের খুনিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সরকার যদি শিক্ষার্থীদের গণহত্যা চালিয়ে আন্দোলন দমন করতে চায়, তাহলে আমরাও সেই গণহত্যায় শরিক হতে চাই।   কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেলের রাকিবসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ দিকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির কারণে নগরীর কাচারি মোড়, টাউল হল, নতুন বাজার ও জিলা স্কুল মোড় এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।