খামার থেকেই গরু বিক্রির আশা খামারিদের
আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন দোহারের গরুর খামারিরা। তাদের দাবি উপজেলায় কোনও প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
প্রতিবছর ঈদে দেশীয় গরু চাহিদা ভালো থাকায় খামারিদের পাশাপাশি পারিবারিকভাবে লালন পালন করছেন কৃষকরাও। প্রতি বছর এসব গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর হাটে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে এবার করোনার কারণে খামার থেকেই গরুগুলো বিক্রির চিন্তা ভাবনা করেছে তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েকবছর ধরে দোহার উপজেলায় দেশি জাতের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা এসব গরুর কোরবানির বাজারে আলাদা কদর তৈরি হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে গরুর খামার রয়েছে ২৫০টি। এছাড়াও ডেইরি ফার্ম রয়েছে বড় ৭৪টি। উপজেলায় বড় ২১টি ও মাঝারি ৫৩টিসহ ছোট-বড় মিলিয়ে উপজেলায় মোট ১ হাজার ৫০৭টি খামার রয়েছে।
উপজেলায় বিলাশপুরের খান ডেইরী ফার্ম, দোহার খালপাড় এলাকার রফ ডেইরি ফার্ম, দোহার গ্রামের মা-বাবার দোয়া ডেইরী ফার্ম, ভাই-ভাই ডেইরি ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুর যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। পশুগুলোকে রাখা হয়েছে শুষ্ক জায়গায়। ঘরের ভেতরে রয়েছে ফ্যান। খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ভুসি ও খৈলসহ দেশীয় খাবার। গরু মোটাতাজাকরণে কোনও প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হচ্ছে না বলে জানান খামারিরা।
আরও পড়ুন: ৪০ মণের ‘ভাগ্যরাজকে’ এবার বাড়ি থেকেই বিক্রির আশা
কৃত্রিমতা ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট (মোটাতাজা) করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন খান ডেইরি ফার্মের মালিকরা। উপজেলার বিলাশপুর এলাকায় অবস্থিত খান ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. রুবেল জানান, আমরা গরুর খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল। এখানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার গরুকে খাওয়ানো হয়। সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, মটরের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। এনিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না এবং এ ধরনের গরুর মাংস খেয়েও মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না।
তিনি আরও জানান, তাদের খামারে মোট ৮১টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে গাভী ২০টি, ষাঁড় ৪০টি, বকনা ২১টি। এছাড়া ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে রয়েছে ৪০টি। এসব গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে জানিয়ে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে এবার গরুগুলো খামার থেকে বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে কয়েকজন খামারি জানান, গত বছর ও তার আগের বছরগুলোতে ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে নানা ওষুধ ব্যবহার করেছে। অসাধু উপায়ে গরু মোটাতাজা করতে গিয়ে গরু মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এবার খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ মনোযোগী হয়েছেন। এখন দোহারের বেশিরভাগ খামার মালিকরাই প্রাকৃতিক উপায়েই গরু মোটাতাজা করেন। তাদেরও প্রত্যাশা খামার থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে গরুগুলো।
দোহার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. শামীম হোসেন বলেন, এ উপজেলার খামারিরা দেশীয় ও আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে যত্ন নিয়ে গরু লালন পালন করছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা খামারগুলোতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। করোনার এমন দুর্যোগের মধ্যেও আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।
এসএস
মন্তব্য করুন